নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

ফেলুদার তোপসে

দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।

ফেলুদার তোপসে › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহর গ্রাস করে নেয় আমাদের যাপনচিত্র

২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:৩০


স্বাধীনতার পর নানা কারণে আমাদের মতো যতো পরিবার এসে বসবাস স্থাপন করেছিল বারাসাত, বনগাঁ, হাসনাবাদ এরকম সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে তাদের জীবনের একটা নির্দিষ্ট যাপনচিত্র গড়ে উঠেছিল সময়ের সাথে সাথে। এ দেশিওদের সাথে আমাদের মিশ্র সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব একটা সংস্কৃতি ও সভ্যতা গড়ে উঠলেও একটা দুটো বিষয়ে আমাদের শিকরের টান তেমন যায়নি। যেমন ভাষার টান। ছোটবেলায় আমি এরকম একটি বাঙাল ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে পরবর্তীতে যখন কলকাতায় পড়াশুনা করতে গেছি তখন কলকাত্তাই শহুরে মার্জিত ভাষার মধ্যে পড়ে খানিক বিব্রতই হয়েছি বলতে গেলে।
এতদিন শহরে পড়াশুনা করেও আমি আমার ভেতর থেকে বাঙাল ভাষার টানটা ঠিক ছাড়তে পারিনি। ছাড়তে চাইনি বলতে গেলে। এখনও কেউ বাঙাল ভাষায় কথা বললে মনটা ভরে ওঠে। মনে হয় অনেকখানি কথা একসাথে বলে ফেলি। আমরা যারা ওপার থেকে এপার এসেছি তারা স্বাভাবিক ভাবেই খাদ্য-রসিক। সামান্য হলেও হুজুগ প্রবাহী। এ হুজুগ যেমন তেমন হুজুগ নয়। এক্কেবারে পাগলামো। ছোটবেলায় মনে আছে মেঘলা দিনে স্কুল থেকে ফেরার সময় একটা গ্রামের দিকে মাঝে মাঝেই ঘুরতে যেতাম। খেতের পর খেত। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে আনন্দ ধান। ওটি আমার কাছে ছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। কোনদিন এটা বিশ্বাস করিনি কাঁটাতারের ওপারে রয়েছে কেবল বাংলাদেশ। সেখানে যেতে গেলে পাসপোর্ট লাগে। লাগেনি কোনদিন আমার। সেই মেঘলা দিনে বাড়ি ফেরার সময় মনে পড়তো মায়ের কথা খুব। মা এবং মাটি হয়ত অনেক কাছাকাছি দুটো শব্দ। কিন্তু সেই আবেগটা মন থেকে মুছে যায়নি কখনো।
এভাবে আমাদের শিকড়গুলো উপড়ে ছড়িয়ে যায় নানা স্থানে। আমার এক বন্ধুর সাথে ইদানীং কথা বলে চমকে গেলাম। সে বলল যে করেই হোক এখান থেকে অন্য কোথাও যেতে পারলে বাঁচে। আমি চমকে গেলাম। কেন এমন ভাবনা ওর মধ্যে? কর্মচিন্তা? নাকি দায়মুক্তি? আমার অনেক বন্ধুরা এখন বাইরের রাজ্যে। যারা বাইরে তাদের কি মন কেমন করে না নিজের জন্মস্থলটার জন্য, নিজের ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো জন্য, নিজের বন্ধুদের জন্য? নিশ্চয়ই করে, না করাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু তারা থাকে কি করে? কোনওদিন জিজ্ঞেস করিনি। করব না হয়ত কারণ এ আমি পারব না। ছোটবেলায় বন্ধুরা বলত আমি নাকি কুয়োর ব্যাং। তখন খুব রাগ হত কিন্তু আজ বুঝি কথাটা নেহাত ভুল নয়।
kolkata
আসলে আমরা সকলেই কুয়োর ব্যাং। শুধু মানুষ ভেদে কুয়োর আকারগুলো বড়। ব্যাস। এইটুকু। আমার জীবনের সমস্ত সার্থকটা লুকিয়ে আছে শিকড়ে, আমার ছেলেবেলার স্মৃতিগুলোর খুব কাছাকাছি – এটাই আমার নিজস্ব শান্তিদায়ি জীবন। তাই বলে তো ফ্যালনা নয়। এই আবেগ কি আমার একটুকরো জীবনের বাংলা? এই আমার বাংলাদেশ? যা রাজনীতি ও সীমান্তের সমস্ত ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে?
কিন্তু সেই জীবন কী চিরন্তন? প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে যে শহর গ্রাস করে চলছে আমাদের যাপন চিত্রকে। আমাদের সরল সহজ জীবন যাপনকে। প্রতিদিন মল-এ মলাকার জীবন যাপন। এক টুকরো ব্যালকনি ময় ত্রিশ টাকার সিঙ্গেল স্ক্রিনকে কেড়ে নিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স। সিনেমাওয়ালাদের দিন চলে কিভাবে? আজকাল? বাজারের মাছের গন্ধ, তরিতরকারির সতেজতা কে বাসি করে দিচ্ছে ঝাঁ চকচকে মার্কেট। তাহলে সেই সবজি ব্যাবসায়িরা, সেই মাছ বিক্রেতারা কি লটারির টিকিট কেটে পালতে দিতে চাইবে জীবনের মোড়? পুরনো গন্ধ মাখা বাড়িগুলোকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে তাদের বুকের উপর গোড়ে উঠছে কুৎসিত অনাড়ম্বর ফ্ল্যাট। মফঃস্বল ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে এক আধুনিক বস্তিতে। ঘিঞ্জি। যেখানে সবই সুলভ, কিন্তু সবই খুব হৃদয়হীন। মাঠ হয়ে যাচ্ছে রেলিং এ ঘেরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মফঃস্বলের বুক চিরে দেহ রাখছে একের পর এক অপুষ্ট ব্রিজ। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের শিল্প, সংস্কৃতি, লোকসমাজ, আড্ডা, বন্ধুত্ব এবং সব থেকে বড় বিষয় স্বাভাবিকতা।
এর নামই কী আধুনিকতা? হয়ত। কিন্তু পাড়ার মোড়ে মোড়ে বিরাট অযাচিত বড়ো আলোক স্তম্ভে যেমন নষ্ট হয়ে চলেছে পাখিদের নিভৃত জীবন, তেমনি এই আধুনিকতার গুঁতোয় নষ্ট হয়ে যায় আমাদের দীর্ঘ লালিত শান্তি। ফলে মন খারাপের ডাক্তারের কাছে দীর্ঘতর লাইন। আমরা ভাবি দোষ আমাদেরই। এভাবেই ভাবানো হয় আমাদের। কিন্তু এভাবে শহরের গ্রাস বেড়ে চলে, শহরের পেটে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমাদের এক টুকরো যাপিত জীবনের।
উপায় একটাই। সচেতনতা। একত্রিত হতে হবে সকলকে, সকল সচেতন মানুষকে। নইলে শহরের গ্রাসে হারিয়ে যাবে মফঃস্বল। আবেগহীনটাই যে সময়ে আধুনিকতা সেখানে আমাদের জীবনের এই ছোটো ছোটো আপাত মূল্যহীন আবেগ গুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দায় তো আমাদেরই। নইলে সবথেকে ভুক্তভোগী আমরাই হবো। হারিয়ে যাবে আমাদের সমস্তও শিকড়। এবং যে জাতির শিকড় হারিয়ে যায় তার অস্তিত্বই মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আমাদের বাপ ঠাকুরদার স্মৃতি মাখানো ভিটের উপর যখন গড়ে ওঠে ফ্ল্যাট তখন আমাদের মনটাও কী হু হু করে ওঠে না। প্রবল ভাবে মনে হয় গোষ্ঠী চেতনার অভাবই আমাদের এই দুর্গতির মূলে। আমরা আজকাল বড় বেশি ব্যাক্তি , বড় বেশি সেলফি- সচেতন ফলে যত দ্রুত আমরা আপন থেকে বাহির হয়ে বৃহত্তর আঙ্গিকে ভাববো সেদিন থেকে রক্ষিত হবে আমাদের নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র , নিজস্ব উষ্ণতা। নইলে বারবার উচ্ছেদের স্মৃতি আমাদের বুকের ভেতর টাকে করে তুলবে আরও রক্তাক্ত। সেই রক্ত শীঘ্রই মানব সভ্যতাকে দার করিয়ে দেবে এক অদ্ভুত ভবিষ্যতের সামনে। তারজন্য মহাজাগতিক কিছু দরকার হবে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫৪

মোহাম্মদ জন চক্রবর্ত্তী বলেছেন: খুব ভাল লাগল। একেবারে আমার মনের কথা বলেছেন। ভারতে বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল অবধি দেয় না। আপনার উপায় সত্যই কার্যকরী "একটাই। সচেতনতা। একত্রিত হতে হবে সকলকে, সকল সচেতন মানুষকে।" কিন্তু শুরুটা হবে কিভাবে। আওয়াজ দেবেন। আছি আপনার সাথে।

২| ২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:০২

অতৃপ্তচোখ বলেছেন: মা ও মাটির সাথে সত্যিই মা'য়ের সম্পর্ক আছে। কিন্তু এর পরেও আমরা শহরমুখো। এরও অনেক কারন, প্রয়োজন। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া, বৌয়ের সাচ্ছন্দ জীবনযাপন, নিজের কর্মস্থল। সব মিলিয়ে শেকড়ের কথা ভাববার সময়ই হয়না। সেই সুবাদে কখন যে গ্রাম শহরে পরিণত হচ্ছে বুঝায় যায়না। আমাদের সরকার ঢাকামুখো মানুষ ঠেকাতে প্রতিটি জেলা শহরে আবাসিক নগরী তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। আবাসিক মানে তো আবাসিক। সুযোগ সুবিধার সবকিছু হয়তো থাকবে সেখানে। শেকড়ে চাপ বাড়বেই। সংকুচিত হবে শেকড়ের আয়তন। তাহলে কোনটাকে সাপোর্ট করবো। শেকড়ের অধিকার। নাকি আধুনিক উন্নত জীবনের হাতছানী।

আমার অভ্যাসটাই এমন। কিছু পড়লে, সেখানে কিছু লিখবোই। অনেক প্রশ্নের আনাগোনা মনে। গুছিয়ে কিছুই বলতে পরিনা। তবে বিরক্তির কারন হতে পারি। আপনাকেউ বিরক্ত করে গেলাম। ক্ষমা করবেন।

আমি কিন্তু বস শেকড়ের লোক। তাই শেকড় বাঁচানোর পক্ষেই। খুব ভাল একটা পোষ্ট।

৩| ২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩৪

কল্লোল পথিক বলেছেন:






লেখাটা মন ছুয়ে গেল।

৪| ২৬ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৭

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

আধুনিকতায় আমাদেরকে আঁকড়ে ধরেছে। এথেকে বাঁচার উপায় কোথায়? অনিবার্য ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে সবাই হেলেদুলে নেচে নেচে। প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে, বন পানি জলাশয় বিলুপ্ত হচ্ছে... বাড়ছে কেবল মানুষ! বাড়ছে, যেন ধ্বংসেরই জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.