![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাউল একটি ধর্ম নয়, এই সাধনায় সাধকরা লোকচক্ষে হিন্দু হতে পারেন,মুসলমানও হতে পারেন,কিন্তু তাঁদের মুখে যার কথা শোনা যায় তিনি মানুষের অন্তরে স্থিত মানুষ। মনের মানুষ। এই দেহই তাঁর আধার। সাধনা করলে এই দেহেই তাঁর সঙ্গে মিলন হয়। বাউলদের এক এক মণ্ডলীয় এক এক দীক্ষা। এমনি একটা মণ্ডলীকে বলা হয় সাঁই দরবেশ। এঁদের নামের সাথে যুক্ত হয় শাহ্ ফকির। সিরাজ শাহ্ ফকির বলে এক সাঁই দরবেশ ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর বাউল সাধক। তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন তরুণ বয়সী হিন্দু কায়স্থ কর বংশীয় লালন। উত্তর প্রদেশ ও বিহারে লালন নামে বহু ব্যক্তি আছেন। লালন বা লল্লন কথাটির অর্থ লাল বা প্রিয় পুত্র।
যতদূর যানা যায় লালনের জন্ম ১৭৭৪ সালে, কুষ্টিয়া-তে, এখন বাংলাদেশ। রামমোহনের পর দ্বিতীয় বাঙালী যাঁর দ্বিশত-জন্মশতবার্ষিকী পালন করে আমরা ধন্য।
লালন ফকিরের পুরো নাম লালন শাহ্ দরবেশ। লোকমুখে লালন সাঁই দরবেশ। তাঁর গুরু ছিলেন সিরাজ শাহ্ দরবেশ। লোকমুখে সিরাজ সাঁই দরবেশ। দরবেশরা সুফি সাধক। তাঁদের সাধনা আরব ইরান থেকে ভারতে এসে পূর্ববর্তী বৌদ্ধ সহজিয়া সাধনা ও পরর্বতী গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাধনার সঙ্গে ত্রিবেণী-সঙ্গম রচনা করেছে। ত্রিবেণীতে কেউ কারও বৈশিষ্ট্য হারায়নি। পরস্পরকে আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসর করে দিয়েছে। বহু হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করেও সুফি সাধক হয়েছেন। দরবেশ দীক্ষা নিয়েছেন। বহু মুসলমান স্বর্ধম রক্ষা করেও বৈষ্ণব কবিতা ও গান লিখেছেন। সহজিয়াদের দেহতত্ত্ব উভয় সম্প্রদায়ের সাধকরা আপন করেছেন। এইভাবে যে সেতু গড়ে উঠেছে তারই নাম বাউল সাধনা । বাউলদের ধর্ম মানুষের ধর্ম। তার প্রকৃষ্ট পরিচয় লালন ফকিরের গান।
লালন শাহ্ ফকির তাঁর মরণের পূর্বরাত্রিতেও প্রায় সমস্ত সময় গান করে রাত পাঁচটায় সময় বলেন “আমি চললাম”। সেদিন ১৭ই অক্টোবর ১৮৯০ । লালনের মৃত্যু হয় কুষ্টিয়া শহরের অদূরে। তাঁর শিষ্যদের মতে তাঁর বয়স তখন একশো বছর। তিনি ধর্মোপদেশ দিতেন না, মুখে মুখে গান বেঁধে শোনাতেন। সেসব গান তিনি লিখে রাখতেন না। লিখে রাখাটা বাউলদের রীতি নয়। তাঁদের বিশ্বাস প্রতিদিন নতুন প্রেরণা আসবে, নতুন গান উৎসারিত হবে। যেমন ঝর্ণার জল। তাকে বাঁধ দিয়ে ধরে রাখলে সে বদ্ধ জল হবে। বহতা স্রোত হবে না। এই কারণে লালনের বহু গান বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। শেষের দিকে তাঁর শিষ্যরা নিজেদের জন্য কিছু গান লিপিবদ্ধ রাখেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তার কতক মাসিকপত্রে প্রকাশিত হয়। ‘গোরা’ উপন্যাসের উদ্ধৃত সেই ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখী কেমনে আসে যায়’ লালনেরই রচনা। রবীন্দ্রনাথ লালনের অনেকগুলি গান ‘প্রবাসী’তে প্রকাশ করেন। তাঁর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ‘রিলিজিয়ন অভ্ ম্যান’ বক্তৃতায় লালনের গানের উদ্ধৃতি আছে। কিন্তু কি জানি কেন লালনের নামের উল্লেখ নেই।
লালন ছিলেন হিন্দু মুসলিম ভেদ বুদ্ধির অতীত। তিনি বলতেন না তিনি হিন্দু কি মুসলিম। তিনি ছিলেন মানুষ। বাউলদের বাণী ‘এই মানুষে আছে সেই মানুষ’। যেমন চণ্ডীদাসের বাণী ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।
লালন এই মহাত্মা ধর্ম নিয়ে হানাহানির সময় তাই সব মানুষকে বলেন – ‘---এসো এসো রে প্রাণের বন্ধু গো
আমি দেইখ্যা মনের সাধ মিটাই’ ।।
*** যা লেখা হল এখানে তা সংক্ষিপ্ত আকারে । বিশেষভাবে এই লেখায় প্রায় সবটাই উল্লেখযোগ্য বই ‘মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লি:’ থেকে প্রকাশিত,১৯৯২ সাল -- “লালন ফকির ও তাঁর গান -- লেখক শ্রী অন্নদাশঙ্কর রায়” কর্তৃক সংকলিত প্রবন্ধ ‘অবিস্মরণীয় লালন’ থেকে নেওয়া।
২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১১
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: সামহোয়্যারইন ব্লগে সু-স্বাগতমসামহোয়্যারইন ব্লগে সু-স্বাগতম।
আমিও লালন ভক্তদের একজন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৬
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভ ব্লগিং। ত্রিবেণী সঙ্গম এর বিষয়টি যে ভাবে আলোচনা করেছেন সেটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত লেগেছে। পোস্টে প্লাস++
প্রতিমন্তব্য করতে আমাদের কমেন্ট বক্সের ডানদিকে সবুজ বাটনে প্রেস করলে নতুন একটি স্পেস আসবে ,তার মধ্যে উত্তর লিখে জমা করলে তবেই আমাদের নোটিফিকেশনে দেখাবে।
শুভকামনা জানবেন।