নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্প 'সদর দরজা'

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৫





দুপুরবেলা মামা রুবজ এ রহমান হঠাৎ করে বললেন-ভাগনা, চল আজ তোকে আমি একশটা খাবার খাওয়াব। একশোটা খাবার!!! কথাটি শুনে তো আমার চোখ কপালে উঠার মত অবস্থা! মামা যা বলেন তিনি আবার তা করেন। ফলে উনাকে বিশ্বাস করা যায়। বিষ্ময়ের ঘুরে আমি শুধু বললাম, বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে কি?

-না, তবে আমার আজকে খুব খুশি খুশি লাগছে। তাই আজ বিশ্ব...

-খুশি দিবস!

মামা এমনই আজব। উনার মন খারাপ হলে নাকি সেদিন বিশ্ব মন খারাপ দিবস হয়। পাতলা পায়খানা থাকলেও নাকি সেদিন বিশ্ব...! আমিও বা কম কিসে, গোপালভারের মত কেবল রসদ যুগিয়েই যাচ্ছি। যাইহোক, আমি আর কালবিলম্ব করলাম না। কারণ একশ খাবারের লোভ মোটেও সামলাতে পারছি না!

দুজনে বাইক নিয়ে বের হলাম। মামা ঢুকলেন সিলেটের জিন্দাবাজারের পানসি রেস্টুরেন্টে। আমাদের সামনের ও ডানপাশের টেবিলে বসা ছিল উঠন্তি বয়সের বেশ কয়েকজন সুন্দরী তরুণী। আমি অবশ্য বেশি তাকাই না, আমার ইয়ের নিষেধ আছে বলে! আর মামা কি আর ওদের দিকে না তাকিয়ে থাকতে পারে? মামার তো ওসবই চাই। সেই বিজ্ঞাপনের মত, হুইল ছাড়া আমার একদিনও চলে, এটা তো আমার সংসারেরই একটা অংশ! মামারও ওসব যেনো এখন ডাল-ভাতের মত জীবনের অংশ হয়ে গেছে। একটু পর ওয়েটার এসে যা দিয়ে গেল তা দেখে তো আমার চান্দি গরম হয়ে যাওয়ার উপক্রম। দুইবাটি ছোলার দানা নিয়ে এসেছে। এত ভাল হোটেলে এসে কি এই অখাদ্য কেউ খায়?

মামার উপর আমার বেশ রাগ হতে লাগলো। কিন্তু কিছুই বললাম না। মুখে জোর করে ঈষৎ হাসির ভাব এনে শুধু বললাম- আর বাকী নিরানব্বইটা খাবার কোথায়? মামাও তখন একটা বিজয়ের হাসি হেসে বললেন- ভাগিনা, ছোলা গুণে দেখ পুরো ১০০টাই আছে! অর্থাৎ পুরু ১০০ টাই খাবার! আমাকে এইভাবে জব্দ করা দেখে আমি টাস্কি খেয়ে গেলাম। নিজেকে তখন বিশ্বের সেরা মদন বলে মনে হল!

আমি মামাকে বললাম, আপনার ছোলাগুলো নিট্রনের তৃতীয় সূত্র মানছে না, গলা দিয়ে যতই নামাতে চাচ্ছি, কিছুতেই নামছে না! কথাটি শেষ হতেই মামা আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যে আমি আর পুনরায় কিছু বলার সাহসও হারিয়ে ফেললাম।

আমি একটু কর্ণারের দিকে ছিলাম। মামা ছিলেন বাইরে। এমন সময় খেয়াল করলাম বেশ কয়েকজন মেয়ে মামার দিকে উঁকি ঝুঁকি মেরে মুখ টিপিয়ে হাসছে। তাদের সে হাসি যেন আর থামছেই না। একটু পরে তাদের হাসির সে বাতাস যেন ছড়িয়ে পড়ল সামনের টেবিলে। সামনের টেবিলের ভদ্রমহোদয় দম্পত্তিও মুচকি মুচকি হাসতে ছিল। ভদ্রলোকের স্ত্রী যখন আঁড়চোখে মামার প্যান্টের দিকে তাকাল তখনই আমি ব্যাপারটা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। মামাও তাদের হাসি দেখে মুচকি মুচকি হাসতে ছিল। মামা হয়ত মনে করল মেয়েরা ভাব জমানোর জন্য ওসব করছে। অথবা ওনার সুন্দর চেহারায় ওরা মুগ্ধ হয়ে প্রেমে লুটোপুটো খাচ্ছে! তাই তিনিও মাঝে মাঝেই তাদের দিকে বেশ লাজুক লাজুক প্রেমের ভাব নিয়ে তাকাচ্ছেন। কেবল আমারই কেন যেন একটু বেশি ইতস্থতবোধ করতে লাগলো। সংকোচ না করে আমি মামাকে বলেই ফেললাম- আপনার প্যান্টের সদর দরজা খোলা!

- সদর দরজা?

-হ্যাঁ

আমি কথাটি আস্তেই বলেছিলাম, কিন্তু কী করে যেন ঐ দুষ্টু মেয়েরা শুনে ফেলল। শুনে সে কি হাসি! মামা যেন এখন নিজে মদন বনে গেলেন, কিন্তু ভাবখানা এমন যেন কিছুই হয় নি। অন্যদিকে তাকিয়ে প্যান্টের চেন লাগানোর চেষ্টা করলেন। তার এ চেষ্টা অনেক ক্ষণ ধরে চলতে লাগলো। কিন্তু মনে হল বিশেষ কোন সুবিধা করে উঠতে পারেন নি! মনে হল চেইনই নষ্ট হয়ে গেছে।



এক অসহায় ও আত্মসমর্পনের দৃষ্টি নিয়ে মামা আমার দিকে তাকালেন। আমি বুঝে ফেললাম সে চোখের অসহায়ত্বের ভাষা! ত্রিকালদর্শী কি না তাই! মামাকে অভয় দিয়ে খুব ক্ষীণ কণ্ঠে বললাম- আপনার ইন খুলে ফেলুন। উপস্থিত প্রত্যুৎপন্ন বুদ্ধি শুনে মামা যেন নির্ভার বিজয়ের হাসি হাসলেন। এরপর বিল দিয়ে মামা বের হবার সময় শুধু বললাম- ভাগনাদের কখনো ঠকাতে যাবেন না, তাহলে কিন্তু...!!!



মামা আমার পিঠে স্নেহসিক্ত হাত বুলিয়ে অট্ট হাসি দিয়ে বললেন- বেশ, তাই হবে।

তখনও ঐ দুষ্টু মেয়েগুলোর অট্ট হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। থাক, আর কি।



......................................

২১.০৭.২০১৪

টিলাগড়, সিলেট





মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সদর দরজা...মজা পাইলাম... :D

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:০৯

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে আপনি মজা পেয়েছেন জেনে ভাল লাগলো।

বর্ষণমুখর সন্ধ্যার সব ভাললাগা গ্রহণ করুন।

শুভ কামনা সতত।

২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:১৯

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: অনেক সুন্দর।

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩

সৃষ্টিশীল আলিম বলেছেন: অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

আজকের পৃথিবীতে ফোটা সকল ফুলের সুবাস ছুঁয়ে যাক আপনার সৃষ্টিশীল হৃদয়ের গোপন দহলিজ।

নিরন্তর শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.