নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !
এক.
সাওলিন পাওয়ারের চশমার উপর দিয়ে হলোগ্রাফিক ডিসপ্লেটার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে বয়সের ভার স্পষ্ট , চুলগুলো হালকা লম্বা, পাক ধরেছে তাতে। দেখতে চিকুন চাকুন, চেহারায় একটা ভাবুক ভাব আছে, একজন আদর্শ বিজ্ঞানীর যে রকম বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার সবগুলোই তার সাথে মিলে যায়।তিনি বিজ্ঞান পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বর্তমানে একটা সিক্রেট প্রজেক্টে কাজ করছেন। তিনি হলো-গ্রাফিক ডিসপ্লেটার থেকে চোখ নামিয়ে নিয়নের দিকে তাকিয়ে বললেন "হুম তোমার সিভিটা খুবই ইম্প্রেসিভ! তোমার পরিবার মানে বাবা মার কোন তথ্য পেলাম না এখানে ? "
"আমার বায়োলজিক্যাল বাবা-মা নেই।আমাকে ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি করা হয়েছে"
সাওলিন কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল "ও আচ্ছা !কিছু মনে কর না যাদের ল্যাবরেটরিতে জন্ম তামের আমার কেন জানি মানুষ মনে হয় না, ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মত মনে হয়!"
সাওলিনের কথা শুনে কিছুটা আহত নিয়ন! একজন বিজ্ঞানীর কাছ থেকে এমন একটা কথা সে আশা করেনি!একজন বায়োলজিক্যাল মানুষের যেই ধরনের গুন থাকা দরকার সব ধরনের গুনই তার রয়েছে। তার আবেগ অনুভূতি, মমতা, চিন্তা করার ক্ষমতা কোন কিছুরই কমতি নেই! কিছু একটা বলতে গেল নিয়ন ।
সাওলিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল "তোমার অনেক বাছাই করে এই প্রজেক্টে নেয়া হয়েছে। আশা করি তুমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে! এই প্রোজেক্ট সম্পর্কে তুমি কতটুকু জান ? "
" আমি নেটে খুব বেশী কিছু পাইনি।নিউরো-কম্পিউটারের সাহায্য নিয়েছিলাম এই প্রজেক্টের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে কিন্তু সে খুব একটা তথ্য দিতে পারেনি কারণ এটা নাকি কনফিডেন্সিয়াল প্রজেক্ট। হিউম্যান ব্রেনের সেল নিয়ে কাজ করার কথা এতটুকু জানতে পেরেছি! "
"তুমি ঠিকই জেনেছ। এটা খুব কনফিডেন্সিয়াল প্রজেক্ট , এই প্রোজেক্টটার উদ্দেশ্য হল মৃত মানুষের ব্রেনের সাথে চ্যাটিং করা । সেটা লিখে হতে মারে বা কম্পিউটার ভোকাল কর্ডের সাথে যুক্ত করে বয়েস আকারে! "
নিয়ন কৌতুহলিভাবে জিজ্ঞেস করল "সেটা কিভাবে ?"
"সেটা নিয়েই তোমাকে কাজ করতে হবে।তবে তোমাকে একটা ধারনা দিয়ে নেই, মানুষ যখন কথা বলে তখন ব্রেনের নিদিষ্ট একটা জায়গায় একটা কম্পন হয় যেটাকে বায়ো সিগনাল বলা যায়। সেই বায়ো সিগন্যালটাকে আইডেন্টিফাইড করে ইলেক্টিকাল সিগন্যালে পরিবর্তন করে কম্পিউটারে ইনপুট হিসেবে দিতে হবে । সেই সিগন্যালকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং দিয়ে এনালাইসিস করে টেক্সট আকারে বা লাউড স্পীকারে দেয়া ..."
নিয়ন সাওলিনকে থামিয়ে দিয়ে বলল "কিন্তু মৃত ব্রেন-তো কথা বলতে পারে না । তাহলে সিগন্যাল কিভাবে ধরব।"
"হুম এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। আর্টিফিশিয়ালি ব্রেনকে জাগিয়ে তুলতে হবে। এর জন্যইতো রিসার্চ।"
নিয়ন মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝার ভান করল!এই প্রজেক্টটা কেন এত গোপনীয়তা সেটা তার মাথায় ধরছে না।তবে সে এই ব্যাপারে সাওলিনের কাছে অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করল না। " আমাদের এই প্রজেক্টে আর কে কে কাজ করছে? "
" আপাতত তুমি আর একটা ছেলে আছে রুও! তোমরা দুজন কাজ করবে!রুও এর কথা বলতে বলতেই রুও পিছনে এসে দাঁড়াল । তোমার কথাই হচ্ছি রুও । এর নাম নিয়ন, তোমরা পরিচিত হও, আজ থেকে সে তোমাদের সাথে কাজ করবে! "
নিয়ন রুও এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। রুও নিয়নের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটা হাসি দিল! নিয়নের রুও এর মুখে লেগে থাকা হাসিটাকে কেমন জানি কৃত্রিম মনে হল।তাকে দেখে খুশি হয়েছে কিনা সেটা বুঝা গেল না। "কাজটা ঠিকঠাক মত হয়ে গেছে!" সাওলিনের দিকে তাকিয়ে যন্ত্রের মত বলল রুও!
সাওলিন মাথা নাড়াল। কোন কথা বলল না!
***
সাওলিনের রুম থেকে বেরিয়ে রুও নিয়নকে ল্যাবরেটরিটা ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল। সাওলিনের রুমের পাশেই বড় একটা ল্যাবরেটরি। সেখানে এক সাথে একশত জনের বসার মত ব্যবস্থা আছে। সবার টেবিলেই বৈজ্ঞানিক সব যন্ত্রপাতিতে ভরপুর। তবে এত বড় বিশাল ল্যাবরেটরিতে কেউ নেই, সবগুলো চেয়ারই খালি পরে আছে।রুও অনেকটা যাত্রিক ভাবে সবকিছুর বর্ণনা করতে লাগল।নিয়ন রুওকে থামিয়ে বলল এখানে এত মানুষের ব্যবস্থা আছে খালি কেন রুও ?
"ল্যাবরেটরিটা মাত্র চারবছর আগে তৈরি করা হয়েছে। এতো গোপনীয় প্রজেক্ট , এখানে এত বেশী লোক দরকার নেই তাই খালি । নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কঠোর এখানে।মাটির ৩শত তলা নিচে এরকম ল্যাবরেটরি এই প্রথম। নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নতুন প্রজন্মের রোবট আলফা-০২৩ কে।"
" হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি। আমি যখন এখানে প্রবেশ করেছি তখন চোখের রেটিনা, আঙ্গুলে ছাপ সব কিছুই স্ক্যান করা হয়েছে। এখানে এত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন ? "
রুও এবার চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে বলল " তুমি প্রশ্ন করে কেন। "
রুও চোখে মুখে কেমন জানি একটা বিরক্ত ভাব নিয়ন লক্ষ্য করেছে। মাত্র দুইটা প্রশ্ন শুনেই বিরক্ত হয়ে গেল! কিছুটা বলতে যেয়েও সে কিছু বলল না! রুও আর নিয়ন দুজনের ল্যাবের পাশাপাশি দুটো টেবিলের সামনে থেকে চেয়ার টেনে বসল। " আজ থেকে তুমি এখানেই বসবে বলল রুও । এখন তোমাকে একটা মজার কিছু দেখাব নিয়ন। "
নিয়ন উৎসাহ নিয়ে রুও এর দিকে তাকালে রুও এর দিকে। রুও উঠে গিয়ে পাশের রেফ্রিজারেটর থেকে একটা আস্ত বড় থালা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখল। থালাটা বড় একটা ঢাকনা দিয়ে ঢাকা। সে আসতে করে ঢাকনাটা খুলল পর সেখান থেকে হালকা শীতল বাতাস বের হতে লাগল। নিয়ন হঠাৎ দেখে ভরকে গেল । আস্ত একটা মানুষের মাথার মগজ, মনে হয় টাটকা, মগজটা আসতে আসতে কাঁপছে। "এটা আমাদের স্যাম্পল । এটা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের এই মৃত ব্রেনের সাথে চ্যাটিং করতে হবে" বলল রুও ।
নিয়নের শরীরের ভিতর কেমন জানি নাড়া দিয়ে উঠল মগজটা দেখে! " এটা এত ঠাণ্ডা কেন ? "
" একে -৬০০ ফারেন হাইট তাপমাত্রায় রাখা হয়েছে যাতে ব্রেইনের নিউরনগুলো সজীব থাকে।"
" এটা কোথা থেকে জোগাড় করলে! আমি যতদূর জানি পৃথিবীতে মানুষ এখন আর প্রাচীন কালের মত মানুষ আর রোগে ভুগে, অপ-ঘাতে মারা যায় না, মানুষ প্রায় কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত বাচে। সার্জারি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!"
রুও রেগে বলল " তুমি আসলেই একটা মাথা মোটা।আমরা গবেষণার জন্য এটা মানুষের ব্রেইনের আদলে এটা বানিয়ে নিয়ে এসেছি। এটাতে আর্টিফিশিয়ালই স্মৃতিও দেয়া হয়েছে যাতে আমরা এর সাথে যোগাযোগ করতে পারি! "
রুও এর কথা শেষ না হতে নিয়ন বলল " সেটা কিভাবে! " কথাটা বলেও যেন সে বোকা হয়ে গেল!
" তোমার মত গবেটকে সাওলিন কেন যে এখানে নিয়ে এলো কে জানে! এটা ৩০১০ সাল , এখন আর মানুষ প্রাচীন যুগের মত ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে জ্ঞান আহরণ করে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞানী বা ব্যবসায়ী হয় না। এখন বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে অনেক। এখন ল্যাবরেটরিতে মানুষের জিনোম সিকোয়েন্স এবং মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে কে কোন প্রফেশনে মানান সই সেটা নির্ধারণ করে। তারপর ব্রেইনের নিউরনে বিজ্ঞানীরা সফটওয়্যার ইন্সটল করে দেয় । ঠিক সেইভাবেই এই ব্রেইনটাকেও কিছু আর্টিফিশিয়ালি স্মৃতি দেয়া হয়েছে গবেষণার জন্য! বুঝলে গবেট !"
নিয়ন কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য । তবে রুও এর ব্যাবহার তার কাছে খুব একটা পছন্দ হয় না! কথায় কথায় অপমান করে তাকে!
" আয়তনে এটি প্রায় ৮০০ কিউবিক সে:মি। যেটা একটা স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে কিছুটা বেশী ছোট ! " বলল রুও ।
" হুম, বর্তমানে মানুষের মস্তিষ্ক প্রায় ১০০০ সে:মি । বেশীরভাগ মানুষই এখন আর জ্ঞান আহরনের জন্য কষ্ট করে না, ব্রেইনকে চর্চা করে না, চর্চা করে অল্প কিছু মানুষ আর বাকিরা সুফল ভোগ করে তাই ব্রেইনের সাইজ দিন দিন লগারিদমিক হারে কমছে! এক সময় মানুষের ব্রেইন ছিল ১৫০০ সে:মি এর সমান! আবার আমরা বিবর্তনের উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করেছি ।" রসিকতা করে বলল বলল নিয়ন।
রুও গম্ভীর হয়ে নিয়নের দিকে তাকালে! রসিকতা সএ খুব একটা পছন্দ করে না সেটা চোখের ভাসায় বুঝিয়ে দিল।
বেস কয়েকমাস কেটে গেল। তারা দুজন নিরলস-ভাবে গবেষণার কাজ করতে লাগল। যতই সে কাজ করছে ততই যেন নতুন কিছু শিখছে। মৃত মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা খুব সহজ কাজ নয়। এখানে চ্যালেঞ্জ আছে, তবে নতুন কিছু করার উত্তেজনা কম নয়!
দুই
***
সাওলিন চশমার ফাঁক দিয়ে মাইকোস্কোপের দিকে তাকিয়ে কি যেন পরীক্ষা করছে আর কিছুক্ষণ পরপর টার্চ পেন দিয়ে কিছু লেখছে। তার টেবিলের উপর কাগজ পত্রের স্তূপ আর ছোটবড় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভিতরে আসতে পারি দরজায় কড়া নেড়ে বলল নিয়ন। সাওলিনের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, তিনি নিজের কাজে ডুব আছেন মনে হয় বোমা মারলে হুশ আসবে না। হালকা কাশি দিয়ে নয়নের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল ভিতরে আসবে? এবার সাওলিন মাইকোস্কোপের দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে এক হাত দিয়ে ইশারা করে চেয়ারে বসতে বলল। তারপর নিজের গদি চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল " কাজের প্রজ্ঞেস কত দূর নিয়ন? "
"আমি হিউমেন ব্রেনের উপর বেশ কিছু জার্নাল পড়েছি বিশেষ করে বায়োসিগনালকে কিভাবে ইলেক্টো সিগনালে পরিবর্তন করা যায় সেই জিনিষগুলো। আমি একটা হাইপোথেসিস দার করিয়েছি।"
সাওলিন কৌতূহলী ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস "করল সেটা কিভাবে ? "
"আমরা যেহেতু মৃত ব্রেনের সাথে চ্যাটিং করতে চাই, পরিষ্কার করে বললে মৃত মানুষের সাথে কথা বলা বুঝায়। প্রথমে কম্পিউটার সিমুলেশন করে মাথা ছাড়া মানুষের একটা প্রতিচ্ছবি ডিজাইন করব। তারপর যেই হিউমেন ব্রেন স্যাম্পলটা আমাদের এখানে আছে সেটার সাথে অসংখ্য অপটিকাল ফাইবার দিয়ে কানেকশন করে ইনপুট হিসেবে কম্পিউটারে সিমুলেশন করা বডিটার সাথে সংযুক্ত করা করব। এখানে ব্রেনের একটা ভ্রম হবে যে তার বডি আছে, ব্রেইন সিগনাল পাঠিয়ে সিমুলেট করা বডিকে কন্টোল করতে পারবে। আশা করা যায় আইডিয়াটা কাজে আসবে!"
"আমিও খুবই ইমপ্রেস তোমার আইডিয়াটা নিয়ে। তুমি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে হিউমেন বডি তৈরি কর। রুও তোমাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে।তোমার কাজের খবর কি ? " রুও এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সাওলিন।
"নিয়নের আইডিয়াটা আমার সাথে আগেই শেয়ার করেছে। আমি হার্ডওয়ারের ইন্টারফেসিং নিয়ের কাজ করছি। ব্রেনের প্রতিটি অংশ আলাদা আলাদা কাজ করে, আমি প্রতিটা কাজের জন্য নিযুক্ত সেইলগুলোকে সনাক্ত করেছি ইতিমধ্যে। নিয়ন সাইমুলেশন বডি তৈরি করলে আমি ফাইবার দিয়ে ব্রেইনের সেইগুলোকে কম্পিউটারে লাগিয়ে দিব।"
সাওলিন চোখের চশমাটা টেবিলে রেখে বলল "ভেরি গুড। কাজগুলো আমাদের খুব সতর্কতার সাথে করতে হবে যাতে বাহিরের কেউ না জানতে পারে। এমন কি বিজ্ঞান পরিষদের কেউ জানি ঘুণাক্ষরেও টের না পায়।"
সাওলিন কথাটা যে নিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছেন সেটা বুঝতে তার আর বাকি রইল নাহ। সাওলিন বিজ্ঞান পক পরিষদের একজন সিনিয়র সাইন্টিস্ট তবুও সে কেন তাদের কে জানাতে চাচ্ছে না সে ব্যাপারের নিয়নের একটু খটকা লাগল। এই প্রজেক্টতো বিজ্ঞান পরিষদই ফান্ডিং করছে তাহলে তাদের জানাতে চাচ্ছে না ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভুত লাগল নিয়নের। "সাওলিন একটা প্রশ্ন করতে পারি? "
"অবশ্যই নিয়ন। "
"আমাদের এই প্রজেক্টটা কারা ফান্ডিং করছে ? বিজ্ঞান পরিষদ করলে তাদের না জানানোরতো কোন কারণ দেখছি না। "
সাওলিন কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল "এই ব্যাপারগুলোতে তোমাকে নাগ না গলাতে আগেই নিষেধ করেছি।"
নিয়ন কিছু বলতে গিয়েও আর কিছু বলল না। সত্যি-ইতো তার এই ধরনের অর্থহীন প্রশ্ন করে লাভ কি? তার দায়িত্ব গবেষণা করা সেটা ভালভাবে করলেই হয় মনে মনে ভাবল নিয়ন। তবে একটা জিনিষ সে লক্ষ করেছে রুও এর এই ব্যাপারগুলোতে খুব একটা আগ্রহ নেই। আচ্ছা রুও কি এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছে?
"আর কি কোন কাজের কথা আছে? " জিজ্ঞেস করল সাওলিন।
রুও আর নিয়ন দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি বিনিময় করে সাওলিনের দিকে তাকিয়ে বলল " আপাতত নেই।"
"তাহলে তোমরা যেতে পার। কোন কিছু দরকার হল আমার কামরায় এসে নক কর।"
"আচ্ছা" দুজনেই সমস্বরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল।
****
সাওলিনের কামরা থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে রুওকে বলল "তুমি কিছু জান রুও? "
"কোন ব্যাপারে নিয়ন? "
"এই যে এই প্রজেক্টটা নিয়ে কেমন যেন একটা লুকোচরি চলছে! আমিতো জানতাম আমরা বিজ্ঞান পরিষদের হয়ে কাজ করছি এবং সাওলিনও বিজ্ঞান পরিষদের একজন কর্মকর্তা! তাহলে বিজ্ঞান পরিষদের অগোচরর এই গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে কেন? তুমি কি এই ব্যাপারে কিছু জান রুও? "
রুও নিয়নের দিকে নাকিয়ে বলল "আমি কিছু জানিনা! "
নিয়নের কেন জানি মনে হচ্ছে রুও মিথ্যে বলছে! কিছু একটা তার কাছ থেকে গোপন করা হচ্ছে। নিয়ন আর কথা বাড়াল না।
****
অসংখ্য চিকুন চিকুন বিভিন্ন রংয়ের তারগুলো দিয়ে হেলমেটটাতে সুক্ষভাবে লাগিয়ে দিল রুও। তারপর খুব সাবধানে তারযুক্ত হেলমেটটিকে খুলীবিহিন মস্তিষ্কে পরিয়ে দিল। তারপর মেল-মেটের অপর প্রান্তে থাকা বিভিন্ন রংয়ের তারগুলো কম্পিউটারের মাদার পোর্টের ছিদ্রগুলোর ভিতর যত্ন নিয়ে লাগাতে লাগল। " আমি কি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি রুও? " বলল নিয়ন।
রুও নিজের কাজ করতে করতে নিয়নের দিকে না তাকিয়ে বলল, " না, লাগবে না। "
" এতগুলো রংয়ের তার ব্যবহার করলে কেন রুও? তারগুলো-তো একই রংয়েরও হতে পারত? "
" বিভিন্ন রংয়ের তার ব্যাভারের কারণ হল এখানে প্রতিটা রঙ মস্তিষ্কের আলাদা আলাদা ফাংশনকে নির্দেশ করে। যেমন লাল রঙ মস্তিষ্কের যেই অংশটা ভাষা প্রসেসিং করে সেই অংশে লাগানো হয়েছে, কালো তারটি সংযুক্ত করা হয়েছে মস্তিষ্কের সেই অংশে যেখানে নিউমেরিক্যাল বা গাণিতিক কাজগুলো করে যেটাকে। বুঝেছ ? "
" হুম! কিছুটা বুঝতে পেরেছি কিন্তু একই কালারের তার ব্যাবহার করলেও-তো কোন সমস্যা ছিল ন। এখানে মনে হয়? "
" অবশ্যই সমস্যা হত! কারণ মস্তিষ্কের প্রতিটা ফাংশনের জন্য ব্যাবহ্রত তারগুলো কম্পিউটারের মাদার পোর্টের নিদিষ্ট স্থানে সংযুক্ত করতে হবে। ধর লাল তারটা কম্পিউটারের মাদার পোর্টের লাল কালারের স্থানেই যুক্ত করতে হবে, এভাবে প্রতিটি কালারের তারগুলো তার নিদিষ্ট স্থানে যুক্ত করতে হবে। আমি ইন্টারফেসিং ডিজাইনটা এমনভাবেই করেছি যাতে কাজ করতে সুবিধা হয়। "
" হুম। তোমার কাজ কি শেষ হল? "
" হ্যাঁ। প্রায় শেষ হল। "
নিয়ন কম্পিউটারটা অন করে তার তৈরি সিমুলেশন সফটওয়্যারটা ক্লিক করল। নিয়ন এই সফটওয়্যারের নাম দিয়েছে আর্টিফিশিয়াল ব্রেইন চ্যাটিং প্রোগাম। সফটওয়্যারটা অসাধারণ দেখতে। সফটওয়্যারের লে-আউটের বামে একটা আর্টিফিশিয়াল বডি দেখাচ্ছে, তার নীচ দিয়ে ' স্ট্যাটাস ' নামক একটা লেখা। তার ডানে ' হাউ টু কমিউনিকেট ' নামক একটা অপশন দেখাচ্ছে। " হুম লে-আউটটা দেখতে আকর্ষণীয় হয়েছে সামনের ডিসপ্লেটার দিকে তাকিয়ে বলল রুও। ' স্ট্যাটাস ' এবং ডানে ' হাউ টু কমিউনিকেশন ' অপশনটা দিয়ে কি বুঝাচ্ছ নিয়ন? "
নিয়ন বুঝতে পারল রুও এর তার কাজটা পছন্দ হয়েছে। তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলছে। " এখানে ' স্ট্যাটাস ' ক্লিক করলে কানেকশন সফল হলে হলে সাকসেস, না হলে ফেল লেখা দেখাবে দেখাবে। আর ডানে ' হাউ টু কমিউনিকেট ' এ ক্লিক করলে দুটি অপশন দেখাবে প্রথমটা শুধু চ্যাটিং আর দ্বিতীয় অপশনটা হচ্ছে ভোকাল কর্ড অপশনের মাধম্যে কথা বলে । "
""হুম দারুণ। আমাদের এই প্রজেক্ট সাকসেস হলে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞান মহলে হইচই পরে যাবে। তুমি কি বুঝতে পারছ ব্যাপারটা উত্তেজনা নিয়ে বিলল রুও।"
"হুম। তবে সাকসেস হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ মস্তিষ্কে সূক্ষ্মতর জিনিষ গুলো কোন খানে একটু কানেকশন মিস হলে বা লুস হলে ব্রেইন কোন রেসপন্স করবে নাহ। "
"এখন কি ব্রেইনটা পরীক্ষা করার জন্য প্রস্তুত ? "
"না এখনো পুরোপুরি পস্তুত নয়। আরেকটু সময় লাগবে, কম্পিউটার স্কিনে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে করতে" বলল নিয়ন।
"আপাতত কাজ বিরতি দেয়া যাক, ক্লান্ত লাগছে এখন। সাওলিন বাহিরে আছে, ও আসলে বাকি কাজ টুকু সেরে এক সাথে টেস্ট করা যাবে! কিছুটা হাই তুলতে তুলতে বলল রুও। চল স্নায়ুকে শীতল করা যাক আপাতত ! "
"কিভাবে? কৌতুহলিভাবে জিজ্ঞেস করল নিয়ন।"
"তোমাকে আগে বলা হয়নি আমাদের এই গবেষণাগারে গবেষকদের রিফ্রেইসমেন্টের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। একধরনের ইলেক্ট্রো মেগনিটিজমের তরঙ্গ আছে, সেটা অন করলে তোমার মস্তিষ্কের ভিতরে গিয়ে ব্রেনের স্ট্রেস পার্টটাকে ডিএক্টিভ করে মস্তিষ্কের সুখানুভূতিটাকে উত্তেজিত করে। "
"তাই নাকি বেশ কৌতূহলী সুরে বলল নিয়ন। আমি ল্যাবরেটরিতে বেড়ে উঠেছি তাই এই ধরনের সুযোগ পাইনি। তুমি কি তরঙ্গটাকে অন করবে? "
রুও হাত দিয়ে উপরের দিকে থাকা একটা ডিভাইসকে ইশারা করতেই একধরনের ক্ষুদ্রাকৃতির গ্রিন লাইট জ্বলে উঠল। মূহুত্যেই পুরো ল্যাবের লাইটিং কিছুটা কমে গেল। ঠাণ্ডা একটা বাতা প্রভাবিত হতে শুরু করল। নিয়নের হঠাৎ মাথা থেকে গবেষণার যত প্রেশার ছিল তা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে শুরু করল। এক ধরনের সুখ সুখ অনুভূতি তার দেহ মনে ভরে উঠল। অনেকটা মুক্ত পাখির মিত নিজেকে মনে হতে লাগল এরকম অনুভূতি তার কখনও হয়নি। তারা দুজনেই আরাম করে চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে রইল।
"কেমন লাগছে নিয়ন? " উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল রুও।
"চমৎকার। এরকম অনুভূতি আগে কখনো হয়নি আমার! "
চলবে ..
২য় এবং শেষ পর্ব – নিয়ন (বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী )
২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৭
কাছের-মানুষ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ওমেরা ।
হ্যা সামনে অনেক কিছুই হবে দুনিয়াতে আমরা তখন থাকব না! এটাই প্রকৃতির নিয়ম ।
২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৯
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
জাফর ইকবাল স্যারের ক্রুগো বইয়ে মনে হয়, পড়ে ছিলাম ।মহাকাশ অভিযানের আগে ! শব্দ তরঙ্গের প্রতিফলন দিয়ে,যকৃত,ফুসফুস,হৃদপিন্ড ও কিডনি যাবতীয় ছবি নেওয়া হয়। নিউরোনের সংখ্যা বের করা হয়!তেজক্রিয়তা দ্রব্য রক্তের সাথে মিশে শরীরের মোটালিজমের হার বের করা হয় !! সবশেষে ট্রকিওশান প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় ! এই রোবট নিয়ে লেখা !
আপনার বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী ভালো লেগেছে ।শুভ কামনা!
চলুক ........
২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:২২
কাছের-মানুষ বলেছেন: জাফর ইকবাল স্যার আমার একজন প্রিয় লেখক। শব্দ তরঙ্গের প্রতিফলন দিয়ে,যকৃত,ফুসফুস,হৃদপিন্ড ও কিডনি যাবতীয় ছবি নেয়া এখন আর কল্প বিজ্ঞান নয়। বরং শব্দ এবং আলো তরঙ্গ দিয়ে শরীরের ভিতকার রোগ নির্নয় এবং নিরাময় করা হয় এখন। তবে নিউরোনের সংখ্যা বের করা পর্যন্ত এখনও যেতে পারেনি মনে হয়! এক সময় হয়তাবা যাবে।
গল্পটা আমার লেখা শেষ , এক বারে দিলে বড় হয়ে যাবে বিদায় ভেঙ্গে দিলাম। বাকিটা এই সপ্তাহেই দিব।
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৪১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যেন ল্যাবেই হারিয়ে গেছিলাম
+++
২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০৯
কাছের-মানুষ বলেছেন: হা হা , যাক সার্থক মনে হচ্ছে তাহলে।
পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল অনেক।
৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৫৯
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ
৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:৫৪
কাছের-মানুষ বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইল।
৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১০
এম আর তালুকদার বলেছেন: এমন ভাবে গল্পের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম যেন নিয়ন আর রিও আমার সামনেই সব করতেছিল।
৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:০৯
কাছের-মানুষ বলেছেন: আন্তরিক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। এর পরের পর্বেও পাশে থাকবেন আশা করি।
৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩
কাছের-মানুষ বলেছেন: শেষ পর্ব
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০
ওমেরা বলেছেন: কত কিছু হবে কিন্ত আমি তো থাকব না!! গল্প টা বেশ ভালই লাগল ।