নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Sometimes people dont want to hear the truth because they dont want their illusions destroyed. Friedrich Nietzsche
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কেউ দায়িত্ব নিয়ে কোন কাজ করে না। ধরুন আপনি একটি অফিসে কোন একটি কাজে গেলেন, যাওয়ার পর আপনাকে নিজে খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে কাজটি করবেন। অফিসের পিয়ন বা এই ধরণের লোকের কাছে কোন সাহায্য চাইতে গেলে দেখবেন তারা আপন মনে মোবাইলে ব্যস্ত! অফিসে আসা কোন লোককে সাহায্য করা যে তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে সে খবর তার নেই! শুধু পিয়ন না, অফিসের বড় বড় কর্মকর্তারা অনেকেই আছেন যারা শুধু কাগজপত্র সাইন করতে জানেন। কোন সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হবে সেই ইনোভেশন তাদের কারো মাঝে নেই। জবাবদিহিতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের আসলে জবাবদিহিতার কোন কালচার গড়ে উঠেনি।
তখন আমি চাকুরিতে বদলীজনিত কারণে ঢাকায় এসেছি। আমার পূর্বের চাকুরিস্থল দুর্গম এলাকায় ছিল। সেখানে একটি মাত্র সরকারি ব্যাংক ছিল বিধায় সেখানে টাকা রাখা ছাড়া আর কোন গতি নেই! বদলি হয়ে আসার পর ওই ব্যাংকের ঢাকায় অবস্থিত একটি শাখায় গেলাম কিছু টাকা তুলতে। তারা আমাকে বলল যে আমি সর্বোচ্চ কত টাকা তুলতে পারব সেটার লিমিট দেয়া নেই! সুতরাং আমাকে এই টাকা তুলতে দেয়া যাবে না। আমি বললাম যে এটা আমার নিজের একাউন্ট। আমি কেন টাকা তুলতে পারব না? কোন সমস্যা থাকলে সেটা তো আপনাদের সমস্যা, আপনারা একটু কষ্ট করে সমাধান করে দিলে ভাল হয়। তারা আমাকে বলল, এই সমস্যার সমাধান করতে আমাকে আমার পূর্বের কর্মস্থলের সেই ব্যাংকে গিয়ে করতে হবে! আমি এত বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে সেটা একটা দুর্গম অঞ্চল, সেখানে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না! তারা মানতেই চাইল না, এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তা যিনি একজন মহীলা, আমাকে বললেন, আপনি চাকরি থেকে বদলী হয়ে আসার সময় ব্যাংক একাউন্ট ক্লোজ করে আসলেন না কেন? যদিও এটা তার সম্পূর্ন অনধিকার চর্চা, আমি নিয়মিত ইনকাম ট্যাক্স দেই, আমি বাংলাদেশের কোথায় একাউন্ট খুলব, কোথায় ক্লোজ করব সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তারপরও আমি তাকে বললাম যে, একাউন্টে প্রায় ৩ লাখ টাকার মত আছে, একাউন্ট ক্লোজ করে এত টাকা ক্যাশ সাথে নিয়ে আসা নিরাপদ ছিল না, তাই একাউন্ট ক্লোজ করিনি। এত কথা বলার পরেও সমস্যার সমাধান হল না।
দুর্গম অঞ্চলে কাজ করার একটা বড় সুবিধা হল এখানে অফিসাররা প্রায় সবাই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন, এ কারণে সবাই একজোট হয়ে থাকেন, একসাথে আড্ডা দেন, একজন আরেকজনকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনেন। ওখানকার ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার সাথে ব্যাক্তিগতভাবে ভাল সম্পর্ক ছিল বিধায় তাকে ফোন করে আমার সমস্যা জানাই। তিনি নিজেও অন্যত্র বদলী হয়ে গিয়েছেন। তিনি আমাকে বললেন, ভাই এটা তো কোন সমস্যাই না! আপনার টাকা আপনি তুলবেন এখানে তো কারো কিছু বলার থাকে না! আর যে সমস্যার কথা উনি বলেছেন, উনি ওই ব্রাঞ্চে ফোন করলেই তো সেটা ঠিক করে দেয়া যেত! একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ কথা টাকা তুলতে পারবেন সেই আপার লিমিট ঠিক করে দেয়া নেই সেটা তো ব্যাংকের অফিসিয়াল সমস্যা, এটা তো গ্রাহকে সমস্যা না যে গ্রাহককে হয়রানি করতে হবে। এরপর উনি ১০ মিনিটের মধ্যে আমার সেই সমস্যার সমাধান করে দিলেন। তো যে সমস্যার সমাধান ১০ মিনিটে হতে পারত সেটার জন্য আমাকে সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়!
কোভিড সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে আমার ১০২ ডিগ্রি জ্বর আসে, সাথে সর্দি, গায়ে ব্যাথা - মানে সব রকম সিম্পটম আছে। পরদিন আমার মেয়েরও জ্বর আসে। আমার স্ত্রীও অসুস্থ। যেহেতু আমার মেয়ে অসুস্থ তাই আমি আর দেরি না করে স্যাম্পল দিব বলে ঠিক করি। আমার মেয়ে অনেক ছোট তাই চিন্তা করলাম আগে আমরা স্যাম্পল দেই, সেটার রিপোর্ট দেখে ওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব। চারিদিকে এত এত খারাপ খবর শুনছিলাম যে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছিলাম নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে নিয়ে। যাইহোক স্যাম্পল দিতে গেলাম জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটে। গিয়ে শুনলাম ওনারা সকাল ১১টার পর স্যাম্পল নেন না, আমি গিয়েছিলাম সোমবার ১১ঃ৩০ এ। এ ছাড়া শুধুমাত্র শনি, সোম, বুধবার স্যাম্পল কালেকশন হয়। যাইহোক বুধবার দিন সময়মত গেলাম, গিয়ে দেখলাম যে এখনও কাজ শুরু হয়নি কারণ লজিস্টিক এখনও আসেনি। লজিস্টিক যে রুমে থাকে ঐ রুমের চাবি যার কাছে তিনি করোনা আক্রান্ত তাই আসেননি। অন্য কার কাছে চাবি আছে কেউ বলতে পারছে না, কখন স্যাম্পল কালেকশন শুরু হবে কেউ জানে না! বাসায় দুধের শিশুকে রেখে আমি আর আমার স্ত্রী স্যাম্পল দিতে এসেছি। এতক্ষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা তো সম্ভব না। তাই পরিচিত একজন স্যারকে ফোন দিলাম, উনি দায়িত্বশীল লোকজনকে ফোন করে দেরীতে হলেও স্যাম্পল কালেকশনের ব্যবস্থা করলেন। একজন কর্মচারীর মাধ্যমে জানতে পারলাম বুধবার দিন কালেকশন হওয়া স্যাম্পলের পরীক্ষা হবে বৃহস্প্রতিবার, শুক্রবার দিন বন্ধ তাই রিপোর্ট আসবে শনিবার। কী আর করার! শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শনিবার গেলাম, গিয়ে শুনলাম ওনাদের মেশিন নষ্ট তাই পরীক্ষা হয়নি। কবে হবে সেটাও তারা জানেন না! এই হল ওনাদের দায়িত্বশীলতার নমুনা! স্যাম্পল কালেকশন যেগুলো হয়েছে সেগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কয়েকটা ফোনকল আর একটা চিঠির মাধ্যমেই অন্য কোথাও পরীক্ষা করিয়ে আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু ওই যে বললাম, জবাবদিহিতার কোন কালচার আমাদের দেশে নেই।
এরপর গেলাম পাশেই অবস্থিত বক্ষব্যাধি হাসপাতালে, সেখানেও ওইদিনের মত স্যাম্পল কালেকশন শেষ। পরিচিত একজনের মাধ্যমে সরাসরি ল্যাবে গেলাম, আমার সাথে আরো কয়েকজন ছিলেন যাদের জরুরী ভিত্তিতে স্যাম্পল দেয়া প্রয়োজন। অবশেষে কালেকশনের ব্যবস্থা হল। কিন্তু যে ব্যাক্তি কালেকশন করবেন তিনি প্রয়োজনীয় প্রটেকশন ছাড়াই হাতে কোন হ্যাক্সিসল না দিয়ে আগেই পরে থাকা একটি গ্লাবস দিয়ে আমার স্যাম্পল কালেকশন করলেন। আমারটা নেয়ার পরে সবারটাই উনি একইভাবে নিচ্ছেন। প্রতিবার স্যাম্পল কালেকশনের আগে হাত জীবাণুমুক্ত করার নিয়ম উনি মানলেন না। আর স্যাম্পল নেয়ার নিয়ম হচ্ছে নাক আর মুখের দুটি স্যাম্পল নিতে হবে, আর শুধু একটি স্যাম্পল নিতে হলে শুধু নাকেরটা নিতে হবে। কিন্তু উনি শুধু মুখের থেকে স্যাম্পল নিলেন। যাইহোক নবাবজাদারা যে অবশেষে আমার স্যাম্পল নিয়েছে তাতেই আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম!
- ইলুসন!
কিছুক্ষণ আগে রিপোর্ট এসেছে। কোভিড পজিটিভ। সবাই আমার এবং আমার পরিবারের সবার জন্য দোয়া করবেন।
২| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দু:খজনক
আসলেই জবাবদিহীতার কালচার একেবারেই নেই।
যাদের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন সুযোগ সুবিধা তারাই যেন উল্টো তাদের দয়ার পাত্র হয়ে যায়!
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
মনে সাহস রাখুন। কোভিড পজিটিভি হলেও ভাল হয়।
নিজে সাহসী হোন। বাসায় সবাইকে সাহস দিন।
আর যত বেশি সম্ভব কোভিড এর প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো পালন করুন।
আল্লাহ সবাইকে সুস্থ করে দিন- এই প্রার্থনা রইলো।
৩| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৭
আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: আপনার ও আপনার পরিবারের সবার সুস্থতা কামনা করছি।
দেশ ও দেশের মানুষগুলো নিয়ে কিছু বলার নাই আমার। আমি এই দেশের নবাবজাদাদের নিয়ে কিছু বলতে গেলে ভদ্র ভাষায় বলতে পারি না, তখন আবার লোকে আমারেই দোষ দেয়!
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:৪৫
আল-ইকরাম বলেছেন: মহান আল্লাহ্ পাক আপনার ও আপনার পরিবারের সকলকে হেফাজত করুন।