![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প । যে গল্পটি বিশ্বাস করার কোন
কারণ নেই । সত্য গল্প, তবুও ।
ছেলেটি স্কুলে পড়ত আর মেয়েটি কলেজে ।
ছেলটি ছিল মুখচোরা আর মেয়েটি চরম বাচাল ।
সকল কালচারাল প্রোগ্রামে ছেলেটি ছিল পেছনের সারিতে বসা এক নিস্ক্রিয়
দর্শক আর স্টেজ মাতাতে মেয়েটির কোন জুড়ি ছিল না ।
ছেলেটির বন্ধু সংখ্যা ছিল খুব সীমিত আর মেয়েটির বন্ধুর হিসাব ছিল না ।
ছেলেটি সরাসরি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারত না, ভয়ে আর লজ্জায় । কথা
বলতে গেলেই নাকি তার বুক এবং হাঁটু কাঁপত । আর মেয়েটি ? মেয়েদের চেয়ে তার
ছেলেদের সাথেই বেশি সখ্যতা ছিল ।
ছেলেটি ছিল কল্পবিলাসী । ২৪ ঘন্টাই স্বপ্নের সাগরে সাঁতার কাটত বাস্তবতার
সাথে যেগুলোর কোন মিল ছিল না । আর মেয়েটি ছিল স্বপ্নবিলাসী কিন্তু সেই
সাথে চরম বাস্তববাদী । অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত কিন্তু ছেলেটির মত আকাশ
কুসুম কিছু নয় ।
এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু দিন.....
ছেলেটির পরীক্ষা শেষ হল । তার হাতে এখন অফুরন্ত অবসর । মেয়েটি দ্বিতীয়
বর্ষে উঠল । বাড়ল তার ব্যস্ততা ।
সময় মানুষকে বদলে দেয় । ছেলেটি সবে উড়তে শুরু করল । আর মেয়েটি ব্যস্ত ছিল
নিজকে খোলসে আবদ্ধ করে নেয়ায় ।
তারপর হঠাত্ একদিন......
এত অমিল ছিল যাদের মাঝে তাদের মধ্য স্বাভাবিকভাবে পরিচয় হবার কোন উপায়
ছিল না । হলোও তাই । তাদের পরিচয়টা ঘটে অদ্ভুত এক উপায়ে, অনেকটা ভাগ্য
কিংবা বলা যায় দুর্ভাগ্যের প্রতক্ষ্য সহযোগিতায় ।
ছেলেটার জীবনে মেয়েটা ছিল প্রথম মেয়ে বন্ধু । মেয়েটার প্রতি তার আগ্রহের
কমতি ছিল না । আর মেয়েটার ছিল ছেলেটির প্রতি অপরিসীম কৌতুহল । ছিল অজানা
কিছু আবিস্কারের নেশা ।
ছেলেটা বলত কম, শুনত বেশি । আর মেয়েটা শুনত কম, শোনাত বেশি । এই অদ্ভুত
বৈশিষ্ট্যের জন্যই হয়তবা দুজনের বন্ধু হতে দুই দিনের বেশি সময় লাগলো না ।
তাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে । কেউ কাউকে চিনে না । তাই
দুজন সম্পর্কে কেউ কাউকে সঠিক তথ্য দিল না । ছেলেটা গোপন করল তার নাম আর
মেয়েট করল তার বয়স !!
ধীরে ধীরে ছেলেটার সবকিছু মেয়েটা কেন্দ্রিক হয়ে গেল । কিন্তু মেয়েটার
সেদিকে নজর দেয়ার সময় ছিল না । কারণ সামনে তার পরীক্ষা ।
ছেলেটির মনে সদ্য প্রেমের হাওয়া জাগতে শুরু করেছে । এমন সময় মেয়েটির
পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । ছেলেটি তার মনে তখনো বিশেষ কোন জায়গা সৃষ্টি করে
নি । তাই ছেলেটিকে না জানিয়েই মেয়েটি তার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে
দিল ।
মেয়েটিকে হারিয়ে হাওয়ায় উড়তে থাকা ছেলেটি মূহুর্তেই মাটিতে নেমে এল । কি
যেন একটা মিসিং । বুকের মাঝে সারক্ষণই হাহাকার করে, বাজে বিরহের বীণা ।
বিষণ্নতায় ছেয়ে গেল ছেলেটির জীবন ।
চার মাস কেটে গেল । ছেলেটি এখন আর আগের সেই কল্পবিলাসী ছেলে নেই ।
নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে স্বপ্ন দেখতেই ভুল গেছে সে । এমন সময় তার
জীবনে ঈদের চাঁদের মত পুনঃআবির্ভাব ঘটল মেয়েটির ।
মেয়েটিকে ফিরে পেয়ে ছেলেটি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেল ! আর দেরি করল না ।
মনের গহীনে জমে থাকা অব্যক্ত সব অনুভূতির কথা মেয়েটিকে বলে দিল ।
মেয়েটি চরম অবাক হল । ছেলেটিকে নিয়ে এমন কিছু কখনোই ভাবে নি সে । সবচেয়ে
বড় ফ্যাক্ট- মেয়েটি ছেলেটির চেয়ে বয়সে বড়, এ কথাটি ছেলেটি এখনো জানে না !
মেয়েটি ঠিক করল ছেলেটিকে সব বলে দেবে ।
সব শুনে ছেলেটির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । কিন্তু তার আর পিছনে ফেরার উপায়
ছিল না । এক জীবনে মানুষ তো একবারই প্রেমে পড়ে । ছেলেটি যে মেয়েটিকে না
দেখেই, তার সম্পর্কে কোন কিছু না জেনেই তাকে ভালবেসেছিল । এখন কি করবে সে
? তাকে কিছু করতে হল না । মেয়েটিই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল ।
ছেলেটির মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয় তবে মেয়েটি অবশ্যই
তার কাছে ফিরে আসবে । অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকল সে ।
এদিকে ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিয়ে মেয়েটির মনে অদ্ভূত এক অনুভূতির সৃষ্টি হল-
যেটার সাথে সে পরিচিত নয় । সে হলপ করেই বলতে পারে এটা ছেলেটির প্রতি তার
সিমপ্যাথি নয় । তবে এটা কি ? তার তো অনেক স্মার্ট স্মার্ট ছেলের সাথে
পরিচয় আছে । কখনো তো কারো প্রতি এই ফিলিংসটি আসে নি । তবে অদেখা, অজানা ঐ
বোকা সোকা ছেলেটার জন্য তার এমন লাগছে কেন ? তবে সেও কি শেষ পর্যন্ত পঁচা
শামুকে পা কাটল ? সেও কি অদেখা ঐ গাধাটার মত তার প্রেমে পড়ে গেল ?
সপ্তাহ তিনেক পর মেয়েটি বুঝতে পারল যে আর একা একা থাকা সম্ভব না । চরম
যুক্তিবাদী হয়েও শেষ পর্যন্ত সব যুক্তি ভুলে আবেগকেই প্রাধান্য দিল সে ।
সব সংকোচ ঝেড়ে পেলে ফোন দিল ছেলেটিকে.....
মেয়েটি অনেক কেয়ারিং ছিল । আর ছেলেটি ছিল অগোচালোর রাজা । কিন্তু মেয়েটার
সংস্পর্শে এসে সে সুঁইয়ের মত সোজা হয়ে গেল সে ! তার কথা-বার্তা, চাল-চলন,
খাওয়া-দাওয়া, লেখা-পড়া সবকিছুই কঠোরভাবে মেয়েটির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত ।
তবে ছেলেটা এতে মোটেও অসুখী ছিল না । বরং মেয়েটির ভালবাসার এ মধুর শাসন
সে উপভোগই করত ।
শুধু শাসন না, তাদের মাঝে ভালবাসাও চলত সমান তালে । ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে
নিয়মিত কবিতা লিখত । কিন্তু আবৃত্তি করে শোনাতে পারত না লজ্জায় । টেক্সট
করে দিত । আর মেয়েটি সেই ভালবাসা মাখানো কবিতাগুলো পড়ে প্রাণ খুলে হাসত ।
মেয়েটি ছেলেটিকে তার সুমধুর কন্ঠে গান শোনাত । গোপনে ছেলেটি মেয়েটির তার
কন্ঠ রেকর্ড করে রাখত, যখন মেয়েটির সাথে কথা বলত না তখন শুনবে বলে ।
সময় গড়াল । একসময় দুজনের দেখা হল । তারা কেউই রূপ কথার রাজপুত্র কিংবা
রাজকন্যা ছিল না । ছিল খুব সাধারণ দুজন । কিন্তু সে সাধারণ দুটি মানুষই
একে অন্যের চোখে অসাধারণ হয়ে ধরা দিল । তবে এটাই কি ভালবাসা ? ভালবাসা কি
এমনই হয় ?
সুখের মূহুর্তগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না । তাদের জীবনেও হল না । মেয়েটার
অনেক স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবার । কিন্তু কোথাও সে চান্স পেল না । ছেলেটার
মাত্রাতিরিক্ত খেয়াল রাখতে গিয়ে তার নিজের স্বপ্নগুলোই আজ বিপর্যস্ত ।
ছেলেটির অবস্থাও খুব ভাল ছিল না । সারাদিন মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে তার
লেখা পড়াও লাটে উঠার দশা ।
ছেলেটি অনেক স্বপ্ন বিলাসী ছিল । মেয়েটিকে নিয়ে সুখ স্বপ্ন রচনায় ব্যস্ত
ছিল তখন । আর মেয়েটি ছিল বাস্তবাদী । সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল তাদের এই
অসম সম্পর্কের ব্যাপারে । কি হবে তাদের এ ভালবাসার ভবিষ্যত ?
মেয়েটি ছিল তার বাবা মায়ের বড় সন্তান । তার আরো দুটি ভাই বোন ছিল । তাকে
নিয়ে তার বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল । সব কিছু সমান তালে আর সামাল দেয়া
মেয়েটির পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না । তাই কঠিন সিদ্ধান্তটি তাকে নিতেই হল ।
মেয়েটি চাইলেই তার বাবা-মা, সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তার
ভালবাসার পক্ষে দাঁড়াত পারত । ছেলেটিতো মেয়েটির জন্য সারা পৃথিবীর
বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে রাজি ছিল । কিন্তু মেয়েটি এমন কিছুই করল না । তার বাবা
মায়ের ২০ বছরের ভালবাসার সামনে তার ১ বছরের ভালবাসার শক্তি খুব ক্ষুদ্র
ছিল ।
বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি নিজের চির অধরা স্বপ্নগুলোকে
বিসর্জন দিল । একদিন ছেলেটি কে ডেকে বলল- ভাল থেকো তুমি । তারপর সেই
ছেলেটির জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল সেই মেয়েটি ।
মেয়েটিকে হারিয়ে ছেলেটি পুরোপুরি দিশেহারা । বেঁচে থাকাটাই তার কাছে
অসহ্য হয়ে উঠেছিল । একবার ভাবল আত্মহত্যা করবে । চোখের পলকেই সব
যন্ত্রনার অবসান ঘটাবে । কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয়
থাকে, তবে মেয়েটা অবশ্যই তার কাছে আবার ছুটে আসবে । তখন যদি তাকে আর
খুঁজে না পায় ?
তাই ছেলেটি সিদ্ধান্ত নিল বেঁচে থাকবে । এবং খুব ভাল ভাবেই বেঁচে থাকবে ।
এক বুক ভালবাসা ও আকাঙ্খা নিয়ে সেই ছেলেটি আজও বসে আছে সেই মেয়েটির ফিরে
আসার প্রতীক্ষায় ।
সে জানে না কবে তার এই প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে ?
কবে মেয়েটি তার কাছে ফিরে এসে বলবে- গ্রহণ করবে আমায় ?
আর সে মিষ্টি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবে- ছিলাম তো তোমারই প্রতীক্ষায়......
এই হল সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প ।
জানি, আপনার বিশ্বাস করেন নি । ভাবছেন- এমনও হয় নাকি ?
কিন্তু জেনে রাখুন, সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটিকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি
। আমার খুব কাছের মানুষ ছিল তারা ।
বেশ কয়েকবছর আগে ১৪ই ডিসেম্বর, সেই মেয়েটির সাথে সেই ছেলেটির প্রথম দেখা হয়েছিল ।
আমি জানি, প্রতি বছরের মত এ বছরও সে ছেলেটি সারাদিন তাদের প্রথম দেখা
হবার জাগয়াটিতে গিয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করবে আর গভীর রাতে একবুক হতাশা
নিয়ে বাসায় ফিরে আসবে ।
কেউ জানে না কবে তার অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে ?
কিংবা আদৌ কখনো ফুরাবে না ।ই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প । যে গল্পটি বিশ্বাস করার কোন
কারণ নেই । সত্য গল্প, তবুও ।
ছেলেটি স্কুলে পড়ত আর মেয়েটি কলেজে ।
ছেলটি ছিল মুখচোরা আর মেয়েটি চরম বাচাল ।
সকল কালচারাল প্রোগ্রামে ছেলেটি ছিল পেছনের সারিতে বসা এক নিস্ক্রিয়
দর্শক আর স্টেজ মাতাতে মেয়েটির কোন জুড়ি ছিল না ।
ছেলেটির বন্ধু সংখ্যা ছিল খুব সীমিত আর মেয়েটির বন্ধুর হিসাব ছিল না ।
ছেলেটি সরাসরি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারত না, ভয়ে আর লজ্জায় । কথা
বলতে গেলেই নাকি তার বুক এবং হাঁটু কাঁপত । আর মেয়েটি ? মেয়েদের চেয়ে তার
ছেলেদের সাথেই বেশি সখ্যতা ছিল ।
ছেলেটি ছিল কল্পবিলাসী । ২৪ ঘন্টাই স্বপ্নের সাগরে সাঁতার কাটত বাস্তবতার
সাথে যেগুলোর কোন মিল ছিল না । আর মেয়েটি ছিল স্বপ্নবিলাসী কিন্তু সেই
সাথে চরম বাস্তববাদী । অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত কিন্তু ছেলেটির মত আকাশ
কুসুম কিছু নয় ।
এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু দিন.....
ছেলেটির পরীক্ষা শেষ হল । তার হাতে এখন অফুরন্ত অবসর । মেয়েটি দ্বিতীয়
বর্ষে উঠল । বাড়ল তার ব্যস্ততা ।
সময় মানুষকে বদলে দেয় । ছেলেটি সবে উড়তে শুরু করল । আর মেয়েটি ব্যস্ত ছিল
নিজকে খোলসে আবদ্ধ করে নেয়ায় ।
তারপর হঠাত্ একদিন......
এত অমিল ছিল যাদের মাঝে তাদের মধ্য স্বাভাবিকভাবে পরিচয় হবার কোন উপায়
ছিল না । হলোও তাই । তাদের পরিচয়টা ঘটে অদ্ভুত এক উপায়ে, অনেকটা ভাগ্য
কিংবা বলা যায় দুর্ভাগ্যের প্রতক্ষ্য সহযোগিতায় ।
ছেলেটার জীবনে মেয়েটা ছিল প্রথম মেয়ে বন্ধু । মেয়েটার প্রতি তার আগ্রহের
কমতি ছিল না । আর মেয়েটার ছিল ছেলেটির প্রতি অপরিসীম কৌতুহল । ছিল অজানা
কিছু আবিস্কারের নেশা ।
ছেলেটা বলত কম, শুনত বেশি । আর মেয়েটা শুনত কম, শোনাত বেশি । এই অদ্ভুত
বৈশিষ্ট্যের জন্যই হয়তবা দুজনের বন্ধু হতে দুই দিনের বেশি সময় লাগলো না ।
তাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে । কেউ কাউকে চিনে না । তাই
দুজন সম্পর্কে কেউ কাউকে সঠিক তথ্য দিল না । ছেলেটা গোপন করল তার নাম আর
মেয়েট করল তার বয়স !!
ধীরে ধীরে ছেলেটার সবকিছু মেয়েটা কেন্দ্রিক হয়ে গেল । কিন্তু মেয়েটার
সেদিকে নজর দেয়ার সময় ছিল না । কারণ সামনে তার পরীক্ষা ।
ছেলেটির মনে সদ্য প্রেমের হাওয়া জাগতে শুরু করেছে । এমন সময় মেয়েটির
পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । ছেলেটি তার মনে তখনো বিশেষ কোন জায়গা সৃষ্টি করে
নি । তাই ছেলেটিকে না জানিয়েই মেয়েটি তার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে
দিল ।
মেয়েটিকে হারিয়ে হাওয়ায় উড়তে থাকা ছেলেটি মূহুর্তেই মাটিতে নেমে এল । কি
যেন একটা মিসিং । বুকের মাঝে সারক্ষণই হাহাকার করে, বাজে বিরহের বীণা ।
বিষণ্নতায় ছেয়ে গেল ছেলেটির জীবন ।
চার মাস কেটে গেল । ছেলেটি এখন আর আগের সেই কল্পবিলাসী ছেলে নেই ।
নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে স্বপ্ন দেখতেই ভুল গেছে সে । এমন সময় তার
জীবনে ঈদের চাঁদের মত পুনঃআবির্ভাব ঘটল মেয়েটির ।
মেয়েটিকে ফিরে পেয়ে ছেলেটি যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেল ! আর দেরি করল না ।
মনের গহীনে জমে থাকা অব্যক্ত সব অনুভূতির কথা মেয়েটিকে বলে দিল ।
মেয়েটি চরম অবাক হল । ছেলেটিকে নিয়ে এমন কিছু কখনোই ভাবে নি সে । সবচেয়ে
বড় ফ্যাক্ট- মেয়েটি ছেলেটির চেয়ে বয়সে বড়, এ কথাটি ছেলেটি এখনো জানে না !
মেয়েটি ঠিক করল ছেলেটিকে সব বলে দেবে ।
সব শুনে ছেলেটির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । কিন্তু তার আর পিছনে ফেরার উপায়
ছিল না । এক জীবনে মানুষ তো একবারই প্রেমে পড়ে । ছেলেটি যে মেয়েটিকে না
দেখেই, তার সম্পর্কে কোন কিছু না জেনেই তাকে ভালবেসেছিল । এখন কি করবে সে
? তাকে কিছু করতে হল না । মেয়েটিই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল ।
ছেলেটির মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয় তবে মেয়েটি অবশ্যই
তার কাছে ফিরে আসবে । অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকল সে ।
এদিকে ছেলেটিকে ফিরিয়ে দিয়ে মেয়েটির মনে অদ্ভূত এক অনুভূতির সৃষ্টি হল-
যেটার সাথে সে পরিচিত নয় । সে হলপ করেই বলতে পারে এটা ছেলেটির প্রতি তার
সিমপ্যাথি নয় । তবে এটা কি ? তার তো অনেক স্মার্ট স্মার্ট ছেলের সাথে
পরিচয় আছে । কখনো তো কারো প্রতি এই ফিলিংসটি আসে নি । তবে অদেখা, অজানা ঐ
বোকা সোকা ছেলেটার জন্য তার এমন লাগছে কেন ? তবে সেও কি শেষ পর্যন্ত পঁচা
শামুকে পা কাটল ? সেও কি অদেখা ঐ গাধাটার মত তার প্রেমে পড়ে গেল ?
সপ্তাহ তিনেক পর মেয়েটি বুঝতে পারল যে আর একা একা থাকা সম্ভব না । চরম
যুক্তিবাদী হয়েও শেষ পর্যন্ত সব যুক্তি ভুলে আবেগকেই প্রাধান্য দিল সে ।
সব সংকোচ ঝেড়ে পেলে ফোন দিল ছেলেটিকে.....
মেয়েটি অনেক কেয়ারিং ছিল । আর ছেলেটি ছিল অগোচালোর রাজা । কিন্তু মেয়েটার
সংস্পর্শে এসে সে সুঁইয়ের মত সোজা হয়ে গেল সে ! তার কথা-বার্তা, চাল-চলন,
খাওয়া-দাওয়া, লেখা-পড়া সবকিছুই কঠোরভাবে মেয়েটির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত ।
তবে ছেলেটা এতে মোটেও অসুখী ছিল না । বরং মেয়েটির ভালবাসার এ মধুর শাসন
সে উপভোগই করত ।
শুধু শাসন না, তাদের মাঝে ভালবাসাও চলত সমান তালে । ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে
নিয়মিত কবিতা লিখত । কিন্তু আবৃত্তি করে শোনাতে পারত না লজ্জায় । টেক্সট
করে দিত । আর মেয়েটি সেই ভালবাসা মাখানো কবিতাগুলো পড়ে প্রাণ খুলে হাসত ।
মেয়েটি ছেলেটিকে তার সুমধুর কন্ঠে গান শোনাত । গোপনে ছেলেটি মেয়েটির তার
কন্ঠ রেকর্ড করে রাখত, যখন মেয়েটির সাথে কথা বলত না তখন শুনবে বলে ।
সময় গড়াল । একসময় দুজনের দেখা হল । তারা কেউই রূপ কথার রাজপুত্র কিংবা
রাজকন্যা ছিল না । ছিল খুব সাধারণ দুজন । কিন্তু সে সাধারণ দুটি মানুষই
একে অন্যের চোখে অসাধারণ হয়ে ধরা দিল । তবে এটাই কি ভালবাসা ? ভালবাসা কি
এমনই হয় ?
সুখের মূহুর্তগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না । তাদের জীবনেও হল না । মেয়েটার
অনেক স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবার । কিন্তু কোথাও সে চান্স পেল না । ছেলেটার
মাত্রাতিরিক্ত খেয়াল রাখতে গিয়ে তার নিজের স্বপ্নগুলোই আজ বিপর্যস্ত ।
ছেলেটির অবস্থাও খুব ভাল ছিল না । সারাদিন মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে তার
লেখা পড়াও লাটে উঠার দশা ।
ছেলেটি অনেক স্বপ্ন বিলাসী ছিল । মেয়েটিকে নিয়ে সুখ স্বপ্ন রচনায় ব্যস্ত
ছিল তখন । আর মেয়েটি ছিল বাস্তবাদী । সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল তাদের এই
অসম সম্পর্কের ব্যাপারে । কি হবে তাদের এ ভালবাসার ভবিষ্যত ?
মেয়েটি ছিল তার বাবা মায়ের বড় সন্তান । তার আরো দুটি ভাই বোন ছিল । তাকে
নিয়ে তার বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল । সব কিছু সমান তালে আর সামাল দেয়া
মেয়েটির পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না । তাই কঠিন সিদ্ধান্তটি তাকে নিতেই হল ।
মেয়েটি চাইলেই তার বাবা-মা, সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তার
ভালবাসার পক্ষে দাঁড়াত পারত । ছেলেটিতো মেয়েটির জন্য সারা পৃথিবীর
বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে রাজি ছিল । কিন্তু মেয়েটি এমন কিছুই করল না । তার বাবা
মায়ের ২০ বছরের ভালবাসার সামনে তার ১ বছরের ভালবাসার শক্তি খুব ক্ষুদ্র
ছিল ।
বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি নিজের চির অধরা স্বপ্নগুলোকে
বিসর্জন দিল । একদিন ছেলেটি কে ডেকে বলল- ভাল থেকো তুমি । তারপর সেই
ছেলেটির জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল সেই মেয়েটি ।
মেয়েটিকে হারিয়ে ছেলেটি পুরোপুরি দিশেহারা । বেঁচে থাকাটাই তার কাছে
অসহ্য হয়ে উঠেছিল । একবার ভাবল আত্মহত্যা করবে । চোখের পলকেই সব
যন্ত্রনার অবসান ঘটাবে । কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল- তার ভালবাসা যদি সত্য হয়
থাকে, তবে মেয়েটা অবশ্যই তার কাছে আবার ছুটে আসবে । তখন যদি তাকে আর
খুঁজে না পায় ?
তাই ছেলেটি সিদ্ধান্ত নিল বেঁচে থাকবে । এবং খুব ভাল ভাবেই বেঁচে থাকবে ।
এক বুক ভালবাসা ও আকাঙ্খা নিয়ে সেই ছেলেটি আজও বসে আছে সেই মেয়েটির ফিরে
আসার প্রতীক্ষায় ।
সে জানে না কবে তার এই প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে ?
কবে মেয়েটি তার কাছে ফিরে এসে বলবে- গ্রহণ করবে আমায় ?
আর সে মিষ্টি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবে- ছিলাম তো তোমারই প্রতীক্ষায়......
এই হল সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটির ভালবাসার গল্প ।
জানি, আপনার বিশ্বাস করেন নি । ভাবছেন- এমনও হয় নাকি ?
কিন্তু জেনে রাখুন, সেই ছেলেটি আর সেই মেয়েটিকে আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি
। আমার খুব কাছের মানুষ ছিল তারা ।
বেশ কয়েকবছর আগে ১৪ই ডিসেম্বর, সেই মেয়েটির সাথে সেই ছেলেটির প্রথম দেখা হয়েছিল ।
আমি জানি, প্রতি বছরের মত এ বছরও সে ছেলেটি সারাদিন তাদের প্রথম দেখা
হবার জাগয়াটিতে গিয়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করবে আর গভীর রাতে একবুক হতাশা
নিয়ে বাসায় ফিরে আসবে ।
কেউ জানে না কবে তার অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে ?
কিংবা আদৌ কখনো ফুরাবে না ।
©somewhere in net ltd.