‘জোম্বি হও অথবা বদমাশ হও’

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

আজকে নির্বাচন(?) উপলক্ষে একটা ছুটির দিন ছিল। সকাল থেকে অলস ভাবে টিভি দেখে, ফেসবুকে আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছি। বিকেলে মনে হল দিনটাকে পুরোপুরি অর্থহীন না করে কিছু একটা করা দরকার। জুতার সিলাই খুলে গিয়েছিল। সেটা নিয়েই বেরোলাম। রাউন্ড সিলাই, পালিশ সহ প্রায় এক ঘণ্টার কাজ। মুচির সাথে দরদাম ঠিক করে মুচির বাক্সটার উপর ই বসে পড়লাম। কাজ শেষ হলে জুতা নিয়েই বাসায় ফিরব।



সামনে একটা খালি মটর রিক্সা থেমেছে। মটর রিক্সার হর্ন নষ্ট হইছে। চালক সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের চেহারায় মেকআপ, বিউটি পার্লার ইত্যাদি’র তৈরি করা আড়াল থাকেনা। সেজন্য আমার সাধারণ মানুষের চেহারার দিকে তাকাতে ভাল লাগে। আমি গভীর দৃষ্টিতে মটর রিক্সা চালক যুবকের দিকে তাকালাম।তার বয়স একুশ বাইশ হবে। চেহারায় সারল্য। মনে হল এই ছেলেটা অযথা বেশি ভাড়া চেয়ে যাত্রী’কে হয়রানী করেনা। বিপদগ্রস্ত যাত্রীর মুখের উপর ‘যাব না, যাব না’ করে না। মটর রিক্সার জমা টমা সব দিয়ে যে টাকা থাকে তার কিছু অংশ খরচ করে বাকীটা বাবা মা ভাইবোনের জন্য দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তার একটা সুন্দর মন আছে। সেই মনে সুন্দর স্বপ্ন আছে।



এই যুবকের সুন্দর স্বপ্ন হয়ত কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে গ্রামে একটা টিনের বাড়ি করা।বাড়ির সামনের পুকুরটাতে মাছের পোনা লাগানো। তারপর ভাল দেখে একটা বিয়ে করা। ছেলেমেয়ে হলে তাদের লেখাপড়া করানো। এই ছেলের চোখে মুখে নগ্ন লোভের ছাপ নাই। এ কখনোই রাজনীতি করে পাতি নেতা হয়ে তারপর সেই পাতি প্রভাব খাটিয়ে কন্টাক্টারি করে তর তর করে পয়সাওয়ালা হয়ে চট্টগ্রাম শহরেই অল্প বয়েসে একটা ফ্ল্যাটের মালিক হবে না। শোষিত মানুষের লোহিত কনিকা’র দাগ সম্বলিত কাল টাকার বালিশে মাথা চেপে এ কখনোই ঘুমাবে না। এ বউ কে একটা মাটির ব্যাঙ্ক কিনে দেবে। বউ সেখানে দিনে একটা করে পাঁচ টাকার কয়েন রাখবে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে।



আবার সেসব কিছুই হয়ত হবে না। আজকের অগণতান্ত্রিক কাল নির্বাচন( মহান আল্লাহ পাক কে ধন্যবাদ আমি খবর পাঠক হই নাই। আমার উচ্চারণ সুন্দর, গলা ভরাট ছিল। চেষ্টা করলে হয়ত হতে পারতাম। আর আজকের মত কোন কাল দিনে খবর পড়ার সময় হয়ত অশ্লীল কোন গালি দিয়ে বসতাম!) দেশে কিছু পাতি সেনাপতি তৈরি করবে। তারা কোন কিছুই সহ্য করতে পারেনা! সামান্য কারনে তারা অসন্মানিত হয়! সামান্য কারনে তারা মানুষের গায়ে হাত পা তুলে ফেলে! কারন স্বৈরাচার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তারা নিজেদের কে প্রভু এবং বাকী মানুষদের কে তাদের দাস মনে করে।



সেই রকম পাতি সেনাপতিদের কেউ হয়ত একদিন এই যুবকের মটর রিক্সায় চড়বে। সামান্য কারনে তাকে নির্মম ভাবে মারধর করবে।মার খেয়ে জ্ঞান হারাতে হারাতে যুবক বিস্মিত হয়ে ভাববে, আশ্চর্য! এ একজন মানুষ হয়ে আমাকে অন্যায় ভাবে মারছে কেন? আমিও ত মানুষ!!



যখন জ্ঞান ফিরবে তখন হয়ত যুবকের মনে প্রশ্ন আসবে, আমি কি আসলে মানুষ??



কাল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আরো সমৃদ্ধ হওয়া বৈষম্যের সমাজ তাকে বুড়ো আঙ্গুল নেড়ে জবাব দেবে, উঁহু! তোমার ক্ষমতা নাই। তুমি আবার কেমন মানুষ! তুমি হচ্ছ ‘বেচারা’!



এরপর এই যুবকের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিচের যেকোন একটা-



ভবিষ্যৎ এক।



সে বেচারা হয়ে ‘নিরীহ ভালমানুষ’ হিসেবে ক্ষমতাবান দের চড় লাথি খেয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দেবে। অসুস্থ বৃদ্ধ অবস্থায় হয়ত তার এলাকায় পাতি সেনাপতি থেকে এমপি হয়েছে এরকম কেউ তার চিকিৎসার খরচ টরচ দেবে। সে তাকে দেখতে যাওয়া আরো দুই চাইর টা আত্নীয়ের কাছে পাতি’র গুন গেয়ে চোখের পানি ফেলবে এবং পরবর্তী নির্বাচনেও ‘মহৎ পাতি’ কে ভোট দেবার জন্য সবাইকে অনুরোধ করবে!



ভবিষ্যৎ দুই।



তার মনে হবে, আমার আত আছে। পাও আছে। কইলজা আছে! বেচারা অমু কে? খ্যামতা তগো আছে দেইক্কা আমগোরে মারতাছস! খ্যামতা তাইলে আমগো ও অওয়াইতে অইব!!

তারপর খুব দ্রুত ক্ষমতাবান হবার জন্য সে হয়ত কোন বোমা বানানোর দলে যোগ দেবে।বোমাণলে পুড়তে থাকা দেশ হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই পাবে আরো একজন দক্ষ বোমাবাজ কে!



‘জোম্বি হও অথবা বদমাশ হও’ এই স্লোগান সর্বস্ব ব্যানারটিকে আবারো মাথার উপর উঁচিয়ে ধরল ঐতিহাসিক কাল নির্বাচন!

০ টি +০/-০