![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক সময় লিখতাম। যা ভাবতাম, যা দেখতাম তাই বলতাম এবং জানাতে চেষ্টা করতাম। লেখক বলে নিজেকে কখনো ভাবিনি এবং এখনো ভাবি না। তবে সবসময় চাই সত্যকে জানতে এবং জানাতে। কারণ, সত্যের বিকল্প নেই, জানতে চান বা না চান সত্য তার নিজস্ব গতিতে প্রকাশ হয়েই যায়। পৃথিবীতে কোন সত্যেই গোপন নেই এবং সত্যকে শত চেষ্টা করে কিংবা ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। বিগত দিনে যা লিখেছিলাম তার-ই কিছু কিছু লেখা এখানে তুলে ধরব।
মহাকালের সর্বপ্রথম পাপ হচ্ছে অহংকার। আর এটি সংঘটিত হয়েছিল নিকৃষ্ট ইবলিশ কর্তৃক। অহংকারের মাধ্যেমেই শয়তান সর্বপ্রথম গুণাহর খাতায় নাম লিখিয়েছিল এবং এটিই সর্বপ্রথম আল্লাহর হুকুমকে মানতে অবাধ্য করেছিল। সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ’আমি মালাইকাদের বলেছিলামঃ আদমকে সেজদা কর। সকলেই সেজাদা করল। কেবল ইবলিশ করলো না। সে অস্বীকার ও অহংকার করলো। সে কাফেরদের অন্তভুক্ত হয়ে গেল।’ সুরা আরাফে বলা হয়েছেঃ ইবলিশ বলল আমি তার চেয়ে উত্তম, আপনি আমাকে আগুন থেকে এবং তাকে (আদমকে) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।’ অর্থাৎ তারমধ্যে বর্ণবাদের অহংকার ও বিদ্ধেষ দানা বেধে উঠেছিল। ফলে সেই পৃথিবীর নিকৃষ্ট কীট, যে আল্লাহর আদেশকে অমান্য করলো এবং তাঁর লানত নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত কাকে বেঁচে থাকতে হবে। যুগে যুগে এই তাগুতের অনুসারীরাই অহংকারী ছিল। এদের কেউ কেউ ক্ষমতার দাপটে, কেউবা আবার ধন- দৌলতের আধিক্যে অহংকারী ছিল। এদের মধ্যে ফেরাউন ও কারুন অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা এসব অহংকারীদের ধ্বংস করে দেন। এ ছাড়াও আল-কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ধ্বংসের কারণসমূহের মধ্যে অহংকার একটি অন্যতম কারণ ছিল। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ ’কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের ওপর আমার আযাব অকষ্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাতের বেলায় অথবা দিনের বেলা যখন তারা বিশ্রামরত ছিল। আর যখন আমার আযাব তাদের ওপর আর্পিত হয়েছিল তখন তাদের মুখে এ ছাড়া আর কোন কথাই ছিল না যে ’সত্যিই আমরা জালেম ছিলাম’। (সুরা আল আরাফ ৪-৫) এখানে জালেম মানে অহংকারী।
কুরআন ও হাদীদের অসংখ্য আয়াত গর্ব-অহংকারের ভয়াবহ পরিণাম ও পরিণতির কথা বিবৃত হয়েছে এবং অত্যন্ত কঠিন ভাষায় হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। ইমাম আযযাহাবী (র.) তার ’কিতাবুল কাবায়ির-’ এ এটিকে গুণাহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অহংকার শুধু একটি কবিরা গুনাহ-ই নয়; বরং এটি আরো অনেক কবিরা গুনাহের জন্মদাতা। কারণ এটি মানুষকে সত্যি উপলব্ধিতে বাঁধা দেয় এবং তাদেরকে অন্ধকারের যাত্রী বানায়। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ ’এক ইলাহই তোমাদের আল্লাহ। কিন্তু যারা আখেরাত মানে না তাদের অন্তর সত্য বিমুখ এবং তারা অহংকারে ডুবে গেছে।। (সুরা নাহল-২২) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে অহংকার করে বেড়ায়, শ্রীর্ঘই আমার নিদেৃশসমূহ থেকে আমি তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবো। তারা আমার কোন নির্দেশন দেখলেও তার প্রতি ঈমান আনবে না। তাদের সামনে যদি সোজা পথ এসে যায় তবুও তারা তা গ্রহণ করবে না। আর যদি বাঁকা পথ দেখতে পায় তাহলে তার ওপর চলতে আরম্ভ করবে। (সুরা আরাফ ১৪৬)।
অহংকার মানে নিজেকে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা, অন্যদেরকে নিজের তুলনায় ক্ষুদ্র ও অধম জ্ঞানকরতঃ তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করা, আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে তার অবাধ্য হওয়া ও আদেশ অমান্য করা, এ সবই অহংকারের লক্ষণ ও তার আওতাভুক্ত (কবিরা গুনাহ- ঈমাম আযযাহাবী র.) অহংকার গোপন ও প্রকাশ্যে দুই ধরণের হয়ে থাকে। গোপন অহংকারের মনে সৃষ্টি হয় আর প্রকাশ্যে অহংকার অঙ্গ প্রতঙ্গদ্বারা প্রকাশ পায়। গোপন অহংকারী অন্যসব অহংকারীর চেয়েও নিজেকে বড় মনে করে। এটা তার ধারণায় বদ্ধমূল হয়, অবশেষে এটি তার বিশ্বাসে পরিণত হয়। ফলে নিজেকে খুব সম্মনিত মনে করে এবং এক সময় তা তার বাস্তব চরিত্রে প্রকাশ পেতে শুরু করে। গোপন অহংকার সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেনঃ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, তাদের কাছে আসা যুক্তি-প্রমাণ ছাড়া আল্লাহর নির্দেশনসমূহের ব্যাপারে ঝগড়া করেছে তাদের অন্তর অহংকারে ভরা। কিন্তু তারা যে বড়ত্বের অহংকার করে তারা তার ধারেও ঘেঁষতে পারবে না। (সুরা মুমিন-৫৬) এদের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী এবং সেচ্ছাচারীর অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন, (সুরা মুমিন-৩৫)। প্রকাশ্যে অহংকারের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেনঃ অহংকারবশত তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং যমীনে গর্বসহকারে পদচারণা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন অহংকারীকে পছন্দ করেন না। চাল-চলনে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর (সুরা লোকমান-১৮-১৯)। পৃথিবীতে দাম্ভিকতা সহকারে চল না। নিশ্চয়ই তুমি পদাঘাতে ভ’পৃষ্ট বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় পর্বত প্রমাণ করতে পারবে না। এ সসবের মধ্যে যে গুলো মন্দ কাজ, সেগুলো তোমার রবের কাছে অপছন্দনীয়, (বাণী ঈসরাইল-৩৭-৩৮)।
অহংকারীর শাস্তি সম্পর্কে উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও আরো একাধিক আয়াতে কঠিন বর্ণনা রয়েছে। অহংকারী সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) এর অসংখ্য হাদীস রয়েছে। রাসুল (সঃ) বলেছেন, অহংকারী স্বৈরাচারীদেরকে কিয়ামতের দিন ক্ষুদ্র কণার আকৃতিতে পায়ের তলায় পিষ্ট করবে এবং চারদিক থেকে তাদের ওপর কেবল লাঞ্ছনা ও অপমানই আসতে থাকবে। তাদেরকে জাহান্নামের বোলাস নামের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের মাথায় ওপর আগুন জ্বলতে থাকবে এবং তাদেরকে জাহান্নামবাসীর মলমূত্র, ঘাম, কাশ ইত্যাদি খেতে দেয়া হবে (সুনানে নাসায়, জামে আত তিরযিমি)। রাসুল (সঃ) আরো বলেন, যার অন্তরে কণা পরিমাণও অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (নহীহ মুসলিম)। গর্ব অহংকার মূলত আল্লাহর অধিকার। মানুষ কিসের জোরে বা বলে অহংকার করবে? যেখানে সামান্য একটি ব্যঙ লাফ দিলেও সে ভয়ে দৌড়ে পালাতে শুরু করে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে মানুষই সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী। তার মনে রাখা প্রয়োজন যে, তাকে পিতার পৃষ্ঠদেশ থেকে নেমে আসা সামান্য একফোঁটা পানি থেকে বা সামান্য একটি শুক্রকীট থেকে তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং তার অহংকার করার কোন অধিকার নেই। আশরাফুল মুখলুখাত বলে আল্লাহতায়ালা দয়া করে সমস্ত সৃষ্টিকে তার অধীন করে দিয়েছেন এবং তাকে সৃষ্টির সেরা মর্যাদা দিয়েছেন বটে। তথাপি সকল সৃষ্টির কাছে সে সামান্য একটি দুর্বল প্রাণী। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহতায়ালা বলেন, অহংকার আমার পোশাক। এ পোশাক যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করে, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো (সহীহ মুসলিম)। অথচ আজ এ অহংকার বিভিন্ন রুপ পরিগ্রহ করে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রবেশ করেছে। যথা বংশ, বর্ণ, ভাষা, দেশ, জাতীয়তা ও সম্পদের প্রাচুর্যের ওপর ভর করে অহংকার আমাদের মাতিয়ে তুলেছে। যদিও এগুলো আল্লাহর সৃষ্টি। তথাপি এগুলোর কোন মর্যাদার মানদন্ড বা কোন মাপকাঠি নয়। বরং এগুলো আল্লাহ দিয়েছেন যাতে মানুষ পরষ্পরকে চিনতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মানব জাতি, আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে দিয়েছি যাতে তোমরা পরষ্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই আল্লহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহকে বেশী ভয় করে। নি”সন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন ও খবর রাখেন, (সুরা আল হুজরাত- ১৩)
অহংকারীর কতিপয় বৈশিষ্ট হলোঃ সে নিজে যা পছন্দ করে, অন্যেকে তা পছন্দ করতে দেয় না। সাধারণত সে বিদ্ধেষপরায়ণ হয়। কোন উপদেশকারীর উপদেশ গ্রহণ করতে পারে না। বরং উল্টো তার ঠাট্টা-বিদ্রেুাপে শিকার হয়। শিক্ষিত ব্যক্তির শিক্ষাও সে গ্রহণ করে না। মানুষের সাথে কথা বলা এবং চলার সময় হিংসা-বিদ্ধেষ, তচ্ছি-তাচ্ছিল্য ও গর্ব অহংকারের ভাব প্রকাশ করে। নেত্রত্বের কথা বা আদেশের কোন পরোয়া বা ভ্রুক্ষেপই করে না। মনে হয় এগুলো তার জন্য প্রযোজ্য নয় বা সে তার চেয়েও বেশী বা আরো ভালো জানে। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত, তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে। (সূরা আল হুজরাত সূরা-১৩) ধনী কারুনের সাথে আল্লাহর আচ থেকে শিক্ষা নিবেন। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ আমি তাকেসহ তার ঘরবাড়ি মাটির নীচে চাপা দিয়ে দিয়েছি। আল্লাহর মোকাবেলায় তাকে সাহায্য করার জন্য আর কেউ এগিয়ে আসেনি এবং সে বিজয়ীদের অন্তভূর্ক্ত ছিল না। (সূরা কাসাস-৮১) অহংকারী শাসক, মন্ত্রী ও দলের প্রধানদের উচিত ফেরাউন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আল্লাহ এ ক্ষমতাধর অহংকারী শাসককে সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। আলেম, জ্ঞানী ও বুযর্গদের ইসরাঈলের বালআম-বাউরসহ অন্যান্য আলেমদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আল্লাহতায়ালা বলেনঃ ’যাদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল, পরে তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের উদাহরণ হচ্ছে সেই গাধার মত যে কিভাবে বহন করে বেড়ায়। (সূরা জুমুআঃ ৫) অন্যান্য অহংকারীকে দেখা গেছে যে, আল্লাহতায়ালা তার জীবিতাবস্থায় কোন না কোন লজ্জাকর বিষয় চাপিয়ে দিয়ে অপমানিত করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে রাসুল! তুমি বলো হে আল্লাহ তুমি সম্রাজ্যের মালিক, তুমি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করো, যার থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নাও, যাকে ইচ্ছা তাকে সম্মানিত করো, তবু তোমার ক্ষমতার হাতই শ্রেষ্ঠ, নিশ্চয়ই তুমি প্রত্যেকের ওপর শক্তিশালী। (সূরা আল ইমরান)। সর্বোপরী, অহংকার থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত কুরআন ও হাদীস বুঝে পড়তে হবে। বিশেষ করে অহংকার বিরোধী এবং অহংকারীর শাস্তি সম্পর্কিত আয়াত ও রাসুলের হাদীসগুলো বার বার পড়তে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের জগতের প্রথম গুণাহ ও ইবলিশের প্রথম অপরাধের কারণ অহংকার থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
রচনাকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০০৭
©somewhere in net ltd.