![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত তখন কাটায় কাটায় বারটা। তুলির মুঠোফোন বেজে ওঠে। অনিকের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ কচলাতে কচলাতে বলল-এত রাতে আবার কে ফোন করল?
-রং নাম্বার।
ওকে,মোবাইল বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাও।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়েই অনিক ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়না দেয়। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। বেতন ভাল তবে ছুটি খুবই কম। অনিক তুলিকে প্রচন্ড ভালবাসে। কর্তব্যের ফাঁকে একটু ফুরসুরত পেলেই তুলির মুঠোফোনে কল দেয়। সঞ্চিত অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই তার মোবাইলে ’ওয়েটিং সার্বিস’ দেখতে পায় ,আবার কখনো বা ব্যসত্ম আছে শুনতে পায়।
প্রথম প্রথম তুলিকে কিছুই বলত না,কোনরূপ প্রশ্নও করত না। কিন্তু যখন প্রায়ই সময়ে -অসময়ে ওয়েটিং সার্বিস দেখতে পায় তখন তার মনেও অজানা এক সন্দেহের দানা ঈষৎ ঢেউ খেলে যায়।
সেদিন ছিল শনিবার। কোন এক বিশেষ কারণ দেখিয়ে অফিস থেকে অর্ধদিনের ছুটি নেয় অনিক। বাসায় ফিরার সময় নতুন দুটি সিমও কিনে আনে। নতুন সিম লাগিয়ে তুলির মুঠোফোনে কল দেয়। ওয়েটিং সার্বিস দেখতে পায়। কারেন্টে শক খাওয়ার মত করেই যেন সে মনে শক খেল। অভিমানে কল কেটে দেয়। নানাবিধ প্রশ্ন জাগে তার মনে। চোখে আলো ছায়া দেখে। মিনিট বিশেক পরে আবারও সে তুলির মুঠোফোনে কল দেয়। সেই বিরক্তিকর লেখা। ধৈর্য্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এবার সে তার নিজের সিম লাগিয়ে কল দেয়। তুলি কথা বলতেই থাকে। কে কল দিল সে দিকে যেন তার নজরই নেই। হঠাৎ তুলির মুঠোফোন বন্ধ পায়। রাগে গড়গড় করতে থাকে অনিক। বিকেলে আবারও কল দেয় অনিক। সেই ওয়েটিং সার্বিস। এবার কল রিসিব করে । অনিক ঠান্ডা মাথায় বলে -কার সাথে কথা বলছিলে? মিনুর সাথে-তুলি জবাব দেয়। দুপুরে কার সাথে কথা বলছিলে ? দুপুরে.. কই নাতো! -তুমি আমার সাথে মিথ্যে বলছো কেন?-মিথ্যে বলব কেন;-দুপুর বারটা থেকে একটা পর্যমত্ম এত সময় কার সাথে কথা বলছিলে? উকিলের মত জেরা করতে থাকে অনিক। তুলি সব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। অনিক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। রাগতস্বরে অশালীন গালিগালাজ করে। তুলিও রাগ করে মুঠোফোন বন্ধ কওে দেয়। এরপর যোগাযোগ বিহীন কেটে যায় বেশ কয়েক দিন। অনিক নিজেকে প্রবোধ দেয়। মন থেকে সবকিছু মুছে ফেলার চেষ্টা করে। একবার ভাবে ওকে ঢাকা আনলেই তো সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। নানাবিধ চিন্তাভাবনা করে সে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নেয়। তুলির জন্য স্বর্ণের চেইন, দামী শাড়ি,বিভিন্ন কসমেটিকস ,জুতা কিনে। সবকিছু গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়।গাড়িতে উঠার পূবেই তার মুঠোফোন বেজে ওঠে। বড় ভাবীর কল। সালাম দিয়ে ঈষৎ হেসে জিজ্ঞেস করে- কি ব্যাপার ভাবী? কান্নাভেজা স্বরে ভাবী বলে-অনিক! এক অজানা শঙ্কা তার মনে দাগ কাটতে থাকে । তবু মনে একটু জোর এনে বলে-ভাবী, বলুন কি কোন সমস্যা হয়েছে? কথাটি বলতে গিয়ে ভাবীর গলা যেন ধরে আসে। তবুও না বলে যে পারা যায় না। অনিক বারবার বলতে থাকে ভাবী বলুন কি হয়েছে? বলুন বলুন.. . .। তুলি এক ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। যতদূও জানি ছেলেটি চিটাগংয়ের। তুই কস্ট নিসনা ভাই তোকে ভাল দেখে আরও একটি বিয়ে করিয়ে দেব। অনিকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তার দেহ হিম হয়ে আসে । হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায় ব্যাগটি। কষ্টের সুতীব্র দহনে তার চোখের কোণে জমা হয় একফোটা জল। অজ্ঞাতসারেই বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস। সে দীর্ঘশ্বাসে যেন আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। বাম হাতে চোখ মুছতে মুছতে আবারও অফিসের দিকে রওয়ানা দেয় অনিক।
©somewhere in net ltd.