নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা দেখেছি

চমন১৯৬২

সমাজকর্মী

চমন১৯৬২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অলক্ষ্যের গিরীন চক্রবর্তী

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:১১


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিস্মৃত কৃতি সন্তান গিরীন চক্রবর্তি
‘কিশোরগঞ্জে মাসির বাড়ি
মামার বাড়ি চাতলপার
বাপের বাড়ি বামনবাইড়া
নিজের বাড়ি নাই আমার।’
১৯৪২ সালে, গ্রামাফোন রেকর্ডে একটা গান শুনে চমকে উঠল বাঙালি। ঘর থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা যেন ফুটে উঠছে প্রতিটা উচ্চারণে। অথচ এই মানসযন্ত্রণায় কেন ভুগছেন গায়ক? চাইলেই তো ট্রেনে চেপে হাজির হওয়া যায় পুব বাংলায়। দৃপ্ত কণ্ঠের মধ্যেও কী উদাসীনতা! কে এই গায়ক? ১৯৪২ সালে রেকর্ড প্রকাশিত হল, অথচ পাঁচ বছর পরে দেশভাগের পর, এই গানই হয়ে উঠল ভিটেমাটি হারানো মানুষের আফশোসের ভাষা।গিরীন চক্রবর্তী। বাংলার লোকগানকে বৃহত্তর জনসমাজে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁর অবদান অস্বীকার করা যায় না কখনোই। কিন্তু মৃত্যুর(১৯৬৫) পর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল, তাঁকে ক’জন মনে রেখেছি আমরা?
‘আমি রে যেন জলের ঢেউ
আমার বলতে নাই রে কেউ;
চান্দের হাট ভাইঙ্গা গেছে
এ-কুল ও-কুল অন্ধকার।’
১৯১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাদেকপুর গ্রামে জন্ম গিরীন চক্রবর্তীর। অবশ্য কর্মক্ষেত্র হিসেবে তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল কলকাতাই। এইচএমভি কম্পানির ট্রেনার হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। রেডিওতে লোকসঙ্গীত সম্প্রচার চালু করে জনপ্রিয় করেছেন এই সঙ্গীতধারা। কিন্তু এ-সবই বাহ্য। এত সামান্যে মানুষটির কর্মবিস্তৃতি কি বোঝানো যায়!
‘আমি কই 'আমার আমার', তারা কয় না
চিঠি নাই পত্র নাই, খবরও লয় না।’
কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত কাছের লোক ছিলেন গিরীন চক্রবর্তী। নজরুলের অনেক গানে সুরারোপ করেছেন তিনি। স্বয়ং রেকর্ড করেছেন অনেক নজরুলগীতি। স্বনামে, ছদ্মনামেও। বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহকপাট’ গানটি প্রথম রেকর্ড করেন তিনিই। এমনকি, নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার অংশবিশেষে সুর দিয়েও রেকর্ড করেন।নিজেও গীতিকার হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। বিখ্যাত লোকগীতি ‘আল্লা মেঘ দে পানি দে’-র প্রথম চারটি লাইন সংগৃহীত হলেও, বাকি পুরো গানটি গিরীন চক্রবর্তীর রচনা। লিখেছেন ‘নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে’-র মতো কালজয়ী গান, যা সার্থকতা পেয়েছে আব্বাসউদ্দিনের কণ্ঠে। আব্বাসউদ্দিন ছাড়াও, শচীন দেববর্মণ, অমর পাল, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কিংবদন্তি শিল্পীরাও গেয়েছেন গিরীনবাবুর অধীনে। এইচএমভি-তে থাকাকালীন, তালাত মাহমুদ-কে প্রথম আবিষ্কার করেন তিনিই। তাঁর তত্ত্বাবধানেই জয়যাত্রা শুরু তালাত মাহমুদের। এছাড়া, নিজেও অসংখ্য লোকগীতি লিখেছেন, সুর দিয়েছেন।
‘ঢাকার তারা আনল ঢাকা
মনে ভাবলাম ঘুরলো চাকা,
আইসা দেখি সবই ফাঁকা
পোড়া কপাল চমৎকার।'
কিন্তু গিরীন চক্রবর্তীর নাম শুনলেই, স্মৃতিমেদুর বাঙালির সবার আগে মনে পড়ে যায় ‘কিশোরগঞ্জে মাসির বাড়ি’ গানটির কথা। দেশভাগের পাঁচ বছর আগেই বিচ্ছেদব্যথা ফুটে উঠেছিল যে গানে, তা পরবর্তীকালে মিথে পরিণত হয়। আজও, জানলা দিয়ে কলোনির চাঞ্চল্য দেখতে দেখতে যখন কোনো বৃদ্ধের চোখে ধরা দেয় সত্তর বছর আগেকার পুব বাংলা, ‘নিজের বাড়ি নাই আমার’ – এই দীর্ঘশ্বাস কি অনুভব করেন না তিনি?
অলক্ষ্যের গিরীন চক্রবর্তীও আজকের এই দীর্ঘশ্বাসের ভাগীদার – হ্যাঁ, বাঙালি ভুলেও ভোলেনি তা...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি। আপনার সূত্র ধরেই ওনার গান শুনছি এখন। এরকম নিভৃতে চলে যাওয়া শিল্পীদের নিয়ে আরও লেখা কামনা করি আপনার কাছে।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:২৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Great

৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধ্যেয় গিরীন স্যারকে আজই প্রথম চিনলাম। জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.