![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক বছর পার হলো। তখন ডিপার্টমেন্টের বাইরে অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেপেলেদের সাথে হল/মেস/পলিটিক্স/সংগঠন এর উপর ভিত্তি করে ফ্রেন্ডশীপ হয়েছে। শিবলী হলের লিডার। শিবলীর নেতৃত্বে শাহপরাণ হলের কোন একটা রুমে বসে ঠিক হলো আমাদের ব্যাচের প্রথম বর্ষপূর্তী উপলক্ষ্যে আনন্দ র্যালীর আয়োজন করা হবে। আমাদের সাথে অনেকেই ছিল তার মধ্যে এনথ্রোফোলজির আকাশ, টু্টন, বাংলার বেলালসহ কয়েকজন নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। ১২ নভেম্বর ২০০৭। ক্যাম্পাস লাইফের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২০০৫/০৬ ব্যাচের সকল বিভাগের স্টুডেন্টদের নিয়ে দারুণ একটা র্যালি হলো। আমাদের ডিপার্টমেন্টের অনেকেই ছিল। তবে র্যালীতে যোগ দেয়ার জন্যে অনুপমা আর তৃণা বিশেষ অনুরোধ করে এনেছিলাম। কারণ র্যালিতে এনথ্রোফোলজির অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়েরা ছিল। আমরা ভাবলাম আমাদের ডিপার্টমেন্টের কোন মেয়ে না থাকলে চলে না। অই সময় নীলমনিকে দেখলাম এনথ্রোফোলজির সুন্দর চাকমা লুকের ছোটখাটো একটা মেয়ের সাথে খাতির জমাচ্ছে। নীলমনিকে বললাম- কীরে গার্লফ্রেন্ড নাকি? নীলমনি বললো- না, ফ্রেন্ড।
আমাদের দৃষ্টি তখন অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের মেয়েদের দিকে পরতে শুরু করলো। আমাদের পাশেই ছিলো বিবিএ ডিপার্টমেন্ট। বিবিএর একটা মেয়েকে দেখে ভাল লাগলো। তার নাম/ব্যাচ জানিনা। ডি বিল্ডিং আর ক্যাম্পাসের এদিক সেদিক গেলে প্রায়ই দেখা পাই। কিভাবে কি মনে নেই, একদিন মেয়েটিকে দেখিয়ে আবুল হোসেনকে বললাম- কেমন, হুমম? আবুল হোসেন বললো- চল আলাপ করি। অইদিন ডি বিল্ডিংয়ের করিডোরে তাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমাকে সাথে নিয়ে আবুল হোসেন সোজা মেয়েটিকে বললো- আপনি কিসে পড়েন? মেয়েটি বললো- বিবিএ ২/১। মানে আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়ার। তো আমরা আর কিছু না বলে চলে এলাম। আর কোন দিন কিছু করিনি। আবুল হোসেনের এই ঘটনা মনে আছে কিনা জানিনা। অনেকদিন পরে জেনেছিলাম আপুটার নাম সম্ভবত তিশি ছিল। শীতের সময়। আরেকদিন দেখি- লাইব্রেরি বিল্ডিং হতে একটা মেয়ে এ বিল্ডিং এর দিকে যাচ্ছে। লম্বা, কালো শাড়ি পরা, চোখে চশমা, চুল খোলা, হেটে যাছে, পায়ে সুন্দর জুতা। ভালো লাগলো। পিছে পিছে এ বিল্ডিং এ গেলাম। অইখানে পরিচিত একজনকে বললাম- ইনি কে? সে বললো- আনিকা ম্যাডাম, লেকচারার, সিএসসি ডিপার্টমেন্ট। তো আর কিছু না বলে চলে এলাম। এর মধ্যে ননী গোপাল হাদিকাতুন নুঝুমকে আবিস্কার করলো। নুঝুম ছিল বিবিএর আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র। অই সময়ে ক্যাম্পাসের অন্যতম সুন্দরী। আমাদেরও ভালো লেগেছে। যাকে ভাল লাগে তাকে 'আমার ক্রাশ' বলা তখনো শুরু হয়নি। তবু ননীর দেখাদেখি নুঝুম আপু ছিল আমাদের সকলের ক্রাশ। ক্যাম্পাসে যেখানেই দেখা হোক ননীকে ডেকে বলতাম- ননী, দেখ দেখ নুঝুম যাচ্ছে। ননী ফাল দিয়ে উঠতো। এইগুলা আমরা করতাম। কখনো খারাপ উদ্দেশ্যে না। প্রেম করা, মেয়ে পটানো, টাংকি মারা- এইগুলার প্রতি আমাদের ঝোঁক খুব বেশি ছিলনা। যা করতাম মজা করার জন্যেই। এখন সুযোগ থাকলেও শত চেষ্টা করে অইরকম মজা আর করা যাবেনা। আর হবেনা।
ডিপার্টমেন্টের রেগুলার কোর্সের পাশাপাশি মাইনর কোর্সের ক্লাস চলে। ইকো-১০৩, প্রিন্সপাল অব ইকোনোমিক্স, ৪ ক্রেডিট। ক্লাস নিচ্ছেন ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টের হেড রেজাই করিম স্যার। ক্লাসে আমার মনোযোগ কম। তবু স্যারের বাচন ভংগি দেখে মনোযোগ দিয়ে লেকচার শুনছি। কখন যে একটা বড় হাই তুলছি, স্যার দেখে ফেলছেন। আমাকে দাড়া করালেন, আমি যেভাবে হাই তুলেছি সেভাবে হাই তুললেন, তারপর বললেন- এইগুলা কী, হ্যা, এইগুলা কী? দাঁড়িয়ে থাকো কিছুক্ষণ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। আরেকটা মাইনর কোর্স চলছে। সক-১০১বি, প্রিন্সিপাল অন সোসলজি। ক্লাসে এলেন সোসলজি ডিপার্টমেন্টে সদ্য যোগদান করা তরুন এক শিষক, নাম ছিল সম্ভবত কামরুল, ঠিক মনে নেই। সেই ক্লাস নিচ্ছেন। দুই তিনটা ক্লাস নিয়েই একদিন আমাদের ক্লাসের সকলের হাতে একটা করে পেইজ দিয়ে বললেন- তোমরা সবাই আমার সম্পর্কে লিখ। আমরা বললাম- কী লিখব স্যার?। স্যার বললো- আমার সম্পর্কে তোমাদের ইম্প্রেশন ভাল হলে ভাল, খারাপ হলে খারাপ, যেটা ইছা লিখ। আমরা সবাই ভাল ভাল কথা লিখে জমা দিলাম। আমাদের ভাল ভাল কথা পড়ে সে অনেক সন্তুষ্ট মনে হলো। কিছুদিন পরে শুনলাম- কোন এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর জন্যে তার চাকরি চলে গেছে। হেহ।
সেকেন্ড ইয়ারের শুরুটা হয়েছিল চমৎকারভাবে। আমাদের গ্রুপের সবাই মিলে বাঁধাঘাটে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ওটাই ছিল আমাদের প্রথম কোন ট্রিপ। অনেক স্মৃতিবহুল। একদিন দুপুরের আগেই ক্লাস শেষ হয়ে গেলো। তুষার ননী শিবলীকে বললাম চল কোথাও যাই। আলাপ করতে করতে ঠিক হলো- বাঁধাঘাট যাওয়া যায়। টুকের বাজার পার হয়ে কাছেই। নদী আছে, চর আছে। দুই একজনকে বলতে বলতে সবাই রাজি হয়ে গেল। বাসিত, শামিম বস, তুষার, ননী, শিবলী, তানিম আর আমি। মেয়েদের মধ্য থেকে অনুপমা তো যাবেই (তুষার যাচ্ছে যে)। অনুপমা তৃণা আর মনিকে রাজি করালো। ভার্সিটি গেট থেকে লেগুনা করে সরাসরি বাঁধাঘাটে চলে গেলাম। কিছু শুকনা খাবার কিনে নিলাম। ঘাট থেকে একটা নৌকা ভাড়া করা হলো। নৌকায় করে নদী ভ্রমন শুরু হলো।
দুই পাড়ে কোন বাড়ি ঘর নেই। প্রায় ঘন্টাখানিক নদীতে ঘুরলাম। অইদিন আমরা সম্পূর্ণ হুজুগের উপরে চলেছি, কিন্তু অইভাবে বাধাঘাট যাওয়াটা ঠিক হয়নি, যা অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। কারণ আমাদের মতো একইভাবে বাঁধাঘাট ঘুরতে যেয়ে ২০১০/১১ সালে অনিক খায়রুল সন্ত্রাসীদের হামলায় খুন হয়েছিলো। যাই হোক, আমাদের কোন বিপদ হয়নি। নৌকা থেকে নেমে আমরা কিছুক্ষণ হেটে একটা গ্রাম পার হয়ে নদীর কিনারার চরে চলে আসি।
জায়গাটা সুন্দর। আমরা সিদ্ধান্ত নেই অইখানে সবাই মিলে গুল্লাছুট খেলব। পরে দুইভাগে ভাগ হয়ে গুল্লাছুট খেলা শুরু করি। অনেক মজা হচ্ছিলো। মনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মজা পাইছে। সবাই খেলার দম দিছি। যখন অনুপমার টার্ন আসলো- সে আর দম দিতে পারেনা। কারণ তুষার ছিল তার বিপক্ষ দলে। নতুন প্রেম তো, তাই লজ্জা পাছিলো। অনেকক্ষণ খেলা হলো। গ্রামের পোলাপান আমাদের খেলা দেখতে ভিড় করে ফেললো। খেলাও শেষ এর মধ্যে। এরপর আমরা ছেলেরা নদীতে নামি গোসল করার জন্যে। সবাই খালি গায়ে পানিতে নামছি। আমাদের খালি গা দেখে মেয়েরা দূরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ নদীতে ঝাপাঝাপি হলো। অতঃপর শেষ বিকেলে সবাই একসাথে ক্যাম্পাস গেটে চলে এলাম। ভার্সিটি গেটে হালকা খাওয়াদাওয়া করে যে যার মত চলে গেলাম। অসাধারণ ট্যুর। ট্যুরের পর থেকে আমাদের গ্রুপের বন্ডিং আরও সুদৃঢ় হলো।
©somewhere in net ltd.