![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফাল্গুনের প্রথম দিনে নতুন রঙ্গীন পাঞ্জাবী পরে অফিসে আসছি। সহকর্মী সকলের সাথে ফাল্গুনী শুভেচ্ছা বিনিময় হলো আর শুরু হলো ফাল্গুন নিয়ে আলাপ। এতদিনে কার ফাল্গুন কেমন কেটেছে। আমি নিজেরটা নিয়ে ভাবলাম। ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরে ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন সময়ে কাটানো ফাল্গুনই আমার জীবনের সেরা। শুধু কী ফাল্গুন! এ বছরের প্রতিটি দিন কেটেছে অনেক আনন্দে। নিঃসন্দেহে সেই দিনগুলো ছিলো জীবনের সেরা দিন। এখন প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতর হই অইসব দিনগুলোর কথা ভেবে। কিছুদিন ধরে ভাবছি যে জীবনের সেরা দিনগুলো নিয়ে ব্লগে কিছু লিখব। তো লিখেই ফেললাম-----
ক্লাস চলছে নিয়মিত। বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে। ক্লাসের সবাই একে একে আন্তরিক হচ্ছি। সানন্দে ক্যাম্পাসে যাই আসি, আড্ডা দেই। প্রথম সেমিস্টারে ডিপার্টমেন্টের হেড আতিউল্লাহ স্যার লিঙ্গুইস্টিক ক্লাস নিতেন। ক্লাস আর কী! আমার মনযোগ কম। ল্যাংগুয়েজ ক্লাস যেহেতু স্যার একদিন একজন একজন করে ডায়াসে নিয়ে নিজের সম্পর্কে ইংরেজিতে বলার জন্যে ডাকতে লাগলেন। আমি মাথা নীচু করে থাকি যেন স্যার আমাকে না দেখেন। অনেকেই এমন করে নিজেকে আড়াল করে রাখে আবার অনেকে নিজেই ডায়াসে উঠে পরে। সবাই যে ভালো ইংরেজি বলতে পারে তা না। বেশির ভাগেরই ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি। ডায়াসে উঠে এলো আশরাফ। আলাভোলা ছেলে। নিজের সম্পর্কে ইংরেজিতে বলা শুরু করলো। সে কী ভাষা!! শুনে সবাই মিটিমিটি করে হাসে আবার হাসে না। এর মধ্যেই আশরাফের কথা আটকে গেছে। ভোকাবুলারির অভাব। সে দুই হাত দিয়ে ইশারা করতে লাগলো। কেউ বুঝতেছিনা। স্যার বুঝতে পারলেন এবং সাথে সাথে বলে উঠলে--- ‘OOOOooooh… milking a cow! Milking a cow!’ মানে আশরাফ গাভী দোহন করতে পারে কিন্তু এইটা সে ইংরেজিতে কিছুতেই বলতে পারছিলোনা। অট্টহাসি শুরু হলো পুরো ক্লাসে আর এরই সাথে সপ্রতিভ আবির্ভাব হলো আশরাফের।
ক্লাসের সবাই তখনো ক্যাম্পাসে আসেনি। দু একজন ক্লাসে যোগ দিতে বাকি ছিলো। এমন করে একদিন ক্লাসে হাজির মোহাম্মদউল্লাহ। হুজুর। দেখে মনে হলো হজ্ব করে আসছে। নীল পাঞ্জাবি পরা জ্যাঠা জ্যাঠা ভাব। ক্লাসে আসার পর থেকেই ধুমধাম ভোকাবুলারি ছাড়তেছে। কঠিন কঠিন ইংরেজি। আমি ভাবলাম- এবার গেছিরে! জ্যাঠা তো ডিকশনারি মুখস্ত করে আসছে। নোমান, মইনুলের সাথে খাতির হলো। এরপর আসলো নুরুন্নেহার সানি। বোরখা পরা মুখ খোলা। চশমাও আছে। মেধাবী বোঝা গেলো। সে মনে হয় সাস্টে ভর্তি হয়ে সন্তুষ্ট না। তার ঢাকা ইউনিভার্সিটি লাগবে। তাই আবার ভর্তি পরীক্ষা দিবে। এজন্যে এতদিন ক্লাসে আসেনি। ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষার ডেট দিয়েছে। সানি পরীক্ষা দিতে যাবার আগে ক্লাসের ডায়াসে উঠে সবার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে নিলো। ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবে এমন সময় শিবলী হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো- বেস্ট অব লাক। সানিও হাত ধরে বললো- থ্যাংক ইউ। লাভলি হ্যান্ডশেক। আমাদের অনেকের মুখ হা। করছে কী! হাত ধইরা ফালাইছে রে।
একদিন ক্লাসের পরে লাইব্রেরি বিল্ডিং এর পাশে বসে আছি আমরা কয়েকজন। তুষারের সাথে আসলো ননী গোপাল সুত্রধর। স্বাস্থ্য ভালো। দাদা। অগ্রনী ৯ এ উঠছে। এডমিটেড এট সেকেন্ড এটেমট। তাই এতদিন আসে নাই। তুষারের মাধ্যমে আমাদের সাথে খাতির হলো। আমি সিগারেট খাচ্ছিলাম। আমাকে সিগারেট খেতে দেখে সে মনে হয় অবাকই হয়েছিলো। তুষার ননীর সাথে ছিলো হোসেন। আবুল হোসেন। পাতলা গোছের। প্যান্ট শার্ট ইন করে পরে। দেখেই মনে হলো খুবই সিরিয়াস একটা ছেলে। সবসময় ব্যাস্ত। আবুল হোসেন নাম হলেও তাকে প্রথম প্রথম আবুল বলেই বলতাম। তাকে দেখে বাংলা সিনেমার একটা গান আমার মনে পরতো- 'কে সুই হয়ে ঘরে ঢুকে ফাল হয়েছে-- আআআআবুল মামা', কে একা একা চোরেদের ধরে ফেলেছে- আআআআআবুল মামা'। কয়েকবার তার সামনে গেয়ে তাকে বিরক্তও করেছি। পরে অবশ্য তার নাম যে হোসেন সেটাই আমরা বুঝে নিলাম, আবুল অংশটা এপিথেট।
তাহসীন স্যার ক্লাস নিতেন। তার কোর্স ছিল গ্রীক ট্র্যাজেডি। একই কোর্স নিতেন সানজিদা খাতুন বক্স ম্যাডাম। সেনেকা, ফেড্রা, মিডিয়া, এগামেমনন, স্প্যানিস ট্র্যাজেডি পড়ি। কী অদ্ভুদ পড়ালেখা! ইংরেজি পড়ার শখ মিটে গেলো। এসব কী! ইংরেজি সাবজেক্টে এগুলা পড়ায়! তাহসীন স্যার যেভাবে ইংরেজি বলতেন, বুঝতামই না। আরেকজন আছেন- ম্যাট স্যার। মোহাম্মদ আলমগীর তৈমুর- সংক্ষেপে ম্যাট। আমি অই বয়সে বাস্তবে কাউকে স্যারের মতোন ইংরেজি বলতে শুনিনি। খুবই কড়া আর স্টিডফাস্ট ধরণের লোক। কখনই বাংলা বলেন না। স্যারের চলাফেরা আর পোশাক আশাক ছিলো আমেরিকান। একটা ২৫৬ মেগাবাইট পেনড্রাইভের যে কী গুরুত্ব সেটা তাকে দেখেই বুঝেছিলাম। কারণ স্যার সবসময় একটা পেনড্রাইভ গলায় ঝুলিয়ে রাখতেন। প্রথমে বুঝিনি যে অইটা পেনড্রাইভ। মনে করেছিলাম বড় কম্পিউটার চালানোর চাবি। স্যার আমাদের গেট আপ পছন্দ করলেন না। বলে দিলেন যে একদম ফর্মাল হয়ে ক্লাসে আসতে হবে। আর ফর্মাল জুতা তো মাস্ট পরতে হবে। আমার ফর্মাল জুতা নেই। স্যারের ঘোষণা অনুযায়ী শিবলী আর আমি সারাদিন জিন্দাবাজার ঘুরে জুতা কিনে নিয়ে এলাম। পরেরদিন ক্লাসে সবাই ফর্মাল। ডি বিল্ডিং এর সামনে দেখা হলো চন্দন চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে। গ্রামের সহজ সরল ছেলে। তাকে দেখে আমি অবাক! ফর্মাল হতে গিয়ে সে শীতের সোয়েটারটাও ইন করে পরে ফেলেছে। পরে তাকে বললাম যে সোয়েটারটা প্যান্টের নীচ থেকে বের কর বেকুব, অইটা ইন করতে হয়না।
ম্যাট স্যার পড়াচ্ছেন হিস্ট্রি অব ইংলিশ লিটারেচার। এংলো স্যাক্সন পিরিয়ড পড়ানো শেষ হয়েছে। স্যার নোটিশ দিলেন এবার টার্মটেস্ট দিতে হবে। প্রথম 'টার্মটেস্ট' টার্মটা শুনলাম। পরীক্ষার জন্যে সবার তোড়জোড় বেড়ে গেলো। কী পড়বো, কীভাবে পড়বো জানিনা। ইতিমধ্যে যারা ভালো ছাত্র তকমা পেয়েছে তাদের কাছে ধরণা দিতে লাগলাম। পরীক্ষা হলো। ওপেন টেক্সট এক্সাম। ভাবলাম সহজ, দেখে দেখে সব লিখে দিবো। কিন্তু পরীক্ষা দিতে বসে কিছুই মিলাতে পারলাম না। জগাখিচুড়ি পরীক্ষা দিলাম। পরেরদিনই স্যার রেজাল্ট দিয়ে দিলেন। সবাই ডাব্বা। আমি পাইছি সি। কিন্তু দুইজন খুব ভালো করলো। তানিম আর অনুপমা। তারা দুইজনেই এ মাইনাস পাইছে। সবার মাঝে তাদের দুজনের কদর সাথে সাথেই বেড়ে গেলো। ওরা ভালো স্টুডেন্ট। আমরা যারা বি এর নীচে পেয়েছি তাদের আবার এক্সাম দিতে হবে। এবার আবার বিপদে পড়লাম। অইদিন ইংরেজি বিভাগের লাইব্রেরি রুমটা পরিস্কারের কাজ চলছিলো। ম্যাট স্যার আমাদের কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে গিয়ে রুম ঝাড়ু দেয়ালেন। এতে ভালো একটা কাজ হলো। লাইব্রেরি রুম ঝাড়ু দিয়ে আবার পরীক্ষা দেয়া থেকে নিষ্কৃতি পেলাম। স্যার আমাদের কয়েকজনকে টার্মটেস্টে বি দিয়ে দিলেন।
এরপর স্যার পড়ানো শুরু করলেন লর্ড আলফ্রেড টেনিসন। চার্জ অব দ্যা লাইট ব্রিগেট। কিছুই বুঝিনা। ভটোভটো করে কয়েকটি ক্লাস নিয়ে নোটিশ দিলেন এসাইনম্যান্ট দিতে হবে। এবার এসাইনমেন্ট টার্মটা প্রথম শুনলাম। এক পৃষ্ঠার এসাইনম্যান্ট। অই এক পৃষ্ঠার এসাইনম্যান্ট করতেই জায়গা ঘেমে গিয়েছিলো। এম এল এ হ্যান্ডবোক ধরিয়ে এসাইনমেন্ট লিখা শিখালেন। হাজার পৃষ্ঠার রিসার্চ করে যে বই পড়ে সেটা পড়ে আমরা এক পৃষ্ঠার এসাইনম্যান্ট করবো। অত্যাচার। এর মধ্যে আবার নো প্লেজারিজম। প্লেজারিজম কি সেটাও জানলাম। সব কাজ বাদ দিয়ে ৩/৪দিন এসাইনম্যান্ট বানালাম। ড্রাফট কপি স্যারকে দেখাই স্যার আট দশটা গোল মার্ক করে রিজেক্ট করে দেন। চার পাঁচবার ড্রাফট দেখিয়ে পরে কোনরকমে এসাইনম্যান্ট জমা দিলাম। স্যার আমারটা টপিকটা পছন্দ করেছিলেন কিন্তু লিখার মান খুবই নিন্মমানের হওয়াই আবারো সি দিলেন।
রাজিক স্যার পড়াতেন ইন্ট্রডাকশন টো ইংলিশ লিটারেচার। ফিগার অব স্পিচ আর জানরা। সিমিলি, মেটাফোর, ক্লাইমেক্স, এন্টিক্লাইমেক্স প্যারাডক্স, অক্সিমরন, হ্যামারশিয়া, এলেগরি, নবেল, ড্রামা, এপিক, ট্রেজেডি ইত্যাদি ইত্যাদি। এখনো কিছুই বুঝিনা। এসব পড়ার এপ্লিকেশন কোথায় তাও বুঝিনা। এদিকে নোমান, মইনুল, কবির, হিল্লোল, তামান্নারা সমানে স্যারের সাথে তাল মেলাচ্ছে। কী মেধা!!!
(চলবে..........)
দোজ ওয়ার দ্যা বেস্ট ডেইজ অব মাই লাইফ (পর্ব ১)
©somewhere in net ltd.