![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নুরা পাগলা গাঁজায় দম দিচ্ছে। খালেক তার পাশে এসে বসলো।
--কিরে নুরা কি করিস
--সিদ্ধি সুখের স্বাদ নেই।
--এইডা আবার কি?
--আরে হাদারাম গাঁজা খাচ্ছি দেখস না।
--গাঁজায় কি আছে? এত কি সুখ পাস।
--গাঁজায় দুই জাহানের সুখ। দম নেবার সময় দুনিয়ার সুখ ছাড়ার সময় স্বর্গের সুখ। দিবি নাকি একটা টান।
--নারে, আব্বা গন্ধ পাইলে পিটাইয়া ঘর থিকা বাইর করে দিবে।
--আরে কি করবি ঘরে থেকে। বাইরে বের হয়ে দুনিয়া দেখ। এই দুনিয়া বড়ই সুন্দর, নীল আকাশ কত বিশাল।
--আরে ধুর, তুই ব্যাটা আসলেই পাগলা।
--আমি তো গাঁজার পাগল আর তোরা তো স্বার্থের পাগল। যাহ তোদের দুনিয়ায় তোরা থাক, আমি তোদের দুনিয়ায় আস্তে চাইনে। যা ভাগ এখান থেকে।
খালেক উঠে পরে, আজকে সে স্কুলে যায় নাই। প্রাইমারি স্কুলে পরে সে ক্লাস ফাইভে। বয়স অবশ্য পনের পার হয়ে গেছে।খালেক আজকে স্কুলে যাবে না, আজ তার মন ভাল নেই, গাছের একটা ডাল ভেঙ্গে নিয়ে আপন মনে ঘুরে বেরাতে থাকে। সাথিরা সবাই স্কুলে, কেউ কেউ মাঠে হাল চষছে। বৃষ্টির কোন দেখা নেই, আম প্রায় পেকে আসলো। খালেকের আম চুরি করতে মন চায়। কিন্তু কয়েকদিন আগে শুনু মোল্লার বাড়ির আম চুরি করতে গিয়ে কি পিটুনিটাই না খাইল সেইল্লা। সেইল্লা মানে সেলিম, খালেকের বয়সী, গ্রামের নামী রাশু চোরার বড় ছেলে। বাপেও চোর আর পোলা তো চোর হবেই। নাহ!!! আম চুরি করা যাবে না খালেকের বাবা চোর নয়, তাই সেও চুরি করবে না। বরং নুরার কাছেই যাওয়া যাক, অর কথা গুলা খালেকের ভাল লাগে, লোকে পাগল বললেও অর কাছে নুরাকে বিশাল জ্ঞানী মনে হয়
--কিরে আবার ফিরা আইলি
--হ্যাঁ, গাঁজা খাব। আমারে একটু দে।
--খাবি, এই নে।
কল্কি টা খালেক ধরতে পারে না, নুরা সাহায্য করে, খালেক দম দেয়।
--এই ছোড়া কি খাচ্ছিস, এত গন্ধ কেন??
--জী স্লামালেকুম চাচা, শিদ্ধি সুখের স্বাদ নেই।
--কি!!! বেয়াদপ, বেহায়া। ময় মুরুব্বীর কোন সম্মান নেই। সিগারেট খাচ্ছিস তাও তোর বাপের চেয়ে বড় একজন বুজুর্গের সামনে বসে??
--জী না চাচা এটা সিগারেট না, গাঁজা। সিগারেট ক্ষতি করে গাঁজায় সুখ আছে, দুই জাহানের সুখ, দুনিয়ার সুখ দম নেয়ায়, স্বর্গের সুখ দম ছাড়ায়।
--বেহদ্দ, বিয়াদপ, বেহায়া জানি কোথাকার। আজকেই তোর বাপের কাছে বিচার দেব। তোর বাপের করিম শেখ না?
-- জী।
রাগে গজগজ করতে করতে চলে যান। মতিন সাহেব, মাওলানা মতিন। গ্রামের মাতব্বর শ্রেনির একজন। মনে হয় আজ সন্ধায়ই বিচার বসবে, খালেকের গাঁজা খাওয়া নিয়ে।
মাগরিবের আজান দিচ্ছে, মতিন সাহেব ও অন্য বুজুর্গেরা নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাবেন। নামাজের পরেই বিচার বসবে। খালেক ভয় পাচ্ছে, আজকে আব্বা তাকে ঘর থেকেই বের করে দেবে। নুরার কাছে যাওয়া যায়। ওখানে সুখ আছে। দুই জাহানের শুখ। নাহ পলায়ন করা ঠিক হবে না, আব্বাকে সবাই জুতাপেটা করতে পারে। নামাজ শেষ হবার পর মতিন সাহেব সবাইকে জড় করেন।
--বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। সকল ভাই সাহেব আজকের বিচার কিছুক্ষন পরই মতিন সাহেবের ঘরের উঠানে শুরু হবে, বাদী ও বিবাদি পক্ষকে হাজির হবার আদেশ দেয়া হল।
মতিন সাহেবের একনিষ্ঠ ভৃত্য আব্দুল ঘোষণা দেয়।
মতিন সাহেব চেয়ারে বসে আছেন গুরুগম্ভীর একটা ভাব নিয়ে, অন্য মাতবরাও রয়েছেন। করিম শেখ মাটিতে মাথা নিচু করে বসে আছে। খালেক ঠিক তার পেছনেই দাড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। গ্রামের সবাই উঠান ঘিরে আছে। মতিন সাহেব হাঁকলেন
--কিরে করিম্মা, তোর পোলায় রাস্তা ঘাটে এই সব কি কইরা বেড়ায়?
--হুজুর আমি তো কিছু জানি না।
--তুই কি খবর রাখস?? জানস অয় যে নুরার লগে মিল্লা নেশা করে আর গেরামের বেবাক রেও নেশার অভ্যাস ধরাইব। এই বয়সে আমরা নামাজ কোরান করছি, আর তোর পোলায় পুরা গেরামটারে নষ্ট করতেছে। ময় মুরুব্বীরও সম্মান করে না। কি শিখাইছস? বউডারে তো মারলি। এহন পোলায় কি গেরামের বেবাকরে মারব। তোর পোলায় এই গেরামে থাকবার পারব না। ওরে ওই গেরাম ছাইড়া চইলা যাইতে হইব। নাইলে তোর ঘর জমিন সব লইয়া তরে শুদ্ধা গেরাম ছাড়া করুম।
--হুজুর আপনে যা কন??
--ওই খালেইক্কা এহনি এই গেরাম থিক্কা বাইর হইয়া যা। ওই ওরে জুতার মালা পরাইয়া দে।
আব্দুল এসে খালেককে জুতার মালা পরিয়ে,ক্রমাগত লাথি মারতে মারতে বের করে দেয়। খালেক হাটতে পারে না। অজ্ঞান হয়ে যায়। করিম শেখ দূর থেকে চোখ মুছেন।
খালেকের জ্ঞান ফেরে, নুরা পাগলা গাঁজায় দম দিচ্ছে।
--আমি কই?
--তুই আমার বাড়িতে।
--এইডা বাড়ি নাকি, এইডা তো গাছ।
--এইডাই আমার বাড়ি।
--আমারে এইহানে তুই আনছস??
--হু। নুরা আবার গাঁজায় নিমগ্ন হয়।
এটি একটি বট গাছ। শতবর্ষী বট গাছ। নুরা এইখানেই ঘুমায়। গ্রাম থেকে বেশ দূরে, পাশ দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে।পথিকেরা থামে গাছের ছায়ায়, নুরা তাদের কাছ থেকে ভিক্ষা নেয়। ভিক্ষার টাকায় গাঁজা কেনে।
--তুই শহরে চইলা যা।
--কি করুম শহরে গিয়া?
--কাজ করবি, আর গাঁজা খাবি। এইহানে থাকতে পারবি নে। আব্দুইল্লা তরে দেখলে এইবার মাইরা ফালাইব। মওলানার আদেশ আছে। তোর বাপের ভিটার প্রতি নজর। তোরে ভাগাইয়া দিয়া তোর বাপের ভিটা এইবার দখল করব।
--তুই ব্যাটা এইসব জানস কেমনে??
--হুম জানি জানি। সবই দয়ালের কৃপা।
--দয়াল কে?
--দয়াল আমার বাপ
নুরা গান ধরে, গলাটা বেশ ভাল। খালেকের শুনতে খারাপ লাগে না। খালেক এখন গ্রামে ফিরে যাবে না। শহরে যাবে, আব্বা থাকলে হয়ত ভিটাটা বাচাতে পারবে কিন্তু আবার ফিরে গেলে কিছুই থাকবে না। খালেক শহরে দিকে হাটা দেয়।
বট গাছটার সামনে ছোট খাট একটা জটলা। কেউ একজন মারা গেছে। কিছু লোক এসে হ্যাঁয় হুতাশ করে কাঁদা শুরু করল। কয়েকজন ওইখানেই কবর খোঁড়া শুরু করল। এইখানে দয়াল বাবার কবর হবে। একটি মৃত দেহ পরে আছে। হাড্ডিসার মৃতদেহ। কিছু লোক টুপি পরে কোরান তেলাওয়াত করছে। কেউ কেউ আতর ছিটাচ্ছে। নুরানি পরিবেশ।দোয়া দুরুদ চলছে। কবর হল, কবরে লাল গিলাফ পরান হল। মানুষ এসে দোয়া পড়া শুরু করল।
অনেকদিন পর খালেক আবার গ্রামে ফিরছে। মনটা খুব উল্লাসিত। কিছুদিন আগে আগে সেইল্লার সাথে দেখা হয়েছিল। সেইল্লা এখন বাসে পকেটমারে। বাবা অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। মাওলানা মতিন তাদের বাড়ি নিতে পারে নাই। আয়না এখন তাদের বাড়িতেই থাকে। আয়না সেইল্লার ছোট বোন। ছোট বেলায় ভাল লাগত, এখন কেমন হয়েছে কে জানে। খালেক এখন বাড়ি ফিরছে। হাতে কিছু মিষ্টি। আব্বার জন্য পরিস্কার লুঙ্গি আর টুপি। খালেক বাড়িতে ফিরে কিছু পায় না। আব্বা মারা গেছেন এক মাস, বাড়ি এখন আয়নার দখলে। তার বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে দারুন সুখে দিন কাটাচ্ছে। খালেকের সেই সুখ নষ্ট করতে ইচ্ছে হয় না।
বট গাছের সামনে মেলা বসেছে। এই গ্রামের সবচেয়ে বড় মেলা। আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই এই মেলাতে যায়। খালেক যখন গ্রামে থাকতো তখন এই মেলা বসত না, এখন বসে। বট গাছের পাশে একটি মাজার আছে, সবাই গিয়ে মাজারে দোয়া চায়। ওইখানে গাঁজার আসর বসে, গান বাজনা চলে। খালেক, নুরার কথা জিজ্ঞাসা করে। কেউ বলতে পারে না। অইদিনের পর কেউ আর নুরাকে দেখেনি। খালেক বটগাছের সামনে যায়। বিশাল এক মেলা বসেছে। সাধুরা বসে গাঁজায় দম দিচ্ছে। খালেক উৎসাহী হয়।
--বাবা কি করেন??
--সিদ্ধি সুখের স্বাদ নেয়ার চেষ্টায় আছি।
--এই খানে কি রকম সুখ??
--দুই জাহানের সুখ। দম নেয়ায় দুনিয়ার সুখ ছাড়ায় স্বর্গীয় সুখ।
খালেকের আর বুঝতে বাকি থাকে না। অনেক দিন হল গাঁজায় দম দেয়া হয় না। বসে পরে দুই জাহানের সুখ নিতে।
১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ২:১১
আমি বিভীষণ বলেছেন: আপনার মন্তব্যটি, আশ্চর্য বিষাদময় ব্যাপারটি বোধগম্য হইল না। বুঝাইয়া বললে আরও ভাল লাগত।
গল্প ভাল লেগেছে শুনে পুলকিত হইলাম
২| ১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ২:০২
ভবঘুরের ঠিকানা বলেছেন: সহজ সরল ভঙ্গিমায় চমৎকার উপস্থাপনা - অনেক ভালো লাগলো ভাই । লেখালেখি নিয়মিত চালিয়ে যাবেন, অপেক্ষায় থাকব ।
১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ২:১৩
আমি বিভীষণ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাদের অনুপ্রেরনা লেখনীর রসদ যোগায়।
৩| ১৫ ই মে, ২০১৩ ভোর ৬:২৬
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
দুই জাহানের সুখ। দম নেয়ায় দুনিয়ার সুখ ছাড়ায় স্বর্গীয় সুখ।
গল্পে ভাললাগা।
১৫ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯
আমি বিভীষণ বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৫ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:০৯
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
চমৎকার উপমা এবং গল্পের মরাল অসাম
১৫ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১০
আমি বিভীষণ বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১:১৯
নাজমুস চৌধুরি বলেছেন: স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
দুই জাহানের সুখ। দম নেয়ায় দুনিয়ার সুখ ছাড়ায় স্বর্গীয় সুখ।
গল্পে ভাললাগা।
১৬ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:০০
আমি বিভীষণ বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১:৪১
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আশ্চর্য বিষাদময় গল্প। ভাল লাগল।