![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহিউদ্দিন খালেদ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পড়তে ভালোবাসি। নিজের একটা চিন্তা জগত আছে। সেখানে চারপাশের অনেক কিছু নিয়ে অনেক নিঃশব্দ আলোচনা হয়! সেই আলোচনা গুলোর সাথে বৃহত্তর জগতের সংযোগ ঘটাতে ইচ্ছে করে!
আজকে সকালে অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি। আমার চার বছর ন মাস বয়সী কন্যা ঘুম ঘুম চোখ মুছতে মুছতে বলল- মা স্কুলের জামা পরিয়ে দাও।বাবার সাথে স্কুলে যাব। আমার স্ত্রী বলল- মা আজকে ত স্কুল বন্ধ! আজকে স্কুলে যেতে হবে না। মেয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠল- না না স্কুল বন্ধ না! আমি স্কুলে যাব। স্কুলের জামা পরিয়ে দাও।
মেয়ের চোখের কোনায় জমা অশ্রু বিন্দুতে চুমো খেয়ে বুকের ভেতর একটা নিঃশব্দ কষ্ট নিয়ে আমি অফিসের উদ্যেশ্যে বের হলাম। আমার মেয়ে তার স্কুল টা পছন্দ করে।চট্টগ্রামে যে স্কুলে আমার মেয়ে পড়ে সে স্কুলে একজন মমতাময়ী প্রিন্সিপাল আছেন যিনি ‘বাচ্চাদের কে ভালোবাসা দিয়ে পড়াতে হবে’ এই বার্তাটা তাঁর শিক্ষক দের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। আজকে স্কুল বন্ধ থাকার কারন হিসেবে আমি আমার বাচ্চাকে কিছু বলতে পারিনি। আমার নিস্পাপ শিশুটিকে এক ধরনের মানসিক কষ্টের মধ্যে রেখে আমি ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি দশ ঘণ্টারও বেশি সময়ের জন্য।
আমি আমার পাঁচ বছরের কম বয়েসী বাচ্চাকে কিভাবে বুঝাই আজকে হরতালের কারনে স্কুল বন্ধ। হরতাল হচ্ছে দেশের সাধারন মানুষ কে আর্থিক,শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিপাকে ফেলার একটা অস্ত্র এবং এই দেশে সরকারীদল বিরোধীদল নির্বিশেষে যারাই রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে থাকেন তাদের হাতে এত ক্ষমতা এবং টাকা থাকে যে তারা কোন মতেই সাধারন মানুষের আর্থিক,মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ব্যাপারগুলোকে নিজেদের বোধগম্যতার মধ্যে আনতে পারেন না। হ্যা, অবৈধ টাকা এবং অবৈধ ক্ষমতা মানুষের লালসা কে দিন কে দিন বাড়িয়ে তুললেও বোধশক্তি কে দিন দিন কমিয়ে দেয়।
বহদ্দার হাট পার হবার সময় শুনি মাইকে গান বাজানো হচ্ছে-
জয় বাংলা, বাংলার জয়।
হবে হবে হব্ হবে নিশ্চয়।
কোটি প্রান একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে, নতুন সূর্য উঠার এই ত সময়।
এই গান আমার অসম্ভব প্রিয়। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে এই গানের মর্মার্থ দেশের সিংহভাগ মানুষ আদৌ বুঝেন কি না! দেশের সিংহভাগ মানুষের বুঝ নিয়ে কথা বলার স্পর্ধার পেছনে যুক্তি কি?
যুক্তি আছে।
একজন মানুষ কে আমি তখুনি জেগে থাকা মানুষ বলি যখন তার নূন্যতম মানবিক অনুভুতিগুলো জেগে থাকে। একজন মানুষের নূন্যতম মানবিক অনুভুতি যখন জেগে থাকে তখন সে অনুভব করতে পারে তার কোন আচরনটা আরেকজন মানুষ কে কষ্ট দিতে পারে। সে অনুভব করতে পারে তার কোন সিদ্ধান্ত টা আরেকজন মানুষের জীবনে অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিতে পারে। সে অনুভব করতে পারে, অন্য মানুষের অধিকার হরন করে উপার্জিত সম্পদ আসলে তার জন্য কোন ধরনের বাড়তি সুখ বয়ে আনতে পারেনা। ‘মানুষ যখুনি একটা অবৈধ সুখের জামা গায়ে দেয় প্রকৃতি তখুনি তার পায়ে এক জোড়া বৈধ দুঃখের জুতা পরিয়ে দেয়’ এই সত্য সে বুঝতে পারে।
জেগে থাকা মানুষের দেশে মানুষে মানুষে আর্থিক অবস্থানে, মানসিকতায়, সাংস্কৃতিক বোধে এবং মানবিক বোধে এত বেশি পার্থক্য থাকা সম্ভব না যাতে করে ‘ক্ষমতার মোহে অন্ধ’ এবং ‘ক্ষমতার লোভে অন্ধ’ গোষ্ঠী তাদের কে নিজেদের হাতের পুতুলে পরিনত করতে পারে।
নিজের মনুষ্যত্ব কে অনুভব করতে শেখায়, অন্য মানুষের কষ্ট কে অনুভব করতে শেখায়, অন্য মানুষ কে সন্মান করতে শেখায়, নিজের অর্জন নিয়ে উদ্ধত না হয়ে বিনয়াবনত হতে শেখায় এবং অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শেখায় এমন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে যদি কখনো কোন অন্ধরাতে কোটি প্রান জেগে উঠে , তাহলেই নতুন সূর্যের আলোয় হেসে উঠবে এই দেশ। সেই আলোকিত হাসির সোনালী বার্তা মুহুর্তে রাঙ্গিয়ে দেবে বাকী পৃথিবী কেও।
আজ থেকে তেতাল্লিশ বছর আগে যেদিন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি সেদিন আমরা নিজেদের অজান্তেই সারা পৃথিবী কে একটা বার্তা দিয়েছিলাম- মানুষ হিসাবে বেঁচে উঠার তীব্র আকাংখা নিয়ে দাসত্বের জীবন,বঞ্চনার জীবন, অন্যের চাপিয়ে দেয়া জীবনবোধের চাপে জীবন হারানো জীবন কে অস্বীকার করে মানুষ যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয় তখন তাকে আর কেউ মারতে পারেনা!
তারপর কিছু সময় যায়। এদেশের একজন স্বপ্নবান সুতীক্ষ্ণ অনুভব সম্পন্ন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসাইনের চেতনায় ধরা পড়ে শত মৃত্যুর বুলেট ছাপিয়ে জেগে উঠা এ জীবন বীজের প্রতিরূপ। তিনি সাভার স্মৃতি সৌধ ডিজাইন করেন(যে অর্থে বাংলাদেশ আমার চোখে পৃথিবীর সেরা দেশ সেই একই অর্থে সৈয়দ মাইনুল হোসাইন আমার চোখে পৃথিবীর সেরা স্থপতি)। কালের পরিক্রমায় আমাদের চোখ অন্ধ হয়ে যায়। আমরা সাভার স্মৃতিসৌধের দিকে তাকিয়ে শুধু এর পাথর দেখতে পাই। এর প্রান দেখতে পাই না।
যেদিন আমরা সত্যি সত্যি জেগে উঠব সেদিন সাভার স্মৃতিসৌধ এর দিকে তাকিয়ে এর প্রান কে অনুভব করতে পারব। সেদিন আমরা উদ্ধত স্বরে পরস্পরকে গালাগালি না করে পরস্পরের মতামত কে শ্রদ্ধা করব। পরস্পরের অধিকার হরন না করে পরস্পরের অধিকার রক্ষা করব। সাম্প্রদায়িক না হয়ে প্রত্যেকে নিজেদের ধর্ম পালন করব এবং নিজের ধর্ম বা নিজের মতামত কারো উপর জোর করে চাপিয়ে দেবনা। স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব না করার সৎ সাহস সেদিন আমাদের সব পরিস্থিতিতেই অক্ষুন্ন থাকবে।
আজ থেকে তেতাল্লিশ বছর আগে আমরা পৃথিবীর বুকে বুনে দিয়েছিলাম স্বপ্নবীজ।স্বপ্নবীজ এর বুকে অবশ্যই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যত মহীরুহের বার্তাও!
যারা এদেশের স্বাধীনতা চায় না তাদের সাথে বন্ধুত্ব বর্জন করে আমরা যদি পুরো একটা জাতি হিসেবে আমাদের নিজেদের ই অসৎ প্রবৃত্তির দাসত্বে চাপা পড়া জীবন কে অস্বীকার করে আরেক বার মুখোমুখি হতে পারি মহান জীবন বোধের তাহলেই পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে শুধু টিকে থাকতে নয়, সত্যিকার অর্থে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও পারব।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: আপনি এবং আপনার পরিবারের জন্য ও শুভকামনা।
২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৩
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আমার ছেলেটা ছোট একটা জেলা শহরে থাকে বলে হরতালে স্কুলগুলো বন্ধ করতে হয়না, তার কাছেও তার স্কুল ভীষণ পছন্দের। তার মা যদি বৃষ্টি বা দুর্যোগপুর্ন আবওহাওয়াতে তাকে স্কুল যেতে বারন করে তাহলে সে ভীষণ কান্নাকাটি করে।
কবে যে শান্তিময় বাংলাদেশের দেখা পাবো।
পোষ্টে +++
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৭
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: শান্তি ভীষণ অভিমানী! নিজে থেকে কাউকেই দেখা দেয় না। তার দেখা পাবার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়।
৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩১
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
মন্তব্য করার ভাষা পাইনে, হঠাৎ ধুমকেতু।
তাকিয়ে থাকলাম ভোর দেখবো কোনও দিন ...
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৮
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: ভোর ভীষণ অভিমানী! নিজে থেকে কাউকেই দেখা দেয় না। তার দেখা পাবার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪১
ওয়্যারউলফ বলেছেন: আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি বটে তবে মুক্তিযুদ্ধ এখনো বাকী।
৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: আশা ও হতাশা দু’টোর সঙ্গেই সহমত রেখে গেলাম
লেখাটি ভাল লাগল অনেক। ভাল থাকবেন।
৬| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: একজন মানুষ কে আমি তখুনি জেগে থাকা মানুষ বলি যখন তার নূন্যতম মানবিক অনুভুতিগুলো জেগে থাকে। একজন মানুষের নূন্যতম মানবিক অনুভুতি যখন জেগে থাকে তখন সে অনুভব করতে পারে তার কোন আচরনটা আরেকজন মানুষ কে কষ্ট দিতে পারে।+++++++
ভালো থাকবেন সবসময়
৭| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৭
কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার বলেছেন । আসলে আমরা হুজগে জাতি । তার ফলে যেকোন অসম্ভবকেও জয় করে ফেলতে পারি । যেমন ৫২, ৭১ । সমস্যা হচ্ছে আমরা যেটা জয় করেছি সেটার মর্মার্থ এবং মহাত্ম বুঝি না । তাই সেটা পরে আমাদের অবহেলায় পরিনত হয় । ফলে আমরা স্বাধীন হয়েও ব্যাক্তি পরাধীন হয়ে আছি ।
স্বাধীনতা অর্জন থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন ।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৮
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অসাধারণ বলেছেন কলমের কালি শেষ। আপনার মন্তব্যে আমার লেখার মেসেজটা পূর্নতা পেয়েছে। ধন্যাবাদ।
৮| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:২২
আমি তুমি আমরা বলেছেন: চমতকার ভাষায় অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছেন। ভাল লেগেছে।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৫৬
হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আমাকে, তোমাকে এবং আমরা কে!
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৫
আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: আপনার কন্যা ও পরিবারের জন্য শুভকামনা।