![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফার্স্ট ইয়ারের এক সেমিস্টার দুই সেমিস্টারের মধ্যে বন্ধু বান্ধবদের সাথে খাতির হয়ে গেছে। আমাদের বিড়িখোরদের স্বাভাবিকভাবেই একটা গ্রুপ হয়ে গেলো। সবার সাথে ভাল সম্পর্ক। এর মধ্যে একজনের সাথে খটকা লাগলো। শামিম শাহ। জামালপুর জিলা স্কুলে পড়ার সময় শামিম ছিল আমার এক ক্লাস সিনিয়র। একসাথে হোস্টেলে ছিলাম বলে সে ছিল বড় ভাই। কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে সে সেকেন্ড টাইম চান্স নেয়ায় সে আমার ব্যাচম্যাট হয়ে গেল। ক্লাসের শুরুর দিকে আমি তাকে আগের মতই ভাই বলে সম্বোধন করতে লাগলাম। একই ব্যাচে পড়ে এই ভাই ডাক স্বভাবত শামিমের পছন্দ হয়নি। কিন্তু আমিও তার সাথে কমফোর্টেবল হতে পারছিলাম না। একদিন সন্ধ্যায় তার সাথে আমার শাহপরাণ হলের সামনে দেখা হলো। সে আমাকে নিয়ে চা খেতে খেতে বললো- বিপুল, দেখো, স্কুলে আমি তোমার সিনিয়র ছিলাম, কিন্তু এখন আমরা একই ব্যাচে পড়ি, এখানে আমি তোমার সিনিয়র না, তাই ভাই না বলে নাম ধরেই কথা বার্তা বলবা। শামিমের এমন সোজা শাপটা কথা আমার ভাল লাগলো। তারপর থেকে ওকে আর ভাই বলিনি। তবু ডিরেক্ট শামিম নামে ডাকতে আনইজি লাগত। তাই তাকে আমি শামিম বস বলেই ডাকতাম। এখনো সে শামিম বসই আছে। যোগাযোগ নেই যদিও।
ক্লাসে তখন কয়েকটা গ্রুপ। ভাল ছাত্রদের একটা, ভাল ছাত্রীদের একটা, আমির কমপ্লেক্স একটা, লেডিস হল একটা, টিউশনি পার্টি একটা, বাস ধরা পার্টি একটা, রাজনৈতিক পার্টি একটা, বখাটে দল একটা, সিলেটি একটা, নন-সিলেটি একটা - এরকম। এমন গ্রুপ হলেও সবার সাথে সবার ভাল সম্পর্কই। আমাদের গ্রুপ নন-সিলেটি -যাদেরকে সিলেটে আবাদি বলা হয়, সাথে যোগ দিল সম্রাট ও তানিম। যদিও তানিম মানিয়ে নিতে পারেনি। আর যেহেতু ভার্সিটিতে পড়ি, দুই একজন মেয়ের সাথে খাতির না থাকলে ভাব আসেনা। তাই মেয়েদের মধ্য থেকে তান্না ও ডালিয়া ছিল আমাদের গ্রুপে- শুরুতে। পরে তুষারের সাথে অনুপমার রিলেশন হয়ে গেলে অনুপমাও আমাদের দলের মেম্বার হয়ে গেল এবং শেষ পর্যন্ত ও আমাদের সাথে ছিল। চমৎকার একটা টাইম পার করেছি আমরা। সবাই জানে।
পহেলা বৈশাখ, ২০০৭। ওটাই ছিল ভার্সিটিতে আমাদের প্রথম বৈশাখ উদযাপন। স্কুল কলেজে পড়ার সময় পহেলা বৈশাখের আমেজ অত বোঝা যায়না। তাই ভার্সিটিতে আমাদের প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপন ছিল ওভারহোয়েলমিং। শিবলী ছিল আমার রুমমেট। আমরা একসাথে আগেরদিন লামাবাজার থেকে ২০০ টাকা দিয়ে পহেলা বৈশাখের ফতুয়া কিনলাম। রাত ১২টার পর ক্লাসের অনেকের কাছ থেকে শুভ নববর্ষের টেক্সট পাইলাম, আমিও অনেককে টেক্সট করলাম, যেনো মেসেজ না দিলে/পেলে নববর্ষ জমেনা।। ক্যাম্পাস ছাড়ছি কতো বছর হলো! এখন পহেলা বৈশাখে কারো কাছ থেকে কানা মেসেজও পাইনা, হেহ। আমি সবাইকে মেসেজ করলেও তান্নাকে মেসেজ দেই নাই। পরেরদিন সকালেই তান্না আমাকে ধরলো। বললো- কী রে, তুই আমাকে নববর্ষ উইশ করিলানা কেরে? আমি বললাম বাংলা নববর্ষের ইউশ করতে হয় প্রভাতে, এই যে এখন করছি- শুভ নববর্ষ। তান্না খুশি হলো। ক্লাসের অনেকেই ক্যাম্পাসে আসছে। মেয়েরা শাড়ি, ছেলেরা পাঞ্জাবি পরছে। সবাইকে অপূর্ব লাগছিলো। তবে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছিলো কলি কে। কলি সবসময় বোরখা পরত। অইদিনই প্রথম তাকে বোরখা ছাড়া দেখলাম। আমাদের ব্যাচে কলি একটা হতাশার নামই বলা চলে। কি একটা ঝামেলায় সে সাস্টে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। কিছুদিন পরেই বিয়ে করে বিদেশ চলে যায়। অইদিন আমি তান্নার সাথে রিক্সায় ঘোরার চান্স নিচ্ছিলাম। পরে দেখি শিবলী আর বাসিতও আছে এই লাইনে। পরে আর ঘোরা হয়নি। তান্না কোথায় চলে গেল আর খুজে পাইনি। ডালিয়ারও খোজ নেই। পরে আমরা কয়েকজন এমসি কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে বিকেলে আমাদের ক্যাম্পাসে চলে আসি। তৃনার সাথে দেখা হয়। শিবলী, হোসেন, তৃনা আর আমি হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে বসে পহেলা বৈশাখের কালচারাল প্রোগ্রাম দেখে যে যার মত চলে আসি।
ভার্সিটি লাইফের প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপন, আরও অনেক কিছু ছিল- এখন মনে নেই।
ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট আমাদের ফ্রেশার্স রিসিপশন আয়োজন করে, যদিও এক সেমিস্টার পরে। তারপরেও অই অনুষ্ঠান আমাদের জন্য অনেক স্মৃতিবহুল। আমি শাহপরাণ হলের পিছনে দিলারা হান্নান হলে থাকি। শিবলী ছিল আমার সাথে, কিন্তু ততোদিনে দিলারা হান্নান ছেড়ে শাহপরাণ হলে উঠে গেছে। জাতীয়তাবাদি ছাত্রদলের উঠতি নেতা- নিউ সেনসেশন শিবলী। ফ্রেশার্স রিসিপশন উপলক্ষে ইংলিশ কাউন্সিল ও সিনিয়ররা সন্ধার পরে রিহার্সাল করে। আমি জানতামই না। একদিন ক্যাম্পাসে ঘুরতে যেয়ে দেখি ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুমে লাইট জ্বলে। গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড। বেপক পরিসরে গান, নাচ, নাটকের রিহার্সেল চলছে। আমাদের ব্যাচের রিপন, হোসেন, জামান, বিশ্বজিত ছিল অইখানে। ওরা একটা কৌতুক করবে। আমি ডেমো দেখলাম, কিন্তু মজা পাইলাম না। পরে সেখানে শিবলী, তুষার, সম্রাট আসলো। সম্রাট আর তুষার ছিল ব্যান্ডদলের অংশ। পরে আমি আর রিহার্সালে যাই নাই। একেবারে রিসিপশনের দিন মিনি অডিতে হাজির হলাম। রিসিপশনের অনাড়ম্বর আয়োজন দেখে আমি অবাক। এত সুন্দর আর জাকজমকপূর্ণ হবে আমি ভাবতেও পারিনি। প্রোগ্রামে তাহসিন স্যার মাউথ অর্গান বাজাইছিল। টিচাররা যে স্টুডেন্টদের সাথে পারফর্ম করে তা আমার ধারণায় ছিলনা। সেদিন একই সাথে ৫/৬ ও ৬/৭ ব্যাচের রিসিপশন দেয়া হয়েছিল। শুনেছিলাম আমাদের সবাইকে ক্রেস্ট দিবে। পরে দেখলাম সময় স্বল্পতায় সবাইকে আর স্টেজে নিয়ে ক্রেস্ট দিলোনা। প্রতি ব্যাচ থেকে দুইজন করে চারজনের হাতে ইনাগুরেশন ক্রেস্ট দেয়া হলো। আমাদের ব্যাচ থেকে ক্রেস্ট নিলো নোমান আর তামান্না। শুনলাম নোমানকে বলা হয়েছিল ক্রেস্ট নেয়ার জন্যে - একজন ছেলে ও একজন মেয়েকে সিলেক্ট করতে। নোমান তার সাথে তামান্নাকে সিলেক্ট করলো। এই নিয়ে আমাদের মধ্যে কানাঘোষা হয়েছিলো কিছুটা। প্রোগ্রামে রিপন-হোসেন-জামানদের কৌতুকাভিনয় দেখে আমি হতবম্ব। এত চমৎকার আর হাসির ছিল অইটা। বেস্ট অয়ান অফ দ্যা প্রোগ্রাম। ওদের কস্টিউমটাও ছিল চমতকার। রিপনের চেয়ারম্যান লোক- ভুড়িওয়ালা পেট চরম হাস্যকর ছিল। অই কৌতুকটা করে ওরা ডিপার্টমেন্টে বেপক পরিচিতি পেয়ে যায়। স্যাররা ক্লাসে এসেই এই আলাপ করতো, ওদেরকে খোজত।
(চলবে.....।)
আগের পর্বগুলো পড়তে-------
দোজ ওয়ার দ্যা বেস্ট ডেইজ অব মাই লাইফ (পর্ব ১)
দোজ ওয়ার দ্যা বেস্ট ডেইজ অব মাই লাইফঃ পর্ব ০২
দোজ ওয়ার দ্যা বেস্ট ডেইজ অব মাই লাইফঃ পর্ব ৩
©somewhere in net ltd.