নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কল্প-গল্প : কেথির জন্য ভালবাসা

০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯


এক.
‘স্যার আসব?’ দরজায় কড়া নেড়ে বলল শালেহ।

রেহমান সাহেব একজন সাইকিয়াট্রিস্ট, দেখতে গাঁট্টাগোট্টা বেঁটেখেঁটে মানুষ। তার সাধা-বরন চুল আর বাঁকা হাড় বলে দিচ্ছে বয়সেরও একটা ওজন আছে। তার টেবিলের উপর বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছড়ানো ছিটানো আছে। সিগারেট ফুকতে ফুকতে বেশ মনোযোগ দিয়ে একটি মেইল পড়ে উত্তেজনায় ঘামছিলেন।

শালেহের ডাকে রেহমান সাহেবের চিন্তায় ছেদ পরল। শালেহকে দেখে সে বেশ অবাক হলেন তিনি। আধপোড়া সিগারেটটি অ্যাশট্রেতে গুজে সম্মতিসূচক মাথা ঝেঁকে ভিতরে আসতে বললেন।

সদ্য কিশোর থেকে তরুণে পদন্নোতি পাওয়া ছেলেটার নাম মোহাম্মদ শালেহ, বয়স আঠার কি উনিশ হবে। তার ত্রিশ বছরের ক্যারিয়ারে এরকম কোন রুগী তিনি পাননি। ছেলেটির সাথে অদ্ভুত এক ধরনের ঘটনা ঘটে, স্বপ্নে যে যা দেখে বাস্তবে সে তাই হয়ে যায়। হয়তবা সে স্বপ্ন দেখল সে একজন একজন গণিতের প্রফেসর, সত্যি সত্যি দেখা গেল সে সত্যিকারের একজন গণিতবিদ বনে গেল। ব্যাপারটা পরীক্ষা করার জন্য কয়েক দিন আগে সে ছেলেটির একটা গণিতের পরীক্ষা নিয়েছিলেন। প্রশ্নগুলো তিনি করিয়েছিলেন তার এক বন্ধুকে দিয়ে যে বর্তমানে অস্টেলিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের প্রফেসর।

জিবে বেশ কসরত করে গলা ভেজিয়ে খসখসে গলায় বললেন ‘নতুন কোন সমস্যা শালেহ?’

শালেহ চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে উত্তর না দিয়ে বলল ‘স্যার এক গ্লাস পানি খাব।’

রেহমান গ্লাস এগিয়ে দিতেই শালেহ খপ করে ধরে ঢগঢগ করে পানি খেয়ে নিল। শালেহের বেশ তৃষ্ণা পেয়েছিল, পানি তার এলোমেলো দাঁতের সারি পার হয়ে জিহ্বার সড়ক ধরে যেন কণ্ঠে পৌঁছালে বেশ স্বস্তি পেল বলে মনে হল।

রেহমান সাহেব সবসময় রোগীদের সাথে শান্তভাবে কথা বলেন। তবে এবার তিনি তার স্বভাবের বাইরে গিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন গলায় বললেন ‘সব কিছু ঠিক আছে শালেহ?’

‘সব কিছু ঠিক আছে কিনা বুঝতে পারছি না স্যার। আপনিতো সবই জানেন। গতকাল রাতেও’ আরও কিছু বলছিল শালেহ

রেহমান সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে তথ্য সরবরাহ করার গলায় বলল ‘তোমাকে আমি মনে মনে খুজছিলাম শালেহ। তুমি সেদিনের যেই গণিতের সমস্যা সমাধান করেছিলে সেটি আমি আমার বন্ধুটিকে মেইলে পাঠিয়েছিলাম, সে আজ মেইলে উত্তর দিয়েছে, যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছ তার মধ্য থেকে কিছু প্রশ্ন ছিল যেগুলো অত্যন্ত জটিল, গনিতে এডভান্স লেভেলের জ্ঞান না থাকলে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব না। ’

সাইকিয়াট্রিস্ট রেহমান একটু থেমে শালেহের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অপেক্ষা করল তারপর নিজের খর্বাকৃতির শরীর নিয়ে টেবিলের উপর ঝুঁকে এসে নিচু গলায় বলল ‘শালেহ তুমি এই সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করেছ?’

‘ব্যাপারটা আমিও জানি না। আমি যখন সমস্যাগুলো দেখলাম তখন মনে হল আমি সমাধানগুলো জানি। এর প্রতিটি উত্তরই যেন আমার মস্তিষ্কের নিউরনে সজ্জিত অবস্থায় রয়েছে, শুধু সেখান থেকে বের করে আনতে হবে ।’

‘এমনকি হতে পারে কোন বইতে এর সমাধান আগেই পেয়েছিলে তুমি ?’

শালেহ তার স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলল ‘না স্যার। আমার কোন কালেই গণিতের প্রতি কোন আকর্ষণ ছিল না, তাছাড়া আমি বরাবরি স্কুলে গনিতে বেশ দুর্বল ছিলাম। বলেছিলাম না সবকিছু শুরু হয়েছে মাত্র গত মাস থেকে।’

রেহমান সাহেব চেয়ারে হেলান দিয়ে হতাশ গলায় বললেন ‘আই সি!’

‘স্যার আপনার কি মনে হয় আমার সাথে এগুলো কি ঘটছে ?’

এই সহজ-সরল প্রশ্নটা রেহমান সাহেবের নিকট দারুণভাবে বিদল। তিনি একজন স্বনামধন্য সাইকিয়াট্রিস্ট, কি উত্তর দিবেন ঠিক বুঝতে পারলেন না। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে এরকম একটি সমস্যায় পরবেন তা তিনি চিন্তাও করেননি। তার সমস্ত অর্জনকে আজ খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে, তার অবস্থা অনেকটা সেই সাহেব বাবুর মতন যার জীবনটা ষোল আনাই মিছে হয়েছিল শুধু সাতার না জানার কারণে।

তিনি মনের ভিতর হাতরে বেরালেন একটি জুতসই উওরের আশায়, ব্যর্থ হলেন দারুণভাবে। তিনি এই সমস্যা ধরতে পেরেছেন বা অদূর ভবিষ্যতে পারবেন তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না । তার মনে হচ্ছে তিনি এর সমাধান করতে পারবেন না বললেও তার এত দিনের সব অর্জন ধূলির সাথে মিশে যাবে। তিনি দীর্ঘ এই ক্যারিয়ার নিয়ে এতদিন যেই তৃপ্তি পেতেন, সেখানে সে আজ একধরণের শূন্যতা অনুভব করছেন। অনেকটা অন্ত-ধন্ধে ভুগছেন তিনি।

‘শালেহ তুমি আজ কি যেন বলতে এসেছিলে?’ প্রসঙ্গ পাল্টানর সুরে শুকনো গলায় বলল রেহমান সাহেব।

শালেহ একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ‘না স্যার কিছু না। এমনি এসেছিলাম।'

‘আমার মনে হচ্ছে তুমি অন্য কিছু বলতে আসছিলে আজ।’

‘না স্যার । বললাম-তো এমনিই এসেছিলাম।’

‘তুমি কি আমার থেকে কিছু গোপন করতে চাইছ শালেহ?’

‘আমি কিছু গোপন করছি না। স্যার আমার ভাল লাগছে না। আজ উঠি।’

শালেহ চলে গেল, সে আজ বড় ধরনের একটি মিথ্যে বলেছে। সে এমনি এমনি আসেনি কিছু একটি বলতে এসেছিল, তবে তার মনে হচ্ছে কথাটা বললে রেহমান সাহেব নিতে পারবেন না।

দুই.
‘প্রিয় মোহাম্মদ শালেহ,
তুমি যেই ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছ সেটা আমি ভাল করেই ওয়াকিবহাল আছি। একমাত্র আমিই তোমাকে সাহায্য করতে পারি। আমার রিসার্চ গ্রুপে তোমাকে অগ্রিম স্বাগতম।
ইতি
প্রফেসর লীন,
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের, আমেরিকা’

চিঠিটি আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর দিয়েছে শালেহকে। চিঠিটি পড়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পরে গেল শালেহ কারণ সে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের সাথে কোনদিন যোগাযোগ করেনি, তাছাড়া চিঠিটি পড়ে মনে হচ্ছে সেই প্রফেসর তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে।তার ব্যক্তিগত বিষয়ে একমাত্র সাইকিয়াট্রিস্ট রেহমান সাহেবেই জানেন, তাই আজ বিকেলে রেহমান সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেছিল। রেহমান সাহেব সাফ জানিয়েছে সে কারো কাছেই তার বিষয়ে টু-শব্দটি পর্যন্ত করেনি।

সে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, ব্যাপারটা তার কাছে রহস্যময় লাগছে। তবে সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই চিঠির কোন উত্তর দিবে না, দেশ ছেড়ে যাবার তার কোন প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া কোথাকার এক প্রফেসর তাকে চিঠি দিয়েছে সেটা নিয়ে ভাবারও কিছু নেই মনে মনে ভাবল শালেহ।

কি মনে করে যেন শালেহ সন্ধ্যায় নিজের ঘরের সোফায় বসে চিঠিটাতে আরেকবার চোখ বুলাল। তার অদ্ভুতভাবে ঝিমুনি এলো, প্রচণ্ড নিদ্রা পাচ্ছে, যেন চিঠিটা ওকে নিজের দিকে টানছে।

চোখ খুলতেই দেখলো সে একটি বড় হলরুমের মত ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে আছে, সে আর সেই সদ্য কিশোর পেরোনো তরুণ নয় বরং সদ্য তারুণ্য পেরুনো একজন যুবক। তার সামনে অগণিত ছাত্রছাত্রী বসে আছে। সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ।

অত:পর সামনের ব্যাঞ্চ থেকে একজন নীরবতা ভেঙ্গে বলল ‘প্রফেসর শালেহ আপনি ফাস্ট ডেড়িবেটিব করে আটকে রয়েছেন, সেকেন্ড ডেরিভেটিভ কি হবে ?'

শালেহ বেশ থতমত খেয়ে গেল। সে বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে সে একজন গণিতের প্রফেসর, অংকের সেকেন্ড ডেরিভেটিভের উওর তার জানা আছে তবে সে এখানে কেন ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না।

‘আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। তোমরা আমার কল্পনা মাত্র।' বেশ নরম এবং মোলায়েম স্বরে বলল শালেহ।

ক্লাসের সবাই যেন কথাটাতে মজা পেল। পিছন থেকে একজন বলে উঠল ‘প্রফেসর আজকে কি ম্যাডামের সাথে ঝগড়া হয়েছে ? ম্যাডাম মনে হয় বেশ ছ্যাচা দিয়েছে!!'

এই সস্তা রসিকতায়ও ক্লাসে যেন দমকা হাসি বয়ে গেল। এবার শালেহ বেশ বিব্রত হল। সে একই স্বপ্ন বেশ কয়েকবার দেখেছে, স্বপ্নের ভিতরেও সে বুঝতে পারছে সে স্বপ্ন দেখছে, এটাকি স্বপ্ন নাকি অন্য কোন রিয়েলিটি। শালেহের মাথায় আর কিছু আসছে না।

'আজ পড়াতে ইচ্ছে করছে না।' জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল শালেহ।

'প্রফেসর আপনার কি সত্যি সত্যি শরীর খারাপ আজ। আপনাকে প্রায় এরকম অন্যমনস্ক লাগে আজকাল।'

'না, আজ এমনি পড়াতে মন চাইছে না। তোমরা যাও।'

***
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেতে বসে চা খাচ্ছিল শালেহ।

'প্রফেসর শালেহ আপনি ভাল আছেন?' পিছন থেকে বলল ডিপার্টমেন্টের একমাত্র মহিলা প্রফেসর লিন্ডা এন্ডারসন।

বেশবুশা, চলনে-বলনে বেশ আধুনিক লিন্ডাকে বেশ ফুরফুর দেখাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে মনে হল সে লিন্ডাকে অনেক বছর ধরেই জানে।

'মোটামুটি' চায়ে কাপে চুমুক দিয়ে সুড়ুত সুড়ুত করে শব্দ করে চা খেতে খেতে বলল শালেহ।

'বসতে পারি এখানে?' বলেই অনুমতির অপেক্ষা না করেই বসে পরল প্রফেসর লিন্ডা।

'তারপর কেমন চলছে সবকিছু ?' বেশ গমগমে গলায় বলল লিন্ডা।

শালেহ চায়ের কাপটা রেখে লিন্ডার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল ‘তুমি অলটারনেটিভ রিয়েলিটিতে বিশ্বাস কর লিন্ডা ?'

'হঠাৎ এই প্রশ্ন?'

'এমনিতেই। ধর তুমি এই রিয়েলিটিতে আছ, হঠাৎ ঘুমিয়ে পরলে, জেগে দেখলে তুমি আরেকটি জগতে আছ। সেখানে হয়ত তুমি আর প্রফেসর নও অন্য কেউ। তুমি সেই রিয়েলিটির সব কিছুই অনুভব করলে। তখন কেমন লাগবে?'

লিন্ডা ভ্রু নাচিয়ে বলল 'হঠাৎ এত ভারি কথা যে? গণিত ছেড়ে আজকাল ফিলসফি চর্চা করছ নাকি?'

'না, এমনি।'

'তোমার কৌতূহল নিবারণের জন্য বলতে পারি প্রফেসর লিন মানুষের অল্টারনেটিভ রিয়েলিটির ব্যাপারে একটি বই লিখেছেন। পড়ে দেখতে পার। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন মানুষ একই সাথে একাধিক রিয়েলিটিতে থাকতে পারে, এমনকি এক রিয়েলিটি থেকে আরেকটা রিয়েলিটিকে প্রভাবিতও করতে পারে।'

***
কলিং বেলের শব্দে শালেহ স্তম্ভিত ফিরে পেয়ে নিজেকে পুনরায় তার ঘরের সোফায় আবিষ্কার করল। তার হাতে ধরে থাকা প্রফেসরের সেই চিঠিটা। প্রফেসরের নামটা দেখে চোখ যেন আঁতকে উঠল, প্রফেসর লিন। কিছুক্ষণ আগে এই নামটাই বলেছিল প্রফেসর লিন্ডা।

শালেহের বেশ কৌতূহল হল, সে পরের দিন সেন্ট্রাল লাইবেরিতে খোজ নিল প্রফেসর লিনের কোন বই আছে কিনা অল্টারনেটিভ রিয়েলিটির উপরে। শালেহ ভেবেছিল স্বপ্নে কিনা কি দেখেছে, সেই স্বপ্নের কোন বই বাস্তব জগতে থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। তবে শালেহ বেশ ধাক্কা খেল কারণ প্রফেসর লিনের একটি বই আছে অল্টারনেটিভ রিয়েলিটির উপর। শালেহের মনের ভিতর একটি ঝড় বয়ে গেল। তার মনে হতে লাগল পুরো ব্যাপারটিই মনে হচ্ছে সাজানো খেলা, কেউ একজন চাইছে সে প্রফেসর লিনের কাছে যাক। প্রফেসর লিনের কাছে যাওয়া ছাড়া তার আর কোন পথই যেন খোলা নেই এই মুহুত্যে।


তিন.
মোহাম্মদ শালেহ প্রফেসর লিনের ডাকে সাড়া দিয়ে আমেরিকা এসে পৌঁছল।

যথাসময় সে প্রফেসর লিনের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বলল ‘আসতে পারি ?’

প্রফেসর লীন দেখতে বেশ উঁচা লম্বা, পড়নে খয়েরি রঙ্গের কোর্ট, কি গম্ভীর তার মুখ, কি প্রবল ডাটে বসে বসে মনোযোগ দিয়ে কম্পিউটার এর দিকে তাকিয়ে আছে, দেখেই শ্রদ্বায় মাথা নত হয়ে আসে।

বেশ কয়েকবার ডাকার পর শালেহের দিকে তাকিয়ে ভিতরে আসতে বললেন।

দেখতে কাটখোট্টা টাইপের হলেও লিন ফুরফুরা গলায় বলল ‘আমেরিকাতে তোমাকে স্বাগতম। তারপর আসতে কোন সমস্যা হয়নিতো ?’

‘না।’ সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বলল শালেহ।

‘কখন এসেছে ?’

‘গতকাল রাতে এসে পৌঁছেছি।’

‘হোস্টেল পছন্দ হয়েছে ?’

ডানে বামে মাথা দুলিয়ে বলল ‘হ্যাঁ’

‘আজ থেকেই এই ল্যাবরেটরিতে তুমি কাজ করবে। ওহ ভালোকথা অলটারনেটিভ রিয়েলিটির উপর আমার একটি বই আছে , তুমি পড়েছ ?’

উওরের অপেক্ষা না করেই বলল ‘আমি প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে আলোচনা করেছি বইটিতে। আমি বেশ কিছু হাইপোথেসিস দাড় করিয়ে দেখিয়েছি একটি মানুষ একাধিক ইউনিভার্সে থাকতে পারে।কিন্তু বইটির বেশ কিছু দুর্বল দিক আছে, দুর্বল দিকটি কি তুমি জান ?’

প্রফেসর লিন প্রশ্নটির কোন উওর আশা করেননি, তারপরও তাকে অবাক করে দিয়ে শালেহ স্পর্দাভরে বলল ‘আপনি প্যারালাল ইউনিভার্স কি, এদের মাঝে কিভাবে যোগাযোগ হওয়া সম্ভব, বইতে আপনার এই বিষয়ের ব্যাখ্যাগুলো আমার কাছে ধোঁয়াশা লেগেছে। তাছাড়া বইটিতে বেশ কিছু হাইপোথেসিস দেখিয়েছেন কিন্তু এর ম্যাথম্যাটিকাল কোন সমীকরণ দেখাতে পারেননি। বর্ণনা পড়ে এটাকে আট-দশটা কল্প বিজ্ঞানই মনে হয়েছে, কোন বিজ্ঞানের বই মনে হয়নি।’

প্রফেসর লীন নিজের বই সম্পর্কে এতটা চাঁছাছোলা ভাষায় সমালোচনা আশা করেনি। শালেহের স্পষ্টবাদিতায় বেশ মুদ্গ হলেন।

‘হুম আমি তোমাকে এনেছিই এর জন্য, তুমি যদি কোন ম্যাথম্যাটিকাল ফর্মুলা দাড় করাতে পার তাহলে আমাদের এই কাজটা বিজ্ঞান মহলে একটি স্বীকৃতি মিলবে।’

শালেহের এই বিষয়গুলো নিয়ে এই মুহূর্তে আলোচনা করতে মনে চাইছে না, তার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কথার প্রসঙ্গের বাইয়ে গিয়ে বলল ‘প্রফেসর লিন আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন ?’

প্রফেসর লিন কথাটা শুনে মনে হল বেশ মজা পেল। সোফায় হেলান দিয়ে বেশ রহস্যভরা সুরে বলল ‘আমি জানি তোমার সাথে কি ঘটছে, তুমি নিজেও প্যারালাল ইউনিভার্স ভ্রমণ করতে পার শালেহ।’

‘কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে ? আমি নিজেও ঠিক জানিনা আমার সাথে কি ঘটছে।’

‘আমি আমার বইতে আলোচনা করেছি যে একটি ইউনিভার্স থেকে আরেকটি ইউনিভার্সের কিছু ঘটনা প্রভাবিত করা যায়। তোমাকে এখানে আনার জন্যও আমাকে সেরকমটাই করতে হয়েছে। সব কিছুই পূর্ব পরিকল্পিত, বুঝলে!’ কথাটা বলেই প্রফেসর লিন একটু থামল।

শালেহ বুঝতে পারল তাকে অনেকটা দোটানায় ফেলতে চাইছে। শালেহ হালকা কাশী দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল ‘আমি ঠিক বুঝলাম না। আপনি কি বলতে চাইছেন। আমার সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানেন সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু কিভাবে সেটা পরিষ্কার নয় আমার কাছে।’

এবার প্রফেসর লীনের চেহারায় একটি প্রশান্তি ভাব ফুটে উঠল। শালেহকে দোটানায় ফেলে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন তিনি। ‘তোমাকে আরেকটি রিয়েলিটি থেকে প্রভাবিত করেছি। কিভাবে করেছি, এটা একটি পাজল হিসেবেই থাক। আমি চাই তুমি এটা নিজে বের কর।’

শালেহ আর এই বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল না কারণ সে বুঝতে পারল প্রফেসর লিন নাটকীয়তা পছন্দ করেন, কোন কথাই সে সোজাসুজিভাবে বলবে না।

প্রসঙ্গ পাল্টে বলল ‘আমার সাথে কি ঘটছে সেটি কি একটু ব্যাখ্যা করবেন ?’

ভূমিকায় না গিয়ে প্রফেসর লিন সরাসরি বলল ‘তোমার সাথে কি ঘটছে সেটা ব্যাখ্যা করার আগে প্যারালাল ইউনিভার্স কি সেটা তোমাকে বুঝিয়ে বলা যাক প্রথমে, আমরা যেই ইউনিভার্সে আছি তার সমান্তরাল আরও এক বা একাধিক ইউনিভার্স আছে ।প্যারালাল ইউনিভার্স কি সেটা বুঝার জন্য চিন্তা কর রেডিও এর কথা। একটি রেডিওতে আমরা বিভিন্ন চ্যানেল শুনি বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে। প্যারালাল ইউনিভার্সের ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম, একই জায়গায় আরেকটি ইউনিভার্স কিন্তু তাদের ফ্রিকোয়েন্সি আলাদা তাই একটির সাথে আরেকটির কোন সংঘর্ষ হবে না ।’

প্রফেসর লীন একটু থামলেন। তারপর টেবিল থেকে একটি বই উঠিয়ে বললেন ‘এই যে বইটা দেখতে পাচ্ছ, এখানে প্রতিটি পৃষ্ঠাকে একটি ইউনিভার্স চিন্তা কর।’

শালহ প্রফেসর লিনের দৃষ্টি অনুসরন করে বইটির দিকে বেশ মনোযোগ সহকারে তাকাল।

কথা বলার সময় বই খুলে পৃষ্ঠা উল্টে বললেন ‘ধর এক নাম্বার পৃষ্ঠাটি একটি ইউনিভার্স যার ফ্রিকোয়েন্সির মান এক। এরকমভাবে দ্বিতীয় পৃষ্ঠাটি আরেকটি ইউনিভার্স যার ফ্রিকোয়েন্সি দুই। এভাবে অসীম সংখ্যক ইউনিভার্স থাকতে পারে। একটি জিনিষ লক্ষণীয় প্রতিটি ইউনিভার্সেই একই মানুষ আছে যারা একই নিউরন, শারীরিক গঠন, জেনেটিক কোড শেয়ার করে। এই প্রতিটি ইউনিভার্সেই তোমার আমার সবারই কার্বন কপি আছে।’

শালেহ কথার মাঝখানে হুহ, হা বলে মাথা দুলাচ্ছিল।

এবার প্রফেসর লিন বললেন ‘এই যে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠাকে আমি এক একটি ইউনিভার্স বলছি যারা ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে আছে, যদি এই বইয়ের মাঝখান দিয়ে একটি ছিদ্র করা হয় তাহলে দেখবে প্রতিটি পৃষ্ঠার সাথে একটি যোগাযোগ সৃষ্টি । তোমার সাথেও তেমনি ঘটছে।’

মোহাম্মদ শালেহ এবার বেশ নড়েচড়ে বসল। তার কাছে ব্যাপারগুলো খুব মজা লাগছে। ‘আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ?’

প্রফেসর লিন যোগ করে বললেন ‘মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় একশত বিলিয়ন নিউরন আছে। প্রতিটি ইউনিভার্সে প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা অনুলিপি আছে ঠিকই কিন্তু এরা একই মস্তিষ্ক শেয়ার করে। মস্তিষ্ক প্রতিটি ইউনিভার্সের স্মৃতিগুলো নিউরনের আলাদা আলাদা অংশে রাখে।’

‘একই মস্তিষ্ক কেন ব্যাবহার করে ? অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করল শালেহ।’

আবার শুরু করে বললেন ‘আমাদের ইউনিভার্স বেশ গাণিতিক নিয়ম মেনে চলে। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ একই ফাংশন বার বার ডিফাইন করাকে রিটানডেন্ট ফাংশন বলে । কম্পিউটার রিটানডেন্সি এড়িয়ে চলে, একই ফাংশন বার বার ডিফাইন না করে একবারই ডিফাইন করে, শুধু দরকার অনুসারে সেই ফাংশনকে কল করে, এতে ইফিসিয়েন্সি বারে। আমাদের ইউনিভার্সও একই মানুষের অনেকগুলো মস্তিষ্ক তৈরি না করে একটি মস্তিষ্কই বার বার ব্যাবহার করছে।’

প্রফেসর লিন একটু ঝিরিয়ে নিয়ে আবার বললেন ‘যেহেতু প্রতিটি ইউনিভার্সের স্মৃতি সংরক্ষণ করছে মস্তিষ্কের আলাদা আলাদা অংশে, কাজেই যদি কোনভাবে এই আলাদা অংশগুলোর মাঝে সংযোগ তৈরি হয় তাহলে এক ইউনিভার্স থেকে আরেক ইউনিভার্সে যোগাযোগ করা সম্ভব। তোমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সেরকমই ঘটেছে। এর জন্যই তুমি যখন এই ইউনিভার্স থেকে আরেক ইউনিভার্সে ভ্রমণ কর তখন সেই ইউনিভার্সে তোমার নিদিষ্ট অনুলিপি যেই বিষয়ে দক্ষ তুমিও সেই বিষয়ে দক্ষতা ধারণ কর।’

একটু ঝিরিয়ে নিয়ে বললেন ‘তবে তোমার ক্ষেত্রে এই সংযোগ কিভাবে ঘটল এটা জানা দরকার। আমরা যদি আর্টিফিশিয়ালি কোন সংযোগ স্থাপন করতে পারি তাহলে পৃথিবীর সবাই এক ইউনিভার্স থেকে আরেক ইউনিভার্সে ভ্রমণ করতে পারবে।’

স্মৃতি হাতরে শালেহ বলল ‘আমার স্লিপিং ওয়ার্ক সমস্যা আছে, সেদিন আমি ঘুমের মাঝে হাঁটছিলাম, হঠাৎ ঘুমের ঘোরে ইলেকট্রিক সকেটে আঙ্গুল চলে যায়, সাথে সাথে আমি ছিটকে পরি, ঘুম ভেঙ্গে যায়, অনুভব করি আমার শরীর নিদিষ্ট একটি ছন্দে দুলছে, ক্রমাগত এই ছন্দটি মস্তিষ্কের সমস্ত নিউরনে ছড়িয়ে পড়ে । সেদিনের পর পর থেকেই আমার সাথে ঘটনা গুলো ঘটতে থাকে।’

একটু থেমে প্রফেসর লিনের দিকে তাকিয়ে বলল ‘আপনি বলছিলেন একটি ইউনিভার্স থেকে আরেক ইউনিভার্সে আর্টিফিশিয়ালি সংযোগ করতে চান, এতে লাভ কি ? ’

প্রফেসর লীন শালেহের সামনে ঝুঁকে এসে জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল, ‘প্রতিটি ইউনিভার্সে একই সাথে চললেও তাদের স্পেস-টাইম আলাদা, তাদের বহমান সময় ভিন্ন। এখানে তুমি তরুণ, অন্য জায়গায় দেখা যাবে তুমি বৃদ্ধ বা তোমার জেন্ডার ভিন্ন!’ বলেই শরীর দুলিয়ে হা হা করে হেসে উঠলেন।

যোগ করে বললেন ‘আমরা প্যারালাল ইউনিভার্সের সাথে যোগাযোগ করে নলেজ শেয়ার করতে পারব নিজেদের মাঝে, কোন অনাকাঙ্গিত ঘটনা এড়াতে পারব কারণ ক্ষেত্রে বিশেষ আমরা ভবিষ্যৎও দেখতে পারব, অপরাধ কমে যাবে।’

চার.

সাত বছর পর।

মোহাম্মদ শালেহ আর এখন সদ্য কিশোর পেরুনো তরুণ নয় বরং বেশ পরিণত। প্যারালাল ইউনিভার্সের উপর তার সমীকরণটি বিজ্ঞান মহলে বেশ আলোচিত আজকাল। বর্তমানে এই সমীকরণকে কিভাবে বাস্তবিক প্রয়োগ করা যায় তার উপর পিএইচডি করছে।

শালেহ ল্যাবে বসে কাজ করছিল, হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠে, রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেথির ফোন,

‘কোথায় আছ ?’ বেশ আদুরে গলায় বলল কেথি।

‘ল্যাবে’

‘এখন আসতে পারবে ? খুব গুরুত্ব পূর্ণ একটি কথা আছে!’ বলেই লাইন কেটে দিল কেথি।

কেথির সাথে তিন বছর হল পরিচয়, সেই পরিচয় থেকেই বেশ নাটকীয়ভাবে পরিণয়। সেই ঘটনাটা শালেহের মানস পটে আজো ভেসে উঠে। বিদেশ বিভুয়ে জীবন যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তখন সে একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অনার্স শেষ হয়েছে আর থাকবে না আমেরিকাতে, বাংলাদেশেই চলে যাবে। কেথি একই ল্যাবে কাজ করত। দেখতে আহামরি সুন্দরী না হলেও ভুলত্রুটিতে চলনসই কেথি।খাস আমেরিকান হলেও চলনে বলনে বেশ মার্জিত কেথি শালেহের থেকে বেশ কিছু বাংলা শিখেছিল, ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বলাটা শালেহ বেশ এনজয় করত।

‘আজ দেশে চলে যাব, রাতে ফ্লাইট!’ একদিন হুট করে ল্যাবে এসে বলল শালেহ।

কেথি ল্যাবে কম্পিউটার এর সামনে বসে কাজ করছিল, শালেহের কথাটা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ ছিল।

কাজ রেখে উঠে দাড়িয়ে শুকনো গলায় বলল ‘সত্যি চলে যাবে। আর আসবে না ?’

‘হুম। প্রফেসর লিনকে জানিয়েছি কয়েকদিন আগেই।’

শালেহকে অবাক করে দিয়ে কেথি শালেহের হাতটি আলতো করে ধরে বলল ‘না গেলে হয়না ?’

বড়ো করুণ সেই চাহনি, চোখের কোনে পানি ছলছল করছে, এল,ই,ডি লাইটের আলোয় সেই পানি চিকচিক করছে। শালেহের আগেই বুঝতে পারত কেথি তাকে পছন্দ করে তবে সে এতটা আশা করেনি। সে আসতে আসতে কেথির মাঝে হারিয়ে যেতে লাগল। শালেহের আর আমেরিকা ছেড়ে যেতে পারেনি, কেথির ভালবাসা তাকে গ্রাভিটির মত আমেরিকাতে আটকে রেখেছে।

শালেহের কাছে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা ছিল যখন জানতে পারল কেথি হল প্রফেসর লিনের মেয়ে। কথায় আছে ‘বিদ্বান সর্বত পূজ্যত’, প্রফেসর লিনও খাটি সোনা চিনতে ভুল করেননি ।

যখন প্রফেসর লিনের কাছে কেথির ব্যাপারে বলতে গিয়েছিল তখন প্রফেসর লিন বলেছিল ‘একটি শর্তে তোমার হাতে আমার মেয়েকে দিতে পারি।

‘কি ?’

‘তোমাকে একটি পাজল শলভ করতে দিয়েছিলাম, মনে আছে ?’ বেশ রসিকতা করেই বলল প্রফেসর লীন।

শালেহ মুচকি হেসে বলল ‘প্রফেসর লীন আমি মনে হয় এখন উওরটা জানি।’

‘বেশ, বল দেখি ?’

‘এটা খুব একটি কঠিন নয়। আমি পড়ে ধরতে পেরেছিলাম। আপনি নিজেও প্যারালাল ইউনিভার্স ট্রাভেল করতে পারেন। আপনার পুরোনাম লিন এন্ডারসন, আর আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিলেন অন্য ইউনিভার্সে, আপনি হলেন সেই গণিত মহিলা প্রফেসর লিন্ডা এন্ডারসন। প্রথমে ধরতে সমস্যা হয়েছিল কারণ আপনি সেই ইউনিভার্সে মহিলা প্রফেসর ছিলেন। জেন্ডার পরিবর্তন হতে পারে সেটা আমার ধারনাতে ছিল না!’ বলেই শালেহ হো হো করে হেসে ফেলল।

***
কেথি হঠাৎ এত জরুরি তলব কেন করল বুঝতে পারল না শালেহ। ব্যাপারটা খুব গুরুত্ব সহকারে নিবে না লঘু হিসেবে নিবে বুঝতে না পেরে বেশ দোটানায় পড়ে গেল সে।

শালেহ ল্যাব থেকে তাড়াহুড়া করে বেরোতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি, লাইট বন্ধ করতে গিয়ে তার হাত চলে যায় সকেটের ভিতর। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তই, সাত বছর আগেও এই একই ঘটনা ঘটেছিল। হঠাৎ একটি কাঁপুনি অনুভব করে মস্তিষ্কে। ছিটকে পড়ে ল্যাবের মেঝেতে, শরীরটা অস্বাভাবিক এক ছন্দে দুলতে থাকে। ক্রমাগত এই ছন্দটা পুরো মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।

তার নিউরনের সব কিছু কেমন জানি উলট-পালট হতে থাকে, এই কয় বছরে প্রায় একশটার উপর প্যারালাল ইউনিভার্সে ভ্রমণ করেছে সে। তার মনে হতে থাকে সব ইউনিভার্সের স্মৃতিগুলো আসতে আসতে একটির সাথে আরেকটি মিশে যেতে থাকে। মস্তিষ্ক যেই স্মৃতিগুলো নিউরনের আলাদা আলাদা অংশে রেখেছিল সেগুলো সব একটির সাথে আরেক মিশে একাকার হতে থাকে।

প্রায় আধা ঘণ্টা পড়ে ছিল মেঝেতে, যখন হুশ ফিরল তখন সে এক অন্য মানুষ। কোনটা তার নিজের ইউনিভার্সের স্মৃতি আর কোনটা অন্য ইউনিভার্সের সেটার মাঝে পার্থক্য ধরতে পারে না। তার একবার মনে হয় সে একজন গণিতবিদ, পরক্ষনেই মনে হয় না সে মোহাম্মদ শালেহ।

শালেহের সাবকনসাস মাইন্ড যখন তার যেই স্মৃতিকে নিজের বলে মনে করে, তখন সে সেখানে চলে যায়।হয়তোবা চোখ খুলে দেখে সে সেই আগের মতই গণিতের একজন প্রফেসর,পরক্ষণেই মনে পড়ে এটা তার আপন ভুবন নয়, অন্য কোন ইউনিভার্সে তার জন্য কেথি নামের কোন মেয়ে অপেক্ষা করছে কিন্তু কোন ইউনিভার্সে সেটা মনে করতে পারে না। শালেহ পরক্ষনেই চলে যায় অন্য কোন ইউনিভার্সে, সেখানে হয়তবা সে একজন কাঠুরে বা কোন গ্রামের এক সাধারণ কৃষক। শালেহ ছুটতে থাকে এক ইউনিভার্স থেকে আরেক ইউনিভার্সে, তার মনে হয় কেউ একজন কোথাও তার জন্য অপেক্ষা করছে। হয়তবা তাকে খুঁজে পেলে সে নিজেকে ফিরে পাবে, কেথির টানে বিরামহীনভাবে চলতে থাকে তার এই পথ চলা। (শেষ)

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ালাম;আমার ভালো লাগে এ ধরনের লেখা।
চমৎকার!

০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৯

কাছের-মানুষ বলেছেন: পড়েছেন এবং ভাল লেগেছে জেনে সার্থক মনে হচ্ছে।
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।

২| ০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আপন ভাইয়ু!!!!!!!!!!!
একটু সময় নিয়ে লেখাটা পড়িতে হইবেক...;)

০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৯

কাছের-মানুষ বলেছেন: হা হা, অবশ্যই!

৩| ০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো লাগলো।
স্যরি ফর দ্যাট।

০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০

কাছের-মানুষ বলেছেন: হুম, পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:


শেষ করতে পারিনি, পরে চেষ্টা করবো

০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: ওকে, লেখাটা কিছুটা বড় হয়েছে।

৫| ০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এইটা কিতা করলেন! শেষমেষ একেবারে আউলা ঝাউলা কইরা দিলেন :P

দারুন লাগছিল! প‌্যারালাল ভ্রমনে যেন আমিও ঘুরছিলাম :)
শেষটায় ধাক্কা!;)

+++++

০৭ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০

কাছের-মানুষ বলেছেন: হা-হা ,
শেষটা ইচ্ছে করেই আউলা ঝাউলা করতে হয়েছে, কিছুটা অপূর্নতা তৈরি না থাকলে কি হয়!


আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ রইল।

৬| ০৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:১১

কাইকর বলেছেন: ভাল লিখেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে

০৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:১৪

কাছের-মানুষ বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ০৯ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২

সুমন কর বলেছেন: সুন্দর হয়েছে। কবে যে, প‌্যারালাল ই্উনিভার্সে যেতে পারবো !! ;)

+।

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ২:৫০

কাছের-মানুষ বলেছেন: হা হা , প্যারালাল ইউনিভার্সে যেতে পারলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন! আহা আমিও যদি যেতে পারতাম! ফ্রি ভ্রমন মিস করতে চাই না আরকি!!

পড়ার জন্য ধন্যবাদ রইল।

৮| ১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৫০

শামচুল হক বলেছেন: ভালো লাগল
কানাডার জঙ্গলে এক রাত দ্বিতীয় পর্ব দেয়া আছে সময় পেলে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ২:১৬

কাছের-মানুষ বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।

আমি পড়ে মতামত জানাবো।

৯| ১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ২:৩৭

শিখা রহমান বলেছেন: বাহ!! ভালো লেগেছে। একটু এলোমেলো করে দেয়া, চিন্তার জগত দুলিয়ে দেয়া লেখা বলেই ভালো লাগলো।

আপনার নাম দেখে সুচিত্রা ভট্টাচার্যকে মনে পড়লো আর নিকের ছবিটা দেখে সত্যজিৎকে।

শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ৩:৩৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে আমি অনুপ্রাণিত হলাম।

আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ভাল, প্রোফাইল পিকে সত্যজিৎ রায়ের ছবি। তার সফট ধাচের সাইফাই প্রফেসর শঙ্কু সিরিজ পড়েই তার ভক্ত বনে গেছি, ফ্যান্টাসি, গোয়েন্দা এবং ভ্রমন কাহিনির সংমিশ্রণে লেখা তার সাইফাই পড়ে মনে হয়েছে গল্প এভাবেও ভাবা যায়!

ভাল থাকবেন।

১০| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৫

শান্তির দেবদূত বলেছেন: বেশ ভালও লেগেছে এই গল্পট। সাইন্স ফিকশন জগতে মাল্টিভার্স কনসেপ্ট অনেক জনপ্রিয় একটি আইডিয়া। এটা নিয়ে অনেক ভিন্নধর্মী প্লটের গল্প লেখা সম্ভব। চালিয়ে যান।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: হুম মাল্টিভার্স ধারনাটা জনপ্রিয়, বিশেষ করে আমার এই ধারাটি খুব ভাল লাগে। মাল্টিভার্স নিয়ে প্রচুর স্কোপ আছে লেখালেখি করার, আর অনেকে লেখছেও। আরেকটি কনসেপ্ট বা জেনরি আমার ভাল লাগে সেটা হল টাইম ট্র্যাভেল। কয়েকটি লেখা অসম্পূর্ন আছে হাতের ব্যাস্ততার জন্য লেখতে পারছি না। ব্যস্ততা কমলে শেষ করব আশা করি।

আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।

১১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫৮

শান্তির দেবদূত বলেছেন: টাইম ট্রাভেল ও মাল্টিভার্স আমারও খুব প্রিয় জেনরি। আপনার টাইম ট্রাভেল নিয়ে গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। অবশ্যই ফেসবুকে আমাকে ট্যাগ করতে ভুলবেন না।

মাল্টিভার্স নিয়ে আমিও এক সময় ভেবেছিলাম কিছু লিখব, কিন্তু আমার কাছে এই থিউরির কিছু সমস্যা বা জটিলতা দৃষ্টিগোচড় হয়েছে। তাই এটি নিয়ে আর আগাইনি। একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি, জানি না কতটুকু সহজ করে বোঝাতে পারবো।

মাল্টিভার্স নিয়ে বেশির ভাগ গল্পে (ইনফেক্ট আপনার এই গল্পটিতেও) দেখা যায় যে আমাদের জগতের খুব কাছাকাছি আরও অনেক জগত আছে যেখানে একই ব্যাক্তিসত্ত্বার কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে টাইম লাইন প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্ভব না। কারণ, ঠিক কিভাবে একটি জগত আরেকটি জগত থেকে ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত হওয়ার শুরু করে? প্রায় সব গল্পেই মূল চরিত্র থেকে এটি শুরু হয়। যেমন ধরি, মূল চরিত্র মিস্টার এক্স একটি জগতে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়, আর আরেকটি জগতে সে ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। এখান থেকেই পার্থক্যের শুরু। কিন্তু আসলেই কি তাই? এটি তো বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে হওয়ার কথা। শুধু কি মানুষের ক্ষেত্রে? নাহ, এটি হওয়ার কথা প্রতিটি প্রাণীর ক্ষেত্রে। শুধু কি প্রাণীর ক্ষেত্রে? নাহ, প্রতিটি ইলেকট্রনের গতিপথ যে কোনো দিকে প্রবাহিত হতে পারে, এক ইউনিভার্সে একদিকে আরেক ইউনিভার্সে আরেকদিকে। তাই, একটি ইলেক্ট্রনের গতিপথে উপর ভিত্তি করে একেকটি প্যারালাল ইউনিভার্স তৈরি হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে এই কম্বিনেশন হওয়ার কথা ইনফিনিটি টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।

আবার ঠিক কখন এই ভিন্ন পথের প্রবাহ শুরু হবে? প্রতি সেকেন্ডে ভিন্ন ভিন্ন প্যারালাল ইউনিভার্স শুরু হবে? কিন্তু এই সেকেন্ডের একক তো আমাদের ধরে নেওয়া একক? তাহলে প্রতি মাইক্রো সেকেন্ডে কেন নয়? আসলে এটি হবে, বিগব্যাং এর শুরু থেকে প্রতিটি ইলেক্ট্রনের একটি অর্ধস্পীনে (প্লাংক সময় - পসিবল ক্ষুদ্রতম সময়) যে সময় লাগে। তার মানে সৃষ্টির শুরু থেকে প্রতিটি ইলেক্ট্রনের অর্ধস্পীনের সময়ের জন্যে অসীম সংখ্যক ইউনিভার্সের তৈরী হবে। আর এই অসীম ইউনিভার্সের অসীম কম্বিনেশনে অসীম ইউনিভার্স তৈরী হবে প্রতিটি প্লাংক সময়ে। সেক্ষেত্রে আমার একটি প্রতিরুপ অন্য কোনো প্যারালাল ইউনিভার্সে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের পর্যায়ে।

কিন্তু গল্পে আমরা ধরে নেই, এই প্যারালাল ইউনিভার্সের শুরু হয়েছে মূল চরিত্র থেকে, তার আগে থেকে নয়। এই সব চিন্তা করে এই প্লটগুলো নিয়ে আর কাজ করতে ইচ্ছা হয়নি।

কতটুকু ব্যাখ্যা করতে পেরেছি ঠিক বুঝতে পারছি না। কোনো পার্টিকুলার পয়েন্ট ক্লিয়ার না হলে উল্লেখ করবেন, প্রয়োজনে সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

আপনার গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৯

কাছের-মানুষ বলেছেন:

আপনি যেটা বুঝাতে চেয়েছেন আমি মনে হয় বুঝতে পেরেছি। যখনই কোন প্যারাডক্স সৃষ্টি হবে তখনই আরেকটি ইউনিভার্স শুরু হবে অনেকে বলেন। যেমন টাইম ট্রাভেলের ক্ষেত্রে বলা যায়, থিওরিটিকাল বিজ্ঞান টাইম ট্রাভেল সম্ভব হলেও প্যাক্টিকালি বিজ্ঞণিদের মতে অতীতে ট্রাভেলে দ্বিমত আছে, অনেকে এ ক্ষেত্রে গ্রান্ড ফাদার প্যারাডক্স এর কথা বলেন, যেমন কেউ অতীতে গিয়ে তার দাদাকে মেরে ফেললে তার আস্তিত্ব কিভাবে সম্ভব? অনেকে এখানে এভাবে ব্যাখ্যা করেন যখন ব্যাক্তি তার দাদাকে মারবে তখনই প্যারাডক্স সৃষ্টি হবে এবং সেখান থেকে আরেকটি ইউনিভার্স শুরু হবে। যাইহোম আমিও আপনার সাথে একমত এরকম ভাবে অসংখ্য ইউনিভার্স তৈরি হতে পারে, মানুষের জন্য, অন্য কোনপ্রানীর জন্য এমনকি আপনি যেটা বলেছেন, স্টিফেন হকিং তার গ্রান্ড ডিজাইন বইতেও অনেকটা এমন বলেছেন অনুপরমানু মানের ভিন্নতার ভিত্তিতে আলাদা ইউনিভার্স থাকতে পারে। মোট কথা অসীম সংখ্যাক ইউনিভার্স থাকতে পারে। তাই নিজের প্রতিকৃতর সাথে খুজের পাবার মত কোন ইউনিভার্স পাওয়ার সম্ভাবনা শূর্ন্যের কাছাকাছি।

এই জেনরিতে অনেক সমস্যা আছে সত্যি কিন্তু এই প্যারাডক্সগুলোকে ব্যাবহার করেও কিন্তু গল্পে মুভিতে দেখা যায় লেখকরা তাদের গল্পের শেষ টানেন। আপনি যেটা বলেছেন মূল চরিত্র থেকে ইউনিভার্স শুরু হয় তার আগে নয় ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় সবসময়। অনেক গল্পে দেখেছি শুরুটা এমন মনে হলেও শেষ এমনভাবে করেন তখন পাঠককে একটা প্যারাডক্স এ দার করিয়ে দেয়, কোনটা শুরু আর কোনটা শেষ সেটা বুঝা যায় না। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি এই প্যারাডক্স ব্যাবহার করে সার্কুলার ইন্ডিং করেন অনেকে যাতে পাঠক শুরু এবং শেষ কোনটা এটা নিয়ে ভাবনায় পরে যায়। পাঠক আমার মনে হয় এটা চায় । মানে পাঠকের শেষে মনে হয় চরিত্রটি অসীম লুপের কোন একটি পয়েন্ট ছিল চরিত্রটি। আমার প্রতিউওর মনে হয় গুছিয়ে দিতে পারলাম না। আপনি মন্তব্যে যা বলেছেন আমারো পক্ষান্তরে তাই বলা হয়ে গেল মনে হয়, নতুন কিছু এড করতে পারলাম না হয়।


আমার অন্য ক্যাটাগরি লেখা আছে অসমাপ্ত। তবে মাল্টিভার্স, টাইমট্রাভেল জনরি নিয়ে লেখতে চাই সবসময়। কিন্তু টাইম ট্রাভেল নিয়ে লেখলে আমি মনে হয় ছোট করে শেষ করতে পারবনা আমি, সেই ভয়ে শুরু করা হয়না। তবে হাতে সময় পেলে চেস্টা করব।


আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। চিন্তার এবং ভাবনার অনেক কিছু পেলাম আপনার মন্তব্যে, সমৃদ্ধ হলাম।


১২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫১

শান্তির দেবদূত বলেছেন: দারুন, আপনার সাথে ভিউ এক্সচেঞ্জ করে বেশ ভালো লাগছে। অনেক কিছু শিখছি।
ছোট করে শেষ করতে হবে কেন? হাত খুলে লেখুন। পড়ার জন্যে তো আমরা আছিই। শুভকামনা প্রিয় লেখক।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্য বিশেষ কিছু আমার কাছে, অনুপ্রানিত হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.