![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুখের আশায় ছুটতে ছুটতে মানুষ অসুখে পড়ছে। আর আমি তখন সত্যের সন্ধানে ছুটছি।
বেশ ভিড় ঠেলেই মিরপুর ১ এর দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আচমকা পিছনে কোন মেয়ের তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনেই বুঝতে পারলাম অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছি। খুব দ্রুত যাওয়ার কারনে ভুলক্রমে মেয়েটির পায়ে পারা দিয়ে ফেলেছি।
– আমি সত্যিই দুঃখিত। দেখতে পাইনি।
(মেয়েটি খপ করেই আমার হাত ধরে ফেললো। এতক্ষন মেয়েটি বসে মাথা নিচু করে ব্যাথা পাওয়া পা ধরে ছিল বলে তাঁর মুখটি দেখতে পারিনি। কিন্তু এখন আমরা দুজনেই মুখোমুখি। সে আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। শুধু এতটুকু বলি আমি ক্রাশ খেয়েছি তাঁকে দেখা মাত্রই।)
— কিসের সরি? সরি বললেই হলো? রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মন কই থাকে? কান থেকে হেডফোন খুলেন। গান শুনতে শুনতে ফিলিংস নিতে নিতে যান তাইনা? আর ভাবেন রাস্তায় আপনি ছাড়া আর কেউ নেই।
(ততক্ষনে বেশ জটলা বেঁধে গেছে। উৎসুক জনতা তাঁর পক্ষ নিয়ে দু একজন আমাকে কটু কথা শোনাচ্ছিল। আমি লজ্জায় চুপ করেছিলাম কিন্তু মেয়েটি জটলার মানুষগুলোকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিল। এতক্ষনে খেয়াল করলাম আসলে আমার পায়ের চাপে মেয়েটির পা ছিলে গেছে এবং উঁচু হিল জুতার বাম পাশেরটি ভেঙ্গে ও ছিঁড়ে গেছে। মেয়েটি তখন আমাকে তাঁর ছেঁড়া হিল জুতাটি হিল সহ হাতে ধরিয়ে দিল। আর আমাকে নিয়ে গেলো পাশের গলির একটি চায়ের দোকানে। সেখানে আমার বিচার হবে। আর বিচার করবে সে নিজেই) তারপর–
— আপনার কনভার্স খুলুন।
– মানে?
— মানে আপনার কনভার্স খুলুন, আমি আপনার পায়ে পারা দেব। যেমনটি আপনি দিয়েছিলেন। তাহলেই শোধ-বাদ হবে। আর আমার রাগ কমবে।
(আমি মেয়েটির হিল জুতার দিকে তাকালাম। চিকন রডের মত এই হিল দিয়ে যদি আমার পায়ে পারা দেয়। তবে আমার পা ফুটো হয়ে যাবে।)
– দেখুন আপু। আপনি ভুল করছেন। আপনি যদি এই হিল দিয়ে আমাকে পারা দেন তাহলে আমি নির্ঘাত পঙ্গু হয়ে যাব।
— আপনি খুলবেন কিনা বলুন? নয়তো মানুষ জড়ো করব। সেটা কি ভালো হবে?
– না না। মানুষ জড়ো করার দরকার নেই। আমি খুলছি।
( চায়ের দোকানদার আমাদের ঘটনা দেখছে আর মনে মনে হাসছে। আমার জুতো খোলা শেষ হতেই আমি ভয়ার্ত চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলাম এবং মনে মনে প্রস্তুত হয়েছি হিলের পারা খাওয়ার জন্য। সেও উঠে দাঁড়িয়েছে। আমাকে হিলের পারা দেবে। আমি দম ও চোখ বন্ধ করলাম। কয়েক সেকেন্ড পার হয়ে গেছে কিন্তু হিলের পারা পড়ছে না কেন? )
— চোখ খুলুন।
(আমি চোখ খুললাম। দেখলাম সে আমার কনভার্স নিজের পায়ে পড়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকাতেই।)
— আপনাকে পারা দেব না ভেবেছি। কিন্তু আপনাকে আমার জুতো নিজ খরচে মুচির কাছ হতে সারিয়ে আনতে হবে। ততক্ষন আমি বসলাম। আর আপনার জুতোও আমার কাছে থাকবে। আপনি খালি পায়ে একহাতে মেয়েদের জুতো নিয়ে যাবেন। সবাই তাকিয়ে থাকবে আর হাসবে। এটাই আপনার শাস্তি।
– ম্যাডাম আপনার হিলের কত দাম বলুন আমি দিয়ে দিচ্ছি। তবুও এই বেইজ্জতি করবেন না প্লীজ।
— এত কথা বলছেন কেন? আমি কি মানুষ জড়ো করব? তখন আপনার মান সম্মান আর থাকবে না। এটা মনে রাখবেন।
(আমি জুনিয়র ভাই ব্রাদারের হাত হতে মান সম্মান রক্ষার জন্য রাজী হয়ে গেলাম এই দস্যি মেয়ের কথায়।
– আচ্ছা যাচ্ছি। [চায়ের দোকানের মামাকে] মামা। আপনার জুতো জোড়া আমি পড়ে যাই? আর আমাকে একটা ব্যাগ দিন।
(ভেবেছিলাম মেয়েটি আমাকে বাঁধা দেবে। ঠিক দিল। শেষে রাজি হলো আমি মামার জুতো পড়ে যাব। কিন্তু আমাকে ব্যাগ নিতে দেওয়া হবে না। এক হাতে ছেঁড়া জুতো নিয়েই যেতে হবে। নিরুপাই আমি রাজী হয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় পিছন হতে মেয়েটি আমাকে ডাক দিল। আমি ফিরে গেলাম। )
— আপনার ফোনটা দিন তো?
– কেন?
— আপনি যদি ফেরত না আসেন? আমার হিলটা ড্রেনে ফেলে দেন? তখন আমি কি আপনার এই পুরুষালী জুতো পড়ে বাসায় যাব?
– না ফোন দিতে পারব না। আপনি যদি আমার ফোন নিয়ে পালিয়ে যান?
— কি এত্ত বড় কথা! আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি চোর? ওকে আপনিও আমার আই ফোনটি সাথে করে নিয়ে যান। ভয় পাবেন না আমি চোর না।
(আমি আমার সস্তা ফোনটি জামানত হিসেবে আর মেয়েটির দামী ফোনটা দিয়ে চলে গেলাম জুতো সারানোর জন্য। খুব লজ্জায় যাচ্ছি। পায়ে বুড়ো মানুষের জুতো আর হাতে লেডিস তাও আবার ছেঁড়া জুতো। মানুষগুলো কিভাবে তাকিয়ে আছে। মনে হয় আমি কোন এলিয়েন। বৃহস্পতিবার মুচি পাওয়া দায়। অবশেষে আন নূরী মসজিদের কাছ হতে ১ ঘন্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে মুচি দিয়ে জুতোটা সারিয়ে তাঁর কাছে ফিরে আসলাম। আমি বেশ রাগের সাথেই বললাম।
– এই নিন আপনার জুতো।
— ভদ্রভাবে এবং হাসিখুশি ভাবে দিন তবেই নেব।
– আপু এই নিন আপনার জুতো আর আইফোন। এখন আমার ফোন আর জুতোজোড়া ফেরত দিন। প্লীজ।
(সে আমার জুতোজোড়া আর ফোন ফেরত দিয়ে আমাকে চা আলা মামার দোকানের বিল দিতে বলল)
– কিসের বিল?
— এতক্ষন ধরে বসিয়ে রেখেছেন। আমার বুঝি ক্ষুধা লাগেনি? পাশের দোকানের পিচ্চিকে দিয়ে ফাস্টফুডের দোকান হতে খাবার এনে খেয়েছি। মোট দু’শ টাকা দিয়ে দিন আংকেলকে।
(আমার মুখ দিয়ে অশ্লীল গালি বের হতে যেয়েও বের হলো না। মামার বিল দিয়ে আর মেয়েটিকে হাসিমুখে লম্বা সালাম ঠুকে চলে এলাম। মেয়েটি কিছু বলতে চাচ্ছিল আমাকে কিন্তু আমি বলার সুযোগ দেইনি। এই মেয়ের সাথে আর কোন কথাই হতে পারেনা। মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম এই জীবনে যেন এই গুন্ডা মেয়ের সাথে আমার আর দেখা না হয়। )
চলবে...
২| ৩০ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৩
নিশি মানব বলেছেন: ভাই অতীতের ঘটনাটা দেখি মনে করাইয়া দিলেন.।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪
আজিজার বলেছেন: চলবে...