নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

ফেলুদার তোপসে

দিনরাত সাদা-কালো জীবনের মধ্যে এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে হারিয়ে যাই অচেনা দুপুরের কোলে। বাকি থেকে যায় কিছু মরচে পড়া নিঃশ্বাস, কয়েকটা পোড়া স্বপ্ন আর কিছু ব্যক্তিগত উন্নাসিকতা। রাত আসে, শহর ঘুমিয়ে পড়ে... আর মন পড়ে থাকে কোনও একলা ছাদের অন্ধকারে। এভাবেই চলছে জীবন... এভাবেই মাঝে মাঝে ভিড় করে আসে রাত জাগানো শব্দেরা। ইচ্ছে, কবিতা, প্রেম, রাস্তা, অন্ধকার... আমি।

ফেলুদার তোপসে › বিস্তারিত পোস্টঃ

নন্দিনীকে শীতের কবিতাগুচ্ছ

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০২





নন্দিনী ছোটবেলার আলু সেদ্ধ ভাতের মতো একটা সকালে উঠে আমি ভাবি কতটা প্রশ্রয় আজ পাওয়া যাবে তোমার থেকে?
একেকটি মঞ্চ, একেকটি সাফল্য ছেড়ে যখন তোমার নরম বুকে মাথা রেখে ভাবি পুরনো নক্ষত্রদের কথা, নিজেকে নীলাভ নাবিক মনে হয়
আমি বালিগঞ্জ থেকে পার্ক স্ট্রিট প্রত্যেক যায়গায় বেহিসাবি পয়সাওয়ালাদের মতো কেবল ছড়িয়ে এসেছি আমার কলমের কালি
ভেবে এসেছি এ কলকাতা একদিন নিজেকে গঙ্গায় চুবিয়ে নিয়ে ফিরে পাবে তার হারিয়ে যাওয়া বাঁশি
নন্দিনী আমি রাতের রাখাল হবো, আমার মফঃস্বলের মায়ারাত শরীরে বয়ে যায় এক অনন্ত শিহরণ, তাঁদের অর্থ ঠিক আমি বুঝতে পারি না
তাই হটাত নাটক দেখতে গিয়ে মঞ্চে উঠে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়
মন বসে না, আমি পালিয়ে আসি অনেক ভিড় থেকে, কুমীরের মতো কিছু মানুষের ধারালো দাঁতের হাসি থেকে চমৎকার নিজেকে আলাদা করে নি
নেশার সাথে নেশা করে তোমাকে হটাত ছুঁয়ে ফেলি, তুমি আচমকা চোখ খুলে আমায় দেখতে পাও কি? না।
নন্দিনী আমি জানি আমাদের জড়িয়ে ধরারা গভীর খাদ থেকে পড়ে যেতে খুব ভালোবাসে
আমি জানি গভীর রাতে তোমার হাতে আমি দিয়ে আসি সমর্পণের চিঠি। তোমার ঘরে তখন কেবল জোনাকিরা জলে
আজ এই বয়সে এসে বুঝেছি অনিবার্যতা নয়, স্বাভাবিকতাই ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
বুঝি ঠোঁটের মধ্যে যে নদী আছে তাতে ডুব মেরে জীবনে সবথেকে করবো পুণ্য সঞ্চয়
জানি কানের কাছে যে কথারা বসতি গড়েছে তাঁদের সঙ্গেই কেবল লুকোচুরি খেলা যায়
জানি যে দেখারা সময় মেপে দাঁড়িয়ে থাকে না বড় রাস্তার মোড়ে, তারাই জীবন্ত, তারাই অভিমানী
নন্দিনী জীবন এক মস্ত উপহার, অভিনয়ে নয়, আবেগের চোখে যে জীবনের শরীরে মিশে যেতে হয়
আমাকে আমার শহর ফিরিয়ে দিয়েছ, এ বিশ্বাসে দেবতাদের নিজস্ব দেবালয়ে ফিরে যেতে হয়
নন্দিনী, আমি তোমার ভাটিয়ালি গান?


নন্দিনী তোমার আদর ছাদ থেকে মাঝরাতে নেমে এসে শহরতলি দেখলে জীবনকে আরেকটু কম অপরাধী লাগে
তোমার ঠোঁটের উপর ঠোঁট রেখে যে ভাষা শিখেছি তাতে আমি কথা বলি রাতের ট্রেনেদের সাথে
তোমার পিঠে যে সাঁতার শিখেছি তাতে পার হবো সেসব নিন্দে যারা আমাদের ঘিরে বসতি গড়েছে
তোমাকে আশ্রয় দেওয়া বুকে পুতে নেবো চারাগাছ। আমাদের ভালোবাসা বীজ জন্মাবে যে ফলে
নন্দিনী শরীর চাই না,চাই গায়ের গন্ধে লেগে থাকা সাদাকালো দুপুরের সন্তান
নন্দিনী সিদুর চাই না, শুধু চাই চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাখা ছেলেবেলা পাললিক শিলা
তুমি যদি অধিকার চাও, কলাপাতায় মুড়ে দেবো দিনগুলো, সময়, শব্দের মতো আয়ু
তোমার সংসারের ফেরা পথটুকুতে আমি হবো লুকোচুরি মেঘ, ছুঁয়ে দিলে হবো শেষ কোন খ্যালা
নন্দিনী বুকে বুকে গড়ে ওঠে কি সেসমস্ত শব্দ? কবিতা যাদের পিসতুতো বখাটে ভাই?
নন্দিনী তোমার আদরে আমার ছেলেবেলার জানলার বাসনয়ালা বিক্রেতার ডাক পাই
নন্দিনী তোমার ছেলের থেকে কবছরের বড় আমাদের কোপাইয়ের শেষতম স্নান?
দুই, দশ নাকি অনন্ত অক্ষর-‘যাই’?



নন্দিনী এই মাঝরাতে টেলিফোনে তোমার বরের পাশে তোমার ঘন চুপ করা নিঃশ্বাস শুনতে শুনতে ভাবি হটাত আমি খুব ভালো আছি
না, এই পাঁচ দশটা টিউশনে অনর্গল বাজে বকা, হালকা হয়ে আসা সামনের চুল আঁচড়িয়ে মায়ের ভাতের থালায় যখন খেতে বসি, হটাত মনে হয় খুব ভালো আছি
আজকাল আর পত্রিকার অফিস মুখো হইনা, ভাবি এসব কবিতা দিয়ে কি লাভ
কেই বা বোঝে? কয়েকটা চমৎকার লাইন লিখে শুধু জিতে যাওয়া?
আমার বাদামী ঝোলায় আজ ত্যামন কোন স্বপ্ন আঁটে না।ওসব মরীচিকা
শুধু তোমার জন্য লিখি। অটুকুই তো সব। আর বাকি তোমাকে চুমু খেতে খেতে হয়ে যাই প্রাচীন।
আমার ইচ্ছে করে স্নানের ঘরে তোমার মাথায় সাবান ঘষতে ঘষতে সেই কবিতা লিখি যা কোনোদিন লেখা হবে না কোন লেখার খাতায়
আমার ইচ্ছে করে তোমার পাশে শুয়ে তোমার বুকের প্রতিবেশী নদীদের বয়ে চলা শুনি
ইচ্ছে করে মাঝরাতে তোমার বাড়ির ছাদে গিয়ে ফুল গাছেদের সঙ্গে কথা বলি একা একা
ইচ্ছে করে তোমার বাড়ি ফেরার পথের ল্যাম্প পোস্ট হই, অথবা তোমার হাতের তালুর মধ্যে জমে ওঠা উপায়
নন্দিনী, এই দু দশ বছরে আমাদের মায়া শহর অনেক বদলে গিয়েছে, এখন দামী আয়ু তার
নন্দিনী পরের জন্মে যদি অমলতাস গাছ হয়ে জন্মাই, আমার বীজেদের পুঁতে দেবে তোমার বুকের মাটিতে?
নন্দিনী আমার যে মরে যেতে বড় ভয় হয়, ভয় হয় বড় একা একা এক নৌকোয় ভেসে যেতে যার কোন পাড় নেই, কেবল অনর্গল, অনর্থক এক ধারা।
নন্দিনী রঞ্জনদের কি একা চিরকালই মরে যেতে হয়?




নন্দিন, নন্দিন, নন্দিন আজকাল কি বলব অ্যামন পাগলামি হয়েছে যে সকালে উঠেই কিচ্ছু না করে কেবল বেড়িয়ে পড়ি, চলে যাই আমার ছেলেবেলার স্কুলের কাছে নালিশ নিয়ে, অনন্ত অভিযোগ
টেলিফোন বন্ধ করে রাখি যাতে কেউ লেখার মৃতদেহের তাগাদা না দিতে পারে
আসলে নন্দিন কাউকে বোঝাতে পারিনা কতটা জং পড়া পেরেক হৃদপিণ্ডে অল্প অল্প করে গেঁথে নিলে তবে একেকটি স্বাধীন তিলোত্তমা শব্দের জন্ম দেওয়া যায়
বোঝাতে পারিনি শিল্পের জন্য কখনো কারোর সংসারে বাঁধা পড়া পাপ, এ সত্য আমি ত্যামন মানতেই পারিনি
আদতে আমারও একদিন একটা ভাতের হাড়ির ঢাকনার মতো সংসার করার লোভ ছিল
যেখানে আমাদের বাসা হত হ্রিদয়পুরে, দেওয়ালে দেওয়ালে আরেকটি সংসার গড়ে নিত কবিতা ও ছবি, একে অপরের আদিম ভালোবাসা
আমাদের বাগান ভরে ফুল গাছেরা মাথা দোলাতো কোন বৈষ্ণবী বিকেলে, ফল গাছেরা রোদ পোহাত শীতের নোখের কোনায় জমে থাকা জ্বরের দুপুরে
নন্দিন আমাদের নিজস্ব ছাদ হত, ছাদে ঘুমতো বড়ি
তোমার মুঠো চুল আমার তালুতে সেভাবেই চুমু খেত যেভাবে খেয়েছি বারংবার কাঁধ ও হাতের মিশে যাওয়া পথে
নন্দিনী তোমার পিঠের খাতায় কবিতা লোকাবো, তোমার খোলা বুকে একে দেবো ছবি
এসব ভেবে এক চূড়ান্ত আদিমতায় তোমায় পেতে ইচ্ছে হয়, ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছে হয় গোটা জগতের সব কাকু বক্রোক্তি চোখ থেকে
আসলে শিল্প নয়, সচ্ছলতা নয়, কোন অলৌকিক ঘোড়ার আত্মকথা নয়, ভালোবাসা, এক আদিম ভালোবাসা,প্রতিদিন বিশ্বস্ত ছাদ থেকে নেমে এসে বলে
জীবন আদতে কতগুলো পুরনো গন্ধ মাখা রাতচাদর ছাড়া কিচ্ছু নয়
ভালোবাসা আসলে কতগুলো চেনা মুখের মোলায়েম বাদামী নির্ভরতা ছাড়া কিচ্ছু নয়।
শূন্য এ আমি শহরের কোন এক পথে দাঁড়িয়ে, অপেক্ষায়
নন্দিন তুমি খুঁজে নিতে পারবে আমায়?



নন্দিনী জীবনে হটাত অনেকখানি সত্যির মুখোমুখি হলে বড্ড একা একা লাগে
অনেক খানি সুখের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে নিজের প্রতি বড্ড অবিশ্বাস জন্ম নেয়
এই সত্যি শোনার ভয়ে আমি বারবার করে পালিয়েছি সমস্ত তর্ক, আলোচনা, আড্ডা থেকে
এই সুখেদের থেকে চির বিচ্ছিন্নতা পাওয়ার জন্য আমি একের পর এক ছেড়ে এসেছি সুখমানুষ
নন্দিনী কখনো বুঝবে না সুপর্ণা যে আমাকে বিয়ে না করে ও বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে
যারা মায়ার শহরে খাতা হাতে ঘুরে ঘুরে স্বপ্ন পোড়ায় তাঁদের তো ঠিক সংসার হয় না
যাদের কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নেই তারাই হল শ্রেষ্ঠ প্রেমিক
নন্দিনী এই আগুনে সব বিশ্বাস ছেড়ে আমি আজও ফিরে আসছি সেসব রাস্তা দিয়ে যাদের গায়ে সুতো বেঁধে বেঁধে নিজের বোকার জগত গড়েছি
নন্দিনী সবাই কেবল আমাকে আগাছায় ভরা জলাভূমি ভেবেছে, আমি যে স্রোতস্বিনী নদী
নন্দিনী এক খুব তীব্র মাংসের ডলা গলার মধ্যে জমে গেলে বড় ভয় হয় সভ্যতার দিকে তাকাতে
সকলের চোখের মাঝে তোমাকে ভালবাসতে ভয় হয়, কারণ ওরা ওরা ওরা আমার শব্দদের অবিশ্বাস করে, কাপড় খুলে নেয়, মানদণ্ড তুলে নেয় হাতে
নন্দিনী একটা ছাদকে ঘিরে আমি ঘুরপাক খাবো
মানুষেরা মাটি হলে কোথাও যায় না, চুপ করে হেঁটে যায় আল দিয়ে, তার বুকে আদর করে সর্ষে ক্ষেত
নন্দিনী তুমি আমার সর্ষে-ক্ষেতের আল হবে আজ রাতে?



নন্দিনী আসলে কবিতাদের পাখিদের মতো সাধ হয় বাসা গড়বে তারপর বোঝে সে চিরকাল এই অলীক স্বপ্ন দেখা ছাড়া কোনো কাজ নেই তার
কারণ কাল যা বিশ্বাস ছিল, বদলেছে আজ, কালকেও বদলাবে সে বিশ্বাস এ কথা জানে কবিতারা
জেনে শুধু হাতড়ায়, দম বন্ধ হয়ে মরে যায় তবু জানে সে কেটে ফেলে রক্ত ঝরাতে হবে ডানা থেকে, তাতেই শব্দেরা জন্মায়
জানে অতীতের সঙ্গে নিত্য তার লুকোচুরি খেলা, অভুক্ত তাকে কেউ খুঁজতে আসেনি মাঝ দুপুরের শহরে, মফঃস্বলে
শুধু রূপকথা ভেঙে যায়, সেই মৃতদেহ বয়ে এনে কবিতারা নরকে ফেলে আসে এক অপার্থিব বিস্ময়ে
মাদকাসক্ত কবিতারা হটাত কিছু বলে ফেলে অবসর পাওয়া প্রেমেদের আত্মাদের
নন্দিনী কবিতারা সর্বদা তৃতীয় পক্ষ, কবিতাদের নিজস্ব কোনো ছাদ থাকা পাপ
নন্দিনী অকথ্য ঝগড়ার শেষে প্রতিবার মেপে নিতে ইচ্ছে করে তোমার বুকের উত্তাপ
নন্দিনী ভালোবাসা এক অদ্ভুত জটিল হিংসের পিসতুতো ভাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.