![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।
আমার এক বন্ধু কিছু দিন আগে ফেসবুকে ছোট্ট একটা পোস্ট শেয়ার করেছিল। অবনী অনলাইনে আছো?
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়ে এই ধরনের রসিকতা প্রথমে আমার ভাল লাগেনি। পরে মনে হল, সত্যিই তো, আজকের ডিজিটাল যুগে কি এই কবিতা লেখা যেত? বা আরও নির্দিষ্ট করে, অবনী বাড়ি আছো, এই লাইন আজকের কোনও কবি কি লিখতে পারতেন? কারণ, দরজায় কড়া নাড়ার আগেই তো মোবাইলে তিন বার দুজনের মধ্যে কথা হয়ে যেত।
শুধু তাই বা কেন? আজ যদি ডাকঘর’ লেখা হত? সেই ডাকঘরের অমল কি তাহলে চিঠির বদলে রাজার হোয়াটসঅ্যাপের জন্য অপেক্ষা করত? সেভ করে রাখত সুধার মোবাইল নম্বর! বা, অমল ভিডিও দেখত স্মার্ট ফোনে!
আমার আর এক বন্ধু অরিন্দমের (নাম বদলানো হয়েছে) প্রসঙ্গে আসি। সেকটর ফাইভে চাকরি করছে অরিন্দম। ওকে নিয়মিত বিদেশ যেতে না হলেও, অরিন্দমের বেশ কয়েক জন স্কুল-কলেজের বন্ধু সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তাঁরা আছেন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, চিন, কানাডা, কাতার, লিবিয়া, নাইজেরিয়া-সহ প্রায় গোটা পনেরো দেশে। ফলে এক জন যখন ঘুমোন, অন্য জন তখন আপিস করছেন। তাদের নিজেদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। অরিন্দমদের এই গ্রুপে সূর্যাস্ত হয় না। ওরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে, এই হল আমাদের সীমান্তবিহীন হোয়াটসঅ্যাপ দুনিয়া। বলা যায়, অনু-বিশ্বায়ন।
কিন্তু মুর্শিদাবাদে, বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা গ্রামের ছেলে মুকিবরের (নাম বদলানো হয়েছে) চিন্তা কখনই ওই সীমান্তবিহীন দুনিয়ায় পৌঁছতে পারছে না। তার কাছে আবার সীমান্তই রুটি-রুজি। সীমান্তই জীবন। সীমান্তই বিএসএফের বন্দুক। সীমান্তই ভয়। মৃত্যুও ছুঁয়ে থাকে ওই সীমান্তকেই। দিনের শেষে দুটো জিনিস সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দিতে না পারলে মুকিবরের পেট চলে না। যদিও মুকিবর যখন দুটাকা কিলো চালের লাইনে রোদে পুড়ছে, অরিন্দম হয়তো তখন, কোনও ভিসা অফিসের ওয়েটিং রুমে। দুজনের মধ্যে মিল একটাই, দুজনেরই একটা করে ভোট। সরকার তৈরির।
১৯ শতকের গোড়ায় স্লোগান উঠেছিল দুনিয়ার মজদুর এক হও। যে ডাক কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো হয়ে, ১৮৬৪ সালে প্রথম কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকেও গৃহিত হল। সেটাই হয়তো ছিল প্রথম বিশ্বায়নের ডাক। বলা হয়, গ্লোবালাইজেশন, এই শব্দটা ৭০-এর দশকে তাদের ক্রেডিট কার্ডের পেছনে প্রথম লিখতে শুরু করে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক (মহাশান্তির পরে বিশ্ব-পার্থ চট্টোপাধ্যায়)। আর, কী আশ্চর্য, ওই ৭০-এর দশককেই মুক্তির দশক করার ডাক দিয়েছিলেন চারু মজুমদার। যা নিয়ে মণিভূষণ ভট্টাচার্যের কবিতা, কোথায় বিপ্লব, শুধু মরে গেল অসংখ্য হাভাতে..।
সমাজতন্ত্রের বিশ্বায়ানের ডাক গত শতকের শেষ দশকেই ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। অন্য দিকে ক্রেডিট কার্ডের সেই বিশ্বায়নের ডাকের অশ্বমেধের রথের ঘোড়াকে কেউ এখনও রুখতে পারেনি।
গ্লোবালাইজেশনের ভিতরে অদ্ভুত এক আলো- অন্ধকারে মুকিবর এবং অরিন্দম দুজনেই পথ হাঁটিতেছে। বেলা বেড়ে চলেছে।। আলোও বাড়ছে। কিন্তু অন্ধকার কমছে না!
কোনও আচ্ছে দিন, কো্নও মুক্তির দশকের ডাকই এই অন্ধকারের সমকক্ষ নয়। মেনে নেওয়াই ভাল, এই অঙ্কটা মেলেনি। এর উত্তর আমাদের জানা নেই। হল্ কালেকশন করেও অঙ্কটা মেলানো যাচ্ছে না। অথচ, অবনী বাড়ি আছো, এই কবিতা লেখার পরিপ্রেক্ষিতটাও হারিয়ে যাচ্ছে, অমলের দইওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে।
এই রকম এক সময়ে, উত্তর আসবে না জেনেও, মাঝে মাঝে কোনও এক অজানা দরজার সামনে গিয়ে ফিস ফিস করে বলতে ইচ্ছে করে, ভালোবাসা, বাড়ি আছো?
২| ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪৮
সুব্রত দত্ত বলেছেন: চমৎকার লেখনী। খুব ভালো লাগল পোস্টটা। তবে পুরো লেখায় একটা হাহাকার, অস্তিত্বহীনতার ভয় অথবা অালো-অাঁধারে যে ভীতি লক্ষ করা গেছে, তা থেকে অাদৌও মুক্তি অাসবে কিনা সন্দেহ।
৩| ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:০০
সুলতানা রহমান বলেছেন: দারুণ!!
গ্লোবালাইজেশনের ভেতরেও এক অদ্ভূত আলো! আমরা যারা চিঠি, ডাকপিয়নের এ ব্যাপারগুলো দেখেছি তাদের কাছেই এসব অমূল্য। অনেক আগে রেডিও তে একটা অনুষ্ঠান প্রচার হতো। সেখানে যারা লিখতো তাদের লেখা পছন্দ হলে তিনি তাদের চিঠি লিখতেন। সাদা খামে, কী যে ভালো লাগতো! খালি অপেক্ষা করতাম।
এর পরের জেনারেশন চিঠি কি বুঝতে পারবে না, তারা উল্টো বলবে, কী দরকার এত কষ্ট করার!
শেষের দিকটা খুব ভালো!
৪| ২৩ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৩৬
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: নেই ভালবাসা বাড়ি নেই, ও পার্কে!
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:১০
জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: পোস্ট টা পড়ে আমারো বলতে ইচ্ছে করছে, ভালবাসা, বাড়ি আছো?