![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার নিজস্ব একটা দর্শন আছে । সেখান থকে লিখি, বলি, করি; কারো তোয়াক্কা করিনা ।
বুকের উপর বিশাল জলাভূমি, ভয়ে কাঁপছি নানাভাই যদি ওখান থেকে পড়ে যায় ! আম্মুকে চিতকার করে ডাকছি । আম্মু শুনতে পাচ্ছেনা, বাইরে তুমুল বৃষ্টি । তাই আমিও যেতে পারছিনা নানাভাইকে হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য, নানাভাইয়ের লাঠিটা হঠাৎ নড়ে উঠল । আরেক পশলা ভয়, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম । নানাভাই… নানা… নানা ভাই……
আম্মু আমাকে স্বাভাবিক করার অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন আর আমি নানাভাইয়ের জন্য কেঁদেই যাচ্ছি। নানা মারা যাবার পরে প্রায়ই আমি এই দুঃস্বপ্ন টা দেখি ।
আমি তখন সাড়ে তিন বছরের, আমার ভাই তখন আম্মুর পেটে । আম্মুর পুনরায় জন্মধারন আমার মানসিক পীড়া্র কারণ ছিল । আমি তখনও বুকের দুধ না খেয়ে ঘুমাতাম না । আমাকে নিয়ে তাই নানী্র বাড়ীমুখী হলেন আম্মু । আমাদের বাড়ী থেকে সেখানে যেতে দুমিনিট সময় লাগে । এরপরে মেজমামা ছোট মামা নিয়ে ব্যস্তই থাকতাম একরকম । কিন্তু গো্ল বাধল যখন দুই মামা মিলে বাইরে পড়তে চলে গেলেন । আম্মু প্রতিদিনের মত সকালবেলাতেই আমাকে নানার বাড়ীতে প্রেরন করলেন । বাড়ীতে শুধু অসুস্থ নানাভাই আর নানী । আমার স্থান হল নানার রোগশয্যার পাশে । আমার ছোট্ট মনে তখন এক পৃথিবী প্রশ্ন , এই মানুষটা সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন কেন ? হাঁটেন না কেন ? বাইরে বের হন না কেন ? সবার সঙ্গে বসে খান না কেন ? কারু বাসায় বেড়াতে যান না কেন ? কটর কটর করে সব নানাকেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিলাম । সেই থেকে নানাভাইয়ের সঙ্গে আমার সখ্যতার শুরু, আজো নানা আমার কাছে তেমনি প্রিয় একটি মানুষ । নানা একটু একটু করে সুস্থ হতে লাগলেন । আমাদের খেলাঘর তখন নানার রোগশয্যা শেষ খড়েড় গাদার উপরে । সারাদিন কি যে গল্প, সেই গল্পের ও কোনো শেষ ছিলনা । রাজা-রানী সুখে ঘর করতে লাগলেন, এরপরে কি নানাভাই ?? নানাভাই হেসে বলতেন এরপরে একদিন তোকে আমার সঙ্গে ওদের ওখানে যেতে বললেন । আমি তখন অভিমানে বলতাম তুমি আমাকে নিয়ে যাওনি কেন ?
দিঘী্র জল তখন পাড় পেরিয়ে রাস্তায় ওঠার চিন্তায়, বর্ষাকাল এসে সেটাকে আরেকধাপ উতসাহিত করেছিল । আমি জানালার ধারে বিছানায় বসে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম, মনটা খুব খারাপ আমার । বৃষ্টির দাপটে পরাজিত হয়ে আজ আম্মু আমাকে নানাবাড়ীতে পাঠাতে ব্যার্থ হয়েছেন । হঠাৎ নানাভাইয়ের কন্ঠে আমার নাম শুনে চমকে যাই !! রাস্তায় তাকিয়ে দেখি দূর্বল পায়ে লাঠি হাতে নানা এঁটেল মাটির অমসৃ্ন পথ মাড়িয়ে আমাদের বাড়ীর দিকে আসছেন । আমি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসলাম । আম্মু বাইরে গিয়ে তাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলেন । সারাদিন আমি আর নানা অনেক গল্প করলাম ।
নানা আবার অসুস্থ, ঘোড়া হয়ে আমাকে আর পিঠে নিয়ে টগবগ করে ছুটতে পারছেন না । আমি কিছুক্ষণ পরপর জিজ্ঞেস করছি, নানা আজকি আমরা ঘোড়া ঘোড়া খেলবনা ??? নানী এসে বললেন মানুষটাকে এত বিরক্ত করিস কেন ? তারপর পুরো দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা নানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কাটিয়েছিলাম ।
আম্মু আমাকে আর নানার কাছে পাঠায়না, নানা আর আমাকে নিয়ে খেলতে পারবেন না, উনি অসুস্থ ।
সেই ঈদের দিনটা আমার মানসপটে আজোবধি জ্বলজ্বলে । আমার ভাই কয়েকদিন আগে আম্মুর পেট ছেড়ে বাইরে বের হয়েছে ! ওকে সহ্য করতে পারছিনা, সারাক্ষণ ওকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত থাকে । নানা ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে একটা মোটর গাড়ীর পেছনে বসে । আমার ভাইকে দুহাত বাড়িয়ে কোলে নিতে গেলেন তিনি । আমি আমার ভাইকে সরিয়ে নানার কো্লে বসে বলতে লাগলাম, তুমি ওকে কো্লে নেবেনা, ওকে সবাই খুব আদর করে ভালবাসে আর আমাকে কেউ এখন আদর করেনা । তুমি ভাল হয়ে গেছ, আবার আমার সঙ্গে খেলবেনা ? নানা মুচকি হেসে বললেন, তুই যখন অনেক বড় হয়ে যাবি তখন আমাকে মনে রাখবি তো রাজকন্যা ? আমি নানার কথায় অস্বীকৃ্তি জানিয়ে বললাম,তুমি দেখ আমি কখনোই বড় হবনা, আমি শুধু তোমা্র সঙ্গেই খেলব । নানা আর দেরি করেনি, গাড়ী ছেড়ে দিল ড্রাইভার । আম্মু আমাকে এক হাতে টেনে ধরে রেখেছেন, নানা চলে যাচ্ছে, আমি কাঁদছি ।
আমার ভাই এর বয়স পনের দিন । আম্মু সকাল থেকে খুব কাঁদছেন, নানাবাড়ীতে মানুষের ঢল । সবাই বলছে নানা মরে গেছে । আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, নানা মরলে কি কিছু হবে ? আম্মু আরও জো্রে কেঁদে উঠলেন । ছোটমামাকে সবাই অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ীতে এনে মাথায় পানি ঢালছে । আমি আসলেই বুঝলাম না সবাই এরকম আচরন করছে কেন ?
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে যাচ্ছে, আমি একা একা চুপি চুপি নানাকে এঘর থেকে ওঘরে খুঁজে চলেছি । কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছেনা দেখে কাউকে জিগ্যেস করতে পারছিনা, নানা কোথায় ? পেয়ে গেলাম আব্বুকে আর জিগ্যেস ও করলাম । তিনি বললেন, নানাকে মাটির নিচে রেখে চলে এসেছেন, উনি আর কোনদিন উঠে আসবেন না । আমি রাগে আব্বুকে হাত পা ছুড়ে মারতে লাগলাম, আম্মুর কান্না আরও বেড়ে গেল ।
আজ আমি অনেক বড় হয়ে গেছি, নানার রুপকথার রাজকন্যাও বড় হয়েছে । শুধু ছেলেবেলাটা ছেলেবেলায় রয়ে গেছে । নানাভাই প্রায় পনের বছর আগে আমাকে সাথী হারা করে চলে গেছে । আমার প্রথম সখা আমার নানাভাই, যার অনুপস্থিতি আজো আমার কাছে একটা দুঃস্বপ্ন । ভালবাসি কথা টা বোঝার আগেই আমি নানার বিরহে বিরহিনী হয়ে গেছিলাম । সময় দ্রুত চলে গেছে, টের ই পায়নি । নানার সঙ্গে খড়ের গাদার উপর বসে শোনা গল্প গুলো মনে নেই, নানার চেহারা টাও স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে ম্লান হয়ে গেছে অনেকটা । কিন্তু দৃশ্য গুলো এখনো জীবন্ত মনে হয় ………………
নানার সঙ্গে কখনো যদি দেখা হয় তাহলে বলে দেব, “নানাভাই, তো্মার সেই রাজকন্যা কোনদিন তোমাকে ভো্লেনি, তুমি যে তার প্রথম সখা ! যেখানেই থেক, ভাল থেক !!!!!’’
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: আমি ইউ আই ইউ তে বিবিএ করছি । আপনাদের উতসাহ আমাকে লেখার জন্য সাহায্য করবে । ধন্যবাদ আপনাকে ।
২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫০
আমিনুর রহমান বলেছেন: লিখায় ভালো লাগা রইল +++
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
মাক্স বলেছেন: স্মৃতিচারণায় ভালোলাগা!
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: আপনাদের উতসাহ আমাকে লেখার জন্য সাহায্য করবে । ধন্যবাদ
৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮
শার্লক বলেছেন: লেখা পড়ে আমার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমার নানাকে আমি অনেক দিন পেয়েছি ২০০৫ সালে উনি মারা যান। অস্পষ্ট মনে আছে নানার অফিসে যেতাম টেবিলে বসে থাকতাম। রিটায়ার করার পর নানার সাথে প্রত্যেকদিন বাজারে যেতাম মিষ্টি খাবার লোভে। আমি যখন ফাইভে পড়ি তখনও নানার কাঁধে উঠতাম কত জ্বালাতন করছি কখনো কিছু বলতো না। মা'র কাছে শুনেছি সব নাতিদের মধ্যে নানা না কি আমাকে সবথেকে বেশি আদর করতেন। খুব কষ্ট লাগে নানার কথা মনে হলে।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: নানা যখন মারা গেছেন তখন আমি চার বা সাড়ে চার বছরের । খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, এখনো পাই ।
৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৪
শার্লক বলেছেন: হুম অনেক ছোট ছিলেন।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: হুম
৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৭
শব্দহীন জোছনা বলেছেন: “নানাভাই, তো্মার সেই রাজকন্যা কোনদিন তোমাকে ভো্লেনি, তুমি যে তার প্রথম সখা ! যেখানেই থেক, ভাল থেক !!!!!’’
সুন্দর সাবলীল লিখা।
+
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২২
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে । ভাল থাকবেন ।
৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
একাকি উনমন বলেছেন: খুব সুন্দর আর আবেগ মাখা একটা লেখা। ভালো লাগলো।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫২
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ভাল লাগলেই আমি খুশি ।
৮| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৫
মুক্ত মানব আসিফ বলেছেন: আবেগ আর স্মৃতির মিশেলে অসাধারণ লিখেছেন।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৩
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া
৯| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৩
সুমন কর বলেছেন: স্মৃতিচারণা ভালো লাগলো।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১১
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে । খুব ভালো থাকবেন ।
১০| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৭
স্বাধীন বিদ্রোহী বলেছেন:
নানার সাথে আপনার আত্মার টান দেখে খুব ভালো লাগল। দাদা-দাদী, নানা-নানীর সাথে নাতি-নাতিনদের সম্পর্কটা সত্যি খুব মধুর হয়ে থাকে।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: যদিও এখনকার সময়ে বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েরা নানা-নানি বা দাদা-দাদির নৈকট্যে থাকতে পায়না । কিন্তু যারা থেকেছেন তারাই জানেন এই স্নেহটা কত প্রবল
ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮
ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: বিথী আপা, অনেক ভাল লাগ্ল আপনার লেখা পড়ে, এখন কি করছেন আপনি?