নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখানে নেই কোন হিসেব, শুধু আছে নীল আকাশ

বিপুলা পৃথিবী //

বিপুলা পৃথিবী // › বিস্তারিত পোস্টঃ

দোজ ওয়ার দ্যা বেস্ট ডেইজ অব মাই লাইফঃ পর্ব ৩

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২৪

ফাল্গুনের প্রথম দিনে নতুন রঙ্গীন পাঞ্জাবী পরে অফিসে আসছি। সহকর্মী সকলের সাথে ফাল্গুনী শুভেচ্ছা বিনিময় হলো আর শুরু হলো ফাল্গুন নিয়ে আলাপ। এতদিনে কার ফাল্গুন কেমন কেটেছে। আমি নিজেরটা নিয়ে ভাবলাম। ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরে ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন সময়ে কাটানো ফাল্গুনই আমার জীবনের সেরা। শুধু কী ফাল্গুন! এ বছরের প্রতিটি দিন কেটেছে অনেক আনন্দে। নিঃসন্দেহে সেই দিনগুলো ছিলো জীবনের সেরা দিন। এখন প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতর হই অইসব দিনগুলোর কথা ভেবে। কিছুদিন ধরে ভাবছি যে জীবনের সেরা দিনগুলো নিয়ে ব্লগে কিছু লিখব। তো লিখেই ফেললাম-
দোজ ওয়ার দ্যা বেস্ট ডেইজ অব মাই লাইফঃ পর্ব ১

দোজ ওয়ার দ্যা বেস্ট ডেইজ অব মাই লাইফঃ পর্ব ২

স্বাধারণভাবেই ক্যাম্পাস লাইফ শুরু হয়ে গেলো। এর মধ্যে থাকার জায়গা জোগাড় করে ফেললাম। ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সময় ক্যাম্পাসে যে উচু টিলাগুলো ছিলো, তার কয়েকটিতে উঠে ঘুড়ে বেরিয়েছি। টিলার উপর উঠেই মনে হয়েছিলো, যদি এখানে চান্স পাই তাহলে এরকম টিলার মাঝামাঝি কোন বাসায় থেকে লেখাপড়া করব। মনোরম পরিবেশের সাথে ভাবুক মন মিলবে ভালো। ক্যাম্পাসের পিছনের দিকে টিলারগাও নামক এলাকায় একটি ছাত্র হোস্টেল ছিল, নাম দিলারা হান্নান হল। অইটা সেরকমই একটা থাকার জায়গা। কিন্তু কিছু অসুবিধা ছিলো। খাওয়ার বেবস্থা নেই, গ্যাস নেই, ডিশ ক্যাবল নেই, আবার ছয় মাসের অগ্রিম ভাড়া দিতে হবে। তবে সুবিধা ছিলো যে ক্যাম্পাসের হলের মতই প্রায়, আসবাবপত্র লাগেনা, সিট হিসেবে ভাড়া। তো সাত পাচ না ভেবে উঠে পরলাম, সাথে ছিলো শিবলী। আমার রুম নম্বর ছিল ১১৬। এক রুমে চারজন। অন্য দুইজন ছিলো কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মেহেদী আর রবিন।


হল থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্ব প্রায় দুই কিলো হবে। হেটেই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করি, রিক্সা খুব একটা পাওয়া যেত না। খাওয়া দাওয়া করি শাহপরান হল আর তখনকার দ্বিতীয়ছাত্র হলে। এরই মধ্যে আমাদের ব্যাচে আমরা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছি। তবে দলাদলি করতে নয়, উদ্দেশ্য গ্রুপ স্টাডি করা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই স্টাডি গ্রুপ তৈরি করা মনে হয় একটা ফরয ধরণের কাজ। পড়ালেখা ছাতামাথা হয় কি না হয় স্টাডি গ্রুপ হবেই। তো আমরাও করলাম একটা। আমাদের কয়েকজন বিড়িখোরের সাথে যুক্ত হলো তান্না, ডালিয়া, তপু, করিম, বিশ্বজিৎ, তানিমসহ সহ আরো কয়েকজন। হিস্ট্রি অব ইংলিশ লিটারেচারের যে বইটা ছিলো অইটা সবাই পাতা ধরে পড়ে যে নতুন শব্দটার অর্থ পারতাম না তা ডিকশনারি থেকে বের করে লিখে রাখতাম, আর যে অংশটুকু বুঝতামনা তা যে পারে সে বুঝিয়ে দিতো। আমি অবশ্য কিছুই করতাম না। আড্ডাবাজিটাই আমার কাছে ভালো লাগতো। এরকম আরো কয়েকটা গ্রুপের মধ্যে একটা ছিলো নোমান মইনুল মোহাম্মদউল্লাহ হিল্লোলদের গ্রুপ। একদিন ওরা ডি বিল্ডিংয়ের পিছে বসে গ্রুপ স্টাডি করছিলো, আমি ননী শিবলী কাছে ভিড়তেই মোহাম্মদউল্লাহ বলে দিলো - This is English speaking zone. মানে ওইখানে বসতে হলে আমাদেরও ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। আমরা আর বসতে পারলামনা। ইংরেজিটা আমাদের মুখ দিয়ে আসেই না। এরকম বিড়ম্বনা হয়েছে আরেকটি জায়গায়। ইংরেজি বিভাগের লাইব্রেরিতে। আমাদের বিভাগের সকল সিনিয়র জুনিয়র অইখানে বসে জ্ঞান চর্চা করতো। আর যাদের মুখ থেকে ঝরঝর করে ইংরেজি বের হতো তারা হতো ভলেন্টিয়ার। মাঝে মধ্যে গিয়েছি, কিন্তু অই একই প্রবলেম- ইংরেজি বলতে পারিনি বলে তেমন সুবিধা করতে পারিনি। একদিন আমাদের ব্যাচের মেয়ে তৃনা ছিল লাইব্রেরির ভলেন্টিয়ার। আমি বাংলায় ওর কাছে একটা বই চাইলাম বলে ও বললো- You should speak English. আমি বললাম- Yeah, Yeah, sure. এই ইংরেজি ভাল না বলতে পারার কারনে কোন ভাইভাতেই বি এর উপরে পাইনি। যাই হোক, পাঠকরা আমাকে আবার ফেল্টু ইস্টুডেন্ট ভাইবেন না। মাস্টার্স পাশ করা পর্যন্ত আমি ইংরেজি বলাটা ভাল করেই রপ্ত করেছিলাম, যে কারনে কেরিয়ারের শুরুতে দুই বছর একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করতে আমার তেমন অসুবিধা হয়নি

স্কুলে পড়ার সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলাম। আমাদের স্কুলের ক্যাপ্টেন হওয়ার বাড়তি একটাই সুবিধা ছিল। টিফিন বেশি হলে অইটা ফার্স্ট ক্যাপ্টেন আর সেকেন্ডে ক্যাপ্টেন ভাগাভাগি করে খেত। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস ক্যাপ্টেন হলে মনে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। যে কারনে দেখলাম আমাদের ব্যাচে কে ক্যাপ্টেন হবে তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনই করতে হয়েছিল। আমাদের ক্যাম্পাসে ক্লাস ক্যাপ্টেনকে ক্লাস মনিটর বলা হতো। ক্লাসের পারফরম্যান্স, রেসপন্স দেখে বুঝা যায় যে কে মনিটর হতে চায় বা হতে পারবে। আমাদের ব্যাচে এমন দু তিনজন পাওয়া গেল। নোমান, জহির, আবুল হোসেন। পরে আমরা একটা নির্বাচন করলাম। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নোমান ক্লাস মনিটর নির্বাচিত হলো। ওদের সাথে সম্ভবত মিঠুও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো। কিন্তু পারে নাই। ভার্সিটিতে মনিটরদের অনেক গুরু দায়িত্ব। টিচাররা খেয়াল খুশি মতো ক্লাসের টাইম, টার্মটেস্টের ডেট টাইম, ক্লাসরুম পরিবর্তন করতো বিধায় মনিটর হয়ে নোমানের দায়িত্ব বেড়ে গেল অনেক। নোমান অবশ্য ভালভাবেই দায়িত্ব পালন করেছে। ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলো ও। ক্লাস টপার আর একইসাথে মনিটর হয়ে নোমান এমন অবস্থায় পৌছলো যে আমরা শিউর ও ই আমাদের ব্যাচ থেকে নিশ্চিত টিচার হবে। এজন্য আগে থেকেই নোমানকে অনেকেই নোমান স্যার বলে সম্মোধন করতো। থার্ড ইয়ারের পরে লুতফর (সার্টিফিকেটে নাম ছিল লওপটর ) ক্লাসের মনিটর হয়ে মনিটরশিপকে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেলো। তার এক্টিভিটি দেখে আমাদের মনে হতো যেন ওর জন্মই হয়েছে ক্লাসের মনিটর হওয়ার জন্য। হিল্লোল রায়ও অবশ্য মনিটর না হয়েও কমুনিকেশনে অনেক এক্টিভ ছিলো।

সারাদিন ক্লাসটাশ করে হলে ফিরে যাই, খাওয়াদাওয়া অনিয়মিত। প্রতিদিন বিকেলের দিকে হলের কাছে সুমন-লিটন মামার দোকানে ছোলা-মুড়ি, পুরি, চা সিগারেট খাই। শুনলাম প্রায় অই সময়েই আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে ক্লাসের সবাইকে একটা করে মিসকল দেয়। খুবই ভাল আইডিয়া। ক্লাসের সবার সাথে কানেক্টিভিটির উত্তম চর্চা। তখনও যে ফেসবুক- মেসঞ্জার আমাদের পায়নি। তো সবাই মিসকল পায়, কিন্তু আমি পাইনা। পরে দেখলাম যে আমার ফোন নাম্বারটি ওর কাছে নাই। তার নাম্বার কালেক্ট করে আমি নিজেই তাকে মিসকল দেয়া শুরু করলাম। একদিনের মধ্যেই সে আমাকে চিনে ফেললো। তারপর থেকে সবার মতো আমিও নির্দিষ্ট সময়ে ওর কাছ থেকে মিসকল পেতে থাকলাম। ক্লাসে অলরেডি তার ভাল একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়ে গেলো৷ এই মেয়েটি ছিলো অনুপমা দাস। এমন করতে করতে হঠাত করেই একদিন শুনি যে আমাদের তুষারের সাথে তার টেক্সটিং চলছে। এরই মধ্যে তুষার প্রপোজও করে ফেলছে। আমি তখনো কিছু জানিনা। ননি আমাদের জানালো যে অনুপমা রিপ্লে দিবে। হ্যা বা না একটা কিছু। চরম উত্তেজনা নিয়ে সার্কেলের সকলেই ক্যাম্পাসের গোল চত্তরের পাশে গোল হয়ে বসে রইলাম। তুষারের ফোনে মেসেজ আসলো 'ইয়েস'। সকলেই হই হই করে উঠলাম। প্রেম হয়ে গেলো। আমরা
খুশিতে সেলিব্রেট করার জন্য ভার্সিটির বাসে উঠে টিলাগড় চলে গেলাম। ওখানে এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে বসে তুষারকে আইটেম বানানোর ফন্দি আটলাম। আমরা তুষারকে বললাম যে মেসেজে ইয়েস দিয়ে কাজ হবেনা। তুই এখনই ফোন দিয়ে আই লাভ ইউ বল। তুষার বোকাচন্দ্রের মতো অনুপমাকে ফোন দিয়েই বলে ফেললো - আই লাভ ইউ। অনুপমা এতটাই বিব্রত হলো যে তুষারকে ধমকে ফোন কেটে দিলো। আমরা সেই মজা পেলাম। ৫/৬ বছর ক্যাম্পাসে ওদের প্রেম দেখেছি কিন্তু সম্পর্কটা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। এ নিয়ে এখানে স্মৃতিচারণ না করলেই মনে হয় ভাল হতো।



নেটে একটা মিম দেখলাম। মিমে বলছে যে যদি দেখেন একদল ছেলেমেয়ে একসাথে কারো জন্মদিন সেলিব্রেট করতেছে তাহলে বুঝবেন যে ওরা ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। আমি হাসলাম। সত্যিই তো তাই। ক্যাম্পাসে আগত নিউ কামাররাই নিজেদের মধ্যে প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে উঠার আগেই ক্লাসের কারো জন্মদিন উদযাপনে এই আলগা পিরিতিটা দেখায়। আমার ক্ষেত্রেও এমন হলো। ক্লাস শুরুর দিকে কেউ একজন সবার জন্মতারিখ লিখে নেয়। সামনেই আমার জন্মদিন। ক্লাসের বন্ধুবান্ধবরা কখনো এর আগে আমার জন্মদিন উপলক্ষে কোন পার্টি-টার্টি করেনি। তাই এবার এমন হবে তা ভাবিনি। ক্লাসের নতুন বন্ধুরা আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যে গোপনে নিজেদের মধ্যে চাদা তুলে আমার বার্থডে পার্টির আয়োজন করলো। জন্মদিনের দিন একেবারে আমার সামনে কেক আনার আগ পর্যন্ত আমি কিছু টের পাইনি। সবাই মিলে আমাকে ভাল একটা সারপ্রাইজ দিলো। ওইদিন আমার সাথে উর্মি নামে আরো একজনের জন্মদিন ছিলো। আমি জানতামই না। পরে দুজন একসাথে কেক কাটলাম, সবাই মিলে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া করে অনেক মজা করলাম। আমাদেরকে ব্যাচের পক্ষ থেকে একটা করে ডায়েরি উপহার দেয়া হলো। ডায়েরিটা এখনো আমার কাছে আছে। ডায়রির প্রথম পাতায় নিচের এই লিখাটা সম্ভবত তান্না লিখে দিছিলো-




এরপর আর কারো জন্মদিন এভাবে পালন করা হয়নি। এরপরের বছর অবশ্য উর্মি আর আমি মিলে দুজনের জন্মদিন একই সাথে পালন করেছিলাম। একসাথে এভাবে জন্মদিন পালন করতে যেয়ে কেউ হয়ত ভেবেছিলো উর্মি আর আমার মধ্যে একটা কিছু হয়ে যাবে। কিন্তু তেমন কিছু আসলে হয়নি। আমরা এখনো ফ্রেন্ডস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.