![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।
এখন আর তেমন বর্ষা হয় না। সেই আগে যেমন হত? সিঁড়ির প্রথম ধাপ ডোবানো সেই বৃষ্টিতে কাগজের নৌকো ছাড়তাম। কিছুদূর গিয়েই আটকে যেত কোনও বাড়ন্ত ঘাসের মাথায়। এখন আর তেমন কিছুই হয় না। না এ হাহুতাশ শুধু যে আমার তা নয়। আশেপাশে কান পাতলেই এই হা হুতাশ খুব করে শোনা যায়। আহা আগে কি সুন্দর ছিল দিনগুলি। আহা মনে পড়ে সেই…। এরকম হা হুতাশ করতে শুনলে নিজেরই মাঝে মাঝে ভয় লাগে। তাহলে কি আমি সেই ওল্ড ইজ গোল্ড গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে যাচ্ছি নাকি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে তেমন আপডেট করতে পারছি না।
যদিও এ সমস্যা আমার দীর্ঘকালের। লোকজন যখন রবীন্দ্রনাথের কেচ্ছা পড়ে ফেলছে হুড়মুড়য়ে আমি তখনও গল্পগুচ্ছতেই আটকে, গেমস অফ থ্রোন নিয়ে দেখি সে কি উল্লাস, আমি তখন গোপনে হাঁদা ভোঁদা… এখনো পোকের মন ধরার মতো একটি সুন্দর প্রচেষ্টা করে উঠতে পারলাম না, মহানায়কে প্রসেঞ্জিতের উত্তম চর্বণ উচ্চারণ শুনতে পারলাম না, নিজেকে প্রিসামায়িত করে ষোলো মিনিটে একশো ষাট আঙ্গুল আদায় করে নিতে পারলাম না। আমি যে ক্রমাগত বিলুপ্তির পথে যাচ্ছি এবং আর যেখানে না হোক অন্তত বড় রাস্তার ওপারের লাইব্রেরিটা যাদুঘরে রূপান্তরিত হলে যে আমার খুলিটা নিয়ে ধ্যারাবেই এ নিয়ে আমি কেন, কয়েকজন ওপরওয়ালা(বিতর্কে যাবেন না) লোকেরও বিশ্বাস একেবারে নিশ্চিত। মা নিশ্চিত আমাকে আর ছাতা দেওয়া যাবে না। দিলেই তো নয় বন্ধুর বাড়ির পড়ার টেবিলে, নয়ত কোনও না কোনও যানবাহনে তাকে অনাথের মতো ফেলে আসবই। সে বেচারা তেমন কিছু বলতে পারে না। পারলে দিত ডাণ্ডা দিয়ে ঘা কতক। কুছ পরোয়া নেই, সে মায়ের কাছ থেকে সিম্প্যাথি টা আদায় করেই নিয়েছে। মাঝে মাঝে ছলছল চোখে বলতে যাই- সত্যি করে বল মা, ছেলের থেকে কি ছাতার… তারপর নিজের পিঠের সহন ক্ষমতার উপর তীব্র একটা অবিশ্বাস বশত ফিরে আসি। তা আসি, তবে ছাতা নিয়ে বেড়তে আমার ভালোই লাগে না। বর্ষায় বাইরে বেরলাম আর একটু ভিজলাম না এমন হলে আর শিল্পী হলাম কি…।
কবিতা কি আর কবিতা কৃষ্ণমূর্তি কে দেখে বেরবে? কিন্তু ভিজে ভিজে জ্বর চলে এলো, কবিতাও এলো, তবে তা কেবলই শ্যামা মিত্তিরের পাড়ার পত্রিকায়। যাক গে ওসব কথা।যার পকেটে মাল্টিপ্লেক্সের টাকা থাকে না, রেস্টুরেন্টের টাকা থাকে না, চিকেন(নিতান্ত এগ তেও ইগো তেমন যেত না)রোলের টাকা থাকে না, এমনকি বেশি দূরে চলে গেলে ফেরারও টাকা থাকে না, সে এমন কোন চোস্ত জায়গা দেখে চা খায় যেখানে সন্ধেতে কিছু ঝিঙ্কু মামনিরা আসে, খানিক তাকায়, ঠোঁটের কোণে এমন ভাবে হাসির আভাস লাগিয়ে রাখে যে কিচ্ছুটি বুঝতে পারবেন না। অতি উৎসাহী হয়ে যেই গালভরা হেসেছেন, ব্যাস তেমনি তারা সেই যে মুখ ঘোরালো, আর এমুখো হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের থেকে দশ ধাপ নিচে। ফলে চায়ের অল্প চুমুকে আপনাকেও সেই কৌশল টা আয়ত্ত করতে হবে বইকি। নইলে…চা-এ চিনি টা একটু কম ঠেকবে, আর কিছু না। সেদিন এমনি চা খাচ্ছি স্টেশনের সামনে বসে আর ভাবছি কবে একটা বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পাবো। বোলার এর কি কি থাকা আবশ্যক এরকম একটি দীর্ঘ ফর্দ তৈরি করার সময় এক ঠাকুমা এসে বললেন একটা চা খাওয়াবি? কেন নয়? অবশ্যই। বাড়ি যাওয়ার জন্য যতটুকু লাগবে তা বাঁচিয়ে একটা চা এনে দিলুম। সাথে বিস্কিট। বসার জায়গা করে দিলুম। তারপর আমি মাটিতে বসে পড়লুম। লিস্ট ভুলে গল্প জুড়ে দিলুম তার সাথে। বাড়ি তার বেলুড়ে। এখান থাকেন বড় মেয়ের বাড়ি। বড় মেয়ের শরীর ভালো নয়, তাই সারাদিন স্টেশনের পাশে বসে বেচা-কেনা করেন। তারপর ফিরতে ফিরতে রোজই দশটা বেজে যায়। মেয়ের ছেলে কলেজে পড়ে। এখন কলেজ শেষ চাকরি পেলে একটা হিল্লে হয়। পড়াশুনা তার ক্লাস সেভেন। তারপর আর করা হয়নি। যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তিনি ভালো উপার্জন করতেন। চাকরি করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। কিন্তু উপার্জনের থেকে ব্যয় করেছেন বেশি। হুজুগে মানুষ ছিলেন কিনা বলতে বলতে চোখের কোণাটা আলতো চিক চিক করে উঠল দেখলাম। স্বামী অনেক রেখে গিয়েছিলেন- দেনা। তা মেটাতে মেটাতে সম্পত্তি যা ছিল সবই বিক্রি করে দিতে হয়েছে, দারিদ্রের জন্য মেয়ের বিয়েও তেমন ভালো ঘরে দেওয়া হয়নি। যদিও সেই জামাই এখন এই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দিয়েছে, মানুষের মনটাই তো আসল তাই না? তবে ইদানীং আর সে সংসারে তেমন দেয় না। বাইরেই উড়িয়ে দেয়। ফলে মেয়ের ডাক্তার ওষুধ পত্র তেমন ভাবে কেনা হয়না। ধীরে ধীরে শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। এদিকে আছে ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ। তাই বাড়িতে বসে না থেকে দিদিমা নিজের হাতেই উপার্জনের ভার তুলে নিয়েছেন। দিদিমার পায়ের কাছে বসে এই গল্প শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসার উপক্রম। কোনোমতে নিজেকে সামলে উঠে গিয়ে দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে দিলাম ওনার হাতে। বললাম, খেয়ে নিও। উনি হটাত খুব ভাবুক হয়ে গেলেন, আমার মাথায় হাত রেখে বললেন- ভালো থাকো বাবা, সুখী হও। তোমার মতো ছেলে ঘরে ঘরে জন্মাক। আমি তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি, চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসতে চাইল। মাথা নিচু করে নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা তুলে দেখি কোথায় দিদিমা?
এক অচেনা লোক আমার দিকে খানিকটা ভেব্লে গিয়েই তাকিয়ে জিজ্ঞেস করছে- বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার রাস্তাটা কোনদিকে বলতে পারবেন? আমি তার দিকে তাকিয়ে প্রায় দশ সেকেন্ড তারপর জন্ম থেকে চেনা বাস স্ট্যান্ড এর রাস্তাটা বেমালুম গুলে খেয়ে এক অদ্ভুত ক্ষিপ্রটায় মাথা নাড়ালাম।সেদিন থেকে বুঝে গেছি যে পকেট শূন্য থাকতে থাকতে ইদানীং ”ইমোশনাল” গল্প বলতেও(লিখতেও) শিখে গেছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১৪
নাবিক সিনবাদ বলেছেন: