![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল সন্ধ্যায় যাচ্ছিলাম বাসায়, যাত্রাবাড়ী থেকে উঠলাম এক হিউম্যান হলারে। পথিমধ্যে শনির আখড়াতে জ্যাম, যথারীতি যাত্রীদের মাঝে শুরু হল আলোচনা। বিষয়ঃ এই জ্যাম এবং বিবিধ। আমার পাশে বসা এক যাত্রী তখন ফ্লোর নিয়ে বলছেন যে, উনি প্রায় ১৪ বছর কুয়েত এবং সৌদি আরবের বিভিন্ন যায়গায় ছিলেন এবং তিনি তার সেখানকার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে লাগলেন। তিনি বোঝাচ্ছিলেন যে সেখানের আইন শৃঙ্খলা পদ্ধতি এবং রাস্তার ট্রাফিক পদ্ধতি খুব উন্নত বিধায় সেখানে জ্যাম হয় না।
এবার আসি মুল গল্পে, পাশের যাত্রীর কুয়েত এবং সৌদি আরবের বর্ণনা শুনে আমার ঠিক উল্টো দিকের যাত্রী মুচকি হাসছিলেন, এক পর্যায়ে তিনি শুরু করলেন …… ভাই, আপনি যেহেতু কুয়েতে ছিলেন, তাহলে বছর চারেক আগের ঘটনা মনে আছে কি? যখন কুয়েতে ৩ বাংলাদেশীকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়েছিলো? পাশের যাত্রী বললেন হ্যাঁ, মনে আছে। এবার উল্টো দিকের যাত্রী বললেন যে, আমি ঐ ঘটনার একজন আসামী। সবাই তখন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। তখন তিনি ঘটনার বর্ণনা দিলেন এভাবে … আমি ২১ বছর যাবত কুয়েতে কাজ করি, ঘটনার সময় আমি একটি ক্লিনিং কোম্পানির সুপারভাইজার, আমার অধীনে ১৫৪ জন লোক কাজ করে যাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশী।
ঘটনার দিন সকাল ৯ টার দিকে এক কুয়েতি এসে আমাকে বলল যে তার তিনজন লোক দরকার। জিজ্ঞেস করলাম কেন? সে বলল যে তার বাসায় কিছু ময়লা আছে পরিস্কার করতে লোক প্রয়োজন। যেহেতু আমার কোম্পানি ক্লিনিং কোম্পানি, তাই আমি তিন জন ছেলে দিলাম, যাদের একজনের বাড়ী টাঙ্গাইল, একজনের কিশোরগঞ্জ এবং অন্যজনের সিরাজগঞ্জ। ঠিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর তারা কয়েকটা বড় বস্তা নিয়ে আসে কোম্পানির বড় ডাস্টবিনে ফেলার জন্য। তারা যখন গাড়ী থেকে বস্তাগুলো নামাচ্ছিল ঠিক তখনই পুলিশ এসে হাজির। তিনটা বস্তা চেক করে একটি বস্তার মধ্যে তারা এক ফিলিপাইনি মহিলার খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। মার্ডার কেসের আসামী হিসেবে ঐ তিনজনকে এবং তাদের সুপারভাইজার ও অনুমতি প্রদানের জন্য আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ তিন ছেলের কথা অনুযায়ী তারা শুধু ঐ বাড়ীতে গিয়ে বস্তাগুলো তুলে নিয়ে এসেছে। লাশের ব্যপারে তারা কিছুই জানে না। অর্থাৎ লাশ ঐ বস্তায় আগে থেকেই রাখা ছিল। এবং যখন ঐ লাশ নিয়ে তারা আসছিলো তখন ঐ কুয়েতি পুলিশকে ফোন করে দিয়েছিল।
যেহেতু ঐ বস্তায় আমার হাতের কোন ছাপ পায়নি, তাই এই কেস থেকে আমাকে রেহাই দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু হাতের ছাপ থাকায় ঐ তিনজনকে দেওয়া হয় মৃত্যু দণ্ড। আমার কোম্পানি থেকে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা থেকে এই কেসে আমাদের পক্ষে উকিল নিয়োগ করা হলেও নির্দোষ হতভাগ্য ঐ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ঠেকানো যায়নি।
এর পর যাত্রী ভদ্রলোক যা বললেন, সে কথা শুনে মনে হল মহান আল্লাহ পাকের বিচার আসলেই নিরপেক্ষ। তিনি বললেন যে, বিশ্বাস করেন ভাই যেদিন ঐ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তার ঠিক ৭ দিনের মাথায় ঐ কুয়েতি তার পরিবারের ১১ জন সহ যাচ্ছিলেন আনন্দ ভ্রমনে, পথে তাদের গাড়ীর সাথে বিপরিত মখের গাড়ীর সংঘর্ষে ঐ কুয়েতির পরিবারের ১১ জন সহ তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
©somewhere in net ltd.