নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভৌতিক মানব

ভৌতিক মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা বিস্ময়কর ও বেদনাদায়ক গ্রেফতারের ঘটনা

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৬

জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার দুই ছেলে ও দুই জামাতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার বিকেলে সিএমএম আদালতের সামনে থেকে আচমকা গ্রেফতার করার পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিনব এক অভিযোগও দাঁড় করিয়েছে। বলেছে, এই সাতজন নাকি জামায়াত নেতাদের রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছেন! অথচ সত্য হলো, পুত্র ও জামাতারা গিয়েছিলেন দুই নেতার কাপড়-চোপড়, তেল-সাবান ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস দিয়ে আসার জন্য। তাছাড়া, কেউ গ্রেফতার হলে তাদের স্বজনরা স্বাভাবিক নিয়মেই থানায়, জেলখানায় ও আদালতে গিয়ে থাকেন। বন্দিদের খোঁজ-খবর নেন, আইনজীবী নিযুক্তি, মামলা নিয়ে আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র পৌঁছানোসহ নানা বিষয়ে কাজ পড়ে যায় তাদের। সুতরাং মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার পুত্র ও জামাতারা কোনো অন্যায় বা বেআইনি কাজ করেননি। তাদের পিতা ও শ্বশুর পুলিশের হাতে, তাও আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন। রাজনৈতিক দলের বন্দি নেতাদের সঙ্গে পুলিশ আজকাল কি আচরণ করছে, সে কথা দেশের সাধারণ মানুষও জানে। পুলিশ যে তাদের কোনো জিনিস দিয়েই সাহায্য করবে না তাও ধরে নেয়া যায়। পুত্র ও জামাতারা গিয়েছিলেন- যেমনটি বাংলাদেশের অন্য বন্দিদের স্বজনরা গিয়ে থাকেন। খুবই স্বাভাবিক এ বিষয়টিকেই পুলিশ এক মহা অপরাধ বানিয়ে ফেলেছে। পুত্র ও জামাতাদের শুধু গ্রেফতার করা হয়নি, অভিনব এক অভিযোগে মামলা সাজানোর পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর হলেও এসবই এখন সাধারণ মানুষেরও মুখস্থ হয়ে গেছে। তারা জানে, কোন পদক্ষেপের পর কোন পদক্ষেপ নেবে সরকার এবং তার পুলিশ বাহিনী।

ঘটনাপ্রবাহে আইন ও আদালতের প্রতি সরকারের অসম্মান দেখানোর বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। দুই জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতারের কথাই ধরা যাক। গত মঙ্গলবার মাননীয় বিচারপতিরা বলেছিলেন, সরকার তথা পুলিশ যেন ওই দু'জনকে গ্রেফতার বা কোনো রকম হয়রানি না করে। হয়রানি বা গ্রেফতার না করার কথাটা পুনরাবৃত্তি করেছিলেন তারা। উদ্দেশ্য ছিল আদেশের গুরুত্ব বোঝানো। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি চরম উপেক্ষা দেখানো হয়েছে। দু'জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তাও সুপ্রিমকোর্ট চত্বরেই। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। পুলিশকে দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে। পুলিশ অবশ্য আইনের ফাঁক নিয়েছে। দু'জনকে গ্রেফতার করেছে অন্য মামলায়, যাতে মাননীয় বিচারপতিরা বলতে না পারেন, তাদের আদেশ অমান্য করা হয়েছে! কিন্তু তা সত্ত্বেও আদালতের প্রতি সরকারের মনোভাব প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। একথাও নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন মর্যাদা ও ক্ষমতা নিয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না এবং বিচারকরা যে রায় বা আদেশই দিন না কেন, পুলিশকে উপরের হুকুমই তামিল করতে হবে।

বস্তুত এবার ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক দিনগুলো থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার আইন-আদালতের প্রশ্নে নিজের ক্ষমতা ও কেরামতি দেখাতে শুরু করেছে। পুলিশ বিশেষ করে রিমান্ডের প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাও অমান্য করে চলেছে। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার পুত্র ও জামাতাদের বেলায় পুলিশ ভদ্রতা, সভ্যতা ও মানবিকতার সীমাও লংঘন করেছে। বিষয়টি যে কোনো মূল্যায়নে অত্যন্ত আপত্তিকরও। দেশকে কোন ধরনের রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছি আমরা? সে কি এমন জংলী রাষ্ট্র- যেখানে সংবিধান ও আইন-আদালত বলে কিছু থাকবে না? থাকবে না মানুষের মৌলিক কোনো অধিকারও?

এমন প্রশ্নের কারণ হলো, দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি বিষয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্যকে সামনে রাখা হচ্ছে। পুলিশকে তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে নিম্ন আদালতকেও নগ্নভাবেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের উদাহরণ দেয়া যায়। এই তিন নেতাকে যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল সে মামলায় আদালত প্রথমদিনই তাদের জামিন দিয়েছেন। কিন্তু তারপরই সরকার নতুন আটটি মামলা চাপিয়েছে তিন নেতার বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, পাঁচ মামলায় তিন নেতার প্রত্যেককে ১৬ দিন করে রিমান্ড ‘মঞ্জুর' করতে হয়েছে বিচারকদের। এ এক নজিরবিহীন ঘটনা।

এক কথায় বলা যায়, যা ইচ্ছা তা-ই যেন করা হচ্ছে। অন্যদিকে আমরা মনে করি, এভাবে চলতে পারে না। হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা আছে, সুতরাং বিচার বিভাগের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছাপূরণের মহোৎসব ক্ষমতাসীনরা করতেই পারেন। কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতি রয়েছে বলেই তাদের বুঝতে হবে, জনগণ সবই লক্ষ্য করছে। জনগণের কাছে দুই জামায়াত নেতার পুত্র ও জামাতাদের বিরুদ্ধে আনা আদালতে বিশৃংখলা সৃষ্টির মতো বিচিত্র ও পরিকল্পিত অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে না। এজন্যই সরকারের উচিত অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের সসম্মানে মুক্তি দেয়া এবং বানোয়াট অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়া। সবকিছুর পেছনে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ধ্বংস করে দেয়ার কোনো চক্রান্ত রয়েছে কি না, কোনো মহল বা রাষ্ট্রশক্তি বিভ্রান্ত করে সরকারকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে কি না, সেটাও ক্ষমতাসীনদের খতিয়ে দেখা উচিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.