| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বইয়ের বিজ্ঞাপন পাতাটি খোলা হইল আগ্রহীদের বই থিকা অংশবিশেষ পোস্ট করার জন্য। এইখানে লেখক মোহাম্মদ আলীর (জ. 1960) 'হুমায়ুন আজাদের একগুচ্ছ সাক্ষাৎকার' বই থিকা ভূমিকা ও দ্্বিতীয় সাক্ষাৎকারটি পোস্ট করা হইল।
বইয়ের সূচিপত্রএই রকম :
1 নারী ও কলমের স্বাধীনতা নিয়ে হুমায়ুন আজাদের কথা (2000)
27 নিউইয়র্কেহুমায়ুন আজাদ একটি সাক্ষাৎকার (2002))
51 আমি নিহত হয়ে আবার ফিরে এসেছি (2004)
60 আমার মুখে চাপাতির দাগ হয়ত অবিনশ্বর থেকে যাবে!...
বাংলাদেশও এখন চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত (2004)
প্রথম প্রকাশ 2006 , প্রকাশক নন্দিত, 100-119 আজিজ সুপার মার্কেট (2য় তলা) , শাহবাগ, ঢাকা , ফোন : 966-0972, প্রচ্ছদ মানজারে শামীম, দাম 140 টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা 72।
ভূমিকা
কবি বহুমাত্রিক লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের চারটি সাক্ষাৎকার আমি পর্যায়ক্রমে নিয়েছিলাম। 'নারী' গ্রন্থের ওপর থেকে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয় 20 মার্চ 2000 সালে। বাংলাদেশে এটিই প্রথম গ্রন্থ সরকার নিষিদ্ধ করার পর কোর্টের রায়ে কোনো লেখক জয়লাভ করেন। এ ঘটনাকে লেখকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি বলে আখ্যায়িত করা যায়। এমন যুগান্তকারী ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তির বিজয় নয়, মুক্তচিন্তা ও লেখকের স্বাধীনতার অকৃত্রিম বিজয়।
হুমায়ুন আজাদ তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকারে 'নারী' গ্রন্থের ওপর থেকে নিষেধজ্ঞা তুলে নেয়া, লেখকের স্বাধীনতা, বিশ্বসাহিত্য, বাংলাসাহিত্য, লেখক-সাহিত্যিক, গ্রন্থ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পর্কে মূল্যবান অভিমত দিয়েছেন। বিতর্কিত উপন্যাস 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তিনি খারাপভাবে উপন্যাসটির পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি সুন্দরভাবে এর পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অকপটে তুলে ধরেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে মহান, গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ বলে মনে করতেন।
হুমায়ুন আজাদ উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক মোহনচাদ করমচাঁদ গান্ধি সম্পর্কে বলেছেন নানা কথা। গান্ধিকে তিনি অসামপ্রদায়িক মনে করতেন না।
জাতির পিতা বিষয়ে তিনি একান্ত নিজস্ব বিশ্লেষণ উপস্থিত করেছেন। তিনি জাতির পিতা বলার পক্ষপাতী ছিলেন না। শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি স্বাধীনতার স্থপতি বলার পক্ষে।
বিবিসি-র জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচন সম্পর্কে তিনি দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগরসহ আরও অনেক শ্রেষ্ঠ বাঙালি রয়েছেন। বিবিসি-র জরিপ তালিকায় গোলাম আযমের নাম দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।
টলস্টয়-সাহিত্যকে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ মূল্যায়ন করেছেন। টলস্টয় শেষ জীবনে নিজেই তাঁর সাহিত্যের বড় অংশ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তাও তিনি তুলে ধরেছেন। বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদি, নাজিম হিকমতসহ অনেকের সাহিত্য সম্পর্কে তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। গুন্টার গ্রাসকে তিনি তেমন গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে বিবেচনা করেননি। তিনি মূল্যায়ন করেছেন গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এবং আলেকজান্ডার সোলঝ্নিৎসিনকেও। সোলঝ্নিৎসিনের একটি উপন্যাসকে তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ লেখা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার সঙ্গে কোনো কোনো জায়গায় দ্বিমত পোষণ করেন, সেটা সাক্ষাৎকারে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের কোন দিক তাঁকে আকৃষ্ট করে সেটাও তিনি খোলামেলাভাবে বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৌন্দর্যবোধের তিনি ভীষণ অনুরক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি ঈশ্বরের প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাথা অবনত করাকে ভীষণ অপছন্দ করতেন। রবীন্দ্রনাথের 'গোরা'র চেয়ে তাঁর দৃষ্টিতে 'চোখের বালি' উপন্যাস বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হুমায়ুন আজাদের এ ভাবনা রবীন্দ্র-চিন্তকদের নতুন করে ভাবতে প্রেরণা যোগাবে।
কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে হুমায়ুন আজাদ নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছেন। নজরুলের কিছু কিছু কবিতা তিনি অসাধারণ বলে মনে করতেন। সাধারণত যেসব কবিতা অনেকে মূল্যবান মনে করেন, সেসব কবিতা হুমায়ুন আজাদের মোটেও পছন্দনীয় নয়। নজরুলের 'আমি হবো সকাল বেলার পাখি।' বা 'ভোর হলো দোর খোল খুকু-মণি ওঠরে!'--কবিতা দুটির তিনি ছিলেন ভীষণ অনুরাগী। নজরুলের অনেক গানও তাঁর অত্যন্ত পছন্দের। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামকে তিনি বিদ্রোহী কবি না বলে ব্রিটিশবিরোধী কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। নজরুলের গদ্যসাহিত্য, গল্প ও উপন্যাসকে হুমায়ুন আজাদ মূল্যহীন মনে করতেন। তারপরও তিনি নজরুলের প্রাণপণ বিরোধী নন সে কথাও বলেছেন।
জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবতর্ী, বিষ্ণু দে--এই পাঁচজনকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কবি মনে করতেন। এককভাবে কাউকে বড় বলার পক্ষে নন তিনি।
শামসুর রাহমান, তসলিমা নাসরিন, অরুন্ধতী রায়, নাসরিন জাহান সম্পর্কে হুমায়ুন আজাদ একান্ত স্বীয় অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি শামসুর রাহমানের কবিতা নিয়ে 'শামসুর রাহমান/নিঃসঙ্গ শেরপা' গ্রন্থ লিখেছেন। কিন্তু শামসুর রাহমানের এখনকার লেখা কবিতা আগের লেখার চর্বিতচর্বণ বলে তিনি বিশেষিত করেছেন।
বাঙালি সম্পর্কে তিনি খুব হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাঙালি কথা দিয়ে কথা রাখে না। ঋণ করে ঋণ শোধ দেয় না। তবু তিনি বাঙালির মধ্যে বিদ্যাসাগরের ভেতরে বিশেষত্বের সন্ধান পেয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, বিদ্যাসাগর বাঙালিত্বের ঊধের্্ব উঠেছিলেন। আর তাই তিনি বাংলা ছেড়ে শেষ জীবনে সাঁওতাল পরগনায় আশ্রয় নেন।
ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ একটি বাংলা ব্যাকরণ লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন কিন্তু তাঁর প্রস্তাবে বাংলা একাডেমী সাড়া দেয়নি। কারণ এ কাজের জন্য দশ বছর সময় লাগত এবং পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হত। কাজটি হলে বাংলা সাহিত্যে মহামূল্যবান সংযোজন হত বলে তাঁর বিশ্বাস ছিল। আগামী একশো বছরে এমন কাজ হবে না বলে তাঁর ধারণা।
'নিউইয়র্কে হুমায়ুন আজাদ : একটি সাক্ষাৎকার'--এ গ্রন্থের দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার। হুমায়ুন আজাদ মুক্তধারার আমন্ত্রণে নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন অবস্থান করেন। বেড়িয়েছেন নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ওয়াশিংটনসহ নানা জায়গায়। অভিবাসী বাঙালিদের জীবনযাপন, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্মান্ধতাসহ নানা বিষয় প্রত্যক্ষ করেছিলেন। জেনেছিলেন তাদের সুখ-দুঃখময় পারিবারিক জীবনকাহিনী। তাঁর মতে অভিবাসী বাঙালিদের জীবন আধুনিক ক্রীতদাসের মতো কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জীবনের চেয়েও অনেক অনেক আকর্ষণীয়। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অভিবাসী বাঙালিদের প্রবাসী জীবনধারা, যৌনজীবন, প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে বিস্তৃতভাবে বলেছেন।
11 সেপ্টেম্বর আমেরিকা কতটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল সে সম্পর্কে তিনি নানা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। আমেরিকার সাধারণ নাগরিকরা কতটা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল তার চালচিত্র তিনি তুলে ধরেছেন। এ সব ঘটনা থেকে আমরা অভিবাসী বাঙালিদের সামগ্রিক জীবনাচার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। জানতে পারি অভিবাসী বাঙালিদের সার্বিক অবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান ঘটনাপ্রবাহ।
27 ফেব্রুয়ারি 2004 হুমায়ুন আজাদ বাংলা একাডেমীর বই মেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে 'মৌলবাদী গোষ্ঠী'র হাতে মারাত্মভাবে আহত হন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং পরে সিএমএইচে নেয়া হয়। সিএমএইচ-এর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কিছুদিন থাকার পর 22 মার্চ 2004 উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ব্যাংককে 'বুমরুঙ্গরাদ হাসপাতালে' যান এবং 8 মে 2004 ফিরে আসেন। ওখানে থাকাকালে টেলিফোনের মাধ্যমে পরপর দুটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।
প্রথম আলো-য় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের শিরোনাম 'আমি নিহত হয়ে আবার ফিরে এসেছি' সাক্ষাৎকারটি নেবার পর অনেকে বিশ্বাসই করতে পারেননি, এটা হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকার। এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাঁর জন্য উদগ্রীব, উৎকণ্ঠিত ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীমহল জানতে পেরেছিলেন তিনি তখন অনেকটা সুস্থ। আমাকে অনেকে ফোন করে জানতে চান সত্যিই কি হুমায়ুন আজাদ নিজে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন? এখন কেমন আছেন? ইত্যাদি।
সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের পর ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে আমাকে সাক্ষাৎকার নিতে অনুরোধ করা হয়। ভোরের কাগজের জন্য সাক্ষাৎকারটি দুই পর্বে নেয়া হয়। তিনি ব্যাংকক 'বুমরুঙ্গরাদ হাসপাতালে' থাকাকালে সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব এবং সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব নেয়া হয় তাঁর ফুলার রোডের বাসায়। আর এটিই আমার নেয়া শেষ সাক্ষাৎকার।
তারপর তিনি পিইএন-এর স্কলারশিপ নিয়ে 7 আগস্ট 2004 জার্মানিতে যান। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে 12 আগস্ট 2004 মৃতু্যবরণ করেন। তাঁর মৃতু্যকে ঘিরে নানা প্রশ্ন ও রহস্যময়তা রয়েছে যার উত্তর হয়ত কোনোদিনও মিলবে না।
হুমায়ুন আজাদ আমাদের মাঝে শারীরিকভাবে নেই। কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সাহিত্য ও চিন্তার ভেতর। তিনি মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির জগতে অনেক প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা রেখে গেছেন। আগামী প্রজন্মকে সেই জবাব অনুসন্ধান করতে হবে।
লেখক ও চিন্তাবিদ হুমায়ুন আজাদের মৃতু্যতে একটি যুগের অবসান হল। তিনি সত্য বলার ক্ষেত্রে যে অমিত সাহস দেখিয়েছেন, সেটা সমসাময়িককালে বিরল। কোনো বিশেষ সুবিধা ও খ্যাতির জন্য কারো কাছে অনুকম্পা গ্রহণ করেননি। অগ্রজ বুদ্ধিজীবী আহমদ শরীফ ছাড়া আর কোনো লেখকের মধ্যে এমন স্পষ্টবাদিতা ও সাহস দেখা যায়নি। তিনি যা বলতেন সরাসরি বলতেন ঘুরিয়ে-পঁ্যাচিয়ে কোনো কথা বলতেন না।
হুমায়ুন আজাদের ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক ভাবনা ও রচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এবং মুহম্মদ এনামুল হকের ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক কাজকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন না। সে বিষয়ে তাঁর পরিষ্কার অবস্থান তিনি তুলে ধরেছেন।
'নারী ও কলমের স্বাধীনতা নিয়ে হুমায়ুন আজাদের কথা'__সাক্ষাৎকারটি খুব ছোট আকারে প্রথম আলো-তে এবং ধর্মানুভূতির উপকথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থে মুদ্রিত হয়েছিল। দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার 'কথায় কথায় হুমায়ুন আজাদ'__এই শিরোনামে আজকের কাগজে প্রকাশিত হয়। পরে একই সাক্ষাৎকার 'নিউইয়র্কে হুমায়ুন আজাদ : একটি সাক্ষাৎকার'__এই শিরোনামে 'ধর্মানুভূতির উপকথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ' গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে।
সামগ্রিক বিচারে এসব সাক্ষাৎকারে একজন চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক ও আধুনিক হুমায়ুন আজাদকে পাওয়া যাবে। তিনি সাহিত্য বা সাহিত্যিককে অন্ধভক্তির উদ্বেলতায় দেখেননি, আধুনিক নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে নির্মোহভাবে বিচার করেছেন। প্রাচীনকাল থেকে সাহিত্য সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে তিনি বদলে দিয়েছেন। সমাজ-সাহিত্য মূল্যায়নে তিনি অত্যন্ত সাবধানী ও যুক্তিশীল। কাউকে তিনি দেবতার আসনে আসীন করেননি, আবার ছুঁড়েও ফেলেননি। ইতিহাসে যার যেখানে স্থান তিনি তাঁকে সেভাবেই দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। সেটা রাজনীতিবিদ কিংবা সাহিত্যিক যে-ই হন না কেন।
তিনি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমর্থক ছিলেন। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনেক দিক ভালো হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকা উচিত বলে তিনি মনে করতেন। আবার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকায় সেইটুকু গ্রহণ করার পক্ষে ছিলেন তিনি। এ থেকেই তাঁর মুক্তচিন্তা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।
হুমায়ুন আজাদকে বুঝতে হলে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহদৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে যেকোনো রিজার্ভেসন অচল। তিনি সাহিত্য-সাহিত্যিক, রাজনীতি-রাজনীতিবিদ, শিল্প-সংস্কৃতি সব বিষয়ে আলোকপাত করেছেন নির্মোহভাবে। তিনি ভালোটা গ্রহণ করার পক্ষে, খারাপটা বর্জন করার পক্ষে। তিনি বাস্তববাদী শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে কোনো গগনচারী দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেননি। লেখক-পাঠক অনেকেই হুমায়ুন আজাদের বিচার-বিশ্লেষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু তাঁর সাক্ষাৎকারে ভিন্নচিন্তা ও প্রথাবিরোধী একজন মননশীল লেখকের উপস্থিতি সর্বদাই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে।
তিনি বস্তুনিষ্ঠ শিল্পী; যা দেখেছেন তাই শিল্পীর কলমে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখার সাহিত্যমূল্য ও সামাজিক মূল্য দুই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম এবং পাক সার জমিন সাদ বাদ-এর সাহিত্যমূল্য ও সামাজিকমূল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কিশোরসাহিত্য ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না কিংবদন্তী তুল্য রচনা। ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থাবলী ও নারীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। এসব গ্রন্থের গুরুত্ব কতটুকু সেটা পাঠক-সমাজ নির্ধারণ করবেন।
দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘণ্টার 4টি সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন আজাদকে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। হুমায়ুন আজাদের বিশালত্ব অনেক, তাঁকে জানতে হলে অনেক গবেষণার প্রয়োজন। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে হুমায়ুন আজাদের অনানুষ্ঠিক মনোজগতের তথ্য ও সত্য পাওয়া যাবে। যার সূত্র ধরে গবেষক ও কৌতূহলী পাঠক তাঁর চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।
এ সাক্ষাৎকারগুলোর মাধ্যমে অনুসন্ধিৎসু পাঠক হুমায়ুন আজাদের চিন্তাজগৎ সম্পর্কে সামান্যতম কিছু জানতে পারেন তাহলে এ গ্রন্থ প্রকাশ সার্থক মনে করব।
মোহাম্মদ আলী
কীর্তিনগর, কাতলাগাড়িবাজার, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ
2.
নিউইয়র্কে হুমায়ুন আজাদ : একটি সাক্ষাৎকার
(আজকের কাগজ, বৃহস্পতিবারের সাময়িকী-তে আংশিক প্রকাশিত 28 নভেম্বর 2004)
কবি ঔপন্যাসিক সমালোচক ভাষাবিজ্ঞানী ডক্টর হুমায়ুন আজাদ এপ্রিল ও মে মাসে (2002) যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গিয়েছিলেন, সেখানে ছিলেন দেড় মাসের মতো। নিউইয়র্কের মুক্তধারা প্রতি বছর বইমেলা আয়োজন করে, ডক্টর হুমায়ুন আজাদ গিয়েছিলেন প্রধান অতিথি হিসেবে মুক্তধারার বইমেলা উদ্বোধন করার জন্য। তিনি বইমেলা উদ্বোধন করেছেন, বেড়িয়েছেন নিউইয়র্কে, নিউজার্সিতে, ওয়াশিংটনে, আটলান্টা সিটিতে, মিলেছেন নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বাঙালিদের সঙ্গে, দেখেছেন অভিবাসী বাঙালিদের জীবনযাপন, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, পারিবারিকজীবন, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মান্ধতা; দেখেছেন 9/11 সেপ্টেম্বরের পর কতটা বদলে গেছে, কতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আমেরিকা।
যুক্তরাষ্ট্রে হুমায়ুন আজাদের অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে নেওয়া হয়েছে এই সাক্ষাৎকার। এতে ধরা পড়েছে আমেরিকার অভিবাসী বাঙালি জীবনের উজ্জ্বল ও অন্ধকার দিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা।
মোহাম্মদ আলী : দীর্ঘ দিন আপনি বাইরে যাননি, কেন?
হুমায়ুন আজাদ : আড়াই দশক আমি বিদেশে যাইনি, বিদেশ বলতে যদি ইউরোপ
আমেরিকাকে বোঝানো হয়। এর মাঝে আমি ভারতে কলকাতায় গেছি। ইউরোপ আমেরিকায় না যাওয়ার দুটো কারণ রয়েছে, একটি হচ্ছে সাহিত্যসৃষ্টি, আরেকটি বিমানে ওড়ার ভীতি ও বিরক্তি। আমি প্রথম বিদেশে গিয়েছিলাম 1973-এ, যুক্তরাজ্যে, একটি পিএইচডির জন্যে। তিন বছর আমি সেখানে গবেষণা করেছি, চমৎকার সময় কেটেছে; একটি সন্দর্ভ লিখেছি, যার নাম Pronominalization in Bengali । আর কিছু লিখিনি; কবিতা থেকে, সাহিত্য থেকে দূরে ছিলাম; ফেরার সময় আমি ঠিক করেছিলাম ফিরে সাহিত্যসৃষ্টিতে পুরোপুরি মন দেব। তখন আমার বয়স 29, মাত্র তিনটি বই বেরিয়েছে; ওই বইগুলোকে আমি ভালোবাসি, কিন্তু ওগুলো নিয়ে গৌরববোধ করি না। ঠিক করেছিলাম যতোদিন বাঁচব, প্রতিদিন লিখব, একটি ঘণ্টাও নষ্ট করব না। এ জন্যেই আমি আর বিদেশে যাইনি। আরও একটি কারণ ছিল, যা খুবই ব্যক্তিগত ও বিভীষিকাপূর্ণ।
আলী : সেটি কী, জানতে পারি?
আজাদ : 1976-এর সেপ্টেম্বরে আমি দেশে ফিরি, ফেরাটা ছিল বিভীষিকাপূর্ণ।
তখন বাংলাদেশ বিমান নতুন হয়েছে, সরকার ঠিক করে বাংলাদেশের ছাত্রদের বাংলাদেশ বিমানে দেশে ফিরতে হবে। আমি কমনওয়েলথ বৃত্তি পেয়েছিলাম, ফেরার কথা ছিল বৃটিশ বিমানে, কিন্তু আমি ফিরতে বাধ্য হই বিভীষিকাপূর্ণ বাংলাদেশ বিমানে। বাংলাদেশ বিমান সব দিক দিয়েই কুখ্যাত, তার যন্ত্রপাতি খারাপ, আসন খারাপ, খাদ্য ও পানীয় প্রায় দেয়ই না, সেবকসেবিকারা আদর্শরূপে অভদ্র। বিমানের প্রতীক ছবিটিও আমার অপছন্দ, ওটিকে দেখলে আমার একটি ক্লান্ত শকুনকে মনে পড়ে। বাংলাদেশ বিমান হচ্ছে আকাশে নোংরা বস্তি। আমার স্ত্রী ও আমি হিথ্রোতে সম্ভবত বিজি 001 বা 002 ফ্লাইটে উঠি; উঠেই বিকট দুর্গন্ধ পাই এবং শুনতে পাই একের পর এক পলি্লগীতি বাজছে। দেখি বাঙালির পর বাঙালি উঠছে, প্রত্যেকের কাঁধে তিন-চারটা করে বোঝা, বাচ্চাদের হাতে চার-পাঁচটা করে ঘড়ি; যে যত পেরেছে সে ততোটা শরীর বোঝাই করে নিয়ে এসেছে। সবাই নতুন সু্যট পরে বিমানে উঠেছে, যদিও গায়ে ফিট করেনি, আমি বুঝতে পারি তারা অধিকাংশই যুক্তরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে, সেখানে সু্যট পরার কোনো সুযোগ ছিল না। তারা নতুন সু্যট পরে, টাই লাগিয়ে, শরীরের যেখানে যা ঢুকাতে ও ঝুলাতে পেরেছে, সেসব নিয়ে বাংলাদেশ বিমানে উঠছিল, ডাকাডাকি করছিল, বিমানটাকে বাংলাদেশে পরিণত করছিল। সময় কেটে যাচ্ছিল, বিমান উড়ছিল না; পলি্লগীতি ও বঙ্গীয় গোলমালে বিমানটা সদরঘাট হয়ে উঠেছে তখন। ঘণ্টাখানেক পর ঘোষণা করা হল আরও যাত্রী উঠবে, তাই উড়তে একটু সময় লাগবে। এভাবে দুঘণ্টা গেল, তারপর ঘোষণা করা হল কিছু মালপত্র উঠতে বাকি। আমরা বিমানের মধ্যে তিন ঘণ্টা কাটিয়েছি, মালপত্র নাকি তখনও উঠছে। চার-পাঁচ ঘণ্টা কেটে গেলে দেখা গেল 'সোনার ময়না পাখি', 'ও কি গাড়িয়াল ভাই' বন্ধ হয়ে গেছে, শুরু হয়ে গেছে কোরান পাঠ। বিমানের প্লেয়ারে শুরু হল কোরান পড়া, ভয় ছড়িয়ে পড়তে লাগলো বিমান ভরে। এভাবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা কাটার পর ঘোষণা করা হল যে বিমানে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে, হল্যান্ড থেকে ইঞ্জিনিয়াররা আসবে, ঠিকঠাক করবে, তারপর বিমান আল্লার নাম নিয়ে আকাশে উড়বে। শুনে খুব সুখ লাগলো। আমাদের বসে থাকতে হবে বিমানেই, বাইরে যেতে পারব না। দেখে আমি খুব অবাক হলাম যে সবার সঙ্গেই একটি ছোট কোরান আছে, বিমানে হয়ত কোরানই ভরসা। সবাই তখন কোরান পড়তে শুরু করেছে, বিমানের ক্যাসেটে কোরান বাজছে।
আমি চুপ করে বসে আছি। এভাবে তিন-চারটা ঘণ্টা কাটার পর জানানো হল যান্ত্রিক গোলযোগ দূর হয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান আকাশে উড়বে। সম্ভবত দুর্বিষহ এগারো ঘণ্টার পর বিমান আকাশে ওড়ে। আমি হাসছিলাম, যদি গোলযোগ দেখা দেয়, তাহলে কোরানপাঠ আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। মজা করে নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম এতগুলো ধার্মিক মানুষের চেষ্টায় নিশ্চয়ই বিমানটা টিকে যাবে। একমাত্র তুমিই বিশ্বাস করছো না, এজন্য বিমানটা ধ্বংস হবে না; তুমি নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পার। আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম না, অত্যন্ত উদ্বেগে ছিলাম। এক সময় বিমান ঢাকায় নামে। আমি তখনই ঠিক করেছিলাম আর কখনো বিমানে উঠবো না; বাংলাদেশ বিমান নয়, কোনো বিমানেই উঠবো না। এরপর বিমানে অবশ্য উঠেছি যেমন__কলকাতা, যশোর, চট্টগ্রামে গিয়েছি, হেলিকপ্টারেও উঠেছি। বাংলাদেশ বিমান মনের মধ্যে যে-বিভীষিকা সৃষ্টি করেছিল, তাকে বলে 'ফিয়ার অফ ফ্লাইং', ওড়ার ভয়, তা আমার ছিল না, তবে বাংলাদেশ বিমান এটা আমাকে উপহার দেয়।
আলী : এবার বাইরে গেলেন কেন? ভয় কেটে গেছে?
আজাদ : নিউইয়র্কের মুক্তধারা-র বিশ্বজিৎ সাহা ফ্রেব্রুয়ারি মাসে আসে নিমন্ত্রণ
করতে, মুক্তধারা-র বইমেলা উদ্বোধন করার আমন্ত্রণ জানাতে। আমি রাজি হইনি; মার্চে আবার অনুরোধ করে, আমি রাজি হইনি; এপ্রিলে আবার অনুরোধ করে, তখন বলি, দেখা যাক। এপ্রিলের মাঝামাঝি রাজি হই, বিশ্বজিৎকে জানাই কিছুতেই আমি বাংলাদেশ বিমানে যাবো না। আমি গেছি এমিরাটস ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে, ফিরেছিও তাতে। ভ্রমণটা বেশ ভালো ছিল, যতটা পেরেছি বাইরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি; তবে বিমানে ওঠা হচ্ছে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া।
আলী : আপনি বিশ্বজিৎ সাহার আমন্ত্রণে মুক্তধারা-র বইমেলায় নিউইয়র্কে
গিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
আজাদ : নিউইয়র্কের এক অসাধারণ তরুণ বিশ্বজিৎ, তাকে উত্তর আমেরিকার প্রায়
সব বাঙালিই চেনে। বিশ্বজিৎ নিউইয়র্কে প্রথম বাঙলা বইয়ের দোকান দেয়, অভিবাসী বাঙালিদের বইয়ের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেয়। সে প্রতি বছর বইমেলার আয়োজন করতে থাকে। সে প্রথম বাঙলা পত্রিকা বের করেছিল নিউইয়র্কে, পরে তা ছেড়ে দিয়ে মুক্তধারা নামে বইয়ের দোকান দেয়। ওটা শুধু একটি দোকান নয়, ওটা উত্তর আমেরিকায় বাংলা সাহিত্যের কেন্দ্র। জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারা-য় সপ্তাহে অন্তত একবার আসতে না পারলে অনেক বাঙালিরই ঘুম হয় না। মুক্তধারা অভিবাসী বাঙালিদের হাতে বই তুলে দেয়, বইমেলার আয়োজন করে তাদের জন্যে একটি সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে। আমার আগে ওই মেলায় দুই বাংলার অনেক লেখক গেছেন। এবার বইমেলাটি হয় এপ্রিল মাসের 19 ও 20 তারিখে। শেষ মুহূর্তে রাজি হয়ে আমি 19 তারিখে নিউইয়র্কে পেঁৗছি, বিকেল চারটায় পেঁৗছে 5টায় বইমেলা উদ্বোধন করি। একটি ইহুদি বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে বইমেলা আয়োজিত হয়েছিল, বাঙালিদের মধ্যে সাড়া পড়ে গিয়েছিল, দলে দলে তারা এসেছিল। এ-বইমেলার জন্যে বাঙালিরা অপেক্ষা করে থাকে, এটা তাদের গভীর আনন্দ দেয়।
আলী : ভিসা পেতে মার্কিন এম্বেসিতে কি কোনো ভোগান্তি হয়েছে, যা অনেকের
হয়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
আজাদ : ভিসার জন্যে পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলাম আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে,
ভেবেছিলাম একজন লেখকের ভিসার ব্যবস্থা ওই কেন্দ্রই করে দেবে। সেন্টার তা করেনি, তারা কাগজপত্র পাঠায় এম্বেসিতে। সম্ভবত 18 এপ্রিল আমি ভিসার জন্যে এম্বেসিতে যাই। যে ভদ্রলোক ভিসা দেন, তিনি আমার কাগজপত্র দেখে বলতে থাকেন, ওকে, এভরিথিং ইজ ওকে। আমি তাঁকে বলি, এভরিথিং ইজ ওকে, কিন্তু__। তিনি বলেন, কী? আমি বলি, আমার মানের একজন মার্কিন লেখক ভিসার জন্যে কোনো এম্বেসিতে দাঁড়াতো না, আমি গরিব বাংলাদেশের লেখক বলে এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। তিনি আমার পরিচয় জানার পর বলেন, আমি খুব দুঃখিত, কিন্তু কালচারাল সেন্টার কিছু লেখেনি, তাই আপনাকে দাঁড়াতে হয়েছে। তারপর তিনি আমার সঙ্গে সাহিত্য ও ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে কথা শুরু করেন, তাঁর কার্ড দেন। তাঁর নাম সম্ভবত রিচার্ড অ্যাডামস। কিছুক্ষণ পর যখন ভিসা পাই, দেখি মন্তব্যের জায়গায় আমার সম্পর্কে একটি মন্তব্য লিখে দিয়েছেন। মন্তব্যটি দেখে গনি উল্লাসে ফেটে পড়ে, বলে, এরপর আর কোনো দেশের ভিসা পেতে কষ্ট হবে না, আর কাস্টমসে সুবিধা হবে। এ মন্তব্যের জন্যে জেএফকেতে খুবই সুবিধা পেয়েছিলাম।
আলী : বিমানে ওড়ার পর কোনো ভয় পেয়েছিলেন? সেই মুহূর্তে কী ভাবছিলেন?
আজাদ : বিমানে উঠতে হয় নিজেকে অনিশ্চয়তার হাতে ছেড়ে দিয়ে। এমিরেট বিমান
বেশ ভালো, তার চালকেরা ইউরোপীয়, সেবকসেবিকারা ফরাসি, স্কটিশ, ব্রিটিশ, সেবা খুবই ভালো। আমি জানালার পাশে বসেছিলাম, অন্ধকারে কিছু দেখতে পাইনি। সেবিকারা সুন্দরভাবে খাবার দিয়েছে, পানীয় দিয়েছে, আমি রেড ওয়াইন পান করতে করতে, টিভিতে যাত্রাপথের মানচিত্র দেখতে দেখতে দুবাই পেঁৗছি। রাতে কয়েক ঘণ্টা এক ভালো হোটেলে থাকি। হোটেলের কর্মচারীরা সবাই বিদেশি, কাউন্টারে ছিল ভারতীয়রা, রেস্তোরাঁয় ছিল কোরীয় তরুণীরা, তারা সবাই চমৎকার। আমি ঘুমোইনি, রাত চারটার সময় আরেকবার রেস্তোরাঁয় যাই, তরুণীটিকে বলি আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে, সে আবার চা এনে দেয়। ভোরে যাত্রা করি হিথ্রোর উদ্দেশ্যে। এক পাকিস্তানি মহিলা বসেছিলেন আমার পাশে। বারবার তাঁর এটা-সেটা পড়ে যাচ্ছিল, আমি উঠিয়ে দিচ্ছিলাম। শেষে তাঁকে বলি, এবার আমাদের পরিচয় হওয়া ভালো। আমাদের কথা শুরু হয়, আমি লেখক জেনে তিনি খুব উৎসাহী হন এবং তিনি জানান তাঁরা থাকেন লস এঞ্জেলেসে, তাঁর স্বামী ডাক্তার, সেও একটি বই লিখেছে, ইসলাম সম্পর্কে। আমি মহিলাকে বোঝাই ধর্ম খুবই বাজে জিনিশ, মহাবিশ্বে বিধাতাটিধাতা নেই। প্রথমে তিনি ভয় পান, পরে আরও জানতে চান এবং শেষে বলেন, তাঁরও মনে হয় বিধাতাটিধাতা বলে কিছু নেই। হিথ্রো থেকে আমরা যাত্রা করি, মার্কিন বিমান ইউনাইটেড এয়ারলাইনসে। এমিরেটের বিমান ছিল বোঝাই, এটা প্রায় খালি, 300 আসনের বিমানে ছিলাম 50 জনের মতো; আমেরিকায় এখন বেশি লোককে যেতে দেওয়া হয় না, আর মার্কিন বিমানে লোকজন উঠতেও ভয় পায়। এবারও আমি জানালার পাশে বসেছি, ভেবেছিলাম এখন দিন, আটলান্টিক দেখতে পাব। না, নিচে কিছুই দেখতে পাইনি। নিউইয়র্ক পর্যন্ত ভ্রমণটি ছিল চমৎকার, মাঝেমাঝে সুস্বাদু খাবার, আর রেড ওয়াইন। বিমানে ওঠার আগে হিথ্রোতে ছিল খুব কড়াকড়ি, শরীর চেপে চেপে, জুতো খুলে পরীক্ষা করা হয়েছে। একটি মেয়ে যখন আমার জুতো খুলে পরখ করছিল, আমি তাকে বলেছিলাম, আমাকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে জেএফকেতে আমি নামতে পারব। সে বলেছিল__আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি। হিথ্রোতেই জানান হয়েছিল যখন জেএফকেতে পৌঁছাব, তখন নিউইয়র্কের আকাশে ঝড় থাকবে। আমি মনে মনে হেসে বলছিলাম, আমি যাচ্ছি, একটু ঝড়ঝঞ্ঝা তো হবেই; 6 ঘণ্টায় আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কের আকাশে আমাদের বিমান চক্কর দিতে থাকে, আমি তাকিয়ে নগর দেখতে পাই, আটলান্টিক দেখতে পাই, প্রায় এক ঘণ্টা এভাবে কাটে। 9/11-র পর নিউইয়র্কের আকাশে এক ঘণ্টা চক্কর দেওয়া কতটা চাঞ্চল্যকর আমরা সবাই বুঝেছি। ভয় লাগেনি, নামতে পারবো বুঝতে পারছিলাম। আমাদের বারবার বলা হচ্ছিল নিউইয়র্কে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি চলছে, নামতে সময় লাগবে। মার্কিন যুবকযুবতীদের চরিত্র খুব ভিন্ন, ওরা আমাদের থেকে ভিন্ন চেতনার মানুষ। আমরা হলে যেখানে দোয়াকলমা পড়তে শুরু করতাম, সেখানে ওরা আকাশের দুর্যোগের কথা জেনে হো হো করে হাসতে থাকে, যেনো খুব মজা হতে যাচ্ছে। এক ঘণ্টা ধরে চক্করের পর বিমানটি নামে। বাংলাদেশ বিমান যে ভয় আমাকে দেখিয়েছিল, সে ভয় আমি পাইনি। নামার পর টার্মিনালে পেঁৗছুতে প্রায় 1 ঘণ্টা সময় লেগেছিল।
আলী : এখন নাকি ইমিগ্রেশন খুব কড়াকড়ি করে? আপনার কী অভিজ্ঞতা হল?
আজাদ : খুব কড়াকড়ি, তবে আমার অভিজ্ঞতা সুখকর। অাঁকাবাঁকা কিউতে আমরা
দাঁড়িয়ে ছিলাম, দ্রুত কাজ হচ্ছিল। যখন আমার বেলা আসে আমি লাগেজ দেখালাম। আমি তো কিছুই নিইনি, শুধু একটি কাঁধব্যাগ। আমার সঙ্গে ছিল ওসমান গনি, সে বই নিয়েছিল আমার লাগেজ হিসেবে, তার লাগেজেও ছিল বই। ওগুলো খুললে অনেক সময় লেগে যাবে। আমি কাস্টমসের ভদ্রলোকটিকে বললাম, আমরা দুজন এক সঙ্গে এসেছি, এগুলো খোলার আগে ঢাকার মার্কিন এ্যাম্বেসি আমার ভিসায় কী মন্তব্য লিখেছে, তা কি একটু দেখবেন? মন্তব্যের জায়গায় মার্কিন এম্বেসি সাধারণত কারো সম্পর্কে মন্তব্য করে না; কিন্তু আমার সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেছিলেন এম্বেসির অ্যাডামস। মন্তব্যটি দেখে ভদ্রলোক আমাকে বারবার নমস্কার করে বলতে লাগলেন__আপনার লাগেজ খোলার কোনো দরকার নেই, আমি দুঃখিত যে খুলতে চেয়েছিলাম। নমস্কারের ব্যাপারটি আমাকে চমৎকৃত করে। কাস্টমসের সব কিছু শেষ করে আমাদের বেরোতে সময় লাগে দু-তিন মিনিটের মতো। বেরিয়েই দেখি বিশ্বজিৎ ও অন্যরা ফুল, মালা, ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আলী : বইমেলায় পেঁৗছুবার পর আপনার অনুভূতি বলবেন?
আজাদ : বইমেলা আয়োজিত হয়েছিল জ্যাকসন হাইটসের একটি ইহুদি বিদ্যালয়ের
মিলনায়তনে। সেদিন ঝড় বয়ে গেছে নিউইয়র্কে। মিলনায়তনে যখন পেঁৗছি তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল, তাই অনেকেই আসতে পারেনি, তবু বহু বাঙালি এসেছিল। বৃষ্টির মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছিল একটি আনন্দঘন পরিবেশ। মিলনায়তনের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আমি বইমেলা উদ্বোধন করি, বলি বাংলাদেশ হচ্ছে বাংলাভাষার মাতৃভূমি, আর নিউইয়র্কের বইমেলা বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় প্রধান মেলা। নিউইয়র্কে এখন শুধু পাঠক নয় বাংলা লেখক সৃষ্টি হচ্ছেন, তাঁরা বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করবেন। দ্বিতীয় দিন আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত সুন্দর, মানুষের পর মানুষ আসছে, বই কিনেছে, গান শুনেছে, শুনছে কবিতা আবৃত্তি। আমার পরিচয় হয়েছে বহু বাঙালির সঙ্গে, ঢাকায়ও আমার এতজনের সঙ্গে পরিচয় নেই। অজস্র অনুরাগী পেয়েছি আমি সেখানে, আমি বিস্মিত হয়েছি।
আলী : বইমেলার মূল উদ্যোক্তা কে? এ বইমেলায় অন্য কোনো দেশ থেকে কেউ
বই কিনতে এসেছিল?
আজাদ : উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা, তার মুক্তধারা। বিশ্বজিৎ অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী, নম্র,
সুখকর, সৎ, পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল। তাকে আমি চিনতাম, বহু বছর আগে একবার সে আমার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। তারপর আর দেখিনি। বিশ্বজিতের মতো অসাধারণ তরুণ হয় না। বইমেলায় পাঠকেরা এসেছে নিউইয়র্ক থেকেই, নিউজার্সি থেকেও এসেছে, আর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া থেকেও কেউ কেউ এসেছে। বিশ্বজিৎ শুধু নিউইয়র্কে নয়, আটলান্টা, ফ্লোরিডা এবং অন্যান্য জায়গায়ও বইমেলা করেছে। নিউইয়র্কের বইমেলা উত্তর আমেরিকার প্রধান বাংলা বইমেলা। শুধু মেলায় নয়, তার দোকান মুক্তধারায়ও নিয়মিত বাঙালিরা আসে বই কিনতে।
আলী : আপনি হঠাৎ করে Our Beautiful Bangladesh বই লেখার কথা
ভাবলেন কেন?
আজাদ : বইটি লিখছি বিশ্বজিতের অনুরোধেই। নিউইয়র্ক ও বিদেশে অভিবাসী
বাঙালিরা নানা সংকটে আছেন, তার একটি হচ্ছে সাংস্কৃতিক সংকট। তাঁদের পুত্রকন্যারা নিউইয়র্ক, আটলান্টা, টরেন্টো, লন্ডন ও আরও নানা শহরে বেড়ে উঠছে, ওরা বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশ, বাঙালি, বাংলাভাষা, বাঙালির সংস্কৃতি সম্পর্কে ওরা কিছুই জানে না। বাংলা ওরা লিখতে ও পড়তে পারে না, পিতামাতার আঞ্চলিক বাংলা বুঝতে ও বলতে পারে। ওরা প্রকৃত মার্কিনিও হচ্ছে না, হচ্ছে 'এথনিক আমেরিকান'। ওরা বাসায় সারাক্ষণ ভিডিও গেম খেলে, কথা শোনে না, পিতামাতার সঙ্গে একটু গোলমাল হলেই 911-এ ফোন করে পুলিশে খবর দেয়, একটু বড়ো হলে মেয়েরা সাধারণত নিগ্রোদের সঙ্গে প্রেম করে। বিশ্বজিৎ একটি বই বের করতে চায় এদের জন্যে, যে বই পড়ে ওরা সচেতন হতে পারবে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে। আমি এসব বালক-বালিকাদের দেখেছি, যাদের জন্যে আমার করুণা জন্মেছে। আমি এদের জন্যে ঙঁৎ ইবধঁঃরভঁষ ইধহমষধফবংয নামে একটি বই লিখতে রাজি হয়েছি। বাংলাদেশকে অবশ্য আমি খুব বিউটিফুল মনে করি না, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের থেকে অনেক সুন্দর। তবে বাংলাদেশ আমাদের দেশ, আমাদের চোখে সুন্দর, মাকে মেরেলিন মনরো হতে হয় না।
আলী : ওখানকার বইমেলার কি কোনো বিশেষত্ব আছে? ভারতের কোনো লেখক
ওখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন?
আজাদ : ওই মেলার একটি বিশেষত্ব হচ্ছে অভিবাসী বাঙালিদের বাংলা সাহিত্যের
প্রতি আকৃষ্ট করা, আরেকটি হচ্ছে অভিবাসী বাংলা লেখক সৃষ্টি করা। এ-মেলা বাঙালির সংস্কৃতি বিস্তার করে চলছে উত্তর আমেরিকায়। এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
আলী : ওখানকার বইমেলায় কি অভিবাসী বাঙালি লেখকদের বই বের হয়?
মেলাটিতে কেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছেন?
আজাদ : নিউইয়র্কে এখন অনেক বাঙালি লেখক সৃষ্টি হচ্ছেন, বইমেলায় তাঁদের বই
বেরুচ্ছে। তাঁদের বইগুলো অবশ্য ছাপা হয় বাংলাদেশেই। মেলায় উদ্দীপনার কোনো শেষ ছিল না, ওটা ছিল একটি উৎসব। মেলার দ্বিতীয় দিন ছিল রোববার। আমাকে একজন বলেছিলেন__রোববারে মেলা খুব জমবে না, কারণ সোমবারের জন্য সবাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাবে; কিন্তু দেখি রোববার হাজার দুই মানুষ এসেছে, কবিতা পাঠ শুনছে, গান শুনছে, বই কিনছে। মিলনায়তনটি ভাড়া করা হয়েছিল রাত দশটা পর্যন্ত, সেখানে নিয়ম মেনে চলতে হয়, দশটা হচ্ছে দশটা। কিন্তু সেদিন মেলা চলেছিল রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত। পাঠক-পাঠিকা, তরুণ-তরুণীরা, সাংবাদিকে ভরা ছিল চারপাশ। বাংলা এক
২|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৫:৩৮
অতিথি বলেছেন: ভালো তবে এত্ত বড় লেখা... অল্প অল্প করে পোস্ট করতেন...সরি পড়তে পারছি না...
৩|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৫:৪৩
অতিথি বলেছেন: আমি ঠিক জানি না। মনে হয় না। ওনার একটা প্রবচনের বই আছে। আর আরজ আলী মাতুব্বরের উপরে একটা সংকলনগ্রন্থ করতেছেন।
'বইয়ের বিজ্ঞাপন' এই মর্মে রাখতে চাইলাম যে এই পোস্ট দিয়া বইয়ের বিক্রি খানিক বাড়বে।
এমনিতে 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' জানাইতেছে যে বিজ্ঞাপন মানে হইল :...সাধারণকে জানাইবার নিমিত্ত বিষয়বিশেষের লিখিত বা মুদ্রিত পরিচয়পত্র। 'বাঙ্গালা ভাষার অভিধান' বলছে : বিশেষ বা বিস্তৃতভাবে জ্ঞাপন বা জানান; সাধারণের অবগতির জন্য সংবাদ বা সাময়িক পত্রাদিতে প্রকাশিত বিবরণ।
৪|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ বিকাল ৫:৪৫
অতিথি বলেছেন: সাকিব, বড় লেখা পইড়েন না, এইটুকুই পরামর্শ।
৫|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:২১
অতিথি বলেছেন: বইয়ের বিক্রি বাড়লে সুখবর।
সংজ্ঞা প্রসঙ্গে কই যে 'বিজ্ঞাপন' শুনলেই মানসিক ছবি হিসাবে একটা সৃজনশীল বিহীন বাণিজ্যের ছবিই ভাইসা আসে, তাই আরকি কইছিলাম। কয়টা বিষয়ে আর আমরা বিশুদ্ধ সংজ্ঞা লইয়া থাকি কন? সবই এখন কনটেক্সট নির্ভর।
তয়, নাম হিসাবে বইয়ের বিজ্ঞাপন খারাপ লাগে না।
৬|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:২৪
অতিথি বলেছেন: নিউইয়র্কের প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রসঙ্গে তার পর্যবেক্ষনগুলা বিশেষভাবে পড়ার মতো।
৭|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২০
হাসিব বলেছেন: আপনার নিজের ব্লগে এই ব্লগগুলোর একটা লিংক থাকা দরকার মনে হয়। 'নিজের পছন্দের লিংক' -এর সাথে এগুলোর লিংক যোগ করে দিয়েন ।
৮|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২৭
হাসিব বলেছেন: থিসীসের নামটা আসে নাই । ইংরেজী অক্ষরগুলো ।
৯|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ৯:৩০
হাসিব বলেছেন: 10ম প্রশ্নেও ইংরেজীগুলো আসে নাই ।
১০|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ৯:৫০
হাসিব বলেছেন: 10ম প্রশ্নেও ইংরেজীগুলো আসে নাই ।
১১|
১২ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সকাল ১১:৫৯
অতিথি বলেছেন: হাসিব, ইংরাজিগুলা ঠিক করা হইছে।
১২|
১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৭ সকাল ১০:১৭
আলভী বলেছেন: অসাধারণ পোষ্ট। এই ধরণের আরো পোষ্ট চাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০০৭ দুপুর ২:৫৭
অতিথি বলেছেন: ভালো উদ্যোগ।
তয় এইটারে 'বইয়ের বিজ্ঞাপন' নামে না ডাইকা, 'বইয়ের পাতা' নামে ডাকলে ক্যামন হয়?
ভালো কথা: এই মোহাম্মদ আলী কি 'আলী ও নিনো' বইয়ের অনুবাদক?