নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখানে নেই কোন হিসেব, শুধু আছে নীল আকাশ

বিপুলা পৃথিবী //

বিপুলা পৃথিবী // › বিস্তারিত পোস্টঃ

ও হে জলকুমারী //

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩১

সে অনেক অনেক দিন আগের কথা নয়, এক দেশে কোন রাজা থাকতেন না, রানীও না। ডায়রীতে লিখে রাখার মতো কোন ঘটনা না বরং স্মৃতিতে উজ্জ্বল টাটকা কিছু অনুভূতি। রাজার বদলে বলি- আছি এক যুবক, কিছুটা মাথামোটা কিছুটা হাবাগোবা, কিছুটা হাসিখুশি কিছুটা ভাবুক, কিছুটা হতাশাগ্রস্থ কিছুটা স্বপ্নবাজ - পেশায় একজন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। রানীর বদলে বলি- আছে এক যুবতী, অনেকটা সুন্দর অনেকটা চঞ্চল, অনেকটা মায়াবতী অনেকটা নির্মল, অনেকটা আহ্লাদি অনেকটা লাস্যময়ী - পেশায় একজন আর্কিটেক্টচার বিভাগের ছাত্রী। গল্পের প্লট কোন সাম্রাজ্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট্ট একটা ক্যাম্পাস।

বছর ব্যাপী বহু ছাত্র-ছাত্রীর আসা যাওয়ার পরিক্রমায় আমার মতো এক অধমের আগমন- ক্যাম্পাসে, প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে এলো। এই দীর্ঘ সময়ে ক্যাম্পাসের বৃক্ষসারি যেভাবে বেড়েছে তেমনি আমার বয়সও বেড়েছে কিন্তু চার/পাঁচ তলা বিল্ডিংগুলোর উচ্চতা যেমন স্থবির, মনে হলো আমার উচ্চতাও তেমন স্থবির। আর পড়াশোনা কতটুকো শিখেছি তা কেবল যারা আমার ভাইভা নেন তারাই জানেন, আমি কিছু জানিনা। খেলার ছলে প্রথম তিন/চারটা বছর কিভাবে কেটে গেছে টের পাইনি। ইংরেজি সাহিত্যের ওল্ড এইজ, মিডিল এইজ, ক্লাসিকাল এইজ, রোমান্টিক এইজ, ভিক্টোরিয়ান এইজ, আরো কত এইজ পার করে যখন আমি ‘মর্ডান এইজ’ পড়ছি তখন আমার নিজেরই ওল্ড এইজ। আমার এই সময়টাকে আমি নাম দিয়েছি 'এইজ অব নিরানন্দময়'। কেন জানি জীবনের সব আনন্দ হারিয়ে ফেলেছি শেষটায়। সকাল সকাল প্যান্ট, জুতা, জামা পড়ে ক্যাম্পাসে আসি আর সারাদিন ধূলো মেখে বাসায় ফিরি। তেঁতো হয়ে গেছে সবকিছু।

এই 'এইজ অব নিরানন্দময়' তে কিছুটা আনন্দ দেয়ার জন্য ক্যাম্পাসে আগমন ঘটলো এক লাস্যময়ীর। বলি এভাবে, যেনো দু'দন্ড শান্তি দিতে নাটোরের বনলতা সেন'র আবির্ভাব, আমার হাবাগুবা জীবনে। জীবনে প্রেমে পড়েছি বহুবার, এটা অসাধারণ কোন ঘটনা না। কিন্তু এবার প্রেমে পড়লাম না বরং শক্তমতো একটা আঁছাড় খেলাম। দূর থেকে চেয়ে দেখলাম, কিছুদিন পর মাঝ দূর থেকে চেয়ে দেখলাম, আরো কিছুদিন পর আরো কাছে এসে চেয়ে দেখলাম, তাকে। একদিন কোনভাবে চোখে চোখ পড়তেই একেবারে 'মকবুল ফিদা হোসেন' হয়ে গেলাম। আমার জীবনে আনন্দ ফিরে আসতে লাগলো। নাম জানিনা- ধাম জানিনা, শুধু জানি হবু আর্কিটেক্ট। ক্ষনিক অনুভূতিগুলোতে ভিন্নতা অনুভব করলাম। মনের কথাগুলো কানে গুনগুন বাজতে লাগলো-----------------

"কাকে আমি নামটা ধরে ডাকি
কে বা বলো মুখটা তুলে চায়
আমার চোখে অন্য দুটি চোখ
স্বপ্ন সমান সমুদ্র ভাবায়
আমি শুধুই চোখটা খুঁজে ফিরি
আমার চোখে জলও ছবি আঁকে
ঐ মেয়েটা আমার মতোই একা
আমার মতো খুঁজে কী মেঘটাকে ?"


নাম জানিনা, তাই ঠিক করলাম প্রাথমিক একটা নাম দেয়া দরকার। সাহিত্যের পাতায় পাতায় অজস্র নারী চরিত্রের গল্প আমি পড়েছি। হেলেন, স্টেলা, এস্টেলা, জুলিয়েট, নোরা, পামেলা নাকি এলিজাবেথ, কোনটি হতে পারে? নাহ্, কোনটিই না। কারণ এসব চরিত্রের বৈশিষ্ট্যাবলী আমার ভালোভাবেই জানা আর এ মেয়েতো আমার সম্পূর্ণ অজানা। যেহেতু আমি ভাবুক, তাই অনেক ভাবার পর তার সৌন্দর্য বিবেচনায় নাম দিলাম 'মারমেইড্' মানে 'জলকুমারী'। এ্যা মিথিক্যাল কারেক্টার। সমুদ্রের গভীরে তার বাস, সে এক আশ্চর্য কল্পনারী। আমার কাছে এ মেয়েটাও তাই। চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো আস্ত এক জলকুমারী------------------

"জলে ছিলে ডুবুডুবু জলের কুমারী
কেন যে ডাঙ্গায় এলে জলকুমারী
কালি রাঙ্গা রোদে জাগে মরুভূমি
জল শুন্য পরম বাতাস মরুভূমি
আমারে সমুদ্রে নিবা চলো পথ ধরি
তরলে লবনে ভাঙ্গি জলের খোয়ারি"



যদিও গভীর সাগরের জলকুমারীর সাথে ওর কোন মিলই নেই তবে তার মাঝে যে একটা জলকুমারী আছে তা আবিস্কার করার মতো। এক নজর দেখলে কিছু বুঝা যায় না। তবে দুঃসাহসিক ডুবুরীরাই পারে এসব জলকুমারীর দেখা পেতে। নিজেকে একজন ডুবুরী ভেবে আবিস্কার করতে চাইলাম তাকে। শুরু করলাম দুঃসাহসিক অভিযান। তার চোখে যে সাগরের গভীরতা ছিলো তা পরিমাপ করাই ছিল প্রথম কাজ। অবাধে তাকিয়ে থাকতাম তার দিকে, পথে রাস্তাঘাটে, ক্লাসরুম থেকে ক্লাসরুমে, দু'তলা থেকে তিন তলা বা নিচ তলা থেকে উপর তলা, রাস্তা থেকে রিক্সায় বা রিক্সা থেকে রাস্তায়, সিঁড়ি বেয়ে নামতে বা উঠতে, সামনা সামনি কিংবা আঁড়চোখে যেভাবেই হোক তার দেখা পেলেই আর চোখ ফেরাতাম না। যদি কোনভাবে চোখে চোখ পড়ে যেতো তাহলে মনের ভেতর এক অজানা সুখ টের পেতাম আর না পড়লে অজানা অসুখ, কী যে করি? -------------------

"আমার মনেতে নাই সুখ
চোখের মাঝে বসত করে
অন্য লোকের চোখ
আমার ভিন্ন চোখে ভিন্ন ছবি
দেখায় ভিন্ন লোক
আমার মনেতে নাই সুখ !!
দিকে দিকে লক্ষ চোখ
তারই ভিড়ে একটি চোখ
ধরা পড়ে গেছি সেই চোখে
সে চোখের মাঝে আরশি নগর
ভালোবাসাবাসি মনের খবর"


আর্কিটেকচার বিভাগের স্টুডেন্ট। তাদের অনেক কাজ, অনেক এসাইনমেন্ট, অনেক প্রজেক্ট। সবসময় দেখতাম কি সব অদ্ভুৎ অদ্ভুৎ স্ট্রাকচার তৈরী করে তারা ডিপার্টমেন্টে নিয়ে আসতো। এন্টি কাটার, কর্কশীট বা হার্ডবোর্ডে তাদের পড়াশোনা। ভালোই। প্রথম কিছুদিন সে টের পেলোনা যে তার দিকে একটা বোকা হাবাগোবা লোক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আমি আমার বোকামীর মাত্রা ছাড়িয়ে, একটানা চেয়ে থেকে, শেষ পর্যন্ত তাকে টের পাইয়েই ছাড়লাম। কোন খেয়ালে সে এক পলক তাকালো একদিন। মনে হলো যেনো আমার কয়েক পাউন্ড ওজন কমে গেলো আর আমিও ভাসতে লাগলাম হাওয়ায়----------------------------

"মেয়ে তুমি এভাবে তাকালে কেন?
এমন মেয়ে কী করে বানালে ঈশ্বর- বুঝিনা
এমন মেয়ে কী করে বানালে ঈশ্বর !!!


মনের ভেতর ক্ষণিক অনুভূতিগুলো আরও তীব্র হতে লাগলো। বেশকিছুদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর তাকে ফলো করার একটা রুটিন হয়ে গেলো আমার। কোন বারে কখন কোথায় তার ক্লাস সব আমার জানা। ইংরেজি ও আর্কি বিভাগ দুটি একই ফ্লোরে হউয়ায় ক্লাসের সময়গুলোতে এক-আঁধবার তাকে দেখার সুযোগ পেতাম। আর লাঞ্চ আওয়ারে যে টং টায় সে যেতো, সেটি ছিলো ক্যাম্পাসে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। কাজ আর আকাজ যাই থাকুক না কেনো, এই টঙ্গেই আমার পার্মানেন্ট অবস্থান। শীতের সময়। আমি টং এ বসে চা খাই, রোদ তাপাই, ক্লাস ফাঁকি দেই আর তার প্রতীক্ষায় বসে থাকি। সে আসে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়, কিচির-মিচির করে, আমি তাকিয়ে দেখি। বুঝতে পাই যে, ভালোবাসা এসে যাচ্ছে। সেও হয়তো বুঝতে পারে, কোন এক নতুন পাগলের পাল্লায় পড়েছে সে। আমি মনে মনে বলি-----

"শহরে এসেছে এক নতুন পাগল
ধরো তাকে ধরে ফেলো
এখনি সময়
পাগল রাগ করে চলে যাবে
খুঁজেও পাবে না
পাগল কষ্ট চেপে চলে যাবে
ফিরেও আসবে না
মেয়ে আমাকে ফেরাও"


দিন চলছিলো এভাবেই। কিছু সময়ের জন্য দেখা পেলেই আমার দিনের কার্য সম্পাদিত হয়ে যেতো। প্রতিদিনের কিছুটা দৃষ্টি বদলে মনের গভীরে ভালোবাসা দানা বাঁধতে থাকে, সে দানা বড় হয় এবং অনেক বড় হয়। প্রয়োজন বোধ করি কিছু একটা করার। কিন্তু কী করা যায়? ভাবনার জলে ডুব দেই, কল্পনা করি, মনে মনে কথোপকথন সাজাই, অংক বানাই, দৃশ্য বানাই। ভাবি, দেখা করি একবার, পথ আগলে জানতে চাই- 'এই মেয়ে, তোমার নাম কী?' কিংবা বলি 'তুমি খুব সুন্দর', অথবা এক নিঃশ্বাসে বলি ফেলি 'ভালোবাসি' ------------------------------

"একটি দুটি ঘুমের গল্প টুকরো অভিমান
ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা কালো স্বপ্নবতী গান
পয়মন্ত সম্ভাবনা লাজ্জাবতী হাসি
ইচ্ছে করে ডেকে বলি তাকেই ভালোবাসি"


কিন্তু এত সহজেতো আর ভালোবাসি বলা যায় না, কিংবা পথ আগলে দাঁড়ানোও যায় না। তাই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো। প্রথম পদক্ষেপ- নাম জানতে হবে। এজন্য এক সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলো, কমিটির প্রধান আমার এক সহ-পাঠিনী, তাকে পনের দিনের সময় দেয়া হলো। পনের মিনিট পরেই, কমিটির প্রধান আমার কাছে রিপোর্ট পেশ করলেন। কমিটি এতো দ্রুত আর দক্ষতার সাথে কাজ করবে তা চিন্তাই করতে পারিনি। তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অবশেষে তার নাম জানা হলো। তারপর, দ্বিতীয় পদক্ষেপ- যোগাযোগ স্থাপন, আর এজন্য সাহায্য নিলাম সামাজিক যোগাযোগের আধুনিক মাধ্যমকে। নাম ধরে সার্চ করে পেয়েও গেলাম তাকে সেখানে। সবুজ শাড়ি পড়ে সোফায় বসা সুন্দর ছিমছাম একটা ছবি সংবলিত প্রোফাইল-যা হয়ে উঠলো আমার পরবর্তী সকল আগ্রহের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদিন ঢো মারতে থাকলাম তার প্রোফাইলে। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। এমনি করেই একদিন ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে জানান দিলাম এই পাগলের অস্তিত্ত্ব। কতো কী যে লিখতাম আর তাকে টেক্সট করতাম! সে হয়তো অনেক অবাক হয়েছিলো কিংবা বিরক্ত। আমিতো তাকে কতো ভালোভাবে চিনি কিন্তু সে তো আর আমাকে চেনেনা। ক্যাম্পাসে দেখা হলে চেয়ে থাকি আর রাতে বাসায় ফিরে ফেইসবুকে টেক্সট করি। আমার টেক্সটগুলো ছিলো হিলিয়াম গ্যাস ভর্তি বেলুনের মতো যা আকাশে উড়ালে ভুলেও আর ফিরে আসে না। এরকম আমার নিয়মিত টেক্সটগুলোর কোন ফিরতি জবাব পেতাম না। এভাবে কিছুদিন চললো। একদিন করিডোরে দেখা পেলাম তার। আমি তাকাতেই দেখলাম সে তাকালো আমার দিকে, ইচ্ছায় কি অনিচ্ছায় তা বলতে পারবো না। আমি শিহরিত হলাম, ভাবলাম চিনে ফেললো কিনা। নাহ্ চেনেনি, তবে মনে হলো দ্বিধায় পড়েছে। তার এই দ্বিধা কিছুটা মেঘ জমালো আমার মনে-------------------------

"জল কুমারী চোখে চোখে এমন কেন চাও
মনের ভেতর মেঘ ভেসে যায়, ময়ূরকন্ঠী নাও
চোখে চোখের কাছে আছে, আমার কিছু দেনা…।"


'নেশা ভরা চোখে কেন এতো দ্বিধা?' সেদিন ছিলো আমার প্রশ্ন। কিন্তু আমার এ প্রশ্নের উত্তর দেবে কে?! তাই নিজেই উত্তর খুঁজি- দ্বিধায় থাকুক আর যেভাবেই থাকুক, এক আগুন্তুকের উদ্ভট আচরণ তার ভালো লাগার কথা না। ভালো লাগেও না। আমি টের পাই। একদিন টঙ্গে বসে চা খেতে খেতেই সে আবিস্কার করলো সেই আগুন্তুককে, ---আমাকে। সেদিন রাতে এফবি তে একটা রিপ্লে পেলাম তার, তাতে লিখা ছিলো--------------

"apnake thik ki bola ucit ami jani na...tobe akta requst avabe takiye thakben na amar khub oshosti hoi.tc"


আমার পাগল পাগল আচরণের উচিত জবাব এতে হলো কিনা জানিনা। তবে রিপ্লে পাওয়াটাই আমার জন্য বড় আনন্দের হয়ে দাঁড়ালো। আমাকে সে চিনেছে এতেই আমার আনন্দ। তবে আমার সে আনন্দ বেশীক্ষণ টিকে না। এরপর থেকে এফবি তে তাকে আর খুঁজে পাই না । সেদিন রাতেই আমি বিদ্ধস্ত হলাম এবং পাগলের মতো খুঁজতে থাকলাম -------------------

"কেবল খোঁজা এ ঘর ও ঘর
কেবল কানাকানি
ভালোবাসার মানুষ নিয়ে চলছে টানাটানি
শুরু হলো খোঁজার পালা
শুরু হলো মনের জ্বালা
শুরু হলো খোঁজার পালা
কোথায় সে মিলালো? "

শুরু হলো মনের জ্বালা। চাঁদ ধরার যে ফাঁদ আমি পেতেছিলাম তা মনে হয় ভেস্তে গেলো। ক্যাম্পাসে গেলে তার দেখা পাই কিন্তু কষ্টটা আরো বাড়ে তখনই, চোখ মেলে তাকানোর তো আর অনুমতি নেই। আমি রাস্তায় হাঁটি- রিক্সা চলে যায়, বাস চলে যায়, মানুষ চলে যায়, রাস্তা শেষ হয়ে যায়, -আমি হাঁটতেই থাকি। আমি টঙ্গে বসে থাকি উদাসীন- মানুষ জড়ো হয়, জমজমাট আড্ডা হয়, হৈ হুল্লোড় হয়, -আমি বসেই থাকি, উদাসীন। এই উদাসীনতা আমাকে অনেক নিশ্চুপ করে ফেললো। আবিস্কার করলাম- আমি আমার সব বন্ধুবান্ধব থেকে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। ওদের সাথে আর কিছু মিলাতে পারছি না। একা হয়ে গেলাম খুব। শুধু মারমেইড'র কথা মনে পড়ে। তাকে নিয়ে ভাবতেই থাকি আর বুকের মধ্যে কষ্টটা বাড়তেই থাকে-------------

"বুকের মধ্যে অলক ঝলক
ঐ মেয়েটি চক্ষু তুলুক
একা আছি ভিষণ একা
একটা কিছু না হয় ঘটুক
কেন সবাই বলে
লোকটা নাকি একলা বাতিক
একলা থাকুক,
আমার ভাল্লাগেনা, ভাল্লাগেনা
মনের অসুখ !


মারমেইড ! জলে থাকলে মাছ, ডাঙ্গায় মানবী। আমি এক ডুবুরী, জলকুমারী ধরার জন্য জলে ডুব দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন এক ডুবুরী আমার আগে জলকুমারী কে ডাঙ্গায় তুলে নিয়ে এলো। জলকুমারীর লেজ থেকে পা বেরোল, সে পা দিয়ে সে হেটে বেড়ালো। তার পায়ে কেউ একজন নূপুর পড়ালো। আমি দেখলাম। জলকুমারী এখন আর্কিটেক্ট। সে ডিজাইন বানায়, বাড়ি বানায়, স্থাপত্য বানায়, জীবন বানায়, স্বপ্ন বানায়, কল্পনা বানায়, রোমান্স বানায়, ভালোবাসা বানায়, যে তাকিয়ে থাকলে তার কোন অস্বস্থি লাগে না- তার সাথে। আমি দেখি। চোখ বুজি। আমার ভালোলাগেনা। আমার আকাশ তখন কান্না ভেজা। আমার কিছু ভালোলাগেনা -----------------

"ঐ কান্নাভেজা আকাশ আমার ভালোলাগেনা
থমকে থাকা বাতাস আমার ভালোলাগেনা
তুড়ির তালে নাঁচতে থাকা ভালোলাগেনা
মরি মরি বেঁচে থাকা ভালোলাগেনা
পাখির কন্ঠে বেসুরো গান ভালোলাগেনা
নর নারীর একমুখি টান ভালোলাগেনা
ঐ ফুলের বুকে ধুতুরার ঘ্রাণ ভালোলাগে না
মৃত্যু ভয়ে চমকানো প্রাণ ভালোলাগেনা

তোমায় নিয়ে কাড়াকাড়ি ভালোলাগেনা
তোমায় নিয়ে বাড়াবাড়ি ভলোলাগেনা
আর তোমার আমার ছাড়াছাড়ি ভালোলাগেনা"


মারমেইড তথা আর্কিটেক্ট মেয়ের এ্যাফেয়ার হয়ে গেলো তারই এক সহপাঠির সাথে। তারা এখন প্রেমিক-প্রেমিকা বা বয় ফ্র্যান্ড-গার্লফ্র্যান্ড। তবে যে দাগ সে আমার মনে কেটে গেছে তা সহজে শুকায় না। আমি তাকে দেখি দূর থেকে। আর মাথা নিচু করে পাশ কেটে যাই কখনও কাছাকাছি হলে। ফুলের বুকে ধুতুরার ঘ্রাণ আমায় ঝিম ধরায়। আমার 'এইজ অব নিরানন্দময়' সময় পরিবর্তন করে হলো 'এইজ অব বিষাধময়'। তার চোখে যে মায়া খুঁজে পেয়েছিলাম তা বিষাধে পরিণত হলো, যে স্বপ্ন বুনেছিলাম তা ধ্বসে পড়লো, যে ভালোবাসা দেখেছিলাম তা হলো চূর্ণ। মনে মনে তাকে বলি ----------------------------

"হতে পারে তোমার দুচোখ
জোঁৎসা রাতের আলো
সে দু’চোখে আমার জীবন
ভীষণ আঁধার কালো
হতে পারে তোমার হৃদয়
ভালোবাসার নদী
জোয়ার ভাটায় স্বপ্ন আমার
ভাসে নিরবধি"

আর্কিটেক্ট মেয়ে তার জীবন গড়ে নিলো তার নিজের করা নকশায় আর আমার স্বপ্নের শেষ হলো এভাবেই। আমি এখনও রাস্তায় হাঁটি, টঙ্গে বসে থাকি, করিডোরে দাঁড়াই আর সঞ্জীব চৌধুরীর এসব গান শুনি আগের মতোই, যে সব গান আমি শুনতাম তাকে দেখার পর, স্বপ্ন বুননের পর, আশাহত হবার পর, দুঃখ পাবার পর।


এখন আর স্বপ্ন দেখি না। তবুও দু'জনার দূরত্ত্বটা খুব বেশীতো নয়। ঐ একইতো জায়গা, একই করিডোর, একই সিঁড়ি, একই রাস্তা, একইতো শহর। মনের ভুলেওতো কোন একদিন দুরত্ত্বটা ভাঙ্গতে পারো--------

"খুব বেশি নয় দূরত্বটা, দু’জনেরই একই শহর
সুখ ভাবনায় আগলে রাখি, দু’চোখে জলের নহর
মনের ভুলেওতো ভাঙ্গতে পারো, সামান্য এ-পথটুক
ফিরবেনা জেনেও আমি, পাখির আশায় বাধি বুক
এ অপেক্ষা অকারণে, বলতে পারো তুমিওতো
তোমার আশায় বাঁচি আমি, এই আশাটাই বাঁচার ছুঁতো
মনের ভুলেওতো ভাঙ্গতে পারো, সামান্য এ-পথটুক"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.