নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

ফেলুদার তোপসে

দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।

ফেলুদার তোপসে › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিয়াচেনের মেঘ

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪

সিয়াচেনের মেঘ, তুমি দিনরাত বন্ধুর বেশে

পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম গ্লেসিয়ারের গায়ে

সৈন্যদের মৌন পোশাক টাঙিয়ে রাখো।

অত উঁচু থেকে নেমে এসে তোমার কি কোনওদিন

মাটির পৃথিবীর অশীতি রমণীকে ‘মা’ বলে ডেকে উঠতে ইচ্ছে করে না?

থলকলমির বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বান্ধবীর

আগুনরঙা ঠোঁটের কথা ভুলে যাও তুমি সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে?

তুমি রোজ বিকেলবেলা ঘরেফেরা মেঘের ছেলেমেয়েদের

কেন পড়তে দাও উদাসীন জীবনের পাঠ?



আকাশপারের দৌবারিক,

তুমি এক আকাশ উঁচুতে দাঁড়িয়ে সীমান্ত পাহারা দাও।

তোমার জন্মনক্ষত্র কবে মুখ লুকিয়েছে এই কুচুটেপনায়,

বুঝতে পার না?



তোমার অনেকটা নিচে যে-মানুষগুলো দেশের জন্যে লড়াই করছে

পররাষ্ট্রনীতির জিরাফ এসে রোজ বিকেলবেলা

তাদের সামনে মুখ তুলে দাঁড়ায়।

তার গ্রীবাদেশের নিচে কনে-দেখা আলোর মুখশ্রী নিয়ে

যে-মানুষগুলোর বাড়ি যাওয়ার ছুটি বারেবারেই বাতিল হয়ে যায়,

তাদের মুখ লুকনো বিষণ্ণতায় তুমি আড়াল রচনা করো!

তুমি জেনে রাখো, মাইনাস পঁয়শট্টি ডিগ্রি ঠান্ডায়

তাদের চোখের জল কখনও বরফ হতে শেখেনি।



তাদের খাকি রঙের বুকপকেট থেকে লুকিয়ে

সন্তানের হ্যাপি বার্থ ডে-র ছবি কেড়ে নাও কেন?

বান্ধবীর সঙ্গে একটা সূর্যাস্ত বুকের মধ্যে লুকিয়ে

যে-লোকটা শত্রুপক্ষের মিসাইলকে বুক পেতে ফিরিয়ে দেয়,

পূর্ব কারাকোরাম রেঞ্জের অবিনাশী মেঘ,

তাকে তুমি উদয়াস্ত বৈরাগ্যের ছবি আঁকা শেখাবে?



কুড়ি হাজার ফুট উপরে পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্রের মাথায়

একবার তুমি ভালবাসার মেঘ ছড়িয়ে দিতে পার না?

অনেক দূরে একটা গঞ্জের বাঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অধোবদন সংসারকে,

পায়সান্ন-রাঁধা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা

ঘোমটা খসে পড়া মেদুর মায়ের কাছে

ছেলের ঘরে ফেরার খবর পৌঁছে দিতে পার না তুমি?



এই তো সেদিন হিমানিসম্পাতে মেশিনগান আঁকড়ে মারা গেল যারা

ওরা যে-দেশেরই হোক, মনে রেখো, ওরাও মানুষ!

সত্তর ফুট বরফের নিচ থেকে তাদের শরীর তুলে এনে

বিধবার পোশাক পরা তাদের স্ত্রীর পিঠে হাত রেখে আর বলতে যেয়ো না,

‘চলে যাওয়া মানুষের জন্যে অমন করে মাতম করতে নেই!’



মানুষের বাধানো যুদ্ধে ভেঙে পড়ছে গ্লেসিয়ারের হিমশীতল পাঁজর।

এদিক থেকে পল্টুর ভাই গেছে, ওদিক থেকে এসেছে ইয়াসিনের ভাতিজা,

আজ সকালে সূর্য মুখ তোলার আগে পল্টুর ভাইয়ের ছেলে হয়েছে

অকৃতদার ইয়াসিন চোখ বোজার সময় ভাতিজাকে খুঁজেছিল।

সিয়াচেনের মেঘ, তুমি আর কবে যুদ্ধবিরতির সংবাদ শোনাবে?

মানুষের লড়াই তুমি আজ যদি থামাতে না পার,

তবে কোথায় দাঁড়াবে গর্ভধারিণী স্নো লেপার্ড?

কলকাতা মেট্রোরেলের কম্পার্টমেন্টে লজ্জাহীন যুবকযুবতীকে দেখে

চোখ নামিয়ে নিয়ে যেমন করে ক্ষমা করে দিচ্ছ প্রতিদিন

তেমন ক্ষমাভিক্ষার দরকার নেই শরমি ব্রাউন বিয়ারদের,

তাদের তুমি এক অঞ্জলি নির্জনতা দাও।



ক্ষয়িষ্ণু মানবিকতার মতো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে

তাপে দগ্ধ কালশিটে পড়া সিয়াচেন গ্লেসিয়ার,

ওর গায়ের মিসাইল আর গ্রেনেডের ক্ষতচিহ্ন মুছে যাক,

ওকে শান্তিতে শুয়ে থাকতে দাও বরফের নিশ্চিন্ত বিছানায়।

পৃথিবীজুড়ে মানুষ এবার ভুলে যাক সার্বভৌমত্বের মায়াজাল

এবার শপথ নিতে জেগে উঠুক নতুন এক মানব সভ্যতা।

ব্লাউজের ভিতর থেকে ছোট ছেলের ছবিটা বের করে

প্রসাদ উজিয়ে ঠাকুরের সামনে রেখে

ভাতের মাড় শুকিয়ে যাওয়া হাতে

মা ফের ভাত রাঁধতে তিনপাখা উনুন জ্বালুক।

জন্মান্ধ বাবার কোল আলো করে শুয়ে থাকুক

যুদ্ধে যাওয়া তার একমাত্র ছেলে।

যুদ্ধে যাওয়া দাদার জন্যে এবার থেকে ভাইফোঁটায়

বোনকে আর দেওয়ালে ফোঁটা দিতে হবে না!

এবার যুদ্ধফেরা সৈনিকের নিরহংকারী স্ত্রীকে উপহার দাও

একটা গোটা রাতের একটানা অগ্নিকাণ্ড!



তা না হলে নতুন পৃথিবী তোমাকে কোনওদিন ক্ষমা করবে না।

ভিনগ্রহের প্রাণীরাও তোমার দিকে আঙুল তুলে বলবে,

‘সিয়াচেনের মেঘ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি একটা মিথ্যুক!

তুমি এক হিংস্র রূপকথার ভুল পররাষ্ট্রনীতি।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.