নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভৌতিক মানব

ভৌতিক মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা গল্প ও বাস্তবতা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১১

সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প । যে গল্পটি বিশ্বাস করার কোন

কারণ নেই । সত্য গল্প, তবুও ।



ছেলেটি স্কুলে পড়ত আর মেয়েটি কলেজে ।



ছেলটি ছিল মুখচোরা আর মেয়েটি চরম বাচাল ।



সকল কালচারাল প্রোগ্রামে ছেলেটি ছিল পেছনের সারিতে বসা এক নিস্ক্রিয়

দর্শক আর স্টেজ মাতাতে মেয়েটির কোন জুড়ি ছিল না ।



ছেলেটির বন্ধু সংখ্যা ছিল খুব সীমিত আর মেয়েটির বন্ধুর হিসাব ছিল না ।



ছেলেটি সরাসরি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারত না, ভয়ে আর লজ্জায় । কথা

বলতে গেলেই নাকি তার বুক এবং হাঁটু কাঁপত । আর মেয়েটি ? মেয়েদের চেয়ে তার

ছেলেদের সাথেই বেশি সখ্যতা ছিল ।



ছেলেটি ছিল কল্পবিলাসী । ২৪ ঘন্টাই স্বপ্নের সাগরে সাঁতার কাটত বাস্তবতার

সাথে যেগুলোর কোন মিল ছিল না । আর মেয়েটি ছিল স্বপ্নবিলাসী কিন্তু সেই

সাথে চরম বাস্তববাদী । অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত কিন্তু ছেলেটির মত আকাশ

কুসুম কিছু নয় ।



এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু দিন.....



ছেলেটির পরীক্ষা শেষ হল । তার হাতে এখন অফুরন্ত অবসর । মেয়েটি দ্বিতীয়

বর্ষে উঠল । বাড়ল তার ব্যস্ততা ।



সময় মানুষকে বদলে দেয় । ছেলেটি সবে উড়তে শুরু করল । আর মেয়েটি ব্যস্ত ছিল

নিজকে খোলসে আবদ্ধ করে নেয়ায় ।



তারপর হঠাত্‍ একদিন......



এত অমিল ছিল যাদের মাঝে তাদের মধ্য স্বাভাবিকভাবে পরিচয় হবার কোন উপায়

ছিল না । হলোও তাই । তাদের পরিচয়টা ঘটে অদ্ভুত এক উপায়ে, অনেকটা ভাগ্য

কিংবা বলা যায় দুর্ভাগ্যের প্রতক্ষ্য সহযোগিতায় ।



ছেলেটার জীবনে মেয়েটা ছিল প্রথম মেয়ে বন্ধু । মেয়েটার প্রতি তার আগ্রহের

কমতি ছিল না । আর মেয়েটার ছিল ছেলেটির প্রতি অপরিসীম কৌতুহল । ছিল অজানা

কিছু আবিস্কারের নেশা ।



ছেলেটা বলত কম, শুনত বেশি । আর মেয়েটা শুনত কম, শোনাত বেশি । এই অদ্ভুত

বৈশিষ্ট্যের জন্যই হয়তবা দুজনের বন্ধু হতে দুই দিনের বেশি সময় লাগলো না ।



তাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে । কেউ কাউকে চিনে না । তাই

দুজন সম্পর্কে কেউ কাউকে সঠিক তথ্য দিল না । ছেলেটা গোপন করল তার নাম আর

মেয়েট করল তার বয়স !!



ধীরে ধীরে ছেলেটার সবকিছু মেয়েটা কেন্দ্রিক হয়ে গেল । কিন্তু মেয়েটার

সেদিকে নজর দেয়ার সময় ছিল না । কারণ সামনে তার পরীক্ষা ।



ছেলেটির মনে সদ্য প্রেমের হাওয়া জাগতে শুরু করেছে । এমন সময় মেয়েটির

পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । ছেলেটি তার মনে তখনো বিশেষ কোন জায়গা সৃষ্টি করে

নি । তাই ছেলেটিকে না জানিয়েই মেয়েটি তার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে

দিল ।



মেয়েটিকে হারিয়ে হাওয়ায় উড়তে থাকা ছেলেটি মূহুর্তেই মাটিতে নেমে এল । কি

যেন একটা মিসিং । বুকের মাঝে সারক্ষণই হাহাকার করে, বাজে বিরহের বীণা ।

বিষণ্নতায় ছেয়ে গেল ছেলেটির জীবন ।



চার মাস কেটে গেল । ছেলেটি এখন আর আগের সেই কল্পবিলাসী ছেলে নেই ।

নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে স্বপ্ন দেখতেই ভুল গেছে সে । এমন সময় তার

জীবনে ঈদের চাঁদের মত পুনঃআবির্ভাব ঘটল মেয়েটির ।



মেয়েটিকে ফিরে পেয়ে ছেলেটি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেল ! আর দেরি করল না ।

মনের গহীনে জমে থাকা অব্যক্ত সব অনুভূতির কথা মেয়েটিকে বলে দিল ।



মেয়েটি চরম অবাক হল । ছেলেটিকে নিয়ে এমন কিছু কখনোই ভাবে নি সে । সবচেয়ে

বড় ফ্যাক্ট- মেয়েটি ছেলেটির চেয়ে বয়সে বড়, এ কথাটি ছেলেটি এখনো জানে না !

মেয়েটি ঠিক করল ছেলেটিকে সব বলে দেবে ।



সব শুনে ছেলেটির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । কিন্তু তার আর পিছনে ফেরার উপায়

ছিল না । এক জীবনে মানুষ তো একবারই প্রেমে পড়ে । ছেলেটি যে মেয়েটিকে না

দেখেই, তার সম্পর্কে কোন কিছু না জেনেই তাকে ভালবেসেছিল । এখন কি করবে সে

? তাকে কিছু করতে হল না । মেয়েটিই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল ।



ছেলেটির মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয় তবে মেয়েটি অবশ্যই

তার কাছে ফিরে আসবে । অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকল সে ।



এদিকে ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিয়ে মেয়েটির মনে অদ্ভূত এক অনুভূতির সৃষ্টি হল-

যেটার সাথে সে পরিচিত নয় । সে হলপ করেই বলতে পারে এটা ছেলেটির প্রতি তার

সিমপ্যাথি নয় । তবে এটা কি ? তার তো অনেক স্মার্ট স্মার্ট ছেলের সাথে

পরিচয় আছে । কখনো তো কারো প্রতি এই ফিলিংসটি আসে নি । তবে অদেখা, অজানা ঐ

বোকা সোকা ছেলেটার জন্য তার এমন লাগছে কেন ? তবে সেও কি শেষ পর্যন্ত পঁচা

শামুকে পা কাটল ? সেও কি অদেখা ঐ গাধাটার মত তার প্রেমে পড়ে গেল ?



সপ্তাহ তিনেক পর মেয়েটি বুঝতে পারল যে আর একা একা থাকা সম্ভব না । চরম

যুক্তিবাদী হয়েও শেষ পর্যন্ত সব যুক্তি ভুলে আবেগকেই প্রাধান্য দিল সে ।

সব সংকোচ ঝেড়ে পেলে ফোন দিল ছেলেটিকে.....



মেয়েটি অনেক কেয়ারিং ছিল । আর ছেলেটি ছিল অগোচালোর রাজা । কিন্তু মেয়েটার

সংস্পর্শে এসে সে সুঁইয়ের মত সোজা হয়ে গেল সে ! তার কথা-বার্তা, চাল-চলন,

খাওয়া-দাওয়া, লেখা-পড়া সবকিছুই কঠোরভাবে মেয়েটির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত ।

তবে ছেলেটা এতে মোটেও অসুখী ছিল না । বরং মেয়েটির ভালবাসার এ মধুর শাসন

সে উপভোগই করত ।



শুধু শাসন না, তাদের মাঝে ভালবাসাও চলত সমান তালে । ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে

নিয়মিত কবিতা লিখত । কিন্তু আবৃত্তি করে শোনাতে পারত না লজ্জায় । টেক্সট

করে দিত । আর মেয়েটি সেই ভালবাসা মাখানো কবিতাগুলো পড়ে প্রাণ খুলে হাসত ।



মেয়েটি ছেলেটিকে তার সুমধুর কন্ঠে গান শোনাত । গোপনে ছেলেটি মেয়েটির তার

কন্ঠ রেকর্ড করে রাখত, যখন মেয়েটির সাথে কথা বলত না তখন শুনবে বলে ।



সময় গড়াল । একসময় দুজনের দেখা হল । তারা কেউই রূপ কথার রাজপুত্র কিংবা

রাজকন্যা ছিল না । ছিল খুব সাধারণ দুজন । কিন্তু সে সাধারণ দুটি মানুষই

একে অন্যের চোখে অসাধারণ হয়ে ধরা দিল । তবে এটাই কি ভালবাসা ? ভালবাসা কি

এমনই হয় ?



সুখের মূহুর্তগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না । তাদের জীবনেও হল না । মেয়েটার

অনেক স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবার । কিন্তু কোথাও সে চান্স পেল না । ছেলেটার

মাত্রাতিরিক্ত খেয়াল রাখতে গিয়ে তার নিজের স্বপ্নগুলোই আজ বিপর্যস্ত ।

ছেলেটির অবস্থাও খুব ভাল ছিল না । সারাদিন মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে তার

লেখা পড়াও লাটে উঠার দশা ।



ছেলেটি অনেক স্বপ্ন বিলাসী ছিল । মেয়েটিকে নিয়ে সুখ স্বপ্ন রচনায় ব্যস্ত

ছিল তখন । আর মেয়েটি ছিল বাস্তবাদী । সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল তাদের এই

অসম সম্পর্কের ব্যাপারে । কি হবে তাদের এ ভালবাসার ভবিষ্যত ?



মেয়েটি ছিল তার বাবা মায়ের বড় সন্তান । তার আরো দুটি ভাই বোন ছিল । তাকে

নিয়ে তার বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল । সব কিছু সমান তালে আর সামাল দেয়া

মেয়েটির পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না । তাই কঠিন সিদ্ধান্তটি তাকে নিতেই হল ।



মেয়েটি চাইলেই তার বাবা-মা, সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তার

ভালবাসার পক্ষে দাঁড়াত পারত । ছেলেটিতো মেয়েটির জন্য সারা পৃথিবীর

বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে রাজি ছিল । কিন্তু মেয়েটি এমন কিছুই করল না । তার বাবা

মায়ের ২০ বছরের ভালবাসার সামনে তার ১ বছরের ভালবাসার শক্তি খুব ক্ষুদ্র

ছিল ।



বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি নিজের চির অধরা স্বপ্নগুলোকে

বিসর্জন দিল । একদিন ছেলেটি কে ডেকে বলল- ভাল থেকো তুমি । তারপর সেই

ছেলেটির জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল সেই মেয়েটি ।



মেয়েটিকে হারিয়ে ছেলেটি পুরোপুরি দিশেহারা । বেঁচে থাকাটাই তার কাছে

অসহ্য হয়ে উঠেছিল । একবার ভাবল আত্মহত্যা করবে । চোখের পলকেই সব

যন্ত্রনার অবসান ঘটাবে । কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয়

থাকে, তবে মেয়েটা অবশ্যই তার কাছে আবার ছুটে আসবে । তখন যদি তাকে আর

খুঁজে না পায় ?



তাই ছেলেটি সিদ্ধান্ত নিল বেঁচে থাকবে । এবং খুব ভাল ভাবেই বেঁচে থাকবে ।

এক বুক ভালবাসা ও আকাঙ্খা নিয়ে সেই ছেলেটি আজও বসে আছে সেই মেয়েটির ফিরে

আসার প্রতীক্ষায় ।

সে জানে না কবে তার এই প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে ?

কবে মেয়েটি তার কাছে ফিরে এসে বলবে- গ্রহণ করবে আমায় ?

আর সে মিষ্টি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবে- ছিলাম তো তোমারই প্রতীক্ষায়......



এই হল সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প ।

জানি, আপনার বিশ্বাস করেন নি । ভাবছেন- এমনও হয় নাকি ?

কিন্তু জেনে রাখুন, সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটিকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি

। আমার খুব কাছের মানুষ ছিল তারা ।

বেশ কয়েকবছর আগে ১৪ই ডিসেম্বর, সেই মেয়েটির সাথে সেই ছেলেটির প্রথম দেখা হয়েছিল ।

আমি জানি, প্রতি বছরের মত এ বছরও সে ছেলেটি সারাদিন তাদের প্রথম দেখা

হবার জাগয়াটিতে গিয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করবে আর গভীর রাতে একবুক হতাশা

নিয়ে বাসায় ফিরে আসবে ।

কেউ জানে না কবে তার অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে ?

কিংবা আদৌ কখনো ফুরাবে না ।ই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প । যে গল্পটি বিশ্বাস করার কোন

কারণ নেই । সত্য গল্প, তবুও ।



ছেলেটি স্কুলে পড়ত আর মেয়েটি কলেজে ।



ছেলটি ছিল মুখচোরা আর মেয়েটি চরম বাচাল ।



সকল কালচারাল প্রোগ্রামে ছেলেটি ছিল পেছনের সারিতে বসা এক নিস্ক্রিয়

দর্শক আর স্টেজ মাতাতে মেয়েটির কোন জুড়ি ছিল না ।



ছেলেটির বন্ধু সংখ্যা ছিল খুব সীমিত আর মেয়েটির বন্ধুর হিসাব ছিল না ।



ছেলেটি সরাসরি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারত না, ভয়ে আর লজ্জায় । কথা

বলতে গেলেই নাকি তার বুক এবং হাঁটু কাঁপত । আর মেয়েটি ? মেয়েদের চেয়ে তার

ছেলেদের সাথেই বেশি সখ্যতা ছিল ।



ছেলেটি ছিল কল্পবিলাসী । ২৪ ঘন্টাই স্বপ্নের সাগরে সাঁতার কাটত বাস্তবতার

সাথে যেগুলোর কোন মিল ছিল না । আর মেয়েটি ছিল স্বপ্নবিলাসী কিন্তু সেই

সাথে চরম বাস্তববাদী । অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত কিন্তু ছেলেটির মত আকাশ

কুসুম কিছু নয় ।



এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু দিন.....



ছেলেটির পরীক্ষা শেষ হল । তার হাতে এখন অফুরন্ত অবসর । মেয়েটি দ্বিতীয়

বর্ষে উঠল । বাড়ল তার ব্যস্ততা ।



সময় মানুষকে বদলে দেয় । ছেলেটি সবে উড়তে শুরু করল । আর মেয়েটি ব্যস্ত ছিল

নিজকে খোলসে আবদ্ধ করে নেয়ায় ।



তারপর হঠাত্‍ একদিন......



এত অমিল ছিল যাদের মাঝে তাদের মধ্য স্বাভাবিকভাবে পরিচয় হবার কোন উপায়

ছিল না । হলোও তাই । তাদের পরিচয়টা ঘটে অদ্ভুত এক উপায়ে, অনেকটা ভাগ্য

কিংবা বলা যায় দুর্ভাগ্যের প্রতক্ষ্য সহযোগিতায় ।



ছেলেটার জীবনে মেয়েটা ছিল প্রথম মেয়ে বন্ধু । মেয়েটার প্রতি তার আগ্রহের

কমতি ছিল না । আর মেয়েটার ছিল ছেলেটির প্রতি অপরিসীম কৌতুহল । ছিল অজানা

কিছু আবিস্কারের নেশা ।



ছেলেটা বলত কম, শুনত বেশি । আর মেয়েটা শুনত কম, শোনাত বেশি । এই অদ্ভুত

বৈশিষ্ট্যের জন্যই হয়তবা দুজনের বন্ধু হতে দুই দিনের বেশি সময় লাগলো না ।



তাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে । কেউ কাউকে চিনে না । তাই

দুজন সম্পর্কে কেউ কাউকে সঠিক তথ্য দিল না । ছেলেটা গোপন করল তার নাম আর

মেয়েট করল তার বয়স !!



ধীরে ধীরে ছেলেটার সবকিছু মেয়েটা কেন্দ্রিক হয়ে গেল । কিন্তু মেয়েটার

সেদিকে নজর দেয়ার সময় ছিল না । কারণ সামনে তার পরীক্ষা ।



ছেলেটির মনে সদ্য প্রেমের হাওয়া জাগতে শুরু করেছে । এমন সময় মেয়েটির

পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । ছেলেটি তার মনে তখনো বিশেষ কোন জায়গা সৃষ্টি করে

নি । তাই ছেলেটিকে না জানিয়েই মেয়েটি তার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে

দিল ।



মেয়েটিকে হারিয়ে হাওয়ায় উড়তে থাকা ছেলেটি মূহুর্তেই মাটিতে নেমে এল । কি

যেন একটা মিসিং । বুকের মাঝে সারক্ষণই হাহাকার করে, বাজে বিরহের বীণা ।

বিষণ্নতায় ছেয়ে গেল ছেলেটির জীবন ।



চার মাস কেটে গেল । ছেলেটি এখন আর আগের সেই কল্পবিলাসী ছেলে নেই ।

নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে স্বপ্ন দেখতেই ভুল গেছে সে । এমন সময় তার

জীবনে ঈদের চাঁদের মত পুনঃআবির্ভাব ঘটল মেয়েটির ।



মেয়েটিকে ফিরে পেয়ে ছেলেটি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেল ! আর দেরি করল না ।

মনের গহীনে জমে থাকা অব্যক্ত সব অনুভূতির কথা মেয়েটিকে বলে দিল ।



মেয়েটি চরম অবাক হল । ছেলেটিকে নিয়ে এমন কিছু কখনোই ভাবে নি সে । সবচেয়ে

বড় ফ্যাক্ট- মেয়েটি ছেলেটির চেয়ে বয়সে বড়, এ কথাটি ছেলেটি এখনো জানে না !

মেয়েটি ঠিক করল ছেলেটিকে সব বলে দেবে ।



সব শুনে ছেলেটির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । কিন্তু তার আর পিছনে ফেরার উপায়

ছিল না । এক জীবনে মানুষ তো একবারই প্রেমে পড়ে । ছেলেটি যে মেয়েটিকে না

দেখেই, তার সম্পর্কে কোন কিছু না জেনেই তাকে ভালবেসেছিল । এখন কি করবে সে

? তাকে কিছু করতে হল না । মেয়েটিই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল ।



ছেলেটির মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয় তবে মেয়েটি অবশ্যই

তার কাছে ফিরে আসবে । অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকল সে ।



এদিকে ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিয়ে মেয়েটির মনে অদ্ভূত এক অনুভূতির সৃষ্টি হল-

যেটার সাথে সে পরিচিত নয় । সে হলপ করেই বলতে পারে এটা ছেলেটির প্রতি তার

সিমপ্যাথি নয় । তবে এটা কি ? তার তো অনেক স্মার্ট স্মার্ট ছেলের সাথে

পরিচয় আছে । কখনো তো কারো প্রতি এই ফিলিংসটি আসে নি । তবে অদেখা, অজানা ঐ

বোকা সোকা ছেলেটার জন্য তার এমন লাগছে কেন ? তবে সেও কি শেষ পর্যন্ত পঁচা

শামুকে পা কাটল ? সেও কি অদেখা ঐ গাধাটার মত তার প্রেমে পড়ে গেল ?



সপ্তাহ তিনেক পর মেয়েটি বুঝতে পারল যে আর একা একা থাকা সম্ভব না । চরম

যুক্তিবাদী হয়েও শেষ পর্যন্ত সব যুক্তি ভুলে আবেগকেই প্রাধান্য দিল সে ।

সব সংকোচ ঝেড়ে পেলে ফোন দিল ছেলেটিকে.....



মেয়েটি অনেক কেয়ারিং ছিল । আর ছেলেটি ছিল অগোচালোর রাজা । কিন্তু মেয়েটার

সংস্পর্শে এসে সে সুঁইয়ের মত সোজা হয়ে গেল সে ! তার কথা-বার্তা, চাল-চলন,

খাওয়া-দাওয়া, লেখা-পড়া সবকিছুই কঠোরভাবে মেয়েটির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত ।

তবে ছেলেটা এতে মোটেও অসুখী ছিল না । বরং মেয়েটির ভালবাসার এ মধুর শাসন

সে উপভোগই করত ।



শুধু শাসন না, তাদের মাঝে ভালবাসাও চলত সমান তালে । ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে

নিয়মিত কবিতা লিখত । কিন্তু আবৃত্তি করে শোনাতে পারত না লজ্জায় । টেক্সট

করে দিত । আর মেয়েটি সেই ভালবাসা মাখানো কবিতাগুলো পড়ে প্রাণ খুলে হাসত ।



মেয়েটি ছেলেটিকে তার সুমধুর কন্ঠে গান শোনাত । গোপনে ছেলেটি মেয়েটির তার

কন্ঠ রেকর্ড করে রাখত, যখন মেয়েটির সাথে কথা বলত না তখন শুনবে বলে ।



সময় গড়াল । একসময় দুজনের দেখা হল । তারা কেউই রূপ কথার রাজপুত্র কিংবা

রাজকন্যা ছিল না । ছিল খুব সাধারণ দুজন । কিন্তু সে সাধারণ দুটি মানুষই

একে অন্যের চোখে অসাধারণ হয়ে ধরা দিল । তবে এটাই কি ভালবাসা ? ভালবাসা কি

এমনই হয় ?



সুখের মূহুর্তগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না । তাদের জীবনেও হল না । মেয়েটার

অনেক স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবার । কিন্তু কোথাও সে চান্স পেল না । ছেলেটার

মাত্রাতিরিক্ত খেয়াল রাখতে গিয়ে তার নিজের স্বপ্নগুলোই আজ বিপর্যস্ত ।

ছেলেটির অবস্থাও খুব ভাল ছিল না । সারাদিন মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে তার

লেখা পড়াও লাটে উঠার দশা ।



ছেলেটি অনেক স্বপ্ন বিলাসী ছিল । মেয়েটিকে নিয়ে সুখ স্বপ্ন রচনায় ব্যস্ত

ছিল তখন । আর মেয়েটি ছিল বাস্তবাদী । সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল তাদের এই

অসম সম্পর্কের ব্যাপারে । কি হবে তাদের এ ভালবাসার ভবিষ্যত ?



মেয়েটি ছিল তার বাবা মায়ের বড় সন্তান । তার আরো দুটি ভাই বোন ছিল । তাকে

নিয়ে তার বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল । সব কিছু সমান তালে আর সামাল দেয়া

মেয়েটির পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না । তাই কঠিন সিদ্ধান্তটি তাকে নিতেই হল ।



মেয়েটি চাইলেই তার বাবা-মা, সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তার

ভালবাসার পক্ষে দাঁড়াত পারত । ছেলেটিতো মেয়েটির জন্য সারা পৃথিবীর

বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে রাজি ছিল । কিন্তু মেয়েটি এমন কিছুই করল না । তার বাবা

মায়ের ২০ বছরের ভালবাসার সামনে তার ১ বছরের ভালবাসার শক্তি খুব ক্ষুদ্র

ছিল ।



বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি নিজের চির অধরা স্বপ্নগুলোকে

বিসর্জন দিল । একদিন ছেলেটি কে ডেকে বলল- ভাল থেকো তুমি । তারপর সেই

ছেলেটির জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল সেই মেয়েটি ।



মেয়েটিকে হারিয়ে ছেলেটি পুরোপুরি দিশেহারা । বেঁচে থাকাটাই তার কাছে

অসহ্য হয়ে উঠেছিল । একবার ভাবল আত্মহত্যা করবে । চোখের পলকেই সব

যন্ত্রনার অবসান ঘটাবে । কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয়

থাকে, তবে মেয়েটা অবশ্যই তার কাছে আবার ছুটে আসবে । তখন যদি তাকে আর

খুঁজে না পায় ?



তাই ছেলেটি সিদ্ধান্ত নিল বেঁচে থাকবে । এবং খুব ভাল ভাবেই বেঁচে থাকবে ।

এক বুক ভালবাসা ও আকাঙ্খা নিয়ে সেই ছেলেটি আজও বসে আছে সেই মেয়েটির ফিরে

আসার প্রতীক্ষায় ।

সে জানে না কবে তার এই প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে ?

কবে মেয়েটি তার কাছে ফিরে এসে বলবে- গ্রহণ করবে আমায় ?

আর সে মিষ্টি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবে- ছিলাম তো তোমারই প্রতীক্ষায়......



এই হল সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প ।

জানি, আপনার বিশ্বাস করেন নি । ভাবছেন- এমনও হয় নাকি ?

কিন্তু জেনে রাখুন, সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটিকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি

। আমার খুব কাছের মানুষ ছিল তারা ।

বেশ কয়েকবছর আগে ১৪ই ডিসেম্বর, সেই মেয়েটির সাথে সেই ছেলেটির প্রথম দেখা হয়েছিল ।

আমি জানি, প্রতি বছরের মত এ বছরও সে ছেলেটি সারাদিন তাদের প্রথম দেখা

হবার জাগয়াটিতে গিয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করবে আর গভীর রাতে একবুক হতাশা

নিয়ে বাসায় ফিরে আসবে ।

কেউ জানে না কবে তার অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে ?

কিংবা আদৌ কখনো ফুরাবে না ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.