নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুরানের গল্প: একটা ঘুম মামার গল্প

৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৫

তুরানের বয়স হলো সাড়ে তিন।

সারাদিন যেমন-তেমন, কিন্তু রাতে ঘুমাতে গিয়ে সে বাবার ঘুম হারাম করে ছাড়ে--বাবা, গল্প শোনাও, গল্প শোনাও, গল্প শোনাও। এবং কোন রেডিমেড গল্প হলে চলবে না, কাস্টম মেড হতে হবে। কারণ গল্পের পাত্র-পাত্রী এবং বিষয়বস্তু সে নিজে নির্বাচন করে দেবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সেই পাত্র-পাত্রীর সাথে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার বা উপেন্দ্র কিশোর রায়ের পাত্র-পাত্রীর কোন মিল নেই। যদি কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় তবে তা একান্তই কাকতাল মাত্র। কোনদিন তার পাত্র-পাত্রী হলো একটা মা সিএনজি আর একটা বেবি সিএনজি, কোনদিন বাবা ফ্যান আর বেবী ফ্যান, কোনদিন স্পাইডারম্যান আর ব্যাটম্যান।

গল্পগুলি জমিয়ে রাখছি তুরানের ত্রিশ বছর বয়সের জন্য, কোনদিন যদি তার পুত্রও ঘুমাতে গিয়ে শুনতে চায় একটা মা সাইকেল আর একটা বেবি সাইকেল কিংবা একটা মা টেম্পু আর একটা বেবি টেম্পুর গল্প।

আমাদের আজকের গল্প একটা ঘুম মামার গল্প:


রাত হয়েছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তুরান আর বাবাও শুয়ে আছে।

তুরান বললো, বাবা, আমরা কবে শিশুপার্ক যাবো?
বাবা বললেন, শনিবার।
তুরান বললো, বাবা, কবে শনিবার হবে?
বাবা বললেন, আগামীকাল।
তুরান বললো, বাবা, কবে আগামীকাল হবে?
বাবা বললেন, তুমি ঘুম থেকে উঠলেই আগামীকাল হবে। এখন ঘুমাও।

কিন্তু তুরানের আর ঘুম পাচ্ছে না। কখন সকাল হবে, কখন আগামীকাল হবে, কখন শনিবার হবে, তারপর সে শিশুপার্ক এ যেতে পারবে? তুরান বিছানায় শুয়ে শুয়ে নড়াচড়া করছে, এপাশ ওপাশ করছে আর একটু পর পর ডাকছে, বাবা, বাবা।
ঘুম ঘুম চোখে বাবা বললো, ঘুমাচ্ছো না কেন বাবা? ঘুমাও, ঘুমাও।
তুরান বললো, বাবা, আমার ঘুম পাচ্ছে না কেন?
বাবা উঠে দেখলো, তাইতো, ঘুম পাবে কী করে? ঘুম মামাকে তো কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাবা তখন ঘুম মামাকে ফোন করলো, হ্যালো ঘুম, তুমি কোথায়?
ঘুম মামা তখন বললো, আমি তো শিশুপার্কে।
বাবা তখব বললো, তুমি কাছে না থাকলে কি কারো ঘুম পায়? তুমি এত রাতে শিশুপার্কে কী করছো? শিশুপার্ক কি খোলা আছে?
ঘুম বললো, না শিশুপার্ক বন্ধ। কালকে আসতে আসতে যদি দেড়ি হয়ে যায় এজন্য আমি রাতেই এসেছি। সকালে গেট খুললে আমি সবার আগে শিশুপার্কে ঢুকবো।

বাবা তখন বুঝলো, ঘুম মামা যখন বেড়াতে গিয়েছে, তুরানের আর ঘুম ধরবে না সারারাত। বাবা তখন বিভিন্ন গল্প বলতে লাগলো।

ওদিকে ঘুম মামা শিশুপার্কের গেটে বসে আছে, কখন সকাল হবে, কখন সে পার্কে ঢুকবে। গেটে গার্ড মামারা ছিল, তারা ঘুম মামাকে দেখতে পেলনা। গার্ড মামারা হাটাহাটি করছে আর গল্প করছে। গল্প করতে করতে তারা ঘুম মামার সাথে ধাক্কা খেয়ে গেল। ধাক্কা খেয়ে গার্ড মামারাই ঘুমিয়ে পড়লো।

একটা চোর চুরি করার মতলবে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল, কিন্তু গার্ড মামাদের ভয়ে শিশুপার্কে ঢুকতে পারছিল না। চোরটা হঠাৎ দেখলো, আরে, গার্ড মামারা সব ঘুমিয়ে পড়েছে, এটাই সুযোগ, শিশুপার্ক থেকে সবকিছু চুরি করতে হবে।

চোরও ঘুম মামাকে দেখতে পায় না। চোর চুপি চুপি যেই গেটের কাছে গেল অমনি ঘুম মামার সাথে তারও ধাক্কা লেগে গেল। ধাক্কা লেগে চোরও ঘুমিয়ে পরলো।

ঘুম মামা সারা রাত একা একা জেগে বসে রইলো। বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ভোরবেলা ঘুম মামা নিজেই ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল বেলা তুরান আর বাবা গেল শিশুপার্কে। যেয়ে দেখলো চোর, গার্ডমামা সবাই ঘুমিয়ে আছে। তুরান আর বাবা মিলে চোরকে ঘুমের মধ্যেই বেধে ফেললো। গার্ডদের ঘুম থেকে ডেকে ওঠানো হলো। তুরান ঘুম মামাদেরকেও ঘুম থেকে ডেকে ওঠালো। আরও লোকজন আসতে শুরু করলো। শিশুপার্কের স্যার মামারাও এসে পড়লেন। এসে তারা ভাবলেন গার্ড মামারাই চোরটাকে ধরেছে। তারা খুব খুশি হয়ে গেলেন। গার্ডমামাদের জন্য পুরষ্কার ঘোষনা করলেন।

শিশুপার্ক খুলে দেয়া হলো। সবাই পার্কে প্রবেশ করলো। ঘুম মামাও যেতে চেয়েছিলো পার্কে। তুরান ঘুম মামাকে না করেছে। কারন ঘুম মামাকে কেও দেখতে পায় না। না দেখে ধাক্কা খেলেই সবাই ঘুমিয়ে পড়বে। শিশুপার্কে ঘুরতে এসে ঘুমিয়ে পড়লে কি ভালো হয়? তাছাড়া সারারাত জেগে থেকে ঘুম মামাও খুব ক্লান্ত। ঘুম মামা সারা রাত জেগে থাকে আর সারা দিন ঘুমায়। তাই ঘুম মামা বাসায় চলে গেল।

তুরান অনেক মজা করলো শিশুপার্কে। রাতে বাসায় গিয়ে ঘুমানোর সময় ঘুম মামাকে বলতে লাগলো কিসে কিসে চড়েছে। কিন্তু ঘুম মামা পাশেই বসে থাকাতে তুরান বেশীক্ষণ গল্প করতে পারলোনা। ঘুমিয়ে পড়লো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.