নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দৌড়াতে ভালো লাগে না, তাই বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি

কামরান মানছুর

জীবনানন্দের মত, পঁচিশ বছর পরে যদি মন চায় পিছু ফিরে দেখতে সেদিনও আমার হাসি পাবে খুঁজে বলব আমি, এই দেরীতো নয় আমার ভুলে

কামরান মানছুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েটি তবুও জানেনি

১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:২৪

ছুটির দিন, অলস সময়, তাও আবার রাত। স্প্যানিশ লীগের খেলা তখনো শুরু হয়নি। চাকরির সুবাদে আত্মীয় পরিজন থেকে দূরে থাকা ২ বন্ধুর আর কি বা করার থাকতে পারে সেই মুহুর্তে গল্প করা ছাড়া? তারা সেটাই করছিলো। ২ বন্ধুর নাম যথাক্রমে সাগর ও বিভাস। আজ বিভাসের দুঃখের দিন। কারন আজ থেকে ঠিক ১ বছর আগে এই দিনে সে ছ্যাকা খেয়েছিলো। সেটাই আজ তাদের আলোচনার বিষয়।



বিভাসঃ দোস্ত, আজকে আমার বিরাট দুঃখের দিন। আইজ আমার ছ্যাকা খাওয়ার বর্ষপূর্তি হইছে। ভাবতেসি, ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস মেরেই দেবো।

সাগরঃ দরকার নেই। সব কিছু ফেসবুকে দিয়া লাগবে কি জন্যি, হ্যা?

- না, বলতিছিলাম যে, বর্ষপূর্তি তো তাই..

-২ ডা কারনে দরকার নেই। প্রথমডা হইলো, দুঃখজনক অতীতরে বার বার মনে করতি নেই। দ্বিতীয়ডা হুইলো, নিজের ছাগলামীর কাহিনী সবাইরে জানাতি নেই।

-তোরে কেডা কইছে কাহিনী ছাগলামীর?

-আন্দাজ করতি পারতিছি নিজের কাহিনীর সাথে তুলনা কইরে।

-মানে? তোর আবার কিসের কাহিনী? তোর কাহিনী আছে আর আমি জানি না? তুই তো বিরাট শয়তান ! নিজের কাহিনী কারো সাথে শেয়ার করিস না কিন্তু শুনিস সবারডা। হারামজাদা।

-ক্ষেপিস ক্যান? আমি তো তোরে কাহিনী বলতিই চাচ্ছি

-আচ্ছা তারাতারি ক। রাতে বার্সার খেলা আছে, তার আগে শেষ করবি।

-শুরু করব?

-কর

-সত্যিই শুনবি?

-না, কান বন্ধ করে থাকবানি। তুই ক

-শুনলি তো আমারে ছাগল বলে মনে হবেনে

-নতুন করে মনে হওয়ার কিছু নেই, তুই তো ছাগলই। নাটক বাদ দিয়ে শুরু কর নাহলি পরে তোর খবর আছে।



[অবশেষে সাগর তার কাহিনী বলা শুরু করলো]

তখন স্কুলে ছিলাম। আমি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম।

বিভাসঃ এইডা নিয়ে এতো পাট নেয়ার কিছু নেই, যদিও এই কারনেই তোরে আমার এতো পছন্দ। যাইহোক, কন্টিনিউ কর।



-এতো বেশি পড়ে কি হবে? তারচেয়ে কবে কোন পাড়ায় ক্রিকেট খেলতি যাবো সেইডাই বেশি টেনশন এর বিষয়। ক্লাসে স্যার কি পড়াচ্ছে তা নিয়ে যদি আমি মাথা ঘামাই, তাহলিতো বাংলা ডিকশনারি থেকে ফাঁকিবাজ শব্দডা বাদ পইড়ে যাবে।

-তুইতো শালা ইচঁড়ে পাকা। তা, হাইস্কুল নাকি প্রাইমারী?

-তোর এতো জানার দরকার নেই, কাহিনী শুনবি চুপচাপ, মনযোগ দিয়ে। নো প্রশ্ন ডিউরিং দ্যা টাইম অব গল্প।



এইভাবেই চালাইয়ে যাচ্ছিলাম। তখন মার্চ মাস। একদিন ক্লাসের মাঝখানে পিয়নের সাথে এক মেয়ে আইসে দরজায় দাড়াইলো। মেয়েডা কইলো, "স্যার আমি নতুন এসেছি, ভিতরে আসতে পারি?"

আমার ভালোই হইলো। স্যার কিছুক্ষন ধইরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ওই মেয়ের নাম কি, আগে কই পড়তো সব জিগাইলো। জানা গেলো তার নাম ঐন্দ্রিলা।

-এইডা আসল নাম না

- তাতে তোর কি? চুপ কইরে শোন, নাহলি যা।

টিচারদের সুনজরে পড়তি মেয়েডার এক সপ্তাহ ও লাইগলো না। সব ব্যাপারেই সে অগ্রগামী। সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সে। ক্লাসের উপর মহলের ছাত্র-ছাত্রীদের ধারনা, এই মেয়েটাই নতুন ফার্ষ্ট গার্ল হতি যাচ্ছে। এইভাবেই দিন গড়াতি লাগলো।

আমার অবশ্য ফার্ষ্ট গার্ল নিয়ে মাথা ঘামানোর ইচ্ছা, অথবা সময় কোনডাই ছিলো না। ঝামেলা বাধাইয়ে দিলো ইংরেজী স্যার।

-কিভাবে?

-বলতিসি তো। একদিন যথারীতি আমি পড়া পারিনি। এ আর এমন কি? ইংরেজী স্যার কোনদিন মারত না, তাই আমিও তার পড়া খুব কমই করতাম।সমস্যা হইলো, ওইদিন স্যারের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাইঙ্গে গেলো।

-স্বাভাবিক

-হুম। আমারে বললো, "সাগর, দাঁড়াও"

-কান ধরতে কয় নাই?

-না।

-মিছা কথা

-না, মিছা না। আসলেই কয় নাই। ভালো লোক তো

-বাইচা গেছিস, আমি হইলে তোরে ৬০০ বার কান ধরে উঠবস করাইতাম।

-তাইলে তুইএক থেকে ৬০০ গোনা প্রাকটিস কর, কাহিনী কাইলকে শুনিস।

-থাবড় খাবি, কাহিনী শেষ কর

- আইচ্ছা। আমি নিতান্ত বাধ্য ছেলের মত উইঠে দাড়ালাম। স্যার কইলো "তুমি পড়াশুনা কর না কেন?" প্রতিদিনের মত হাবিজাবি কিছু একটা বললিই মিটে যাইত। কিন্তু আমিও শালা ঐদিন বিগড়াই গেলাম। কইলাম "স্যার, পড়তি আমার ভালো লাগে না"

স্যারঃ কি ভালো লাগে?

আমিঃ ক্রিকেট খেলতি, টিভি দেখতি। প্রায় সব কিছুই ভালো লাগে, পড়ালেখা বাদে।

স্যারঃ এইভাবে তো হবে না, পড়ালেখাতো করাই লাগবে। ভবিষ্যতে কি হতে চাও?

আমিঃ সাঈদ আনোয়ার। ইঞ্জিয়ার ও হবো, ক্রিকেটারও হবো

স্যারঃপড়ালেখা না করেই ইঞ্জিনিয়ার হবা?

আমিঃ কি করব স্যার? ভালো লাগে না তো

স্যারঃ এই ক্লাসে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে?

আমিঃ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এই ক্লাসে নেই

স্যারঃ কোথায় আছে?

আমিঃ আগের স্কুলে। সজল নাম

স্যারঃ এই ক্লাসে তোমার কেঊ ভালো ফ্রেন্ড নেই?

আমিতো ভালো বিপদেই পড়ছিলাম। উত্তর দিলে আবার কেডা মাইন্ড করে ভাবতিসিলাম। তাই কথার মাঝখানে খানিকটা গ্যাপ পড়ছিলো, মাথা নিচু করে ভাবতিসিলাম কি বলব। তখন ই বজ্রপাত হইলো।

ঐ মেয়েটা উঠে দাড়াইয়ে বললো "স্যার, এই ছেলেটা আমাদের সাথে কথাই বলে না "

আমার তখন মনে হইছিলো আমারে কেউ ফুটন্ত পানিতে চুবাচ্ছে।

স্যারঃ তুমি মেয়েদের সাথে কথা বলো না?

সাগরঃ না।

স্যারঃ কেনো?

সাগরঃ এমনিই

স্যার সেদিন আমাকে অনেক কথাই শুনাইছিলেন। চুপচাপ শুনতিছিলাম। একসময় ক্লাস শেষ হইয়ে গেলো। স্যারও চলে গেলো।



ঐ ক্লাসের পরেই ছিলো টিফিন। আমার মন খারাপ, তাই বসে আছি।স্যারের ধমক তো প্রতিদিন ই খাই। কিন্ত কোন স্যার ই এই রকম সুন্দর মোলায়েম ভাষায় কথা শোনায় না। ঐ দিন স্যারের কথা বেশি লাগছিলো। সবাই বাইরে চলে গেলে আমি ছোট ক্লাস রুমডার একেবারে শেষে বেঞ্চে মাথা ঠেকাইয়ে বসে আছি। ভাবতিছি, পড়ালেখায় কি সিরিয়াস হওয়াই লাগবে? হঠাৎ সামনের দিক থেকে মেয়েলি কন্ঠে প্রশ্ন ছুটে আসলো, "আচ্ছা সাগর, তুমি মেয়েদের সাথে কথা বলো না কেনো?"

আমি তখন মোটামুটি আর পৃথিবীতে নাই। গলা শুনেই বুঝিছিলাম কিডা। তারপরেও সামনে তাকালাম মাথে উঁচু করে।



ঐন্দ্রিলা দাড়ায়ে আছে। ব্লাক বোর্ডের সামনে এমনভাবে দাঁড়ানো যেনো আমার ক্লাস নিয়ে সে হতাশ হইয়ে চইলে যাচ্ছে। আমি তো উত্তর দিতি পারতিছি না। একেতো উত্তর আমার জানা নেই, তার উপর আমার মনে হচ্ছিলো, ঐন্দ্রিলার জন্যেই স্যার আমারে বেশি বকা দিছে। কিছু না বইলেই হাঁ করে তাকাইয়ে ছিলাম। আমার অবস্থা দেখে সে আবার জিগাইলো,

- কি? ভয় লাগে? নাকি লজ্জ্বা লাগে?

আসলে তখন আমার ভয় লাগতিছিলো। সাথে মেজাজ খারাপ। ক্যান সেডা আল্লাহ ই জানে। আমি আর কোন উত্তরই দিতি পারি নি। কয়েক মুহুর্ত পরেই সে বুঝতি পারলো, এই অদ্ভুত প্রাণী কোন উত্তর দিতি পারবে না। সে চলে গেলো বাইরে, মনে হয় কিছুটা অপমানিত হইয়েই। এই ঘটনার পরে ঐ স্কুলে যতদিন ছিলাম, ঐন্দ্রিলার সাথে আমার আর কোন ইন্টারঅ্যাকশন হয় নাই।

বিভাসঃ ঘটনা শেষ?

সাগরঃ শেষ হলি তো ভালোই ছিলো, হইলো নাতো।



এই ঘটনার ২ বছর পরে, আমি তখন নতুন সাইকেল কিনিছি। সেইরকম ভাবে থাকি। চান্স পাওয়ার সাথে সাথে সাইকেল চালাতি বের হই। স্কুলে পৌছে ভাবলাম ১৫ মিনিট যেহেতু সময় আছে, একটু সাইকেল নিয়ে ঘুরে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। সোজা বের হইয়ে গেলাম। যখন ফিরে আসতিছিলাম, তখন দেখি ঐন্দ্রিলা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। পরনে স্কুল ড্রেস।

বিভাসঃ তখন কি তোর নচিকেতার নিলাঞ্জনা গানটা মনে পইড়ে গেলো ?

সাগরঃ ধূরো। রাখ তোর গান। আমার মনে হইলো আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পালস যে কয়টা মিস হইলো তার ঠিক ঠিকানা নেই।সাইকেলে তখনো প্যাডেল করতিছিলাম কিনা মনে নেই। খুবই ইচ্ছা করতিছিলো তার সাথে কথা কই। কিন্তু স্কুলে পিটিতে লেট করলিই মাইর, তাছাড়া সেও স্কুলে যাচ্ছে। তাই আমি ও আমার পথে থাকার চেষ্টা করতি লাগলাম।

বিভাসঃ দোস্ত, ঐন্দ্রিলা কি তোরে পছন্দ করতো?

সাগরঃ নারে, ও তো আমারে চিনতই না। ভুলে গেছিলো।



এরপর কিছুদিন পার হয়ে গেছিলো। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে উঠে গিছি। কলেজে ৪ বন্ধু থাকতাম একসাথে। আমি সাগর, গায়ক সবুজ, পেসার সুহাস আর রাজনীতিবীদ ড্রেকো।

ওদের ৩ জনের কাছেই আমি ছিলাম অদ্ভুত কিসিমের কিছু একটা, কারন আমার গার্লফ্রেন্ড নেই। গার্লফ্রেন্ড সুহাসেরও ছিলো না। ও একটা মেয়েকে পছন্দ করতো, ওদের প্রতিবেশী। সুহাসের প্রায় সব গল্পই ছিলো সেই মেয়েডারে নিয়ে। এই গার্লফ্রেন্ড বিষয়ক আলোচনায় আমি থাকতাম শ্রোতা। শেষে ওরা বরাবরই আমারে প্রশ্ন করত আমার কি কারোরেই ভালো লাগে নাই এই জীবনে? আমি সবসময়ই এই প্রশ্ন এড়াইয়ে যাইতাম।



কিন্তু একদিন মুখ ফসকে বইলে ফেললাম ঐন্দ্রিলার কথা। ব্যাস, আমারে জ্বালানো শুরু হয়ে গেলো। "দোস্ত, মেয়েটা এখন কই পড়ে জানিস?" অথবা "খালি এলাকাটা বল, তারে খুঁজে নিয়ে আসবো।"

আমি আর কিছুই বলি নি। কিন্তু ওরা আমার স্কুলের বন্ধুদের কাছে মেয়ের নাম বলে ঠিকই তার বাসা খুঁজে বের করে ফেললো। আমারে জানানোও হইলো সেই কথা। বললো, "দোস্ত, না খাওয়াইলে কিন্তু বাসা দেখাবো না"



বাসা চিনলাম। কিছুদিন পর প্রায় একইরকম ভাবে বাবু নামে এক বন্ধু ঐন্দ্রিলার মোবাইল নাম্বার আইনে দিলো।



বিভাসঃ শালা এতো সহজেই মোবাইল নাম্বার পাইয়ে গেলি?

সাগরঃপাইলে কি হবে? আমি কি আর ফোন দেওয়ার মতো সাহস করতি পারতাম? নাম্বার ডায়াল করলিই আমার হাত কাঁপা শুরু হইতো, ঐপাশে রিং হওয়ার আগেই কাইটে দিতাম।

বিভাসঃ ছাগল

সাগরঃ কে? তুই?

বিভাসঃ হ, নাইলে কি আর তোর ফ্রেন্ড হই?

সাগরঃ ঠিক কইছিস। এরপর থেকে আমাগের বিকালের ঘুরার জায়গাই ছিলো ওদের বাসার সামনের রাস্তাটা। বিকালে ক্রিকেট খেলা শুরুর আগে কয়েক চক্কর, খেলার প্রতি ইনিংসের পর এক চক্কর... এই ছিলো আমাগের ৪ জনের জরুরি কাজ। মাঝে মধ্যে ব্যাচ ফাঁকি দিয়েও ঘুরতাম। ঘুরতাম কারন যদি ছাদে ঐন্দ্রিলার দেখা পাই। বেশিরভাগ দিনই পাইতাম না। মাঝে মধ্যে পাইতাম। কিন্তু তাতে চোখের শান্তি হইতো না। কারন বাসার সামনে তো আর দাঁড়ায়ে পড়া যায় না। খুব দ্রুত বন্ধু মহলে ছড়াইয়ে পড়ছিলো আমার এই উন্মাদ হওয়ার খবর।

একদিন আমি সাহস করেই ফেললাম, ফোন দিয়ে ফেললাম। বলাই বাহুল্য, আমি কিন্তু সিওর ছিলাম না যে ঐটা ঐন্দ্রিলার ই নাম্বার। যাইহোক, সে ফোন রিসিভ করলো। গলা শুনেই আমার আবার আগের সেই অবস্থা। কয়েক মুহুর্ত আমার মুখে কথা আসলো না। তারপর বললাম, "হ্যালো, ঐন্দ্রিলা?"

-বলছি

-আমি সাগর

-জি, বলুন

-আমি তোমার সাথে পড়তাম স্কুলে

-কিন্তু সাগর নামে কাঊকে আমার মনে পড়ছে না।

আলোচনা আর আগায় নাই।



এর কিছুদিন পর, বিকালে সেদিন একা ঘুরতে বের হইছিলাম। হঠাৎ এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো। তার সাথে গল্প করতি করতি গেলাম ফটোকপির দোকান। অনেক ফটকপি। দোকানদার ফটোকপি করতিছিলো আর আমরা দোকানে বসে গল্প করতিছিলাম।

এইভাবে সময় পার হয়ে গেলো। সেইদিন আর ঐ দিকে যাওয়ার সময় নেই বলে আমি ফিরে যাচ্ছিলাম বাসার দিকে।



পথে সুহাসের সঙ্গে দেখা। মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "কিরে, কই যাইস? এতো টেনশন কিসের?" উত্তরে বললো, "কি হইছে তোর? তোরে নাকি মারিছে?"





আমি তো একেবারে মহাশূন্য থেকে পড়ছি। আমি বললাম যে আমারে কেন মারতি যাবে? কে ই বা মারবে? উত্তরে যা বললো, তাতে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসতি লাগলো।



ঘটনা হলো, বিকালে ক্রিকেট খেলা হচ্ছিলো। তখন হঠাৎ ড্রেকো এসে বলে, "তোমরা এইখানে বসে আছো, আর ঐদিকে সাগররে তো মারতিছে" "কেডা মারতিছে" এই প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়, আমি ঐন্দ্রিলাদের বাসার সামনে গিছিলাম, অতঃপর ঐন্দ্রিলার ভাই আমারে মারতিছে। এই খবর শুনে যে যেখানে ছিলো ছুটে চইলে গেছে, আমার বাবার কানেও খবর গেছে। সে ও গেছে।



ঘটনার গুরুত্ব বুঝতি আমার দেরী হইলো না। আমি সুহাসরে বললাম, দোস্ত তুই আয়, আমি আগে গেলাম। বলেই আমি দৌড় দিলাম। দৌড়ের উপর থেকেই দেখলাম আমার বাবা এবং সাথে আমার বন্ধুদের বিশাল এক গ্রুপ যাচ্ছে সেইদিকে। আমি তাদের থামাতি সক্ষম হলাম।

এর পরেই শুরু হইলো প্রশ্ন। তোরে কে মারবে?

-আমি কি জানি? আমি মাইর খাওয়ার মত কোন কাজ করিনি

-তাহলি তোর ফ্রেন্ড বললো কেন?

-জানি না। ওরে পিটাবো কাইলকে

-না, মারামারি করবি না। নিশ্চয় কোন কারন আছে। তোর মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই বলিছে।

-না, কোন সম্ভাবনা নেই।

বিভাসঃ তোরে বাসায় পিটায় নাই?

সাগরঃ না। সবাই তো দেখলোই যে আমি ঐ দিকে যাইনি

বিভাসঃ ড্রেকো তাইলে এই কাজ কেন করলো? ওর সাথে কি তোর গন্ডগোল ছিলো?

সাগরঃ না, ও ছিলো আমার ঘনিষ্ট বন্ধু। ও আসলে ফান করতে চাইছিলো। কিন্তু সবাই যে সিরিয়াস হয়ে যাবে ও বুঝতে পারে নাই।

পরদিন ড্রেকো আসলো মাঠে ক্রিকেট খেলা দেখতি। আমার তখন মাথা প্রচন্ড গরম ছিলো। ও কেন করছে এই কাজ, কি চিন্তা কইরে করিছে, তা শুনার মত অবস্থা আমার তখন নেই। ড্রেকোর সাথে আমার গন্ডগোল হইয়ে গেলো।

এরপর থেকে আর ঐদিকে যাইতাম না।

বিভাসঃ ভালো হইয়ে গেছিলি নাকি?

সাগরঃ না, আসলে আমি সবার কাছে বিশ্বাস হারাতি চাইনি

বিভাস: তারপরে?

সাগরঃ তারপরে সবাই খেয়াল করতে লাগলো আমার পড়ালেখার ব্যাপক অবনতি।



আসলে অবনতি তো আগেই ছিলো। কিন্তু সবাই খেয়াল করলো এই ঘটনার পরে। আমিও এই চতুর্মুখি চাপ সহ্য করতি পারতিছিলাম না। কিছুই ভালো লাগে না। কোন কাজে মনযোগ নেই। এর মাঝখানে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে আসলো টেস্ট এর রেজাল্ট। সবখানে আলোচনা শুরু হয়ে গেলো, আমি যদি ইন্টারমিডিয়েটে এই ধ্বস বজায় রাখি, তাহলি কি কি ব্যাবস্থা নেয়া হতি পারে।



আমি নিজেও অনেক টেনশনে পইড়ে গেলাম। নিজের ভবিষ্যৎ পুরোডাই অনিশ্চিত। অনেক চিন্তা ভাবনা করে সকল ঘটনা ডায়েরীতে লিখে ফেললাম। মন কিছুটা হালকা হলি চিন্তা করলাম, আর না, এইবার পড়ালেখাতে সিরিয়াস হতিই হবে। নিজের মনডারে বুঝাতি লাগলাম যে, এডমিশন টেস্টের আগে এইসব না ভাবলি আমার তেমন কোন ক্ষতি হবে না। বরঞ্চ ভাবলি সবদিকে লস হতি পারে।



ব্যাস, আতেল হবার মিশনে নাইমে গেলাম।

তারপরের কাহিনীতো তুই জানিসই। এই সময়সীমা ভালোভাবেই পার হয়ে গেলাম। নিজের টার্গেট ও পূরন করলাম। আমি কখনো আর ঐন্দ্রিলার খবর নিতে চাইতাম না। কিন্তু অনিচ্ছা সত্বেও কয়েকজন বন্ধু তার খবর আমারে শুনাইতো।



বিভাসঃ সে এখন কই পড়ে?

সাগরঃ একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে

বিভাসঃ কোনটা?

সাগরঃ তোর জানার দরকার নেই। এরপর ওর সাথে একবারই ফোনে কথা হইছে।

সেদিন সন্ধ্যায় ঘুরতে বের হইছিলাম আমি আর সুহাস। হঠাৎ সুহাস বললো ঐন্দ্রিলারে ফোন দিতি। দিয়ে দিলাম। আসলে সেদিন আমার প্রেম নিবেদন করার কোন ইচ্ছা ছিলো না। মনে হচ্ছিলো কিছুক্ষন কথা বলি।



ফোন রিসিভ করার পর

সাগরঃ হ্যালো, ঐন্দ্রিলা?

ঐন্দ্রিলাঃ জ্বি বলছি

-আমি সাগর

-চিনতে পারছি না

-জানি, আগেও বলেছো এই কথা।

-মানে? আপনি আমাকে আগেও ফোন করেছিলেন?

-হ্যা, কিন্তু তুমি তো কথা বলতে রাজী হলে না

- কে আপনি?

- পরিচয়টা একটু পরে দেই? কারন, আগেরবার পরিচয় দিয়েছিলাম। তুমি চিনতে পারনি।

- আপনার পরিচয় না দিলে কিভাবে আপনার সাথে কথা বলবো?"



ঐন্দ্রিলার শেষ কথাগুলোর মধ্যে কিছু একটা ছিলো। মনে হচ্ছিলো, খুব ডিস্টার্বড। তার কথার মধ্যি সেদিন হতাশা আর বিরক্তি দুইটাই ছিলো। সেইডা খুব অস্বাভাবিক ছিলো না হয়তো। কারন আমার ফোন থেকে প্রায়ই তার কাছে মেসেজ যাইতো। তখন এইগুলো করেই আনন্দ পাইতাম। অথচ সামনে যাইয়ে কথা বলার মত সাহস ছিলো না।



ঠিক এই সময়ে ফোনডা কাইটে গেলো। বুঝলাম ব্যালান্স শেষ হয়ে গেছে। সারা রাস্তা আমি আর কোন কথা বলিনি। সুহাস বুঝতে পারিছিলো ব্যালান্স শেষ। বলেছিলো রিচার্জ করে নিতি। কিন্তু আমি মাথা নেড়ে না করিছিলাম। বাসায় যাইয়ে ও বেশি কথা বার্তা বলিনি।



এরপর থেকে শুরু হইলো মাথা যন্ত্রনা। কোনভাবেই সেই মাথা যন্ত্রনারে নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিলো, আমিই তার কষ্টের কারন। টানা ৩ দিন আমারে যন্ত্রনা দিয়ে সেই মাথা ব্যাথা থামছিলো।



এরপরে আর ফোন দেইনি, তার সাথে যোগাযোগের আর কোন চেষ্টাও করিনি।



বিভাসঃ তোর জানতি ইচ্ছা হয়নি, সে কেমন আছে? তোর ডিস্টার্বের জন্যে জন্যে ডিস্টার্বড হবে কেন? তোরে তো চিনেই না।

সাগরঃ জানি না। জানার ইচ্ছাও নেই। আসলে তখন কৈশোরে নিজের অনুভুতিরে কন্ট্রোল করতি পারতাম না। এখন পারি। এখন ওই ঘটনাগুলো নিজের পাগলামী বলেই মনে হয়।

বিভাসঃ তুই কি তার ভুলতে পারছিস?



[এই প্রশ্নের জবাবে সাগরের মুচকি হাসি]



বিভাসঃ হাসলি কেন?

সাগরঃ দোস্ত, কৈশোরের কয়টা প্রেম পূর্নতা পায় বলতো? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এটা হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। কেন জানিস? কারন কৈশরে প্রেমে পড়া আর মোহে পড়ার মধ্যে পার্থক্য করার মত বিচার বুদ্ধি অনেকের থাকে না। আমারো ছিলো না।

বিভাসঃ তাহলে ভুলিসনি কেন?

সাগরঃ আমি ভুলতে চাইছি, কিন্তু পারিনি। বন্ধুরা বারবার ওর কথা জিজ্ঞাসা করেছে। তাছাড়া এতো ঘটনা ভোলা কি সহজ?

বিভাসঃ তাও ঠিক। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা কি তোর?

সাগরঃ ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তা করি না। তুই বোধহয় জানতি চাইস আমি তারে ভুলে থাকতি পারব কিনা? সে প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।



আমারে আমার জীবন গতিশীল রাখতি হবে।

আসলে ঐটা আমার জীবনে একটা উল্লেখযোগ্য স্মৃতি ছাড়া আর কিছু না। অতীত প্রেরণা দেয় ঠিক। কিন্তু সব অতীতরে আঁকড়ে ধইরে রাখা আমার ভালো বলে মনে হয় না।

বিভাসঃ তোর জন্যি আমার খারাপ লাগতিছে

সাগরঃ খারাপ লাগালাগি বাদ। তোর কি ছ্যাকা বর্ষপূর্তির শোক কমছে?

বিভাসঃ না কমে নাই। তবে আইজ থেকে আমিও চেষ্টা করব এই অতীত ভুলে যাওয়ার। যে আমার ছিলো না তারে নিয়ে চিন্তা কইরে কইরে যে আমার হতি পারে তারেও হারাবো নাকি?

সাগর ঃ গাধা হলি হারাবি

বিভাসঃ আমি গাধা হলিও এতো বড় গাধা না। আজ থেকে ছ্যাকার চিন্তা বাদ। নতুন মিশনে নামমু। যে আমার, তারে খুঁজতি হবে না?

সাগরঃ That’s the spirit man



[ইহা সম্পুর্ন লেখকের মস্তিস্ক প্রসূত কাহিনী। বাস্তবের কোন ঘটনা বা ব্যক্তির সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী থাকবে না]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.