![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত পর্বে মন্দির ছাড়িয়া আসিয়াছিলাম।এইবার কোথায় যাইব তাহা চিন্তা করিতে পারিতেছিলাম না। শুন্য উদরে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরিতে ঘুরিতে কখন যে মাথা ঘুরাইয়া পরিয়া গেলাম বুঝিতে পারিলাম না। চোখ খুলিয়া মনে হল স্বয়ং ইশ্বর আসিয়াছেন আমাকে বাচাইয়া তুইলে। আমি তাহার দিকে ভাল মত লক্ষন না করিয়া জড়াইয়া ধরিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলাম হে ইশ্বর শেষ পর্যন্ত তোমার দেখা পেলাম, তুমি মানুষ রুপে আমাকে সুস্থ করিয়া তুলিছ। উনি ঝটিকার মত আমাকে ছুড়িয়া দূরে ঠেলিয়া দিলেন। মুখে কিছু না বলিয়া উপরের দিকে তাকাইয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করিলেন। মনে বুঝিয়া লইলাম ইশ্বর উপরে রহিয়াছেন।ভাল করিয়া অবলোকন করিলাম তাহাকে, আজানু লম্বিত জামা, শ্মশ্রুমণ্ডিত চেহারা ঠিকরে যেন সূর্যালোক আসিতেছে।
তিনি শান্ত ভাবে আমাকে বলিলেন " তুমি অনেক ক্লান্ত হইয়া গিয়াছ, একটু আরাম করিয়া লও, রাত পোহাইতে অনেক দেরি, প্রত্যুষে উঠিয়া কথা হইবে"
কিন্তু প্রত্যুষে উঠিয়া তাহাকে দেখিতে পাইলাম না। ঘর হইতে বাহির হইয়া দেখি আমি একটি গ্রামে অবস্থান করিতেছি। প্রাতরাশের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। এক মুঠো অন্ন। ক্ষুধার্ত উদরে তাহাই মহা অমৃত বলিয়া গন্য হইল। মূলকথা হইল সেই মন্দিরে কামুক পুজারির সহিত বসবাস করিতে করিতে অভিজাত খাদ্যের একটি অভ্যাস গরিয়া উঠেছিল, দুই দিন উদরে কোন অন্ন না পরার দরুন শৈশবের সেই মুহূর্ত গুলা মনে করিয়া দিয়াছিল।
ভদ্রলোক ফিরিয়া আসিয়া এক সুমিষ্ট হাসির সহিত জিজ্ঞাসিলেন, কি খবর হে সুস্থ হইয়াছ? সবচেয়ে অবাক করিয়া দিয়া তিনি যাহা করিলেন, তাহাতে মনে করিলাম ইনি ইশ্বর ব্যতিত কেউ হতেই পারেন না। তুমি মন্দির ত্যাগী এক ফেরারি ভৃত্য। আমরা মুসলমান তোমাকে রাখিতে পারি না। তুমি কোন ধর্মে বিশ্বাস কর জানি না, তবে এইখানে কোন কাফির অবস্থান করিবে না, কোন নাস্তিকও নয়। মুসাফিরের খেদমত করা মুমিনের কর্তব্য তাই করিয়াছি, নতুবা তুমাকে এই খানে অবস্থান করার অনুমুতি দিতাম না।
তিনি যেহেতু আমাকে উদ্ধার করিয়া নতুন জীবন দান করিয়াছেন সেহেতু তিনিই আমার ইশ্বর। আমি পায়ে পরিয়া কাদিয়া উঠিলাম। বলিলাম হে আমার প্রান রক্ষাকারি আমাকে আপনার পদতলে অবস্থান দিন। আপ্নি যাহাই বলিবেন আমি তাহাই করিব তবুও আপনার পদতলে অবস্থান দিন। উনি বলিলেন, আমি তোমাকে জোর করিব না, তবুও বলিব তুমি দ্বিনের পথে আস। তুমি অসহায় তাই তোমাকে আমার ঘরে অবস্থান করার অনুমুতি দিলাম, কিন্তু তোমাকে কাজ কর্ম করিয়া তোমার নিজের ঠিকানা তৈরি করিতে হইবে। এখানে বেশি দিন থাকিতে পারিবা না।
আমি বলিলাম জি আজ্ঞে। উনি গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিলাম। কিন্তু আমার ভগবানই বলুন ঈশ্বরই বলুন, তাহাই উনি ছিলেন। অতঃপর তাহার বাড়িতে বসবাস করিতে লাগিলাম। ঘরের কাজ করিয়া দেবার বদলে দু বেলা পেট পুরিয়া খাইতে পারিতাম।
সেদিন কি যেন গোলযোগ বাধিছে দেখিয়া গ্রামের বাজারের মুখে ছুটিয়া গেলাম, দেখি শ্মশ্রু মণ্ডিত চেহারায় এক লোক মাথা নিচু করিয়া বসিয়া আছে মাটিতে আর কয়েক জন শ্মশ্রুমণ্ডিত চেহারার অধিকারী তাহার চারিপাশে ঘুরিয়া ঘুরিয়া শাসাচ্ছে। ভিড়ের মদ্যে জামিলাকে দেখিলাম মুখ ঢাকিয়া ফুপাইয়া ফুপাইয়া কাদিতেছে। জামিলা ইমাম সাহেবের কন্যা। বড়ই বুদ্ধিমতি। আমাকে বসাইয়া বসাইয়া কুরান পড়া শিখাইত আর উহার অর্থ বুঝাইত। জামিলা কেন কাদিতেছে বুঝিতে পারিলাম না। অতঃপর শাসকগনেরা ওই মানুষটিকে টেনে তুলিলেন। নিথর দেহ, নিলাভ আভা ঠিকরে বাইর হইতেছিল চেহারা হইতে। চেহারা দেখিয়া আমার মাথায় বজ্রপাত হইল। ইনি আমার ইমাম সাহেব। ইনাকে কেন মারা হইল?? কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। হেচকা একটা টান অনুভব করিলাম। দেখিলাম জামিলা আমাকে ডাকছে---
জামিলা আমাকে বলিল আপ্নি অতি স্বত্তর এই গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া যান। ইনারা আব্বা কে মারিয়া ফেলিয়াছে। কিছুক্ষন পর আপনাকে মারিয়া ফেলিবে। আমি জিজ্ঞাসিলাম কি হেতু এই কাণ্ড ঘটাইল।
--বুঝিলেন না। আপনার জন্য, আপ্নি নাস্তিক কিন্তু আমাদের ঘরে অবস্থান করেন। ইহা আমাদের ধর্মে নিষেধ, তাই মারিয়া ফেলিয়াছে।
-- জামিলা তুমি তো কুরানের মাঝে আমাকে এই কথা বল নাই।
-- আমি বলি নাই তো কি হইয়াছে? উনারা বলিয়াছে। এখন ইহাই মানিতে হইবে।
--কুরান তো উনারা তৈরি করেন নাই, তাই কেন তাহাদের কথাই মানিতে হইবে?
--আপ্নি কুরানের কি জানেন। উনারা জ্ঞানী, উনারা জানেন, আপ্নি দয়া করে বিদেয় হন।
আমি এইবার চিন্তা করিলাম, ইমাম সাহবের মত লোককে মারিয়া ফেলিয়া যাহারা উল্লাস করিতেছিল, তাহারাই বোধহয় এই ধর্মের সঞ্চালক। তাহাদেরই তৈরি নিয়ম নীতি, এই ধর্মে যদি কোন সত্য নীতি থাকেও তবুও তাহারা ইহা সত্য হইতে দেবে না। তাহাদের ইচ্ছা মত থাকিবে। আল্লাহ শুধু তাহাদের।
এইবার আমি সত্ত্যিকারের ইশ্বর অন্বেষণে বাহির হইয়া পরিলাম। যতদিন আমি ইশ্বর কে না খুজিয়া পাইব। আমি নাস্তিকই থাকিব।
©somewhere in net ltd.