পহেলা বৈশাখে ভূতের খপ্পরে

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

সে অনেক দিন আগের কথা।
আগে প্রতিবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মেলা বসত আমাদের গ্রামে।
মেলার ৪/৫ দিন আগে থেকেই গ্রামে সাজ সাজ রব পরে যেত। মেলা প্রাঙ্গন সাজানো, অতিথিদের দাওয়াত দেয়া, মেলায় দোকান বসানো এসব নিয়ে কয়েকদিন খুব ব্যাস্ত থাকত সবাই।
আমরা ছোটবেলায় এসবে খুব একটা পাত্তা টাত্তা পেতাম না।
যে ঘটনাটার কথা বলছি সেবারই প্রথম আমরা সমবয়সী যারা ছিলাম তারা একটু পাত্তা পাচ্ছিলাম।
বড়রা কেউ কিছু করতে বললে তা দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে করে দিচ্ছিলাম।
মেলার আগের দিন রাতে মেলার গেট সাজানো হচ্ছিলো। আমাদের মেলার গেটগুলো সাজানো হত কুলা, কলস, পাখা ইত্যাদি দিয়ে।
এগুলোউ আবার গেটের সাথে লাগানোর আগে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হত।
কুলা সাজাতে যেয়ে দেখা গেল রঙিন কাগজ শেষ।
আমার ওপর ভার পরল কাগজ আনার।
বাজারে গিয়ে দেখি আমাদের বাজারের সব কাগজ শেষ। যেহেতু পরদিনই মেলা, কাগজ আনতেই হবে।
সাইকেল নিয়ে ছুটলাম পাশের গ্রামে।
তখন রাত প্রায় সাড়ে দশটার মত হবে।
আর গ্রামান্চলে সাড়ে দশটা মানে অনেক রাত। দোকানদারকে ঘুম থেকে জাগিয়ে কাগজ নিয়ে যখন ফিরছি তখন ঘড়ির কাটা ১১ টা ছুঁইছুঁই।
আকাশে দশমী বা একাদশির চাঁদের সাথে মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছে।
আমি আস্তে আস্তে সাইকেল চালিয়ে ফিরছি।
হঠাৎ কেমন যেনো একটা শো শো শব্দ আসছিল পেছন থেকে। আমি তখন সবে ক্লাস নাইনে, পিছনে তাকাবার সাহস হচ্ছিলো না।
আমি জোরে জোরে সাইকেলে প্যাডেল করতে থাকি। কিন্তু মনে হচ্ছিলো যত জোরে প্যাডেল করছি, শব্দটাউ ততোই বাড়ছিলো।
আর এত জোরে প্যাডেল করা সত্তেউ সাইকেল ঐভাবে এগোচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো যেন কেউ পিছন থেকে টেনে ধরে আছে সাইকেলটা।
আমার সমস্ত শরির বেয়ে ঘাম ঝড়ছে আর গলা শুকিয়ে কাঠ।
একটা পর্যায়ে আমার সাইকেলটা পুরোপুরি থেমে গেলো। আমি এগোনোর জন্য প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছিলাম কিন্তু পারছিলাম না।
আমি প্যাডেল এর উপোর পুরোপুরি দাড়িয়ে গেছি,তবু এক ইন্চি এগোতে পারলাম না। আমি সাইকেল সহ পরে গেলাম রাস্তার উপর।
পরার পরেই আমি বন্ধ করে ফেলেছি। আমার চিন্তা যে আজ শেষ আমি।
এক দেড় মিনিট পার হওয়ার পরেউ কিছু হচ্ছেনা দেখে আমি একটা চোখ সামান্য খুললাম।
আমার ধারনা ছিল আমার উপর বিশাল কোনো কালো ছায়া দেখতে পাব।
কিন্তু তা না দেখে একটু সাহস ফিরে পেলাম। ভালোমত দু চোখ খুলে দেখি যে না কিছু নেই আশেপাশে।
সাইকেল তুলতে গিয়ে দেখি ,সাইকেলের পিছনের চাকার সাথে একটা আম গাছের ডাল আটকে আছে।
তখন বুঝলাম শো শো আওয়াজটা আসলে ছিল আমের ডালের রাস্তার সাথে ঘষা খাবার আর ডাল না ছাড়ানোর কারনে পিছনের চাকা জ্যাম হয়ে সাইকেল থেমে গেছে।
হাসি পাচ্ছিলো নিজের বোকামো আর ভয়ের জন্য। ঘটনাটা কাছের দু একজন ফ্রেন্ড ছাড়া আর কারো সাথে শেয়ার করা হয়নি। আজ ব্লগে শেয়ার করলাম।


বাই দ্য রাস্তা, সবাইকে নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা।
শুভ নববর্ষ।

২২ টি +৩/-০