নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

ফেলুদার তোপসে

দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।

ফেলুদার তোপসে › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুকুর চুরি

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

আমার বাড়ির পিছনের পুকুরটি
চুরি হয়ে গেছে । একটু একটু করে
হয়ত কিছুদিন ধরেই হচ্ছিল
আমারই চোখে পড়েনি, আজ
সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই
চোখে পড়ল, পুকুরটা চুরি হয়ে গেছে ।


জানালার পাশেই, এই চারতলা বাড়িটির
সমান উচ্চতার ছিল একটি গাছ ।
নাম না জানা একটি গাছ। ছোট ছোট
মুশুর ডালের মত দানায় ভরে
গোটা গাছ, কিছুদিন পরেই তাতে
ফুটত হলুদে কমলায় মেশানো ফুল ।


এই ফুলগুলো যখন ফুটত তখন
ছাদের উপর থেকে গাছটিকে দেখলে
মনে হত যেন গাছে কোন পাতা নেই,
গোটা গাছ ছেয়ে আছে হলুদে কমলায়
এক না জানা ফুলে । সকাল বেলায়
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই -
প্রথমে দৃষ্টি থমকে যায়, গাছটা নেই ।


আর তার পরেই চোখে পড়ে পুকুরে-
অর্ধেকটা নেই! চুরি হয়ে গেছে
বাড়ির পিছনের পুকুরের অর্ধেকটা
আর তার আশে পাশের ঝোপ-ঝাড় আর
এই বড় চারতলা সমান উচ্চতার গাছটি ।


দাঁড়িয়ে পড়ি জানালার সামনে,
কাল সন্ধ্যেবেলায়ও তো এখানে
গাছটা ছিল, রাতের অন্ধকারে
কেটে ফেলে দিল একটা এত বড় গাছ!
কেউ দেখল না, কিচ্ছুটি বলল না?


গাছের আড়ালে কিছুদিন ধরেই
ঠুক-ঠাক শোনা যাচ্ছিল বটে,
দূরে খানিকটা ঝোপ পরিস্কার
করে তাতে এনে রাখা ইঁটের স্তুপ-
চোখে পড়েছিল কিন্তু পুকুরের
ঠিক মাঝামাঝি দেওয়াল তুলে
একপাশের অর্ধেক পুকুর বুজিয়ে
ভাগাভাগি হচ্ছে বুঝতেই পারিনি ।
ঝোপ কেটে পরিস্কার করা জায়গায়
হেঁটে বেড়াচ্ছে কয়েকটা পাখি,
এই গাছটিতে বুঝি এদের বাসা ছিল ।


কাটা গাছটা পড়ে আছে পাশেই,
সে এখনো মরেনি। খানিকটা প্রাণ
এখনো রয়ে গেছে সবুজ পাতায়,
গাছ জুড়ে বেরোনো ছোট ছোট
দানায়, আর কিছুদিন পরেই যারা
ফুল হয়ে ফুটত। দেওয়ালের এপাশে,
যেখানটায় পুকুর বোজানো হয়েছে
মাটি ফেলে, সেখানকার মাটি ভেজা
ভেজা কাদা কাদা । যেখানটায় ঝোপ
কেটে পরিস্কার করা হয়েছে অন্ধকারে
সেখানে আছে কয়েকটা ছড়ানো ছিটানো
কচু গাছ। কচুবনের অবশিষ্টাংশ ।


এই গাছটাতে এসে বসত একটা ধনেশ ।
রোজ আসত না, মাঝে মাঝে এসে বসত ।
মাছরাঙাটা পুকুর থেকে মাছ ঠোঁটে করে
তুলে এনে বসত এই গাছটায়। শালিখ
আর টুনটুনিরা রাতদিন কিচির মিচির
কিচির মিচির। আর গোটা বসন্ত
তারপরেও গোটা গৃষ্মকালটা জুড়ে
এই গাছে বসে কান ঝালাপালা করেছে
একটা কোকিল। মাঝরাত্তির থেকে
শুরু করতো সে কুউউউ ....কুউউউউ ....
মাঝে মাঝে ডাকতে ডাকতেই উড়ে যেত
দূরে কোথাও, খানিক পরেই ফিরে এসে
আবার সেই কুউউউ .... কুউউউউউ ....
সন্ধ্যের পরেও শোনা যেত তার ডাক।
এমনকি অসহ্য রাতের অন্ধকারেও -


পেছনের এই ঝোপঝাড় কেটে
পরিস্কার করা হয়েছে, ওখানে
বাড়ি উঠবে বলে । প্রমোটারের হাত
অনেক লম্বা, সরকারি আইনের
ফাঁক-ফোকর সে মুঠো মুঠো
মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়-
এই ভাবে চুরি হয়ে যায় গ্রীষ্ম,
বসন্তের কোকিল, হলুদ ফুলের
গাছের তলায় হারিয়ে থাকা কচুবন
আর আমার লেখালিখির অর্ধেক পুকুর ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬

সুমন কর বলেছেন: এই ভাবে চুরি হয়ে যায় গ্রীষ্ম,
বসন্তের কোকিল, হলুদ ফুলের
গাছের তলায় হারিয়ে থাকা কচুবন
আর আমার লেখালিখির অর্ধেক পুকুর ।
সুন্দর এবং +।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৭

ফেলুদার তোপসে বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.