নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বড় হবে যতো, মাথা নুয়াবে ততো।

স্বপ্নছোঁয়া

নাম ভুলে গেছি,দুরবল মেধা স্মরণে রেখেছি মূখ। কাল রজনীতে চিনিব তোমায় আপাতত সৃতিভুক।

স্বপ্নছোঁয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মৃধা মণ্ডল..........।।।

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮





বড় রাস্তার গলির মুখে দুই তিনটা মুদি দোকান আছে। তবে এখানে দোকানি দের মধ্যে তেমন প্রতিযোগিতা দেখা যায়না।সবগুলো দোকানই ভালো চলে।দোকানিদের মধ্যেও সম্পর্ক মধুর।।দোকানগুলো ক্রস করে ঠিক দক্ষিণে যে গলিটা গেছে সেখানে একটা বেশ পুরনো বড় বটগাছ আছে আর আছে এক বড় প্রভাবশালী ব্যাক্তির বসবাস।এই প্রভাবশালী ব্যাক্তির প্রভাব এলাকার মানুষের উপর নয় অথবা কোন রাজনৈতিক প্রভাব ও নয়।তিনি প্রভাবশালী তার পরিবারের কাছে। মানুষটির নাম মৃধা মণ্ডল।মৃধা সাহেব পরিবারের কর্তা।তার কথার উপর কথা বলার সাহস এই পরিবারের কারো নেই।শহর থেকে অল্প একটু দূরে মৃধা মণ্ডলের বাড়ি।



গায়ের রঙ ফর্সা মতন লম্বা চওডা মাঝ বয়সী জনাব মৃধা।দেখতে বেশ ভাল, একসময় সুদর্শন যুবক ছিলেন বলা যায়। মাঝে মাঝে পিক করে পানের পিক ফেলার মত করে হাসি দেন। তখন তাকে একটু বেমানানই লাগে। তবে হাসি এমন একটা ব্যাপার যেকোন মানুষই প্রাণ খূলে হাসলে তাকে ভালো দেখায়। মৃধা সাহেবের বেলায় তার ব্যতিক্রম ই বা হবে কেন।গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা পরেন এবং বেশীরভাগ সময় তার গোল্ডেন ফ্রেমের চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে সবাইকে দেখেন। বড়সড় রক্তচক্ষু দেখলে সরল সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে যাবার মতন। পুরোটা সময় জুড়ে মৃধা সাহেবের দৃষ্টি টাকার দিকে,অবশ্য এই বিষয়ে তাকে দোষ দেয়া যায়না সুদীর্ঘ পঁচিশটি বছর তিনি এভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন।জনাব মৃধা একটি সরকারী ব্যাংকে ক্যাশিয়ার। যদিও প্রোমোশন পেয়ে তিনি অফিসার হয়েছেন তাও ক্যাশে কাজ করেন,এই কাজ করে তিনি অভ্যস্থ হয়ে গেছেন। তার চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে ডাঃ প্রেস্ক্রাইব করেছে চোখে ড্রপ দিতে। ড্রপের দাম ৪৫০ টাকা। ৪৫০ টাকা খরচ করা মৃধা সাহেবের কাছে বেশি মনে হয় তাই দুইটা ড্রপ ব্যবহার করে ড্রপ কেনা আপাতত স্তগিত রেখেছেন। মৃধা সাহেবের পড়াশুনার করার খুব শখ ছিল এই ব্যাপারটা তাকে দেখলেই বুঝা যায়। নিজে না পারলেও তার ছেলে মেয়েদের তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন।



১৯৮৮ সালে মৃধা মণ্ডল এইচ,এস,সি পাশ করার পর জীবিকার তাগিদে চাকরিতে ঢুকেন। উচ্চ শিক্ষায় আর যেতে পারেন নি। নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে তা হয়ে উঠেনি।মনের কোনে কোথাও সেই বড় কষ্ট তিনি চেপে রাখেন।হয়ত সেই বড় কষ্টটা চেপে রাখতে গিয়ে সারাক্ষণ পৃথিবীর সব কিছুর উপর বিরক্ত প্রকাশ করেন।মাঝে মাঝে চশমার ফাঁকে তাকিয়ে গর্ব করে জানান দেন প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত তার রোল নম্বর ছিল এক।তিনি ছিলেন প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র। কিছু সময় স্কুল জীবনের গল্প বলেন গল্পটা মজার হলে অট্টহাসি দিয়ে যান। আর যদি গল্পের মাঝে একটু পরাজয় গ্লানি, ব্যর্থতা প্রকাশ পায় তখন খুব রেগে যান।বেশিরভাগ সময়ই তিনি খিটখিটে মেজাজে থাকেন।রাগের বহিঃপ্রকাশ হয় হিংস্রতায় আর তার ভুক্তভোগী হন সাধারন মানুষ।



মৃধা মণ্ডলের ছোট মেয়ে মিলি। তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। একটু চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে মিলি। বাবার সাথে মিলির বাহ্যিক কোন মিল নেই। মিলি গায়ের বর্ণ পেয়েছে তার মায়ের। একটু শ্যামলা প্রকৃতির মেয়েদের চোখে বেশি মায়া থাকে। সবকিছু মিলিয়ে শ্যামলা মেয়েদের মায়াটাই বেশি দেখা যায়। বেশীরভাগ সময় শ্যামলা সুন্দরী মেয়েদের আত্মীয় স্বজন তাদের মায়া ব্যাপারটা নিয়া বেশি কথা বলবে তারপর আসবে গুণের কথা এবং সবার পরে গায়ের রঙ। সুন্দরীর মানে রঙে বেশী সুন্দরী হলে হয় তার ঊল্টোটা প্রথমে আসে রঙের কথা এবং তারপর গুনের কথা। মৃধার মুখে মেয়ের বর্ণনায় তারই প্রমান পাওয়া যায়।

ছোট মেয়ে মিলিকে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করাতে হবে।এই নিয়ে চিন্তিত মৃধা মণ্ডল। গ্রামের স্কুল শিক্ষকদের প্রতি মৃধার বিশ্বাস এবং আশ্বাস খুবই কম নেই বললেই চলে।মনে মনে এই শিক্ষকদের প্রতি তিনি ক্ষোভ পুষে রাখেন। অবশ্য তার পেছনে তিনি একটি কঠিন যুক্তি রেখেছেন। মৃধার এক স্কুল বন্ধু ছিল যে কিনা তিন তিন বার পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন,তার বাবা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।প্রধান শিক্ষক সেই বন্ধুর বাবা হওয়াতে তার বন্ধু খুব সহজে স্কুলে একটি পদ পেয়ে যায়,এবং আজ এত বছর পর তা্র বন্ধু ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে আছেন।সেই সুবাদে তিনি আবার তার পুত্র এবং পুত্র বধুকেও ওই স্কুলে নিয়েছেন। জনাব মৃধার মতে এটি একটি “পারিবারিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান”

এই পারিবারিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জনাব মৃধার বাড়ির পাশে থাকা সত্তেও তিনি তার কোন ছেলে মেয়েকে এই স্কুলে ভর্তি করান নাই।বড় ছেলে মিহিরকে তার স্ত্রী এই স্কুলে ভর্তি করাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন।মায়েদের একটু ভয় থাকে একটা বিশেষ সময় পর্যন্ত মায়েরা ছেলেমেয়েদের আগলে রাখতে চান কারন তারা ভাবেন একটু বড় হয়েই ছেলেমেয়েরা বাইরের জগত টাকে এত বেশী করে বুঝতে শিখে যায় তখন বাবা মারই ছেলেমেয়েদের বুঝতে কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মৃধা মণ্ডল তার সিদ্বান্তে অটল তিনি কোন ভাবেই তার ছেলেকে তিন তিন বার দিয়ে পাশ করা প্রধান শিক্ষকের নিয়ন্ত্রনে থাকা স্কুলে দিলেন না এবং তার মেয়েকেও দিবেন না।



একটু দৃঢ় প্রকৃতির মৃধা সাহেব,সময়ের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সময় তাকে একটু বেশী রুঢ় বানিয়ে ফেলেছে।চাকরির ক্ষেত্রেও তেমন সুবিধা করতে পারেন নি।ভালো ডিগ্রির অভাবে প্রমোশন ও হয়েছে কচ্ছব গতিতে।তাই বলে যে মৃধা মণ্ডল থেমে আছেন তা কিন্তু নয়। চাকরীর এখন ও অনেক বছর বাকি তাই তিনি নতুন করে বা,উ,বি থেকে বি,এস,এস দিয়েছে।মোট বিশটি বিষয়ে পাশ করতে হবে। এর মধ্যে তিনি চোদ্দটি বিষয়ে পাশ করেছেন। তিনটি পরীক্ষা দিয়েছেন এখন ফলাফলের অপেক্ষায় এবং বাকি তিনটি বিষয়ের জন্য কঠিন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মৃধা মণ্ডলের স্বপ্ন তিনি বি,এস,এস পাশ করবেন এবং মৃত্যুর আগে তার ছেলের হাতে সার্টিফিকেট টা দিয়ে বলে যাবেন তিনি মারা যাবার পর যেন তার কবরের পাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়। মাঝে মাঝে আদু ভাইয়ের গল্প টেনে এনে মজা করেন নিজের কাছে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যখন জটিলতার সৃষ্টি হয় তখন বোধ হয় আদু ভাইয়ের ব্যাপারটা টেনে এনে জটিলতা থেকে মুক্ত হতে চান!!!!

মিহির মাধ্যমিকে গোল্ডেন A+ পেয়েছিলো কিন্তু কেন জানি ঊচ্চ মাধ্যমিকে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। তাই নিয়ে তার বাবা সারাটাক্ষণ বেশ চিন্তিত থাকেন।বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ভর্তি যুদ্ধে ছেলের সাথে বাবাও যেন একজন সৈনিক।

ভর্তি সংক্রান্ত কোন খোঁজ পেলেই ছেলেকে জানাবেন।অফিসের সব মানুষকে তিনি বেশ পীড়ায় রাখেন ভর্তি সংক্রান্ত প্রস্ন বানে বিদ্ধ করেন।



দিন শেষে ক্লান্ত মৃধা যখন ঘরে ফিরেন,তার চাকুরী জীবনের বড় পুজি দিয়ে বানানো এই এক চালা দালানের ঘরে শুয়ে পা দুটি অস্থির ভাবে নাড়াচাড়া করেন।শুধু চিন্তায় মগ্ন থাকেন মেয়েকে কিভাবে ভালো স্কুলে ভর্তি করাবেন ,তার ছেলেকে কিভাবে ভালো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করাবেন......।জীবনের হিসেব নিকেশ করতে করতে তিনি ভীষণ ক্লান্ত বোধ করেন। উঠোনের বা দিকে একটা কামরাঙ্গা গাছ আছে,মায়ের হাতে লাগানো।মা নেই গাছটাকে দেখেই মাকে স্মরণ করেন।বাবা তার জন্য তেমন কিছু রেখে যেতে পারেননি তাই মাঝে মাঝে বাবার উপর রাগ হতো এখন আর হয়না।জীবনের চক্র ঘুরতে ঘুরতে এখন তিনিও একজন বাবা।তিনিই বা কতটুকু করতে পেরেছেন?? কততুকু রেখে যেতে পারবেন??

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

জীবনের গল্প ভাল লাগল +++

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০২

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা সময় নিয়ে লিখাটা পড়েছেন |
জীবনের সরল সাধারন গল্পে আমার সবসময়ই ভাল লাগা|

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২

ডি মুন বলেছেন: তারপর কি হলো ?

মৃধা সাহেব কি আপনার পরিচিত কেউ? নাকি নিছক গল্প ?

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: তিনটা প্রস্ন?
1. তারপর কিছুই হলনা জীবন যেভাবে চলে সেভাবেই চলছে ..
2. মৃধা মন্ডল সবার পরিচিত তিনি একজন ব্যাংকার|
3.গল্প তো জীবন থেকেই নেয়া হয় তাইনা?

সবশেষে সময় নিয়ে গল্পটা পড়েছেন আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ |

৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৭

স্বপ্নচারী_কন্যা বলেছেন: সত্যি, জীবন থেকে নেয়া কাহিনীগুলো থেকেই গল্পের সৃষ্টি.

০৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৪

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: আমারও তাই মনে হয়। :)
ধন্যবাদ আপনাকে সময় করে গল্পটি পড়েছেন।

৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১১:২১

সুমন কর বলেছেন: ভাল লাগল।

০৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৬

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমার ভালো লাগলো :#)

৫| ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩৬

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
জীবন থেকে নেয়া :)

০৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:২০

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প :P :)

৬| ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০০

আরজু পনি বলেছেন:

জীবনের গল্প বেশ লাগলো ।

কেউ কেউ স্বপ্ন পূরণ হবার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন বড্ড আগে ভাগেই ...

০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:২১

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আরজুপনি।


কেউ কেউ স্বপ্ন দেখে আর তা বাস্তবে রুপ দিতে চায়
আর কেউ স্বপ্ন দেখে তা স্বপ্ন ভেবেই বসে থাকে।

৭| ১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:৪৫

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: কৈশোর আর যৌবনের কিছু চড়াই-উৎরাই পার হতে না হতেই অনেকের সমান্তরাল জীবন শুরু হয়ে যায়। যেখান থেকে উঠে দাঁড়াতে অনেককে হিমশিম খেতে হয়। কেউ পারেন, কেউ পারেন না।

১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৩

স্বপ্নছোঁয়া বলেছেন: ঠিক বলেছেন জুলিয়ান দা!
সমান্তরাল জীবনে আত্বতৃপ্তিটা আমার কাছে ভীষন জরুরী মনে হয় তাহলে খুব বেশি হিমশিম খেতে হয়না :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.