নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম

দিনের শেষে আমরা সবাই একা...

কুল_কুয়াইট

দেশের বাইরে পড়াশোনা করছি আইটিতে। দেশেও কাজ করেছি একজন আইটি প্রফেশনাল হিসেবে। লেখালেখি ভাল্লাগে না। তারপরও মাঝে মাঝে মনে হয় সবসময় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না। তাই ২/১ টা কথা লিখে ব্লগে প্রকাশ করি। ফেইসবুকে আমি fb.com/cool.quiet

কুল_কুয়াইট › বিস্তারিত পোস্টঃ

জার্মানির প্রাচীন এক নগরী- কন্সটাঞ্জ

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:১৬

কোন এক প্রস্তর যুগের ঘটনা যখন অঞ্চলটিতে প্রথম মানুষের পা পড়েছিল সভ্যতা গড়ার লক্ষ্যে। প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাস যখন ক্ষমতায় ঠিক সেসময়টায় এ অঞ্চলের দক্ষিণে বাস করত প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইউরোপিয়ানরা। এদের হটিয়ে রোমানরা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করল ৪০ খৃষ্টাব্দের দিকে। রাইন নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চলটির পূর্বনাম যদিও ছিল 'ড্রুসোম্যাগাস' তবে রোমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর সম্রাট কন্সটানশিয়াস ক্লোরাসের নামানুসারে তা হয়ে গেল 'কন্সটান্সিয়া'। কেউ কেউ বলে থাকে এই নাম এসেছে ক্লোরাসের নাতি সম্রাট দ্বিতীয় কন্সটান্সিয়াসের নাম থেকে যিনি এই অঞ্চলে প্রথম আসেন ৩৫৪ খৃষ্টাব্দে।

সুইজারল্যান্ডের সীমানা ঘেষে থাকা জার্মানীর একমাত্র শহর যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন বোমার আঘাত আসে নাই। প্রাগৈতিহাসিক নানা চিহ্ন বহনকারী ঐতিহাসিক এই শহরের কেন্দ্র দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে মধ্যযুগের গোড়ার দিকের গীর্জা, চিত্রিত রেনেসাঁ ভিলাস, সুন্দর ডিজাইন ও শিল্পকলা। সৌন্দর্য্যের সেই দিক থেকে অবশ্যই এই শহরের স্থাপত্য এবং নাটুকে সৌন্দর্য উপভোগ করার মতই ব্যাপার।



ইউরোপের হৃদপিন্ডে অবস্থিত বিখ্যাত রাইন নদী যার এক প্রান্তে অষ্ট্রিয়া হয়ে ছুঁয়ে এসেছে সুইজারল্যান্ড আর দুই ভাগ হয়ে দক্ষিণ দিক হতে জার্মানিতে ঢুকে চলে গেছে একেবারে উত্তর প্রান্তোবধি। কন্সটাঞ্জে রাইন নদী আর কন্সটাঞ্জ লেক মিলিত হয়েছে। লেকের ওপার আর এপার মিলে এই শহর দুটি ভাগে বিভক্ত। এর এক ভাগের সাথে সুইজারল্যান্ডের সীমানা। সত্তুর আশির দশকের দিকে এই লেকের পানি কলকারখানার বর্জ্যে দুষিত হয়ে অত্র অঞ্চলের প্রাণিবৈচিত্র বিশেষ করে মাছের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের ফলে সেই অবস্থা আর নাই। লোকের মুখে শুনেছি এই লেকের পানি এতই স্বচ্ছ যে তা পান করা যায়। স্বচ্ছ পানি আমি নিজ চোখেও দেখেছি। এই লেকের পানিই প্রায় ১২২ কিলোমিটার লাইন বেয়ে চলে গেছে স্টুটগার্টে এবং সেখানকার প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ তাতে জীবনধারণ করে।



মূল শহরের সাথে লেকের যে অংশটি আছে তার তীরে রয়েছে ৯ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১৮ টন ওজনের বিশাল কনক্রিটের এক নারীমূর্তি যা দুই হাতে দুইজন পুরুষের মূর্তি নিয়ে শ্লথ গতিতে নিয়ত ঘূর্ণায়মান। এই নারীর নাম লা বেলে ইম্পেরিয়া আর যে দুইজন পুরুষের মূর্তি তাঁর হাতে তাঁরা হলেন ওই সময়ের পোপ মার্টিন ভি আর তৎকালীন রাজা সিগিসমুন্ড। কথিত আছে, ১৪৮৫ সালে ইতালীতে জন্মগ্রহণকারী এই সুন্দরী ইম্পেরিয়ার রুপযৌবনে মুগ্ধ ছিলেন পোপ ও রাজা উভয়ে এবং তাঁদের উপর ইম্পেরিয়ার প্রভাব ছিল সীমাহীন।



শহরের এক প্রান্তে ঘন বনজঙ্গলে ঘেরা সুবিশাল এলাকা জুড়ে আছে এ অঞ্চলের গর্ব স্বনামধন্য কন্সটাঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় দশ হাজার ছাত্র নিয়ে সুনামের সাথে এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বিস্তারে অত্র অঞ্চলে ভূমিকা রেখে আসছে সেই ১৯৬৬ সাল থেকে। ইউরোপের সর্ববৃহৎ লাইব্রেরী এই ভার্সিটিতেই। এখানে প্রায় দুই মিলিয়ন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী যারা সামনে জার্মানিতে পড়তে আগ্রহী তারা এখানে চেষ্টা করতে পারে। এখানে ভর্তি প্রক্রিয়া অন্য অনেক নামী বিশ্ববিদ্যালয় হতে অপেক্ষাকৃত সহজ। আর সবই ইন্টানেটের মাধ্যামে সম্পন্ন করা যায়। তবে এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জানা প্রয়োজন যে এই সিটিতে টাকা ব্লক করে রাখতে হয় আর এক বছরের ভিসা পাওয়া যায় মাত্র। বছর বছর টাকা রেখে তা হালনাগাদ করে নিতে হয়।



ঝকঝকে তকতকে রাস্তার এই শহরে ছেলে বুড়ো প্রায় সবাই সাইকেলে যাতায়াত করে। গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। হইচই নেই, কোলাহল নেই, যানপজটের তো প্রশ্নই আসে না। অল্পবিস্তর গাড়ী যাই চলুক না কেন এখন পর্যন্ত এখানে কোন হর্ণের শব্দ কানে আসে নাই। শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে আপেল গাছ। আমি অযাচিত ভাবে গাছ থেকে পেরে খেয়েছি তা। পরে শুনেছি ওসব প্রাইভেট তাই সাবধান হয়েছি। এই শহরে সর্বমোট মানুষ প্রায় পঁচাশি হাজার। উন্নত জীবনমান, উচ্চ মুল্যবোধ আর নিরাপদ জীবনধারা এই শহরের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। এখানে কোন অপরাধমূলক ঘটনা নিকট অতীতে ঘটতে দেখা যায় নাই।



এক পাশে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম কন্সটাঞ্জ লেক অপর পাশে সুবিশাল রাইন নদী। এর সাথে সৌন্দর্য্যের অন্যতম অলংকার যুক্ত হয়েছে দূর হতে দেখা আল্পস পর্বতমালা। এমন অপরুপ ছোট্ট শহরে যেদিকেই নয়ন মেলে তাকানো যায় নির্মল সুশীতল স্পর্শে হৃদয়াঙ্গন নেচে উঠে।

লেখাঃ জাহিদ কবীর হিমন।



সেই কন্সটাঞ্জেই গিয়েছিলাম গতকাল। মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে তোলা কিছু ছবি শেয়ার করছি। ক্যাপশন দিতে না পারার জন্য দুঃখিত। তবে সবগুলো ছবিই কন্সটাঞ্জে এবং সুইজারল্যান্ডের সামান্য ভিতর থেকে তোলা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:২৭

আলো খোঁজে বলেছেন: ভাই কি fachhochschule konstanz এ স্টাডি করেন , আমি দুই তিন বার ঘুরতে গিয়ে গিয়ে ছিলাম , জায়গাটা সুন্দর

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫

কুল_কুয়াইট বলেছেন: না ভাই, আমি স্টুটগার্ট ইউনিভার্সিটি পড়ি। কন্সটাঞ্জে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আপনি কোথায় থাকেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.