নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ আহমেদ

সৌরভ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাগদুব সিরিজ ♦️ ▪️পর্ব ৭ : কোথাও \'জিম্মি\', কোথাও \'ভষ্ম\'...

০২ রা নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২০

সর্বশেষ নবী খেজুর বাগানে ঘেরা মদীনায় আসবেন জেনেই সেখানে বসতি গড়েছিল তিন ই''হুদি গোত্র- বনু কায়নুকা, বনু নাদির এবং বনু কুরায়জা। তারা আরো অনেক লক্ষণ সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল ছিল, কারণ তাদের কিতাবে সেসব উল্লেখিত ছিল। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, 'তারা তাকে চেনে যেমন করে চেনে তাদের সন্তানকে।' (সূরা বাকারা: ১৪৬)
তাদের আশা ছিল সেই নবী আসবে তাদেরই বংশ থেকে, যার শরীরে বইবে বনী ইসরাইলের রক্ত। কিন্তু পরবর্তীতে তারা দেখলো তিনি এসেছেন ইব্রাহিম (আ:) এর প্রথম পুত্র ইসমাইল (আ:) এর বংশ থেকে, যাকে তারা আদৌ পুত্র মানে না। ফলে যা হওয়ার তাই হলো- তারা আবারও নবুয়্যত অস্বীকার করলো, আবারও নবীকে হত্যা করতে উদ্যত হলো।
মদীনায় হিজরতের পর সেই তিন ই"হুদি গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন রাসূল (সা:)। কিন্তু একের পর এক অবাধ্যতা আর ষড়যন্ত্রের পর চুক্তি বাতিল করে তাদের মদীনা থেকে বের করে দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তবে সর্বশেষ ই"হুদির বনু কুরায়যাকে (পুরুষদের) সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডই দেয়া হয়েছিল; তাদের অপরাধ ছিল- খন্দকের যুদ্ধে কাফিরদের সাথে আঁতাত এবং গোপনে সকল মুসলিম মহিলা ও শিশুদের মেরে ফেলার চেষ্টা। আজ আমরা তাদের নিরীহদের উপর পৈশাচিকতা দেখে অবাক হই, অথচ সেটা নতুন কিছুই না।
এরপর রাসূল (সা:) ই"হুদিদের আরেক ঘাঁটি খাইবারও দখল করে ফেলেন, কারণ সেখান থেকেও তারা নানা ভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল। পরবর্তীতে উমার (রা:) খলিফা হয়ে পুরো জাজিরাতুল আরব থেকেই তাদের উৎখাত করেন। এমনকি বাইজেন্টাইনদের হাত থেকে আল-আ'কসা জয় করার পর তার চুক্তিপত্রে লেখা ছিল- 'ফি"লিস্তিনে খ্রিস্টানদের মত ই"হুদিদের বসবাসের কোনো অনুমতি নেই।'
কিন্তু এরপরও ই"হুদিরা নানান কুট কৌশলের মাধ্যমে মুসলিমদের মাঝে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করে। যেমন উসমান (রা:) এর সময়ে আবদুল্লাহ বিন সাবা নামের এক ই"হুদি এজেন্ট মুসলিম সেজে তার সমালোচনা শুরু করে এবং আলী (রা:) কে খিলাফতের বেশি হকদার হিসেবে প্রচার করে। এভাবে মুসলিমদের মধ্যে প্রথমে শিয়া-রাফেজি ফিতনা ও পরবর্তীতে খারেজি, মুতাজিলা, মূর্জিয়া ইত্যাদি ফিতনা শুরু হয়, যা এখনও চলছে।
মুসলিমদের হাতে ফি"লিস্তিন চলে আসলে ই"হুদিদের পবিত্র ভূমিতে ফেরা আরো কঠিন হয়ে যায়। আবার যখন ইউরোপের খিষ্টানদের সাথে মুসলিমদের মধ্যে একের পর এক ক্রুসেড যুদ্ধ (১০ম-১৩শ শতাব্দী) সংঘটিত হয়, তখন তারা আরো নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলতে থাকে। তবে তলে তলে নানা চক্রান্ত করা তারা ঠিকই চালিয়ে যায়। কথিত আছে, আল-আ"কসা বিজেতা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর শাসনামলে বহু ইমামকে হত্যা করা হয়, কারণ তারা ছিল আসলে ই"হুদি এজেন্ট।
মধ্যযুগে ইউরোপে ই"হুদিরা জড়ো হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিশেষ করে তুর্কি ও পূর্ব আফ্রিকা থেকে। মুসলিম শাসকদের দেশ থেকে তারা কমই সেখানে যেত। কারণ সেখানে তারা 'জিম্মি' হিসেবে বেশ সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারতো, যা তাদের ইতিহাসে খুবই কমই দেখা গিয়েছে! (জিম্মি বলতে আজকাল 'পরাধীন ও অত্যাচারিত' বুঝানো হয়, কিন্তু এর মূল অর্থ ছিল 'আয়তাধীন ও দেখভালকৃত';)
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ই"হুদিদের ইতিহাসে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে। রাশিয়ার কাফকাজ (Kavkaz) নামক স্থানের খিসার (Khazar) গোত্রের রাজা পুরো জাতিকে নিয়ে ই"হুদি হয়ে যায়। কিন্তু ততদিনে তো ই"হুদিরা তাদের বংশের বাইরে নতুন কনভার্ট গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাহলে? বলা হয়, কিছু ই"হুদি স্কলার তাদের ইব্রাহিম (আ:) এর বংশধর প্রমাণ করে এবং তাদের স্বাগত জানায়। এরপর রাশিয়ায় তাতার জাতি আক্রমণ করলে তারা পালিয়ে যায় ইউরোপে। পরবর্তীতে খিসার গোত্রের এসব ই"হুদিদের নাম দেয়া হয় এস্কিনাজিক (Ashkenazic) আর তুর্কি-পূর্ব আফ্রিকা থেকে মূল ই"হুদিদের নাম হয় সেফার্ডিক (Sephardic)। (বর্তমানে ইসরা"ইলের ৮০% হলো এস্কিনাজিক ই"হুদি)
মধ্যযুগে ইউরোপে ই"হুদিরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতো, কারণ খ্রিষ্টানদের চোখে তারা ঈসার শত্রু। তাদের সেখানে আলাদা কলোনীতে থাকতে হতো যার নাম 'ঘেটো' (Ghetto)। তারা কোনো ভালো চাকরি করতে পারতো না। উপার্জনের একটিমাত্র রাস্তা ছিল- ব্যবসা, যা খ্রিষ্টান সমাজ নিচু চোখে দেখতো।
ইউরোপে ই"হুদিদের নানা সময় গণহত্যার শিকার হতে হয়। অধিকাংশ সময়ে তাদের দোষে (যেমন সুদের কারবারির কারণে), আবার কখনো বিনা দোষে। যেমন, ১৩৪৭ সালে ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথ নামক ভয়ঙ্কর মহামারী ছড়িয়ে পড়লে সকলে ই"হুদিদের দায়ী করে এবং তাদের একত্র করে জীবন্ত পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়।
এভাবে যেখানেই ই"হুদিরা যেত, কোনো না কোনোভাবে তাদের গায়ে 'মাগদুব' বা 'অভিশপ্ত' তকমা লেগেই যেত।
চলবে..

Collected

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.