নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়ি এবং লেখি

সৃষ্টিশীল আলিম

ক্ষুদে সাহিত্যিক, সৃষ্টির নেশায় উন্মুখ

সৃষ্টিশীল আলিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুনশি আলিমের একগুচ্ছ শ্রেষ্ঠ কবিতা

২০ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:২৮






মুক্ত গদ্য: হাসির সমুদ্র
----------------------------------------------------------
তখনো যুবতী বিকেলের গায়ে গা লাগিয়ে সূর্য স্নান করা হয়নি, মেঘের ফসিল দিয়ে মালাও গাথা হয়নি- তবুও তুমি ডাকলে- আমিও... বৈশাখের জমানো উত্তেজনা আমার ভেতর বাজার বসায়; ইন্দ্রিয় জুড়ে বিদেশি বাতাসের গন্ধ মেখে কিছু ভেজা স্বপ্ন কীনব্রীজের রেলিং ধরে উড়ে চলে সুদূরের পানে, অনুভূতির দাপুটে ঘোড়া চালিয়ে আমি তোমার দিকে তাকাই- কী আশ্চর্য, আমি তাকাতেই তুমি তোমরা হয়ে গেলে!
তবু আমি পৃথিবীর মতো গোলাকার তোমার চোখের দিকে তাকাই- বিকেলের মতোই ধূসর তোমার চোখ- কিন্তু কী যে এক মোহ... !
বিশ্বাস করো- আমার রোদেলা শরীর জুড়ে তখন প্রশান্ত সাগরের অবিরত ঢেউয়ের মতো লাজুক কিছু অনুভূতি যৌবনের গেরস্থালি শুরু করে দিল। প্রাগৈতিহাসিক কামনার স্নায়ুজলে আমি ভেঙ্গে যেতে থাকি, অনুভূতির আঙিনায় তখন আর বিদেশি ফ্লেবারের লেশও নেই। দেশীয় সুগন্ধির সুবাতাস বইছে।
সম্বোধনের পর্বে এসে থমকে গেলাম- কী বলে যে শুরু করব... তার চেয়ে ঢের ভালো আমি তাকিয়েই থাকি এবং থাকলামও। হৃদয়ের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলি, গোধূলির মতো তোমার ঠোঁটের কোণে গোপন কিছু কথা ছিল- মুখ ফোটে বলোনি বলে বুঝেই নিয়েছি। কিছু কথা তো থাকে ভঙ্গির মাধ্যমে বুঝে নেওয়ার- তাই না?
স্পর্শের অনুভূতি কেমন হয়? ধারণায় সিদ্ধি লাভ করতেই আমি ছুঁয়ে দিলাম তোমার নগ্ন নির্জন হাত। উফ! শিশুর মতো কোমল! অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতির সমুদ্রে আমি তখন নিরেট শিশু! কী একটা বলতে বলতে কানও ছুঁয়ে দিলুম, অবশ্য এদিন বিশ্ব কানমলা দিবস ছিল না! তুমি প্রগাঢ় লজ্জায় হাসলে, জগৎবিখ্যাত সোয়াম ফরেস্টের জলের মতোই স্বচ্ছ সে হাসির জলধারা - কী যে সে বিস্ময়কর হাসি! এ যে আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের ফেরিওয়ালা!!!
সে হাসির সমুদ্রে একবার অবগাহন করলে আর ফিরতে ইচ্ছে করে না।
----------------------------
২৯.০৪.২০১৫
মুনশি আলিম
বোরহানরবাগ, টিলাগড়, সিলেট







পাগলি

---------------------------------------------------------------------------

১.
অপরাহ্ণের বিরহীভাব গায়ে মেখে ক্লান্ত পাখির মতো পাগলি বলে, ‘আজ খুব ঠাণ্ডা লাগের’। ক্ষীণকণ্ঠের মূর্ছনায় স্নান করে বরফ রঙের বয়সী আকাশ। অনুভূতির দরজা খুলে দক্ষিণা বায়ু সঙ্গীতের হৃদতন্ত্রীতে সুর তুলে। পাতার সবুজ আল্পনায় তখনো একসমুদ্র ঘোর! অপরিপক্ক রোদের ভেতর থেকে উঠে আসে রোমান্টিকতার পরাগরেণু, পাতালপুরীর সব অবিশ্বাস নিয়ে আমি নিজের শরীর ছুঁয়ে দেখি- নাহ্! আসলে তখনো আমার ঠান্ডা লাগেনি, কিন্তু তার তেঁতুলের মতো কণ্ঠের স্পর্শকাতর সুগন্ধিতে আমার ঠাণ্ডাই লেগে গেল!

২.
রোমান্টিকতার অসীম সমুদ্র অবগাহন করে আমি অবলীলায় বললাম- এমন দিনে... পাহাড়সম জড়তায় বাকীটা আর শেষ করতে পারিনি, কিন্তু তাতেই ক্ষেপে গেল পাগলি- অস্তাগফিরুল্লা! নাউজুবিল্লাহ!! নাউজুবিল্লাহ!!! আমার গলা ধরে আসে। সাহারার ধূসর মরীচিকা আমার বিবর্ণ শরীরে লেপের মতো লেপ্টে থাকে, অনুভূতির আঙিনায় গ্রহণের কাল কেবলি জানান দেয় বিলুপ্ত সভ্যতার কথা! মধ্যযুগের ভ্যাঁপসে গন্ধ একে একে ভীড় করে দৃষ্টির আঙিনায়। অপরিপক্ক অনুভূতির কাছে হার মানে অপরাহ্নের গোপন সুখ।

৩.
শ্লোগান কাতর ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে আমি বলি - ‘নাউজুবিল্লাহ’ খিতার লাগি? পাগলি তখন হাসে। হেসে কুটিকুটি হয়। তার হাসির সমুদ্রে অবগান করে অপরাহ্নের শাদা মেঘ। কেবল আমিই তখন অভিমানের বৃষ্টিতে ভিজি, ভিজে একাকার হই। প্রলাপ বকা রোগীর মতো অস্ফুট স্বরে বলি- পাগলি!



------------------------------------
মুনশি আলিম
পূর্ব শিবগঞ্জ, সিলেট
2৫.০৪.২০১৫









অনুভূতির সাতকাহন
-------------------------------------------------------------------
তোমার ভাপা পিঠার মতো বুক দেখলে আমার হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বরের কথা মনে পড়ে
মাছ বিক্রেতার ফরমায়েশি ফাঁকিবাজি প্লেট উবু হয়ে সামনে আসে
ইতিহাসের প্রাচীরে দাঁড়িয়ে বিবর্ণ পিঙ্গল চোখের ভিতর দিয়ে দেখেছি তোমার ছেড়া কাঁথার মতো মন
তোমার ভালোলাগার আমিষে এখনও পারফিউমের গন্ধ বেরোয়!
তাই দেখতে গায়ে হলুদ মেখেছে প্রত্যাশার নগরী
তোমার অভিবাদন নিতে ধান খেতে নেমে আসে রূপালি চাঁদ
গত শতকে তোমাকে খুব শাসন করতে ইচ্ছে করেছিলো, কিন্তু পারিনি!
সেই থেকে একটি প্রজন্ম ধরে বিপন্ন ইচ্ছেরা রচনা করে চলছে অনুভূতির সাতকাহন
বাদামপাতার শিখরে লুপ্ত সময়
অবসাদের গায়ে সন্ধ্যার ঘ্রাণ নিয়ে আসে অদ্ভুত চেতনার ইতিহাস
এই তো চিন্তার নগরী, এখানে কেউ ঘুমায় না
গোধূলির ম্লান আলো মেখে পরিচিত নক্ষত্র গিয়েছে পুড়ে কাল সারারাত
হৃদয়ের কুয়োতলায় একটি মৃত শব্দের ভিতর জন্ম নেই। পৃথিবীর উঠোন জুড়ে নতুন বার্তা।

------------------------------------
মুনশি আলিম
১৯/২০.০৩.২০১৫
শাহবাগ, জকিগঞ্জ, সিলেট




























পৃথিবীর গোপন কান্না
------------------------------------------------------------------------

বিকেলবেলা বিদেশি মেঘ এসে যখন ঝুঁকে পড়েছিল গোলাপ বাগানে
আফ্রিকার সব অসহায়ত্ব নিয়ে ছেলেটি তখনো কাঁদছিলো
নিথর অশ্রুর লবণ থেকে উঠে আসে স্মৃতিকণা
হতাশ হয় ইউরোপের ছায়া মাড়ানো আয়েশী বিকেল
দূরে নীল নক্ষত্রের দেশ অবাক তাকিয়ে রয়
বিপন্ন সভ্যতার তীরে দাঁড়িয়ে কিছু অশিক্ষিত কুকুর মুছে ফেলে বাতাসের ফেনা
সূর্যদেবির ঘুম ভাঙ্গেনি তাই রাস্থার ধারে পরিচিত সেই অনাথ শিশুটি আজ ভীষণ খরায় পুড়ছে
কোন পরিচয় নেই
আমরা ডাকি ‘টোকাই’ ।
ও হ্যাঁ আরেকটা নাম আছে ‘জারজ পোলা’!
হায়! জন্ম যে বাংলাদেশে! এখানে কেউ নিজের পরিচয়ে নয়- বাঁচে অপরের পরিচয়ে!!!
পৃথিবীকে গোপন দুঃখ দিয়ে কোন এক অস্থির সময়ে জন্ম তার
হয়ত কোন কাপুরুষ নর-নারীর গোপন অবৈধ লিপ্সার ফসল- সামাজিক লজ্জার ভয়ে যাকে ফেলে রেখে গেছে ভবিষ্যৎ অন্ধকারের কাছে
ভাগ্য খুলে যেত যদি প্লেটোর ‘আদর্শ রাষ্ট্রে’ জন্ম হত-
কুকুরের সাথে মাখামাখি করে ড্রেনের বাসী খাবারই হয়ে ওঠে তার সকালের নাস্তা
মানুষের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে সভ্যতাকে জানান দেয় তার আদিমতার কথা
তার শুকনো আমসি বুক থেকে উপহাসের গন্ধ বেরোয়
মানবতার পরাজয়ে পৃথিবী কাঁদে- পৃথিবীর গোপন কান্না কেউ দেখেনি-দেখে না
সেই থেকে সভ্যতার তলপেটে ব্যথা !


------------------------------------
মুনশি আলিম
জকিগঞ্জ , সিলেট
০৩-০৭.০৪.২০১৫






ভূমিহীন আকাশ
-----------------------------------------------------------------
রোদ্রস্নাত পৃথিবীর গোলাপী ঠোঁটে মঙ্গলের লালিমা যখন চুইয়ে পড়ছে ঠিক তখনি
আমি নক্ষত্র হয়ে নীল রঙের ভিতর দিয়ে কাছে আসি
পৃথিবীর শুদ্ধতার হসপিটালে আবেগের গন্ধ শুঁকতে
ইস! যদি একটু ছুঁতে পারতুম!
পৃথিবীর শুকনো হাসিতে মহাবিশ্বও যৌবন ফিরে পায়, তৃপ্তির নৌকো চড়ে বাড়ি ফিরে
শরীরী প্রচ্ছদের ভাঁজে আধুনিক সভ্যতা ইতিহাসের গুঞ্জন তুলে
পরিকল্পনার পাকস্থলীতে গোপন অভিসারের বাজার বসে রোজ
প্রয়োজনের বরাত দিয়েই খাবলে খায় রোমান্টিকতার নগ্ন ভোর
বহুকাল ধরে পৃথিবীর চিবুকের এক অসমাপ্ত তিল জুড়ে কল্পিত জগতের হুরিরা নৃত্য করে চলছে,
তাই দেখে দেবতাদের চোখ এখনও কামের গন্ধ
কী অদ্ভুত! আকাঙক্ষার জলখাবার খেয়ে দিব্যি সতেজ তার ভূমিহীন আকাশ,
আজ তাকে মনে হল ছব্বিশ বছরের ছুকরি!
যে চুম্বনের উষ্ণতা নিয়ে বেঁচে আছে কয়েকশ বছর ধরে অথচ-
ভেজা অন্ধকারে কয়েক শতাব্দী ধরে নাটকীয়তার চাষ করছে
সমকালীন নাটকীয়তায় জন্ম নেয় একগুচ্ছ অভিমান
এক বিমূঢ় অন্ধকারের আড়ালে তার টলোটলো চোখ
পৃথিবীর আকাশে অনেক দিন থেকে মেঘ জমে কিন্তু বৃষ্টি হয় না।
কী এক অজ্ঞাত কারণে পৃথিবীকে এখনও 'সরি' বলা হয়ে ওঠেনি!
--------------------------------
মুনশি আলিম
১৮.০১.২০১৫
টিলাগড়, সিলেট









নিষিদ্ধ শহরে
----------------------------------------
ভদ্রতার জলখাবার খেয়ে হাসির জ্যোৎনাজলে তুমি যখন নাইতে নামো
আমার তখন পাজেরা নিয়ে ঘুরতে ইচ্ছে করে তোমার নিষিদ্ধ শহরে
--------------------------------
মুনশি আলিম
১৪.০১.২০১৫
টিলাগড়, সিলেট
























মহাকালের পীর


একগুচ্ছ সুন্নত নিয়ে এখনও আমি মহাকালের পীর
সভ্যতা দোহন করে পৃথিবীর কলাবাগানে নূরের চাষ করে চলেছি
কুসংস্কারের চাদর দিয়ে আমার শরীর
ফরজের গায়ে হলুদ মেখে ফতোয়ার বাসরে নিত্য পূজা দেই
নারীর গন্ধ শুঁকে রুহানীর মাত্রা ধরে হাঁটি
আমার ঝাড়-ফুঁক পৃথিবীর ঘরে ঘরে
বহুকাল ধরে ধর্মের ক্লোনিং চলে সভ্যতার আঁচলে
আমার হিকমতে নিম্নবিত্ত আকাশ থেকে তাবিজ বৃষ্টি হয়
পৃথিবী ভরে ওঠে, গর্ভবতী হয়
ভাবের লেবাসে আমার অশরীরী আত্মা নূরের সুধাপান করে এখনো প্রসব করে চলেছে মৃত সকাল
দৃষ্টির সমভাঁজে নদী আর নারী
পীথাগোরাসের সূত্র মেনে অবগাহন করি-অহর্নিশি
আমার ভিতরে অন্তর্বাস খুলে সৃষ্টি রহস্য উলঙ্গ হয়ে ঘুরে, আমিও
শিষ্টাচারের প্রদীপ জ্বেলে কামনার তুলসি তলায় বহুকাল ধরে
আমি এখনও বেঁচে আছি প্রজন্মান্তরের শরীরে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে।
------------------------------
০১.০১.২০১৫
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট




















ভূমিহীন রাত

কোন এক ভূমিহীন রাতে শাস্ত্রের গুহায় জারজ হয়ে জন্ম নেই
দূর দিগন্তের অদ্ভুত আলোতে আমিষ ও নিরামিষ
ভূমিহীন আদর্শের লাঙল কাঁধে নিয়ে নিরাকার সাকার ঝগড়া বাঁধে
পৃথিবীর ঘরে ঘরে সত্যের ঝড় ওঠে
পাপ ও পূণ্যের পসরা সাজিয়ে আয়ুষ্কালের পঞ্জিকাতে ঘুমাই আর আমার আঁচল ধরে মহাকাল
সাধন-ভজনের ঘরেও কাম ও প্রেম ফণা তুলে
আমার ভেতরের ঈশ্বর অস্থির হয়ে ওঠে, হয়ত পৃথিবীও
আমি তবুও পুরাণের মাত্রা ধরে হাঁটি
ইতিহাসের নগ্ন ঠোঁটে চুম্বন দিয়ে ঘোলাটে আইনে জন্মে দরিদ্র আলো
আমার বিরানভূমিতে লাভ ও লোভের শস্য ফলায় উলঙ্গ পৃথিবী
দৃষ্টির ঠোঁট বেয়ে নামে সত্যের দীর্ঘশ্বাস
বিলাসীতার ব্যালকনীতে প্রত্যাশা ঢেঁকুর তুলে
অস্তিত্বের ছায়াঢাকা ক্যানভাসে আমি অনাদিকাল থেকে মৃত
আমার মৃত শরীরে চুম্বন দিয়ে পৃথিবী হাসে, বড়ই ছেনালি হাসি
একটুকরো ভোর শাস্ত্রীয় অন্ধকারের মোহনায় অনাদিকাল থেকে।

------------------------------
৩১.১২.২০১৪
মুনশি আলিম
বোরহানবাগ, পূর্বশিবগঞ্জ, সিলেট










মেঘবতী
------------------------------------------------
মেঘবতী, কম্পিত আরক্তিম ঠোঁটে মৃদু সম্ভাষণ জানিয়ে তুমি যখন বিদায় নিয়েছিলে
একটি ভারাক্রান্ত শহর তখন অঝরে কেঁদেছিল; আর আমি? অবলীলায় যন্ত্রনার ছাদের ওপর চড়াট করেছি
এলোমেলো হয়ে মধুর চেয়ে মিষ্টি কিছু শব্দ লিখে চুমু খেয়েছি-
অদূরের চিঠির অক্ষরের মতো অস্পষ্ট গ্রামগুলো স্মৃতির হিমালয় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
সময়ের পৃষ্ঠা দখল করা বেআব্রু স্মৃতি ক্লান্তির বিছানা থেকে বিদায় নেয়
একটি ঘনয়মান সন্ধ্যার শরীর ছুঁয়ে বিমূর্ত কিছু দীর্ঘশ্বাস তোমার শরীরের গন্ধ এঁকে চলে তখনো
মুখোশপরা সময় আমার পরিচিত দুঃখদের দেখে না

মেঘবতী, তুমি তো কখনো জানলে না-দূরাগত বাতাস থেকে কীভাবে ছোট্ট শহর গর্ভধারণ করে
কীভাবে হাতের তালুর নিচে পৃথিবী রচিত হয়- তুমি তো কখনো রাত্রির কান্না শোননি-
নাই বা শোনলে-
চেতনার ফসলি জমিনে তুমি আমার কুমারি বাগান- কচি ধানের মতোই বিশ্বস্ত
তবুও তোমার চোখের দিকে তাকালে কেন দেখতে পাই ভিন পুরুষের ছায়া?
বিশ্বায়নের জ্যামেতিক অঙ্ক কষেও ভালোবাসার ফসলি ভূমিতে আমি এখনো বিশ্বস্ত কৃষক।
--------------
মুনশি আলিম
টিলাগড়, সিলেট
০৩.০৪.২০১৫





মৃত সকাল
-------------------------------------------------------------

কোন এক মৃত সকাল থেকে আমি সিজদায় রত
প্রার্থনার বৈতরণী বেয়ে পৃথিবীর বুকে নামে আলোকজল
পিপাসার্ত ঠোঁটে জ্ঞানের মাত্রা ধরে হাঁটি
পৃথিবীর আকাশে সত্যের ভোর
আরশের নিচে সুন্দর আর কুৎসিতের বাগানে আমি ন্যাংটো মুসাফির
অনুভূতির ম্রিয়মান আলোয় কিছু জিজ্ঞাসা সময়কে খাবলে খায়
অনাদিকাল থেকে পৃথিবী ন্যাংটো, আমিও হয়তবা স্রষ্টাও
স্রষ্টার দৃষ্টি জুড়ে মহাকাল ঘুমায়
বাতিকগ্রস্থ ঘুম
প্রজন্মান্তরের ভিতর দিয়ে একটুকরো অন্ধকার চড়াট করে অনুভূতির শিরা-উপশিরায়
গন্ধমের তীব্রতা মহাকালের নগ্ন বুক ছুঁয়ে নেমে আসে পৃথিবীর গোপন অঙ্গে
অনুভূতির কর্মযজ্ঞে প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে স্রষ্টা, আমি ও আমরা
পৃথিবী আলোকিত হয় মধ্যপ্রাচ্যের সুন্দরের ধ্যানে
কামরাঙা ঠোঁটের বাহাত্তর হুর স্বর্গ থেকে উঁকি মারে
অনুভূতির লেলিহান শিখায় যৌবন উছলায় বহতা নদীর মতো
আমার হৃদয় ভাঙে পৃথিবীর জটিল ক্যানভাসে
আমলনামার ভিতর দিয়ে আমি হুরীর দিকে তাকাই
কল্পিত সুন্দরের ধ্যানে আমি রোগী হয়ে ওঠি, পৃথিবীও
পৃথিবীর ঘরে ঘরে লোভের দৌরাত্ম্য
আকাঙ্ক্ষার শরীর কামড়ে এখনও আমরা প্রসব করে চলেছি মৃত সকাল।

------------------------------
৩০.১২.২০১৪
মুনশি আলিম
বোরহানবাগ, পূর্বশিবগঞ্জ, সিলেট







চিন্তার গুহায়
-------------------------------------------------------------------------------
গত রাতে খবর পেলুম
বিবর্তনের আঁতুরঘরে মৃৎ সকাল প্রসব করেছে মহাকাল
ট্যাজেডি ভারী হলে তটরেখার ওপর হলুদ দাঁত বের করে হাসে মহাকাল,
অবলীলায় ভাঙে, ভেঙে ভেঙে জোছনায় ছাই হয়ে যায়
ছাইয়ের জীবাশ্মে ভয়ার্ত অনুরণন, অদ্ভুত অনুভূতির পসরা
চিন্তার ব-দ্বীপে মৃত্যুর চিঠি নব্য পালকি চড়ে ডারউইনের অদ্ভুত দেশে
সে এক আজব দেশ
মানচিত্রের বাসরঘরে মৎস-নৃত্য, ভূত-নৃত্য, প্রতারণা-নৃত্য বিশ্বাসের সুধা পান করে চলছে অহর্নিশি
দৃষ্টিজটের মহাবিশ্বে এক মৃত কোপান বিষ্ঠাশ্ম জন্ম দিয়ে চলছে
তৃতীয় বিশ্বে এখনও টিকটিকির বিয়ের ইতিহাস কেউ জানে না
পাশ্চাত্যের সাদা আকাশে নগ্নতার ঘনীভবন রোজ সভ্যতার ইতিহাস রচনা করে
অসংজ্ঞায়িত চরিত্রের পোয়াতি মাঠে আমাদের তৈরি দেবতারা
হাজার বছর ধরে রক্ষিতার শরীর লেপ্টে আছে
আত্মপ্রচারের বাতিক ক্যানভাসে নবুয়্যতের জলবায়ু প্রজন্মের বিশ্বাসের অন্ধগলির পথে
সত্যদর্শনের ক্লাসিক্যাল মাঠে আমরা এখনও ন্যাংটো পুরোহিত
গোলীয় চশমার বৃত্তে দৃষ্টির পরিধি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর
তৈরি করা আইনে সভ্যতার বিয়ে চলছে অনাদিকাল থেকে
আমাদের তৈরি প্রথায় বৈধও হয়ে ওঠে অবৈধ
আর এ কারণেই এখনও আমরা মৃত।

------------------------------
২৯.১২.২০১৪
মুনশি আলিম
বোরহানবাগ, পূর্বশিবগঞ্জ, সিলেট






ইতিহাসের ছাউনি
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

অনাদিকাল থেকে আমার ভিতরে ঘুমায় ট্রাইগ্রিস ইউফ্রেটিসের জল
স্বপ্নের দ্বীপাঞ্চলে ক্যালডীয় সভ্যতা ভবিষ্যৎ বুনন করে চলে
চিন্তার গভীর অরণ্যে আমি মৃত মেনেস হয়ে মেম্ফিসে ঘুরি
মারডুক হয়ে সঙ্গমে রত থাকি দেবি ইশতারের সাথে
বোধের ভেতরে নেবুচাদনেজার হয়ে চড়াট করি ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানে
আমার শরীরে ঘুমায় পৃথিবীর অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংসরা
মাল্টা সিসিলি, কর্সিকা সাইপ্রাস হয়ে আমার মৃত শরীরে জন্ম নেয় বাইশটি ব্যঞ্জনবর্ণ
আমাকে চমকে মাটি খুঁড়ে উকি মারে হরপ্পা নগরী
আমি পুনঃ জন্ম নেই,
ইতিহাসের ছাউনি তুলে বৃষ্টিতে ভিজি
দ্রাবিড় হয়ে প্রজননে মেতে ওঠি ইরাবতীর তীরে
রক্তের গন্ধ শুঁকে আজও স্বজনের কথা বলে চলে একিমেনিস
প্রত্যাশার মাহাবিশ্বে ফলনহীন ইতিহাসের ফসিল আজ মাচুপিচুর গোপন আস্তানায়
রাত্রিখোর জোনাকির মতো ব্যাবিলনীয় সভ্যতা চোখ জুড়ে রঙের প্রলেপ দেয়
অনাগত ইতিহাসের জিহ্বায় কিউনিফর্ম
দৃষ্টির ভাঁজে রে, আমান রে, ফারওরায়ের দল
শীতের বয়সী কাঁথা মুড়ি দিয়ে আলোর বীর্জে ঘুমায় আমেন হোটেপ, আমিও
বহু বছরের পুরনো ঘুম।
নির্ভেজাল ইতিহাসের চাষ করে চলছে মহাকাল।

------------------------------
২৮.১২.২০১৪
মুনশি আলিম
বোরহানবাগ, পূর্বশিবগঞ্জ, সিলেট





আগামির চাষ
-------------------------------------------
হাজার বছর ধরে যৌবনের গেরস্থালিতে তুমি এক বয়সিনী বট!
শরীর পূজার ব্যাকরণ খুলে আবেদনের সমুদ্রে চির অম্লান
নৈঃশব্দের শব্দঘরে আদম সুরতে উজ্জ্বল অদ্ভুত কামের ইতিহাস
তোমার সুর ধরে প্রত্যেহ ঝরে ভাবনার আলোকজল
প্রত্যাশার বাণিজ্যমেলায় প্রেম কাম হয়ে ঘুরে নবুয়্যতের আশায়
চিন্তার আবাসন মেলাতে এখনো শরীরই প্রধান
এজন্যই বুঝি ইতিহাসের গোপন অঙ্গে চুম্বন দিয়ে তুমি এখনও বয়সী কামদেবি!
প্রাপ্তির শহর জুড়ে কথক নৃত্য সন্ধ্যা
সূত্রের অন্তর্জাল বুনট করে চলছে শিয়াল শামুক তোলার মতো
নির্মাণের ছরি এখনো যুবাদের নখাগ্রে নামে স্বপ্নজল হয়ে
মহাকালের পৃষ্ঠা ছিড়ে হলুদ দাঁত বের করে কামের দেবতা
পূজার ডেকোরেশনে আবেদনের ঝড় তুলে
শরীরের শিল্পাঞ্চল জুড়ে আজও আমাদের পুরাণ অন্ধগলির চিরায়ত পথে
নখদর্পণে নির্ভেজাল আগামির চাষ
সময়ের প্রচ্ছদ জুড়ে কিছু অলিখিত প্রাপ্তি হোমারের এপিটাফ হয়ে ইস্কিলাসের ঘরে
রোদনের মহাবিশ্বে নতুন ভোর
কামহীন সকালের গোপন অঙ্গে আমরা অনাদিকাল ধরে
------------------------------
২৭.১২.২০১৪
মুনশি আলিম
জাফলং, সিলেট











কামহীন সকাল
-----------------------------------------------------------------------------------------------------

তোমার অবহেলায় পৃথিবীর ঠোঁট বেয়ে নামে দীর্ঘশ্বাস
মহাকাল থেকে খসে পড়ে নিঃস্বার স্বপন
রোদনের মৃত গন্ধ শুঁকে তবুও হিজলতলায় জন্ম নেয় গুচ্ছ গুচ্ছ প্র্রেম
চুম্বনসমগ্রের সুবাস নিয়ে অবহেলা প্র্রেম হয়ে ফিরে আসে মৃত্তিকা শরীরে
তোমার বাঁকা চোখের চাহনিতে একঝাঁক বোদ্দুর
খলসের মতো হেসে জননকেন্দ্র্রের রহস্যময় উপবৃত্তের পথে হাঁটছে কয়েক শতাব্দী থেকে
সন্নিহিত ভালোবাসার উত্তাপে বিগত শতাব্দী এখনও ঋণি
ক্ষুধাতুর চোখের করিডোরে নির্লপ্ততার অন্তর্বয়ান ভবলীলায় মহাকাব্য বুনট করে চলছে
শিরি-ফরহাদ, লায়লী-মজনু, রোমিও-জোলিয়েটদের সরল প্রেম
অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে পৃথিবীর কলাবাগান থেকে;
বিশ্বায়নের থাবায় ভিখরির প্রেমতত্ত্বও এখন জটিল থেকে জটিলতর
প্রেমের শরীর জুড়ে কেবল কামের গন্ধ
চাহিদার কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধিষ্ঠির, জিউস, রাবণসহ আমাদের পৌরাণিক পূর্বপুরুষ গোলীয় উপবৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুতে
সুভাষণের মহাবিশ্বে তকমা লাগিয়ে চলছে পুরোহিত প্রেমিক
ভাবের ঘরে জলপট্টির সুভাষণের অতিশায়ন রোদ্রজল হয়ে নামে তোমার শরীরে
নিভৃতের দুয়ার ভেঙ্গে চিন্তা থেমে যায় দৈহিক পুরাণের ঘরে
সুমিষ্ট কথার জলপান করে আমি অনাদিকালের প্রেমিক তুমি যেমন অনাদিকালের প্রেমিকা
পৃথিবীর ঘরে ঘরে চুম্বনের বৃষ্টিতে টইটুম্বুর প্রেমের জলাশয়
তোমার শরীর জুড়ে আমি আমরা আমাদের অনাগত...
পিরামিডের মতো চিররহস্যময় তোমার চাহিদার কেন্দ্রীয় অঞ্চল
ভাঁপাপিঠার মতো উষ্ণ চাহিদার দুই গোলার্ধ জুড়ে এই মেঘ এই বৃষ্টি
হতাশার জ্যোতিষ্কমণ্ডলীতে রোদনের প্রলেপ ঘাসফুল হয়ে পৃথিবীর পথে
প্রাপ্তির বিচ্যুতিতে মানববন্ধনে নামে ফর্মাফর্মা কুয়াশা
তোমার মাংসল দেহের সুসজ্জিত ডেকোরেশনের আমি পুনঃপুন জন্ম নেয়া খদ্দের
আফ্রিকার সঞ্চিত অন্ধকারের ভিতর অনাদিকাল থেকে তোমার বিরানভূমিতে চাষ করে চলেছি
দেহের ভাঁজে ভাঁজে কামের দেবতাদের নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণা এখন পিএইচডি লাভের পথে
উন্মাদনার বাঁকাচাঁদ সভ্যতার ক্যালিওগ্রাফিতে তসবি জপে,
তসবির গা জুড়ে গন্ধমের অলিখিত গোপন গন্ধ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বুদবুদ নালিতে
তোমার দৈহিক মহাবিশ্বের পথে এখনো নগ্ন হেঁটে চলছে কামুক যুবা পথিক
উষ্ণতার নিরক্ষীয় অঞ্চলে শতাব্দী ধরে চলছে শৈল্পিক কামের চাষাবাদ
ললিতকলার ক্যানভাসে হেথা নিত্য বসে সাহিত্যের পাঠশালা
শরীর ঘেঁষে প্রত্যহ জন্ম নেয় সাহিত্যের জাইগোট
বিকিনিপরা চাহিদার হাটে অনাদিকাল থেকে চলছে শিল্পের মেলা
নৈঃশব্দের শব্দঘরে আদম সুরতে উজ্জ্বল অদ্ভুত কামের ইতিহাস
হাজার বছর ধরে যৌবনের গেরস্থালিতে তুমি এক বয়সিনী বট!
শরীর পূজার ব্যাকরণ খুলে আবেদনের সমুদ্রে চির অম্লান
তোমার সুর ধরে প্রত্যেহ ঝরে ভাবনার আলোকজল
প্রত্যাশার বাণিজ্যমেলায় প্রেম কাম হয়ে ঘুরে নবুয়্যতের আশায়
চিন্তার আবাসন মেলাতে এখনো শরীরই প্রধান
এজন্যই বুঝি ইতিহাসের গোপন অঙ্গে চুম্বন দিয়ে তুমি এখনও বয়সী কামদেবি!
প্রাপ্তির শহর জুড়ে কথক নৃত্য সন্ধ্যা
সূত্রের অন্তর্জাল বুনট করে চলছে শিয়াল শামুক তোলার মতো
নির্মাণের ছরি এখনো যুবাদের নখাগ্রে নামে স্বপ্নজল হয়ে
মহাকালের পৃষ্ঠা ছিড়ে হলুদ দাঁত বের করে কামের দেবতা
পূজার ডেকোরেশনে আবেদনের ঝড় তুলে
শরীরের শিল্পাঞ্চল জুড়ে আজও আমাদের পুরাণ অন্ধগলির চিরায়ত পথে
নখদর্পণে নির্ভেজাল আগামির চাষ
সময়ের প্রচ্ছদ জুড়ে কিছু অলিখিত প্রাপ্তি হোমারের এপিটাফ হয়ে ইস্কিলাসের ঘরে
রোদনের মহাবিশ্বে নতুন ভোর
কামহীন সকালের গোপন অঙ্গে আমরা অনাদিকাল ধরে


-------------------------------
26.12.2014
মুনশি আলিম
পূর্ব শিবগঞ্জ, সিলেট



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.