নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপ্রিয় সত্য

চৌধুরী হাফিজ আহমেদ

এক সময় লিখতাম। যা ভাবতাম, যা দেখতাম তাই বলতাম এবং জানাতে চেষ্টা করতাম। লেখক বলে নিজেকে কখনো ভাবিনি এবং এখনো ভাবি না। তবে সবসময় চাই সত্যকে জানতে এবং জানাতে। কারণ, সত্যের বিকল্প নেই, জানতে চান বা না চান সত্য তার নিজস্ব গতিতে প্রকাশ হয়েই যায়। পৃথিবীতে কোন সত্যেই গোপন নেই এবং সত্যকে শত চেষ্টা করে কিংবা ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। বিগত দিনে যা লিখেছিলাম তার-ই কিছু কিছু লেখা এখানে তুলে ধরব।

চৌধুরী হাফিজ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রীসের এথেন্সে কয়েকদিন--পর্ব ১

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৩:৫৬

দূরে কোথাও যেতে হলে আমাকে প্রায়ই তাড়াহুড়া করতে হয়। আগে থেকে প্রত্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত আমাকে কাটাতে হয় তটস্থতায়। আমি যে ধরণের পেশায় রয়েছি তা খুবই জটিল। আমানতের সামান্য খেয়ানত হলে উপায় নেই। একটু হেরফের হলে কত যে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় তা সম্পূর্ন খোলে বলা ও সম্ভবও নয়। ট্রেভেল এজেন্টে ও মানি ট্রান্সফার ব্যবসা বা কাজে যাহারা রয়েছি, তাদের অনেক সময় নাজেহাল হয়। যাহারা ভ্রমনে যেতে আকাশ যানের টিকেট নিতে আসে তাদের ও এক একটা যাত্রার সাথে অর্থ, আবেগ, আগ্রহ, অপেক্ষাসহ অনেক কিছু জড়িত থাকে। যা বুঝলে ও অনেক সময় তাক্বদির বিপরীত হয়ে যায়। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় যতটুকু দেখতে পেরেছি, তার এক এক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করলে বিশাল একটি গ্রন্থ রচনা করা যাবে। অনেক সময়ের যথেষ্ট আগে ভ্রমণের প্রত্তুতি সম্পন্ন করে আকাশ যানের টিকেট সংগ্রহ করে জুট ঝামেলা এড়াতে। কিন্তু অনেকের বেলায় বিধি বাম। তাহার আর যাওয়া হয় না, এবং আকাশ যান চড়া ও যায় না। তাহার ভাগ্যে যেখানে যাবে সেখানের দানা পানির স্বাধ নেওয়া নেই বলেই যাওয়া হয় না সেথায়। আমার অনেক গ্রাহক আছেন সম্পূর্ন প্রত্তুতি সম্পন্ন করার পরেও হজ্বে যেতে পারেননি। আবার অনেকে একদম শেষ মুহুর্তে হজ্বে গিয়েছেন। এই সব অনেক ঘটনা বাস্তবে দেখার ও জানার পরে আমার যে ধারণা হয়েছে তা হল- ’দু চিজ আযু দু চিজ কাশাদ জোর জোর, এক হে আবিদানা দিগর খাকে ঘোর’। অর্থাৎ প্রত্যেকটি প্রাণীর জন্যই নিদিষ্ট রয়েছে খাদ্য এবং মাটি। সে যেই হোক, বাদশা কিংবা ফকির, আমির কিংবা গরীব। যেতেই হবে সেখানে যেখানে রয়েছে তার রিজক। এবং যেতেই হবে তাহাকে যেখানে রাখা হয়েছে তাহার জন্য কবরের মাটি। অনেক সময় আমি দেখি কোন প্রয়োজন নেই তাহার যাবার কিন্তু এমনিতেই সে হাজির হয়ে যায়। আবার অনেকের মৃত্যু হলে লাশ প্রেরন করতে দেখি ভিন্ন ভিন্ন দেশে বা জায়গায়। অথচ যেখানে মৃত্যু হয়েছে সে দেশে কবর দেওয়ার মত পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে এবং কবরস্থ করার মত সুনিপূন ব্যবস্থাও বিদ্যামান। এরপরেও লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তাহার আপন নিবাস কবর যেখানে হবে সেখানেই। একবার এক শিখ বৃদ্ধ লোক এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কভেন্ট্রি শহরে কোন নদী আছে কি না। বললাম, আছে কিন্তু একটু দূরে। তিনি জানতে চাইলেন বাসে বা ট্রেনে যেতে পারবেন কি না। বৃদ্ধ লোক বিধায় জানতে চাইলাম কি কারণ? তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানালেন তাহার ছেলের মৃত দেহ আগুন দিয়ে পুড়ানোর পর যে ছাই (আশ) তা নদীতে ভাসিয়ে দিতে চান। আমার কাছে মনে হল উনাকে সাহয্য করলে ব্যাপারটা সুন্দর হবে। তাই উনাকে বললাম যে দিন যেতে চান, আমাকে বলবেন আমি নিয়ে যাব। বৃদ্ধ শিখ ভদ্রলোক আমি মুসলমান জেনেও বললেন, ঠিক আছে তাই হবে। নির্ধারিত দিনে তিনি এবং তাহার স্ত্রী সঙ্গী এলে নিয়ে গেলাম। তখন জানতে পারলাম ছেলে অবস্থান করত কানাডায়। গিয়েছিল জন্মস্থান পাঞ্জাবের হারিয়ানায়। দুর্ঘটনায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু সেখানে তাহার ছাই ভাসানো হয়নি। তাহার পোড়ানো দেহের আশ দাফন করা হল এ্যাভন নদীর শান্ত স্রোতে। তাই যত আগেই চাই না কেন কিছু করতে পারব না। যদি তা ভাগ্যে না থাকে। এই ভাগ্যের লীলা খেলা অনেকে বুঝে না, আবার কেহ কেহ ধন দৌলতকে পুঁজি করে চায় ভাগ্যে বদলাতে। মনে করে টাকা পয়সার জোরে সে অনেক টাকা পয়সার জোরে অনেক কিছু করে ফেলবে। টাকার সাথে যোগ হয় পেশী শক্তি। তখন মনে করে যে ভাবে চাইবে সে ভাবেকই তাহার ভাগ্যে গড়তে পারবে। এমনও ধনী দেখেছি আমি যে নূন্যতম লেখাপড়া জানে না, কোন চিঠি লিখতে বা পড়তে হলে আমার মত অল্প শিক্ষিত সাধারন মানুষের দারস্ত হতে হয়। তাহার কষ্ট বা বেদনা অপরীসিম। কিন্তু কথায় বার্তায় আচার, আচরনে ভাগ্যে পরিবর্তনের জন্য মনে করে তাহার টাকাই সব বাস্তবে ঘটে ঠিত বিপরীত। এইসব টাকাওয়ালা পেশী শক্তিধর সবজান্তাদের জীবনে ভাগ্য পরিবর্তেনের পরিবর্তে ভাগ্যে বিড়ম্বনাই ঘটে। তাই আমি কখনোই নিজের ভাগ্যে নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। তবে চলতে পথে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যেতে হয় বলে চাই পরিশ্রম করে জীবনটাকে উন্নত মানে নিয়ে যেতে। যাক, বলছিলাম পেশাগত ভাবে দেখেছি ভ্রমনে বিড়ম্বনা ঘটলে কষ্ট যেমন হয় তেমনি অর্থ নষ্ট হয় প্রচুর। তাই সতর্ক, তবুও ঘটে বিপত্তি। সবদিক সামলে যখন যাত্রা হবে শুরু তখন দেখা দেয় সময় সল্পতার। এমনিতেই চলছে ছুটি ইষ্টারের। সব আকাশ যান ব্যস্ত। একটি আসন পাওয়া মুশকিল, এর উপরে মূল্যও চড়া। কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে সন্ধান পেলাম যেদিন যাব সে দিনের একটি আসন যদিও ব্যবসায়ীক কাজ ও চাপ প্রচুর তবুও ভ্রমণে আমার আনন্দ আলাদা। এই জীবনের মধ্য বয়সে যত শিখেছি বিভিন্ন দেশও জায়গা ভ্রমন করে। তাই ভিন দেশে যাবার সুযোগ এলে আমি হাতছাড়া করতে চাই না। শখের সাথে সঙ্গতি রেখে পেশায় আসতে পারায় অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আমি। এমনিতেই আমি চাই শিখতে, শিখতে নেই কো মানা যদি না পাই বাঁধা। এবারের গন্তব্য এমন একটি দেশ যে দেশের নাম অবস্থা, অবস্থান পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শীর্ষে। গণতন্ত্রের সূতিকাগার উৎপত্তিস্থল বলা হয়। বিশ্বের নামী কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে শীর্ষ স্থান দখলকারীদের জন্ম সেই দেশে। ভৌগলিক দিক দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমের সংযোগ স্থাপনাকারী ব্যবসা বাণিজ্য অগ্রগামি। গোটা পৃথিবীর মধ্যে সভ্যতা ছড়িয়ে দেবার দাবীদার ও বিশ্বব্যাপী ভ্রমন পিপাসুদের কাঙ্খিত দর্শনীয় দেশ। এজিয়ান সাগর ও মেডিটেরিয়াল সাগরের কূল ঘেষে খন্ড খন্ড টিলা পর্বতের মাঝে শহরগুলো সাজানো। সেরা সেরা কয়েক বিঞ্জানীর জন্মস্থান বলেও পরিচিতি রয়েছে এই দেশের। দেশটির নাম জানে না এমন লোক পাওয়া যাবে না। যে দেশটি বর্তমানেও ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে রক্ষনশীল ও খৃষ্টবাদের কেন্দ্রস্থল। এটি এমন একটি মেধ যে দেশে ছিল মুসলমানদের অধিক উপস্থিতি ও বিচরণ। এমন কি অনেক সাহাবায়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর পদধূলীতে ধন্য। ওসমানীয়া খিলাফাতের শেষের দিকে স¤প্রসারিত হয়ে এই দেশ হয়ে ছড়িয়ে গিয়েছিল ইউরোপের অন্যান্য দেশে। মুসলিম সভ্যতার ছোঁয়া যে বিশ্বমানব মানবীদের হৃদয়ে লেগেছিল এবং মানুষেরা যখন আল্লাহর দিকে ধাবিত হচ্ছিল ঈমানী সম্পদ নিয়ে, তা আমি এখন বাস্তব চোখে অবলোকন করছি যে দেশে এসেছি। এটি এমন একটি দেশ যার পরিচয় দেওয়া যায় বিভিন্ন ভাবে এবং এই দেশটিকেও উপস্থাপন করা যায় ভিন্নইভন্ন আঙ্গীকে। অনেক পরিচিতি থাকার পরেও বর্তমানে সেই পরিচিতি ঢাকা টড়েছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পর্দায় দেশটির নাম হচ্ছে হেলাস,এরপরে হল হেলেনিক-মুসলিম সভ্যতা যখন ছিল,তখন নাম ছিল ইউনান। এর আরো পরে যে নামটি দেওয়া হয় সেই নামটি হলো গ্রীস। গ্রীস থেকে যে গ্রীস হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। সেই দেশের রাজধানী এথেন্সেই আমি এসেছি ব্যবসায়ীক কাজে। আলেফতারিয়া ভেরি জোলস্ বিমান বন্দর বেশ বড় আকারের এবং সব ধরণের সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন একটি উন্নত বিমান বন্দর। যা মূল শহর থেকে ৬০ মাইল দূরে অবস্থিত। গ্রীস ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে যোগ দেবার পরে জামানীরা তৈরি করেছে। তবে এমনি এমনি করেনি, ৩০ বৎসরের চুক্তিতে বিমান বন্দর নির্মান করে দিয়েছে। এই থেকে যা আয় হবে তাহা থেকে ৭০ ভাগ মুনাফা নিবে জার্মানীরা। এই আধুনিক বিমান বন্দর নির্মানে গোটা দেশের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন যোগ দেবার আগে এত উন্নত ছিল না। এখন ইউনিয়ন ভোক্ত হবার পরে উন্নয়নের যে জোয়ার শুরু হয়েছে এখন তা অব্যহত রয়েছে। চারিদেকে বড় বড় স্থাপনা, সড়ক, পাতাল রেলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজ চোখে পড়ল। বিশ্বব্যাপী অথ নৈতিক মন্দায় মধ্যে একটু ধীরগতি তবে উন্নতি হচ্ছে প্রচুর। সারা দেশে জনসংখ্যা হবে প্রায় ১০ মিলিয়ন। এর অর্ধেক হবে বা একটু বেশী এথেন্সে। সবাই চায় রাজধানীতে অবস্থান করতে। এরমধ্যে বহিরাগত অন্তত ১ মিলিয়ন। বাংলাদেশী, পাকিস্থানী, হিন্দুস্থানী, আরবী, রাশিয়ান, চায়নিজ, কোরিয়ান, জ্যামেকানসহ অনেক দেশের লোক আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এবং প্রতিদিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশির ভাগ অবৈধ পথে প্রবেশ করে। তুর্কী হয়ে বা আলবেনিয়া হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাগ্যের উন্নয়নের জন্যই হন্যে হয়ে আসে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে। সবারই এক কথা ইউরোপ আসব, তখন লন্ডন যাব। লন্ডনের মর্যাদা তাদের কাছে স্বর্গের মত। লন্ডনের স্বপ্নে বিভোর তাহারা। আফগানী এক ছিলের নাম তার ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান বাংলাদেশীরা বলে মজা করে শেখ সাব। অনর্গল বাংলা বলতে পারে। রেস্তোরায় কাজ করে। সে আমাকে বলল মউত ভি কবুল হ্যেঁ লেকিন লন্ডন য্না হ্যে মুজে। ফেনীর আমজাদ সে যে কোনকিছুন বিনিময়ে লন্ডন আসতে চায়। আমার এথেন্সে আসার উদ্দেশ্যে ব্যবসাগত কারণে। সেই কাজেই সময় ব্যয় করলাম। আলহামদু-লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আমার কাজ সম্পন্ন হল। এবারে ভাবলাম একটু এদিক সেদিক ঘোরা যাক। প্রথমেই খোঁজলাম মাসজিদ আছে কি না। যা-ও খোঁজ পেলাম তাও অনেক দূরে। আমার অবস্থান থেকে সেই দুরত্বকে কাছে এনে দিল কোম্পানীর ড্রাইভার মিঃ কম্পাস। আসলে ওর নাম কষ্টাকো, পাপডপ লোস। সংক্ষেপে ওকে বলে কষ্টাস। নামের সাথে মিল রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর তাই অফিসে সবাই নাম দিয়েছে মিষ্টারের পরিবর্তে মিনিষ্টার কষ্টাস। এই কষ্টাস আমার সমবয়সী, সঙ্গী হল এয়ারপোর্ট থেকেই। ২য়বার এথেন্সে যাওয়ায় নতুন মনে হয়নি। সময় পেলাম তাই বিকেলে কষ্টাসকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম শহর দেখতে। আমাকে খুব উৎসাহ সহকারে বর্ণনাসহ সব কিছু দেখাল, এরমধ্যে সংসদ ভবন, বিশ্ব বিদ্যালয়, মিউজিয়াম, লাইব্রেরী ও পুরাতন শহরের প্রবেশ পথ, যা এখন বিশাল এলাকা নিয়ে বেষ্টনি দেওয়া। এবং বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। অনেক রাত হল তাই হোটেলে ফিরলাম। পরের দিন আবার বেরুব। প্রখমবার ওকে যা যা জিজ্ঞাসা করেছিলাম সব আমার জন্য জেনে রেখেছে তাই নিয়ে গিয়েছিল অমানীয়া এলাকায়। সংসদ ভবন থেকে মিনিট কয়েক হাঁটলে উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত। ওখানেই সব দেশের লোক বৈধ-অবৈধ হিন্দু মুসলমান সবাই থাকে। এবং মাসজিদও সেখানে। সকালেই বের হলাম একটানে নামিয়ে দিল। ওকে ছেড়ে দিলাম। প্রথমে যে বাংলাদেশী ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম মসজিদ কোনদিকে, তিনি আমাকে দেখিয়ে সাথে সাথে চললেন । চোখে পড়ল বাংলা লেখা সাইন বোর্ড এর দিকে। ধানসিঁড়ি রেষ্টুরেন্ট ও বার। ওকে নিয়ে গেলাম, বসতেই বিরিয়ানী, কাবাব, হালিম, সমোসা, চানা, পিয়াজু আছে জানাল। খাবারের ইচ্ছে নেই তবু এক প্লেইট বিরিয়ানী চাইলাম। হোটেলের মালিক জিজ্ঞাস করলেন কই থেকে আসছেন ভাইজান? ইংল্যান্ড থেকে বলতেই তিনি নিজে এগিয়ে এলেন। কুশল, বাড়ী, হাল অবস্থা জিজ্ঞেস করা হল। তিনি গ্রীসের অবস্থানকারী অনেকদিনের মাদারীপুরের শিবচরের, এরি মাঝে সিলেটের নবীগঞ্জের কয়েক জন ঢুকল এবং সিলেটের বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আলাপ জমলো কিছুক্ষণ, নবীগঞ্জের এক ভাই বললেন ইংল্যান্ডে উনার আত্বীয় স্বজন প্রচুর এবং উনার নিজ ভাই বার্মিংহামে থাকেন। তাদের ব্যবসা আছে। তিনিও গ্রীসে এসেছেন ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ করে, উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়া। ওদের থেকে বিদায় নিলাম সালাত আদায় করার জন্য। প্রথমে যে আমাকে মসজিদের রাস্তা দেখাচ্ছিল সেও বেড়িয়ে এল, ওর বাড়ী খুলনায়। পথে পেল সিলেটেরই আরেক ভাইকে। উনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল আমাকে। তিনি চা পান করাবেন বলে হাতে ধরে নিয়ে গেলেন আরেকটি রেষ্টুরেন্টে। নাম হল- ঢাকা ট্যালেস। সালাতের জামাতের অনেক দেরী বলে জমল আবার আড্ডা এবং আসলো চা। গ্রীসের অবস্থা অবস্থান উনাদের জিজ্ঞাসা করতেই সবাই বললেন, এখানে কিছুই নেই। বছরের পর বছর থেকে অবৈধ ভাবেই আছেন। কাজ নেই। আলাপ চলছে এরমধ্যে প্রবেশ করলেন নাসির নামে এক ভাই। উনার বাড়ী জকিগঞ্জের শাহবাগ এলাকায়। আমার বাড়ী কানাইঘাট শুনে উনি আগ্রহ নিয়ে কাছে এসে বসলেন। তাদের হাল অবস্থা জেনে আমি মনে মনে ভাবলাম, তাদের কিছু বলা দরকার। তাই যা বললাম তা হলো- ইংল্যান্ড কোন স্বর্গের নাম নয়, এবং ইংল্যান্ড এখন মোটেই সহজ নয়। তবে তোমরা আস যদি পার, যেখানে আছো গ্রীস ভাষা গ্রীক শিখ। একা একা পড়ালেখা চালিয়ে যাও, কম্পিউটার চালানো শিখ এবং নিজেকে ইউরোপের এবং ইংল্যান্ডের উপযোগী করে তোল। শিক্ষার বিকল্প কোন সাফল্যের চাবি নেই বা ছিলও না। এই সব পরামর্শমূলক কথাবার্তা বলে আবারো রওয়ানা দিলাম মসজিদের দিকে। এবারে সঙ্গী হলেন নাসির ভাই। পথে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পন্য ফেরী করেন শত শত দেশী ভাইয়েরা। তেমনি এক ভাই বিক্রি করছিলেন ফোনের কার্ড, নাম তাহার গিয়াস উদ্দিন। সড়কের বাজারের পাশেই তাদের দেশের বাড়ী। নাসের ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। লন্ডন থেকে এসেছি বাড়ী কানাই ঘাটে চাড়িপাড়ায় শুনে সেও আমাকে নাস্তা করাবে বসে গল্প করবে। মানা শুনবেই না, তাই ওকে বললাম চল মসজিদে যাই জামাতে নামাজ আদায় করে তোমার সাথে নাস্তা করব। সে ও সঙ্গী হল। আমরা মসজিদে যেয়ে অজু করলাম। কিন্তু একি! অবাক, এতো মুসলমান থাকার পর মাসজিদ এত গরীব কেন? অযুখানা এবং টয়লেট এতো নোংরা! কি করব, অযু তো করতেই হবে। তাই অযু করলাম। মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম বেশ কিছু লোক বসা। গিয়াস উদ্দিন, নাসের ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন অনেকের সাথে। এরমধ্যে কমিটির আছেন কয়েকজন। প্রথমেই প্রশ্ন করলাম মসজিদ এতো নোংরা ও গরীব কেন? উনারা বিনয়ের সাথে বললেন, আমরা দুঃখিত এখানে আমরা নতুন মসজিদ করেছি এখনও সম্পূর্নটাকা পরিশোধ করা হয় নাই। তাই এই অবস্থা। আরো বললেন অনেক করুণ কাহীনি। টাকার অভাবে মসজিদের জায়গা খরিদ করা যাচ্ছে না। শুনে খুব মর্মাহত হলাম। এই মাসজিদ করতে যেয়ে তাদের কষ্টের বর্ণনা শুনলাম। তখনই কানে এলো মধুর আযানের শব্দ। যা প্রতিটি মোমেনের হৃদয়কে করে আনন্দে আন্দোলিত। এথেন্সে অমামিয়ায় মাসজিদে আল জব্বারে আযান শুনে জামাতে সালাত আদায় করে আমি তৃপ্ত হলাম। কষ্ট সহ্য করে বাতেলের রক্ত চক্ষুকে ভয় না করে সাহস সঞ্চয় করে যে মসজিদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদের অভয় দিলাম। সর্বোত মাহায্যের অঙ্গিকারও পরামর্শ দিলাম। কমিটির চাচা আব্দুল বাশার ও ভাই রাহমাতুল্লাহ সাহেব বললেন শ্রদ্ধেয় ঈমাম সাহেবের সাথে দেখা করতে। হ্যা বললাম, কিন্তু ততক্ষণে ঈমাম সাহেব কোথাও চলে গেছেন। বাইরে গিয়ে দেখি ভাই গিয়াস উদ্দিন এবং নাসের ভাই অপেক্ষায়, তাও একা নয় আরো কয়েকজনসহ। অনেকেই আমার বাংলাদেশের বাড়ী কানাইঘাট থানা অঞ্চলের। নাস্তা হলো গল্প জমলো, কথা হলো অনেক। এথেন্সে কানাইঘাট বাসীর এত উপস্থিতি হবে ধারণা করতে পারিনী। সিলেট অঞ্চলের লোক বেশি বলে জানলাম। দ্বীতিয় স্থানে আছে মাদারীপুরসহ ফরিদপুর অঞ্চলের লোক। তৃতীয় আছে বরিশাল, নোয়াখালি। এরমধ্যে অনেকেই আছেন প্রতিষ্টিত পরিবার পরিজনসহ ব্যবসা, চাকুরী অবস্থান নিয়েই আছেন। গ্রীসের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ সকল কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন। ভাষা শিখে এগিয়েছেন। যে কোন দেশে প্রতিষ্টিত তে হলে তাদের ভাষা শেখা খুবই জরুরী। চাইলে অসম্ভব কিছু না। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। মাসজিদ আল জব্বারের কথা মনে পড়ছিল বার বার। বসা সবাইকে বললাম তা আমার কাছে নতুন নয়। এই কোন্দল একে অপরের শত্রুতা। তা আমাদের মজ্জাগত ব্যাপার। দেশ কিংবা বিদেশ আমরা মোটেই অবসর নয়। হয়তো কোন দল করব নয়তো করব কোন্দল। ঘর ভাড়া করে না কি মসজিদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০-২৫ টার এখন স্থায়ীভাবে মাসজিদ হলে ভাড়া করা অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে বলে যাহাতে স্থায়ী কোন মসজিদ না হতে পারে সে জন্য কয়েক ভাগে ভিভক্ত হয়ে বিরুদ্ধে লেগেছে। এমনিতেই বর্তমান গ্রীস খৃষ্টানরা খুব প্রভাবশালী, মোটেই মুসলমানদের অনুকুলে নয়। মুসলমানদের খেলাফাত ভাঙ্গার পর তুর্কীরা শাসন করেছে দীর্ঘদিন। মুসলমানদের পরাজিত করে ওরা চালু করেছে খৃষ্টবাদ। কোনায় কোনায় যে মসজিদ ছিল সেখানে কিছু এদিক সে দিক করে প্রতিষ্ঠা করেছে গীর্জা। পাদ্রীদের বলে পাপ্পা সেই পাপ্পারা প্রকাশ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যে সমাজে মুসলমানদের এখনো শত্রু মনে করে। যেখানে পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং এই নিয়ে ফ্যাসাদ করা শাইতানের কাজ ছাড়া কিছু নয়। ভেতরে ভেতরে যাহারা মসজিদ প্রতিষ্টার জন্য বিরোধীতা করছেন তাদের বলব, এমনটি করবেন করবেন না ভাই। কেন আল্লাহর ঘর প্রতিষ্ঠায় আপনি কাঁটা হবেন। সমর্থন দিন না হয় নীরব থাকুন। নিজেকে যদি এতই যোগ্য মনে করেন তা হলে কেন আজ এতোদিনে স্থায়ী মসজিদ আপনি কনা? গীবত ও মোনাফেকী করে অতীতেও কেউ কিছু করতে পারেনি। বর্তমানেও এই সব করে কোন লাব দেখছি না। আমার জীবনের বাস্তবতা দিয়ে আমি দেখেছি আমার বিরুদ্ধেই আমার আপন পর অনেকেই কুৎসা রটিয়েছেন বা এখনো রটাচ্ছেন। মোনাফেকীর তো সীমা নেই। এমন কোন পন্থা নেই যা আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। বন্ধু বেশে আসে সুবিদা নেই যা ভোগ করে না। হৃদয়কে পুড়িয়ে ছারখার করে এরপরেও মোনাফেকী করে, গীবত করে। একদম শেষে করে শত্রুতা। এরপরে ও ক্ষান্ত হয় না। কিন্তু আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আমাকে সব সময়ই মেহেরবাণী করছেন এগিয়ে যেতে। আমার একটিই কথা আল্লাহুম্মা ইন্না জায়ালনী সাবুরাং ওয়া জায়ালনি বাবুরাং ওয়া জায়ালনি শাকুরা। আমার দুর্নাম এত এত যে আমি বেঁচে থাকার কথাই না। এরপরেও আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এত সব কেন যে করে মানুষেরা বুঝি না। আমার জীবনে দিয়েছি যত পাইনি তত। এখনো জীবনকে চালাতে কঠিন পরিশ্রমরত। আমি যাদের আশে পাশে যাই না। যাদের আমি চিনি না ওরা ও শুধু শুনে কথা বলে ও বিদ্বেষ ছড়ায়। যাই হোক এ পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত ভাবে কারো কোন ক্ষতি করেছি বলে মনে হয় না। পারলে উপকার করেছি অপকার করিনি। আমায় যাহারা ক্ষতি করেছে তাদের বিচারের ভার সবসময়ই করে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। এথেন্সের মানিয়ার মাসজিদ আল জব্বার প্রতিষ্ঠা পাবেই ইনশাঅল্লাহ। সবাইকে অনুরোধ করব মাসজিদে মন প্রাণ খুলে সাহায্য করতে। মাসজিদ আল জব্বার এর সম্মানিত ঈমাম সাহেব জনাব আবু বাক্কার সাহেবের সাথে কথা বলে আমি যা অনুধাবন করলাম তাহাতে এতটুকু বলতে পারি যে মাসজিদ আল জব্বার হবে এথেন্সে বাংলাদেশীদের প্রাণকেন্দ্র। সাথে সাথে মক্তব মাদ্রাসার ও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভাড়াকৃত সম্পূর্ন বিল্ডিংটি মাদ্রাসার জন্যই রাখা হবে। আমি তাদেরকে মনে প্রাণে দোয়া করি। মহান আল্লাহ যেন তাদেরকে দিয়ে ইসলামের এই খেদমতকে আঞ্জাম দেন। যারা সাহায্য করিতে চান তাহারা নিম্ন একাউন্টে সাহায্য জমা দিয়ে নিজেকে শরিক করতে পারেন। Al Jabbar, Attica Bank. ac no jban 9401600670000000055818274 অথবা Barclys Bank, Bank short code-20-23-55, Ac no- 73260674 যাক মাসজিদের বিরোধীতা না করতে এবং দ্বাওয়াত দনের কাজ করতে এবং গ্রীক ভাষা শিখতে এবং লিখতে বা কম্পিউটার শিখতে ভাইদের কাছে আবেদন জানালাম। বাংলাদেশের এলাকার মানুষ গুলোদের বেকারত্ব ও অবৈধ অবস্থান তাদের অসহায় ও উৎসুক দৃষ্টি দেখে খুব খারাপ লাগল। আমার নিজেকে তাদের অবস্থান দেখার চেষ্টা করলাম। স্পষ্ট নিজেকে চিন্তিত ও বিষন্ন মনে হল। আমি তাদেরকে কিছুই করতে পারব না দোয়া ব্যতিত। আল্লাহর কাছে চাই আল্লাহ যেন তাদের সহায় হয়ে একটি সুন্দর জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দেন। তবে আমরা যারা আছি সচেতন তাদের জন্য চিটি লিখতে পারি ইউরোপীয় কমিশনে সামান্য যদি টনক নড়ে তা হলে ইতালি, স্পেনে, গ্রীসসহ অন্যান্য দেশগুলো হয়তো তাদের ব্যাপারে কিছু একটা করতে পারে। বাংলা পাড়া বলুন বা পাকিস্থানী, ইন্ডিয়া বা বহিরাগতদের অবস্থান বলে সরকারের নজর কম। সামাজিকভাবেও যেন তেন ভাবে চলাফেরা করে। নিজে যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হয় তা হলে সমাজ তো নোংড়া হবেই। বাংলাদেশীদের খাবারের দোকানগুলোর পরিবেশ ও মান সম্মত নয়। একে তো আসন সীমিত এর মাঝে ধুমপানের মহড়া ধুয়ায় বসা মুশকিল। মদের দুগন্ধে চারিদিকে এক অস্বস্থির অবস্থা। বাংলাদেশীরা এত নোংড়া ও খোলাভাবে মদপান করে তা দেখে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে ওরা বাংলাদেশী। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। একটি বাসায় আমার যেতেই হল। কিন্তু এ বাসায় বাথরুমের অবস্থা এত কাহিল যা বর্ণনা করা আমার টক্ষে সম্ভব নয়। এত বাজে ভাবে কি করে যে উনারা অবস্থান করছেন ইউরোপের একটি সভ্য দেশে থাকার পরে তা আমার বুজে আসে না। মানুষ অন্যদের দেখে কিছু কিঠু শেখে। এথেন্সের বেশির ভাগ বাংলাদেশী ভাইয়েরাই থাকেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সচেতন যাহারা আছেন তাহারা একমাত্র তাদের নিয়েই ব্যস্ত। কিন্তু ব্যবসা করছেন আবার বাংলাদেশীদের নিয়েই। কেউ কাউকে যে বলবে বা শেখাবে এর অবকাশ নেই। নেতৃত্ব করার জন্য সবাই এক পায়ে খাড়া। বেকাররা আরো বেশি ব্যস্ত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে। একটি হলে দেখলাম ২৫/৩০ জন হবেন বি এন পির নেত্রীর পক্ষ নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন। ইস্কুলোউ রোডে, ওদের ব্যানার হল বিএনপি গ্রীস। তাদেরকে টেক্কা দিতে অপর পাশ্বে আরো বেশ কজন দেখলাম আওয়ামীলীগ (গ্রীস) ব্যানার দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সাথে ছিলেন যিনি তিনি বললেন ওখানে যাহারা এর অর্ধেকের ও বেশী বেকার। যাদের কোন কাগজ পত্র নেই এবং ওরা বেকার উজিরে খামাকার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ এই বিএনপি বা অঅওয়ামীলীগ যদি এথেন্সে ভাষা শিক্ষার কোর্স করত কিংবা কম্পিউটার শেখানোর বা আনুষাঙ্গিক শিক্ষামূলক কর্মসূচী দিত তাহলে অনেক আছে বেকারত্ব তাদের থাকতো না। বিএনপি কিংবা বিএএল দেশে বা বিদেশে শিক্ষামূলক বা জীবনকে উন্নতভাবে গড়ে তোলার কোন কর্মসুচীতে নেই। এই দুটি দল তাদের চামচাদের নিয়ে শিক্ষাঙ্গন থেকে নিয়ে সমরাঙ্গন পর্যন্ত ধ্বংস করতে ব্যস্ত। আরো কিছু আছে এথেন্সে যাহারা সিন্ডিগেট করে টাকা কামাতে ব্যস্ত এর নাম দিয়েছে বিসি। তাদের কাছে টাকা খেলা সচেতনদের কাছে তা ধ্বংসাত্মক সুধ ও জুয়ার খেলা। বেকার যুব সমাজ এর নেশায় মাতওয়ারা। এদেরকে এই মারাত্মক নেশা মূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার মত দিক নির্দেশনা দিবে এমন নেতৃত্ব ও নাকি এখনো গড়ে উঠেনি। অবাক পৃথিবী এবং অবাক বাংলাদেশী। কত যে সমিতি দেখলাম পোষ্টারিং করেছে। বাংলাদেশ সমিতি, দিরাই সমিতি এই সব সমিতির মূল কাজ বা লক্ষ্য কি বুঝলাম না । তবে এলাকার লোক তাই একেক গ্রুপ একেক নামে পরিচিত হতে চায় তা বুঝতে পেরেছি। এসব সমিতি তাদের এলাকার উন্নয়নে কি ভ’মিকা রাখছে তা তাহাদের অবস্থা ও অবস্থান দেখলে সহজেই বুঝা যায়। গ্রীসের বাংলাদেশীরা কম বেশী সবাই আছে কষ্টের মধ্যে। এই কষ্টের প্রথম হল- বাংলাদেশের কোন দুতাবাস না থাকা। বিশ্বের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন এবং ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান থাকা সত্ত্বেও গ্রীসের বাংলাদেশ দুতাবাস না থাকায় খুবই দুঃখজনক। দুতাবাস যে বিপদে কত কাজে আসে তা আমি টের পেয়েছি এবারে একদম হাড়ে হাড়ে। তাই গ্রীসে বাংলাদেশ দুতাবাস অনতিবিলম্বে করা হোক। সেই দাবি আমি জানাচ্ছি বাংলাদেশ সরকারের কাছে। গ্রীসে যে কনসাল আছে মিঃ ভেনিজুয়েলাস, সে ইতালীর দুতাবাস কর্মীদের সাথে মিলেমিশে বর্গীয় আচরন করতেছে গ্যেিসর বাংলাদেশীদের সাথে। তা কোনভাবেই মানা যায় না। দ্বিতীয় কষ্ট হচ্ছে গ্রীসের কোন দুতাবাস নেই বাংলাদেশী। কেন নেই তার কারণ জানি না। তবে পরিবার পরিজন নিয়ে ইন্ডিয়ার দিল্লি যেতে হয় দেশ থেকে কাউকে বৈধভাবে আনতে হলে। এ জন্য অনেক বৈধ ভাইয়েরা তাদের স্ত্রী সন্তানদের আনতে মহাভারত ঘাটতে হয়। এরপরে ও দিল্লি গ্রীস দুতাবাস থেকে তাদের অনুমতি দিতে সময় নেয় প্রচুর। তখন দেখা যায় আরেকটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। তখন আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয় আনার জন্য কাজ। এ রকম অনেক কথা রয়েছে যা শুনলে অবাক-ই হতে হয়। গ্রীকরা জাহাজ বানাতে সিদ্ধ হস্ত। বাংলাদেশে অনেক গ্রীক যায় জাহাজ বানানোর কাজে, কাপড় থেকে নিয়ে মশলাপাতিসহ অনেক দ্রব্য রয়েছে যা বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা সম্ভব এই ব্যবসায়ীক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবেন বলে বিশ্বাস। এবং সাথে সাথে গ্রীসে বাংলাদেশ দুতাবাস খুলতে ও তাদের বলা যেতে পারে। গ্রীস নিয়ে লিখতে হলে লিখা যাবে অনেক কিন্তু আমার সেই সময় নেই হাতে তাই সব কিছুই লিখছি সংক্ষিপ্ত ভাবে। আমার লিখনিতে অনেকেই নাখোশ হবেন। জানি তবুও লিখতে হয়। এই ভাবে দুবাই থেকে ফিরে এসে লিখেছিলাম পরের বারে যখন দুবাই গিয়েছি আমাকে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছেন এবং নাজেহাল করারও চেষ্টা করেছেন। আমি যা দেখেছি তাহাই লেখনি আকারে অন্যকে জানাই। এতে কেউ মনক্ষুন্ন হলে আমার করার কি আছে। আমি প্রথমবার এথেন্সে যেয়ে পরিচিত হয়েছিলাম খান ভাই ও মিল্লাত ভাইয়ের সাথে খেতে গিয়ে তাদের ইসকান্দর রেষ্টেুরেন্টে। মানসহ সব কিছুমিলিয়ে তাদের প্রশংসাই করতে হয়। এবারের বাড়তি পাওয়া আর কিছু দেখার এবং জানার সুযোগ হলো। যাক অনেক আড্ডা হলো ওসমানীয়ার বাংলাদেশীদের সাথে। রাত গভীর হচ্ছে, ভোরেই আমার ফ্লাইট। ব্যবসায়ীক কথা বলবে জাহির ভাই, তাই বিদায় নিয়ে চললাম জাহির ভাই সাথে উনার স্ত্রীও। এবারে ড্রাইভার হলেন হারুন ভাই। তিনি গ্রীসের অনেক পুরোনো বাংলাদেশী, গাড়ী আছে ২টি তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মোটামোটি ভাবে বেশ জমিয়েই ব্যবসা চালাচ্ছেন। জহির ভাই ও ভাবীসহ আমরা চললাম আমার হোটেলের দিকে।, ভালো মানুষ উনারা। অনেক সঙ্গ দিলেন ব্যবসায়ীক কথাবার্তা হল সাথে হল খাবার দাবার হারুণ ভাই বললেন তিনি আমাকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিয়ে আবসেন। তাদের বিদায় দিয়ে হোটেলে রুমে গিয়ে গুছিয়ে রাখলাম এবং একটু হেলান দিয়ে বসলাম। তখন দেখি আমার পাসপোর্ট নেই। পকেট লাফ দিয়ে উঠে অস্থির ভাবে খুঁজতে লাগলাম সর্বত্র পেলাম না কোথাও। এই পকেট চোরের যে অমানিয়ার বুঝতে বাকি রইল না। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাত তখন তিনটা বাজে। ভোর পাঁচটায় আমার ফ্লাইট, কি করব! হোটেল অর্ভথ্যনায় এসে বললাম ওরা বলল এই রকম অহরহ চুরি হয়। এবং অমানিয়া এলাকায় বেশী হয়। আমিও দেখেছি রাস্তার পাশে বসে ড্রাগ নিচ্ছে নেশা খোরেরা। যাক হোটেলের ম্যানাজার আমাকে বৃটিশ দুতাবাসের জরুরী ফোন নস্বার দিলেন। আমি তাদের ফোন করলাম, এতো ভোরে কাউকে পাব কি না ভাবছিলাম। কিন্তু পেয়ে গেলাম। আমার অবস্থা বুঝিয়ে বললাম ভদ্র মহিলা আমাকে বলর স্থানীয় থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করতে এবং সেই অভিযোগ পত্রের কপি সঙ্গে করে মঙ্গলবার নিয়ে আসতে। তখন সাথে সাথে উনরারা আমাকে জরুরীভাবে ভ্রমণের জন্য একটি পাস দিবেন। এমনিতেই হতাশ এর উপরে অসুস্থতা আবার কাজের চাপ ইত্যাদি মনে মনে খুব অস্থির হলাম। আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করলাম এবং ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। ঘুম ভালো হলো না। হারুণ ভাইকে বলার পরে উনি সাথে সাথে উনাকে নিয়ে গেলাম থানায় ভাষায় বলা হয় আস্তানমিয়া পুলিশকে বলার পরে বললো অভিযোগ দায়ের করতে হলে আমাকে যেতে হবে এয়ারপোর্ট। যাহারা ভ্রমনে আসে তাদের কিছু হারিয়ে গেলে বিশেষ করে পাসপোর্ট হারালে না কি এয়াপোর্ট অভিযোগ করতে হয়। কি আর করা হারুন ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন এয়ারপোর্ট অভিযোগ দায়ের করলাম এবং অভিযোগ পকত্র হাতে নিয়ে বের হয়ে দেখি হাতে প্রচুর সময়। যেহেতু ইংল্যান্ড সোমবার ছিল বন্ধ তাই গ্রীসেও বৃট্রিশ দুতাবাস বন্ধ। তাই হারুণ ভাইকে নিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম। এক্সো পালন চার্চ দেখতে। অমানিয়ায় এসে জমাতে সালাত আদায় করে গেলাম দেখতে সঙ্গী করলাম ফেনী জেলার আমজাদকে আমরা তিন জন এক সাথে গেলাম এক্রো প্যালিসে। ১২ ইউরো করে জন প্রতি, এথেন্সের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই চার্চ। বিশাল এলাকা অনেক উচুঁ এক টিলার উপরে নির্মান করা হয়েছিল। এই চাচের চারিদিকে সুরঙ্গ তৈরি করে নিরাপত্তা বেস্টনি তৈরি করা হয়েছিল এবং সেখান থেকেই খৃষ্ট ধর্মের প্রচারনা চালানো হতো। তাদের শত্রু একমাত্র মুসলমানরাই। এখান থেকেই মুসলিম নিধন করা শুরু হয়েছিল। তুর্কীদের হাতে গড়া হাজার হাজার মাসজিদ ওরা চার্চে পরিণত করেছে। গ্রীকরা তুর্কীদের দায়ী করে এখনো। কচু কাটার মতো ওরা মুসলিম নিধন করেছে তুর্কীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সব চিহু মিটিয়ে দিয়েছে ১৫-২০ বৎসর আগেও মুসলিম নাম হলে ওরা নাগরিকত্ব দিত না। বলত নাগরিক হতে হলে আহে খৃষ্টান হও। গ্রীক সভ্যতায় মুসলিমরাই অপয়া। অথচ ইতিহাস সম্পূর্ন ভিন্ন প্রাচীন ইতিহাস গ্রীকের আগে আসে ইউনান। গ্রীকের ধর্ম চোর পাপ্পারা এখন সে সব ইতিহাসকে সম্পূর্ন অস্বীকার করে পাল্টে দেয়। তবে এথেন্সের কিছু অলি গলি ভ্রমণ করে আমার একটি ধারণা হয়েছে তা হলো- অবশ্যই ইতিহাস কথা বলবে আজকে তাদের এই দম্ভ ও মিথ্যা তাদের জন্যই বগল হয়ে দাড়াবে। এর প্রমাণ গ্রীক মেয়ে গ্লীকেরিয়া সম্পূর্ন নীজ ইচ্ছায় ইসলাম কবুল করে মুসলমান হয়েছে অবাক করে দিয়ে এই মেয়ে এখন হিজাব পরে অফিসে আসে। ওর মা বাবা ওকে তাজ্য করে অভিশাপ দিয়েছে। এরপরেও সে মুসলমান হয়েছে, গ্লীকেরিয়াকে দেখে আমার করুণা হয়। ঐ সব ইতিহাস বিকৃতকারী ঞ্জান পাপীদের প্রতি। গ্লীকেরিয়া যদি আয়েশা সিদ্দিকা হতে পারে সম্পূর্ন নিজ ইচ্ছায় তা হলে ইনশাআল্লাহ আগামীতে এলিনা হবে খাদিজা তুল কোবরা, আনতানীয়া হবে ফাতেমা। এর জন্য প্রয়োজন তাদের কাছে মানবতার ধর্মের সঠিক দাওয়াত পৌছাঁনো বীর বাহাদুর হলে চলবে না। এর জন্য প্রয়োজন বিনয়, নম্রতা, ধৈস্য ব্যবহার, আমল এবং আখলাক, সত্যবাদীতা ও পরিশ্রম। এই গুলোর সামঞ্জ্যসতা থাকলে শুধু গ্রীক নয় অবশ্যই ইসলামের প্রতি জগতবাসী আকৃষ্ট হবে। আহাবায়ে কিরাম (রাঃ) সহ সুফি অলী দরবেশগণ ইসলাম প্রচার করেছেন কায়িক শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে ঞ্জানের প্রসারতা এবং সহযোগীতা সহমর্মীতা দিয়ে কারামতী বয়ান করে বা আল্লামাসহ উপাধী দ্বারা প্রভাব বিস্তার করে নয়। ইউনানেরই এক জন্য বুজুর্গের জীবনী পড়ছিলাম এতে দেখলাম এই বুজুর্গ মহান সাধক কুয়া থেকে তুলে তিনি পানি বিক্রি করে নিজের সংসার চালাতেন। উনাকে কেহ হাদিয়া দিলে বলতেন তোমার হাদিয়া নিয়ে তো আমার কোন উপকার হবে না অপকার ছাড়া। এবাদত গাহে কেহ দিলে বলতেন, এই টাকা কি হালাল ভাবে উপার্জিত? সেই সব ব্যক্তিদের মহানুভবতার কথা চিন্তা করলে শ্রদ্ধায় নত হতেই হয়। ন্যায় এবং অন্যায়ের পার্থক্য যাহারা করে না তাদের দিয়ে অন্য কিছু হলেও ইসলাম প্রচার করা সম্ভব নয়। গ্লীকোরিয়া বর্তমান নাম আয়েশার কাছে এই এই সাধকের কথা জেনে ও পড়ে তাহাকে তা বলে সান্তনা দিলাম এবং দ্বীন প্রচারে আমার সর্বাত্মক সহযোগীতা থাকবে বলে জানালাম। এথেন্সের এক্রোপালন দেখে বের হতে হতে মাগরিবের ওয়াক্ত, সালাত আদায় করে আবার হারুন ভাইকে সাথে করে ফিরব তখনি আমজাদ সামনে এসে হাজির। তার শখ আমাকে নাস্তা করাবেন কি যে মনে করে লোকেরা আমাকে। আমার মত একজন নগন্য ও সামান্য ব্যক্তিকে ওরা যে সম্মান ও আদর করল তা ভুলবার মত নয়। বিপদে বন্ধুর পরিচয় এই বাক্যেটির যথার্থতা অনেক সময় পাওয়া যায় না। আজকে আমি বিপদে এবং অন্যদেশে এবং অন্য পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে। সবাই সবার মত ব্যস্ত তটস্থ। এরপরেও হারুণ ভাই আমাকে এথেন্সের রাজপথ থেকে গলি পথ পর্যন্ত নিয়ে দেখালেন। সঙ্গী হিসেবে রাত-দিন সঙ্গ দিলেন। আমার ইংল্যান্ডে ফিরে আসার শেষ পর্যন্ত সাথী হয়ে তিনি আমাকে যে সহযোগীতা করলেন তা কাছে এই জন্য কৃতঞ্জতা প্রকাশ করছি এবং দোয়া করছি আল্লাহ যেন তাহাকে কল্যাণ করেন। আমজাদ নাস্তা নিয়ে বসাল একটি রেষ্টুরেন্টে, মোটামোটি পরিচ্ছন্ন। আগেই লিখেছি সার্বিক পরিস্থিতিটাই মানসম্মত হাইজিনিক নয়। আমি বুঝি না পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে কি সমস্যা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটা তো নিজের জীবনের জন্য অপরিহার্য। প্রায় সব ধর্মে বা ধর্ম গ্রন্থে পরিষ্কার পরিচ্ছনন্তার জন্য বিশদ ভাবে বলা হয়েছে। চলবে-























মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.