নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কানাডায় বাচ্চাদের প্রথম স্কুল

২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৩৫

নতুন দেশে বাচ্চাদের প্রথম স্কুল আজ।



আজ সূ্র্যোদয় ৯ টা ৫ মিনিটে, আর বাচ্চাদের ক্লাস শুরু ৯ টা থেকে। অর্থাত বাচ্চাদের ক্লাশ শুরু হয়ে যাবার আরও ৫ মিনিট পর দিন শুরু হবে! অগত্যা রাতের আধারেই আমাদের বিদ্যালয় যাত্রা শুরু হলো।

শীতের দেশ। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কানাডার সাস্কাচুয়ান প্রদেশের জানুয়ারির ১৮ তারিখ অনুযায়ী মাইনাস ৬ তাপমাত্রাকে ভালোই বলতে হবে। আমরা এদেশে এসেছি ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে। তখন তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস ১৫ ডিগ্রির মতন। সুন্দর নাতিশীতোষ্ণ দেশ থেকে এসেই একেবারে মাইনাস ১৫, যেটা আবার পরবর্তী সপ্তাহখানেকে পৌছেছিল মাইনাস ৩২ থেকে মাইনাস ৩৪-এ, আর রিয়েল ফিল হয়েছিল মাইনাস ৪৭-৪৮ এর মতন!

তাই এদেশের অভিজ্ঞতা আমাদের মাত্র এক মাসের হলেও আমরাও এখন মাইনাস ৬ কে অপেক্ষাকৃত ভালো তাপমাত্রা বলতে শিখে গেছি!

তবে মাইনাস ৬ তাপমাত্রা ভালো বলে আমাদের প্রস্তুতিতে কোন কমতি রাখার সুযোগ নেই। বাচ্চাদের জামার উপর ভারি জ্যাকেট, জিন্সের প্যান্টের উপর স্কি প্যান্ট, মাথায় ভারি কান টুপি, গলায় মাফলার, হাতে হাত মোজা, পায়ে ভারি পা মোজার সাথে মাইনাস ৩০-৪০ তাপমাত্রার ভারি জুতা। ‌এই ভারি জুতা স্কুলে প্রবেশ করেই খুলে রেখে জিম শু পরে নিতে হবে। প্রথম দিন বলে ভারি জুতার সাথে এক জোড়া হালকা জুতাও দিয়ে দিতে হয়েছে।

এখানে বেশীরভাগ মানুষেরই নিজের গাড়ি আছে। গাড়ি এদেশে বিলাশপণ্য নয়, বরং অত্যাবশকীয় পণ্য। তাই চাকরী খুঁজে বেড়ানো বেকার যুবকটিরও একটি গাড়ি থাকাটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। আমাদের মতন দুচারজন যাদের গাড়ি নেই তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পৌছে দেবার বিকল্পগুলো হলো, পরিচিত কারো গাড়ি, স্কুল বাস, পায়ে হাঁটা অথবা পাবলিক বাসে যাতায়াত।

তবে এদেশের এলিমেন্টারি স্কুলগুলো বিনাবেতনের। এবং বলতে গেলে এলাকা ভিত্তিক স্কুল ব্যবস্থা। এবং সবগুলো স্কুলই কমবেশী স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে, তাই পাবলিক বাসে চেপে যাবার দূরের স্কুলে যাবার তাগিদ মানুষের কমই হবার কথা। অন্যদিকে স্কুলবাস পাবার আবার নির্দিষ্ট যোগ্যতা আছে। আপনার বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব ন্যূনতম ১.২৫ কি.মি. না হলে আপনি স্কুল বাস পাবেন না। আমার বাসা থেকে বাচ্চাদের স্কুলের দূরত্ব ৯০০ মিটারের মতন। অতএব, পায়ে হাঁটাই আমাদের একমাত্র ভরসা।

আমরা আসার পর থেকে বাচ্চাদের স্কুল শুরু করতে ১ মাস সময় লেগে যাবার কারণ হলো, আমরা এসেছিলাম ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। আমাদের জেটল্যাগ কাটতে কাটতে শুরু হয়ে গেল বড়দিনের বড় ছুটি। সেই ছুটি শেষ হবার পর শুরু হলো আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া। এখানকার স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া সরাসরি স্কুলের সাথে হয়না। বরং সাস্কাটুন পাবলিক স্কুল নামের স্কুল ডিভিশনের সাথে হয়ে থাকে। তারাই বাচ্চাদের ইন্টারভিউ, বাবা-মার ইন্টারভিউ, ক্লাস এবং স্কুল নির্ধারনে সহায়তা করে থাকেন। বাচ্চারা পূর্ব যে যেই ক্লাসে পড়ুক না কেন, এখানে জন্মতারিখ অনুযায়ীই শ্রেণি নির্ধারণ করা হবে। যেমন দেশে তুরান দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলো। এই জানুয়ারীতে তার তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার কথা ছিলো। কিন্তু এখানে বয়সের চার্ট দেখে ওরা ক্লাস ফোর নির্ধারণ করে দিলো, ব্যাস, কথা শেষ, খেলা ফাইনাল। আর বাসার ঠিকানা দেখে কাছের স্কুলটির নাম প্রস্তাব করে জানতে চাইলো আমাদের কোন আপত্তি আছে কিনা। আমরা বিসিএস পাত্র দেখে বিয়েতে রাজি হবার মতন এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম!

কারণ উক্ত স্কুলে ২৪০ জনের মতন ছাত্র-ছাত্রী পড়ে। যার মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা নগণ্যই হবার কথা। অথচ সৌভাগ্যক্রমে আমরা যে বাসায় থাকি সেই বিল্ডিং-এর আমার বাচ্চাদের সমবয়সী আরও ৩ জন বাংলাদেশী বাচ্চা সেই স্কুলেই পড়ে। চাইলে বাচ্চারা একসাথে যাতায়াত করতে পারবে, কোন একদিন একজন অভিভাবকের সমস্যা থাকলে বাকিরা কোন একজনের বাব-মার সাথেই চলে আসতে পারবে। একটা নতুন দেশে নতুন পরিবেশে আর কী সুবিধা চান আপনি?

দেশে দুই বাচ্চার ভর্তিতে বছরের শুরুতেই অনেকগুলো টাকা লেগে যেতো। এখানে ভর্তি বিনামূল্যেই সারা গেলো। পাবলিক স্কুল থেকে শুধু আমাদের ৩ টা ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে বললে, এই ফর্ম ৩টা স্কুলে গিয়ে জমা দিলেই হবে। মাঝে শনি-রবি বন্ধ থাকায় আমরা সোমবারেই গেলাম স্কুলে। ফর্মগুলো জমা দিতেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ!

এরপর একজন শিক্ষিকা আমাদের পুরো স্কুল ঘুড়িয়ে দেখালেন। প্রধান শিক্ষিকাও মাঝপথে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে গেলেন। আমাদের ঘুরে ঘুরে কার কোন ক্লাস, টয়লেট, জিম, লাইব্রেরি ইত্যাদি ঘুরিয়ে দেখানো হলো, ক্লাস শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়া হল। আর স্কুল সাপ্লাই এর একটা দীর্ধ তালিকা ধরিয়ে দেয়া হলো, সেসব নিয়ে যেদিন উপস্তিত হবো সেদিন থেকেই ক্লাস শুরু।

সাথে অবশ্য এটাও বলে দেয়া হলে যে, এখন যেহেতু এদেশের স্কুল সেশনের মাঝামাঝি, তাই সবগুলো খুঁজেপেতে একটু সমস্যা হতে পারে। স্কুল সেশন এখানে সেপ্টেম্বর থেকে জুন। জুলা্ই-আগস্ট দুইমাস স্কুল ছুটি। সেপ্টম্বর থেকে আবার নতুন সেশন। অভিবাসীমূলক দেশ হবার কারনেই কিনা, বছরের যেকোন সময়েই স্কুলে ভর্তি নেয়। তবে স্কুল যেকোন সময় ভর্তি নিলেও স্কুলের জিনিসপত্র খুঁজে বেড় করতে আমাদের এই শীতেও গলদঘর্ম হতে হলো! ডলারামা, স্ট্যাপলস, ওয়ালমার্ট ঘুরে ঘুরে মোটামুটি জোগাড় করা গেল।

সেই সকল মালপত্র সহ বাচ্চাদের নিয়ে বিল্ডিং-এর আরও ৩ বাচ্চাসহ আজ সূর্য ওঠার আগেই রাতের আধারে আমরা হেটে রওনা হলাম নতুন দেশে স্কুলের প্রথম দিনের জন্য।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৭

কামাল১৮ বলেছেন: কানাডার জীবনযাত্রা বেশ সংগ্রামের।

০৩ রা জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:৪৬

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: তাইতো দেখা যাচ্ছে।

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন:






আপনার প্রবাস জীবন নির্বিঘ্নে কাটুক।
চমৎকার পোস্ট।
শুভেচ্ছা।



০৩ রা জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:৪৭

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: নিজের ঘর আর নিজের দেশের মতো শান্তি দুনিয়াতে আর কোথাও নেই।

০৩ রা জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:৪৯

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

কিন্তু গৃহপালিত মানুষের শরীরেও যাযাবরের রক্ত। সেই রক্তের টানেই আমাদের আদিপুরুষ একসময় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এখনো সেই রক্তই আমাদের ঘর থেকে বাইরে টেনে নিয়ে যায়।

৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩০

ঢাবিয়ান বলেছেন: কঠিন জীবন।

০৩ রা জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:৫০

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: এখন সব ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:২৩

িসজার বলেছেন: সফল হোক নতুন জীবনের যাত্রা!

০৩ রা জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:৫১

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.