নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা রাখো পৃথিবীর যতো অসম্ভবে

দীপংকর চন্দ

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরেতুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!

দীপংকর চন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলিমার নজরুল

২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:১৭



অনেক সকালে ঘুম ভাঙল নীলিমার।
শুভ সকাল। নিজেই নিজেকে মিষ্টি করে বলল সে, মনে মনে।
বিছানা থেকে নেমে হেঁটে গেল জানালার সামনে। পর্দা সরাল।
সুদীর্ঘকাল অপেক্ষমাণ প্রকৃতির প্রশান্ত মুখ যেন ভেসে উঠল চোখের সামনে।
দূরে পিচঢালা পথ অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
ধুলোবালিগুলো এখনো উড়ে বেড়ানোর শক্তিরহিত অবস্থায় পড়ে আছে মাটিতে।
ইলেকট্রিকের পোলে একটা দোয়েল বসে আছে চুপচাপ।
নিঃশব্দ প্রকৃতিতে মগ্ন হয়ে আছে পাখিটা।

বেলা বাড়ল।
আজ ভীষণ পড়তে ইচ্ছে করছে নীলিমার।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা কয়েকটি নিবন্ধ পড়ে আছে টেবিলের ওপর বেশ কয়েকদিন হলো! পড়ে ফেলবে নাকি আজ?
খুব গুরুগম্ভীরভাবে না পড়ার পক্ষে নীলিমা।
এলোমেলোভাবে পড়া শুরু করল সে। হাতে একটা পেনসিল। কোনো লেখার কোনো অংশ বিশেষভাবে মনে দাগ কাটলে আন্ডারলাইন করার বাজে অভ্যাস আছে তার। কতজন কতকিছু বলে এ ব্যাপারে। কিন্তু এ কাজটা হয়েই যায় নীলিমার অবচেতনে।

পড়া শুরু করল নীলিমা। ...নজরুল হিন্দুপ্রধান রাঢ়বঙ্গে জন্মগ্রহণ করলেও মুসলমানপ্রধান পূর্ববঙ্গের অভিজ্ঞতা তাঁর কম ছিল না। তাই সম্প্রদায়গত সমস্যা তাঁর মতো করে অন্য কোনো কবি সাহিত্যিক বুঝতে পারেননি। পারেননি সংস্কৃতিকর্মী বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব।...

ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো।
কথাগুলোর নিচে বেশ গভীরভাবে পেনসিলের দাগ দিলো সে।
তারপর আবার পড়া শুরু করল এলোমেলোভাবে। ...উল্লেখিত সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা সঠিকভাবে উপলব্ধির কারণে নজরুল দুই প্রধান সম্প্রদায়ের মিলনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর বিচক্ষণবোধে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে দেশের দুই বিবাদমান সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ‘বিদেশী হঠাও’ অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্জনের কাজটি মোটেই সহজ হবে না। তাই এ দুই মেরু মেলানোর ব্রতই হয়ে ওঠে তাঁর জন্য প্রধান কাজ- যা প্রকৃতপক্ষে ছিল এক অসম্ভবের সাধনা।... কিন্তু নজরুল পিছুহটতে রাজি ছিলেন না। ...তাই সম্প্রদায়-নির্বিশেষে সবাইকে লড়াইয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নজরুল লেখেন : ‘এস ভাই হিন্দু। এস মুসলমান। এস বৌদ্ধ। এস ক্রিশ্চিয়ান। আজ আমরা সবগণ্ডি কাটাইয়া সব সঙ্কীর্ণতা, সব মিথ্যা সব স্বার্থ চিরতরে পরিহার করিয়া প্রাণ ভরিয়া ভাইকে ভাই বলিয়া ডাকি।’ আশ্চর্য যে নজরুলের ওই সর্বজনীন আহ্বানে সবাই একযোগে সাড়া দেয়নি।...

কিন্তু কেন? সাড়া দেয়নি কেন? নীলিমা ভাবে।
অত্যন্ত গভীরভাবে ভাবে।
এর জন্য দায়ী কি ওই সময়ের রাজনৈতিক দলগুলোর সংকীর্ণতা?
নাকি ওই সময়ের ধর্মীয় সংগঠনগুলোর রক্ষণশীলতা?
নাকি কোনোটিই সত্য নয়?
নাকি ভিন্ন কোনো সত্য অন্তরালে ক্রিয়াশীল? ঠিক জানে না নীলিমা!

ভিন্ন একটি নিবন্ধে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো তার, সেখানে লেখা, ...শুধু দুই ধর্মীয় সংস্কৃতির ছাপই নয়, দুই সম্প্রদায়কে একই বৃত্তের অন্তর্গত করার এবং একই ধারায় চলার ক্ষেত্রে উদ্দীপ্ত করে তোলার অভিপ্রায় নিয়ে নজরুল সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সমন্বয়বাদী পথ তৈরি করেছিলেন, রাজনৈতিক চলার পথও নির্ধারণ করেছিলেন। ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোনজনে’ নিছক কথার কথা ছিল না, ছিল না প্রশ্নের জন্য প্রশ্ন। ধর্মবিশ্বাস-নির্বিশেষে বাঙালি মাত্রেই এ মাটির মায়ের সন্তান- এ সত্যই তাঁর জন্য ছিল বড়, এবং সবার জন্যই তা সত্য বিশ্বাসে পরিণত করতে আপ্রাণ লড়াই করে গেছেন নজরুল। ভৈরবী-সুরে গভীর বিশ্বাসে গেয়েছেন ‘মোরা এক বৃন্তে দুটী কুসুম হিন্দু-মুসলমান’।
তাঁর এ লড়াই ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায়, ছিল রাজনীতির চর্চায়। স্বাদেশিকতার ভুবনে স্বাধীন বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠায় লড়াকু সৈনিক নজরুল এখানে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না।...


পড়তে পড়তে আরো সামনে এগোল নীলিমা।
অদ্ভুত লাগছে তার পড়তে। একজন ঘোরগ্রস্ত মানুষের মতো দ্রুত সে পড়ল, ...অসম্ভবের সাধনা জেনেও ওই পথেই এগিয়েছেন নজরুল তাঁর ইসলামী গান আর কীর্তন শ্যামাসঙ্গীতের পসরা নিয়ে। কবিতায় হিন্দু-মুসলমান সংস্কৃতির বিশিষ্ট শব্দ, মিথ ও অনুষঙ্গ অকাতরে ব্যবহার করে। তাঁর গদ্যরচনাও একই আদর্শের প্রকাশ ঘটিয়েছে।
এসব কিছুর পেছনে ছিল স্বপ্নদ্রষ্টা কবির স্বাধীন বাঙালি জাতির জন্য এক শক্তিমান ভুবন নির্মাণ যা হবে সংকীর্ণতামুক্ত, এবং মানবিক বোধে ঋদ্ধ। সাম্প্রদায়িকতার কলুষ সেখানে ছায়া ফেলবে না। তাঁর একাধিক অভিভাষণে তিনি একই কথা বারবার বলেছেন এবং জাতীয় জীবনে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি এই যে আমরা সবচেয়ে কাছের মানুষটিকেই সবচেয়ে কম জানি।’ জাতিকে বোঝাতে চেয়েছেন যে আমাদের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের প্রধান কারণ ‘হিন্দু-মুসলমানের পরস্পরের প্রতি হিংসা ও অশ্রদ্ধা।’...


নাহ! পড়ায় আর মন বসছে না নীলিমার।
তার চিন্তার জগতে উদিত হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ভিন্ন এক চেহারা!
নজরুলের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল সে।
বারান্দার উত্তরকোণে ছোট্ট একটা টবে অপরাজিতার লতা বাড়ছে কী বিচিত্র প্রাণের আবেগে!
দেখতে দেখতে নীলিমা ভাবতে থাকে, আমরা যে ধারায় নজরুলের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় চিহ্নিত করতে চাই, তাতে সম্ভবত নজরুলের খণ্ড চরিত্র উঠে আসে, সম্ভবত একটি পার্শ্বমুখের প্রকাশ ঘটে! সম্ভবত নজরুলের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পরিস্ফুট হয় না!
ভাবতে ভাবতে নীলিমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় আকাশে।
সেখানে অসম্ভব সুন্দর সজল মেঘ জড়ো হচ্ছে!
সম্ভবত ভীষণ বৃষ্টি হবে আজ!

সহায়ক নিবন্ধ :
১. নজরুলীয় স্বদেশচেতনার নানামাত্রা, আহমদ রফিক
২. কেন নজরুল জাতীয় কবি, আহমদ রফিক

ছবি: সংগৃহীত

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন: বাহ! কবি
বেশ দারুন একটা পোস্ট দিয়েছেন।
অনেক ধন্যবাদ

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:১৩

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। অনেক। অনেক।

কৃতজ্ঞতা।

এবং শুভকামনা অনিঃশেষ।

অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।

২| ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪০

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: েখাটি চমৎকার ।

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:১৬

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু।

কৃতজ্ঞতা জানবেন।

আমার শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

৩| ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

কালের সময় বলেছেন: অসাধারন ভালো লাগা রইল দাদা । আহারে নজরুলের মত করে যদি আমরা সবাই ভাবতে পারতাম তাহলে কত সুন্দরই না
চলতো আমাদের জীবন চলার রাস্তা ।

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:২৯

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।

আন্তরিক মন্তব্যে ভালো লাগা অনেক।

অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন।

অনেক ভালো থাকবেন। অনেক ভালো।

৪| ২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ১:৪৫

তুষার কাব্য বলেছেন: দারুন লেখা ! খুব ভালো লাগলো ।

শুভকামনা নিরন্তর।

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৩২

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রী।

কৃতজ্ঞতা। অনেক।

অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন ভাই।

ভালো থাকবেন। সবসময়।

৫| ২৭ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮

জেন রসি বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। :)

সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যাক।

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৩৫

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের মতো আমাদের প্রত্যাশাও অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ।

উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞতা।

এবং শুভকামনা। অনিঃশেষ।

অনেক ভালো থাকবেন। অনেক ভালো। সবসময়।

৬| ২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:০৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর লেখনীর পোস্টে ভাললাগা অনেক ।

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৩৮

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক ভাই।

আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন।

সবসময় ভালো থাকবেন। অনেক ভালো।

৭| ২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: দারুণ লেখা ।
শুভকামনা রইল কবি ।

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।

কৃতজ্ঞতা।

এবং শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।

অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়। অনেক।

৮| ৩০ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:১৮

জুন বলেছেন: নীলিমা নামটি অনেক প্রিয় । তাতে আমার একজন প্রিয় কবি অনেক দুরদর্শী ছিলেন , ছিলেন প্রগতিশীল এবং রাজনৈতিক সচেতন। তার উপর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ দীপংকর চন্দ ।
+

৩০ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

দীপংকর চন্দ বলেছেন: //প্রিয় কবি অনেক দুরদর্শী ছিলেন, ছিলেন প্রগতিশীল এবং রাজনৈতিক সচেতন।//

শ্রদ্ধা সুচিন্তিত মন্তব্যে।

কাজী নজরুল ইসলামের জীবনাচরণ ও সাহিত্যকর্মের প্রকৃত নির্যাস পথ চলার পাথেয় হোক আমাদের!!

অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

৯| ০১ লা জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩

দীপান্বিতা বলেছেন: খুব ভালো লাগলো... ধন্যবাদ দীপংকর!

১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩২

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ দীপান্বিতা।

কৃতজ্ঞতা।

আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন।

উত্তরের বিলম্বের জন্য ক্ষমাপ্রার্থণা।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

১০| ১০ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪৩

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লাগা রেখে গেলাম।

১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৮

দীপংকর চন্দ বলেছেন: আপনার উপস্থিতিতে বিশেষ মাত্রা যুক্ত হয় সমসময়।

ধন্যবাদ অনেক এহসান ভাই।

অনিঃশেষ শুভকামনা থাকছেই।

উত্তরের বিলম্ব ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ভালো থাকবেন। অনেক ভালো। অনেক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.