নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বোদলেয়ারের আশ্চর্য্য মেঘমালা দেখে থমকে দাঁড়ানো জীবনানন্দের সোনালী ডানার চিল...
আমাদের এই বাড়ীর সামনের অংশে আব্বার ফুল বাগান ছিল। হাস্নাহেনা ফুলের ঘ্রাণে নাকি সাপ আসতে এই বাগানে। হেমন্তর রাতে যখন আমরা ছাদে ঘুমাতাম তখন তীব্র এক আশ্চর্য্য সৌরভে সিক্ত হতে হতে তলিয়ে যেতাম নিদ্রার গভীরতম স্তরে।
মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে দেখতাম তারাভরা আকাশ অথবা ক্ষয়ে যাওয়া মরা একাদশীর চাঁদ। মোড়লপাড়ার দিক থেকে থেমে থেকে একটা টক্কোসাপ (তক্ষক) ডাকতো; কখনও ভুতুমের আওয়াজ পেতাম। স্বপ্ন আর জাগরনের মধ্যভাগে যেন আমার কৈশোরিক অস্তিত্বের পুরোটা জুড়ে খেলা করতো বিনম্র এক অপার্থিব শিহরণ।
বাগানে কয়েক রকমের জবা ফুল ছিল। একটা গন্ধরাজ গাছ আর একটা আতা গাছ ছিল। আরও কিছু গাছ যেমন বাগানবিলাশ আর গেইটফুলের ঝোপ ছিল। সাদা সাদা একরকম ফুলের ঝাড় থেকে আমরা ছোটছোট ফুলের মধু চুষে খেতাম। একটা লম্বা ইউক্যালিপটাস ছিল। আমি চোখ বুজলেই সেই বাগানটি দুলে উঠে আমার স্মৃতির আয়নায়!
সেই বাগানের কোন ফটোগ্রাফ আমার কাছে নেই। ইট বসানো উঠানের একপাশে বালিগাদা আর কলাগাছের ঝোপের আগে শিউলী ফুলের মাঝারী গাছ। পিছনে বাতাবী লেবু আর বড় কৃষ্ণচূড়া। একটা তুলশী গাছও আব্বা লাগিয়েছিল। পাশে বড়ফুফুর রান্নাঘরের পিছনে ছিল কালো জামের মস্ত হেলানো গাছ। একটা বুনো কুলগাছ। ও হ্যা আর একটি কুলগাছ ছিল আমাদের বারান্দায় উঠার আগে। ডালিম গাছ ছিল একটা। আব্বার শখ ছিল গাছ লাগানো। ফুল আর ফলের। এমনও হয়েছে প্রয়োজনীয় বাজার না করে আব্বা গাছ কিনে এনেছেন।
ধূপছায়ার মতো সে সময়েরা। গোধূলীর মতো ক্ষণিক। শীতের ভোরের ক্ষণজন্মা সাদা সাদা হাস্নাহেনার মতো এই জীবন। আজ আব্বা নেই, আব্বার বাগানটি নেই। সেই গাছগুলোর একটিও নেই। একটা ফটোগ্রাফও নেই। জীবন তো এমনই, মাঝারাতের ভেঙে যাওয়া ঘুম, শিউলী ফুলে ছেয়ে যাওয়া উঠান, বাগানের বেড়াফুলগাছটির মতো, আব্বার মতো…..
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:০২
সোনালী ডানার চিল বলেছেন: স্মৃতির মাঝেই তো জীবনের বসবাস!
২| ১১ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৩৯
অধীতি বলেছেন: এখন গাছ কেউ লাগায় না। হাস্নাহেনা, বহু ফলফলাদির গাছ এখন উজাড় হয়ে গেছে। এখন গ্রামও আগের মত নেই। ঝোপঝাড় নেই। নিরবতাও নেই। চারিদিক খাঁ খাঁ করে।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:০৩
সোনালী ডানার চিল বলেছেন: সত্যিই বলেছেন। গ্রাম নেই আর, ইটের গুদাম যেন। গাছ নেই আর, হলুদ রোদ্দুরে গরমের হলকা!
৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৪১
সোনাগাজী বলেছেন:
বাগান ছিলো সামনের দিকে, আপনি সামনের দিকের ছবি না'দিয়ে অন্য ছবি দেয়ার কারণ কি? পাশ দিয়ে রাস্তা, ইহা দেশের কোন এলাকায়?
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:০৬
সোনালী ডানার চিল বলেছেন: বাগানের সামনের দিকটার ছবি নেই, অন্য চাচা ঘিরে ফেলেছেন। ভাগ হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। শুধু স্মৃতিতে বাগানটি আছে। পেছনের রাস্তাটি গলিপথ, প্রাইভেট রোডের মতো। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম এলাকা।
৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: একসময় গ্রামের অনেক বাড়িতে বাগান ছিলো। এখন সবাই ঘর তুলেছে।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে খুব সুন্দর একটা বাগান ছিলো। অনেক রকম ফুল গাছ ছিলো।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:০৮
সোনালী ডানার চিল বলেছেন: ফুল আর ফলে গ্রাম ভরে থাকতো একদা। তেমনটি তো আর নেই। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে কমছে সবুজ, কমছে বৃক্ষ, মুছে যাচ্ছে স্মৃতি।
৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৮:১৭
জগতারন বলেছেন:
আশা করি "সোনাগাজী"-এর মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য পাওয়া যাবে।
ইহা আমারও জিজ্ঞাসা।
প্রবন্ধটি আমার খুব ভালো লাগ।
লাইক দিলাম।
(অন্য কথা;
"সোনাগাজী"-এর ব্লগ পড়ার নিষ্ঠা দেখলে/ জানলে আশ্চর্য হতে হয়।)
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:০৮
সোনালী ডানার চিল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫১
মিরোরডডল বলেছেন:
লেখাটা খুব খুব ভালো লেগেছে।
মনে হচ্ছিলো আমার বাবার সাথে কত মিল!
ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের ঢাকার বাসায় কত ধরণের যে ফুল ছিলো। সবই বাবার কালেকশন।
মা দেখাশোনা করতো কিন্তু শখটা ছিলো বাবার। সে এক রঙিন জীবন!
লাল, গোলাপি, সাদা তিনরকমের গোলাপ, লাল গোলাপ অনেক বেশি ছিলো।
তিন রকমের কসমস সাদা, গোলাপি, হলুদ। গাঁদা ফুল, দোপাটি, দুপুরচণ্ডী, সন্ধ্যামালতি, জিনিয়া আরও কত সব মনে নেই।
কিছু বিদেশি ফুলও ছিলো লার্কস্পার, হলিহক। আরো ছিলো সজনে, পেয়ারা, মুম্বাই মরিচ গাছ।
ঠিক লেখকের বাবার মতো গ্রামের বাড়িতেও বাবার সিমিলার একটা বাগান ছিলো।
ওখানে ছিলো, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, মাধবীলতা, গেইটফুল।
আজ বাবাও নেই, আর নেই কোন বাগান, নেই কোন ফুল অথবা রঙিন জীবন।
পুরোটা জুড়ে আছে সেখানে শুধুই এক বিশাল শূন্যতা।
আছে একজন বটবৃক্ষের স্মৃতি!
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৩৬
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ক্ষয়ে যাওয়া সময়ে সবি শেষ হয়ে যায় থেকে যায় শুধুই স্মৃতি।