![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মীর তৌকির হোসেন ।বাড়িতে ডাক নাম তুষার ।আব্বু এন.জি.ও তে চাকরী করার সুবাদে নানা জায়গায় ঘোরা হয়েছে।এ পর্যন্ত ২৭ টা জেলায় থাকা হয়েছে ।মেয়েদের খুব কাছ থেকেই দেখেছি,চিনেছি,বুঝেছি ।কিন্তু কথনোইপুরোপুরি বুঝতে যাই নি ।কারণ আমি একটা কথায় খুব বিশ্বাসী ছিলাম :
"Never try to understand a girl completely;if u do either u will go mad or u will start to love her"
প্রেম জিনিসটা অনেকবার ধরা দিয়েই দেয়নি জীবনে । তাই বেশী চেষ্টাও করি নি তাকে ধরার । ক্লাস নাইন এ থাকতে আব্বু ট্রান্সফার হয়ে বগুড়ায় আসে,ক্লাস টেইন এ থাকতে বগুড়ায় বাড়ি করে।আমাদের বাড়ির আশেপাশের লোকজনদের সাথে আমার ইন্টারেকশন কথনোই মিউচুয়াল ছিল ।আরেকটা কথা সেটা হলো আমাদের এলাকায় আমার সমবয়সী মেয়েদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশী ছিল ।নানা কারণে মেয়েরা আমাকে adam-teasing করতো ।adam teasing ছিল কিছুটা এরকম :
১।"কাল না আমি কুশার খেয়েছি"।
২।আমাদের দেশে তুয়ার পড়ে না কেন ???
৩।তৌকিয়ের গত নাটকটা খুব বাজে ছিল ।ইত্যাদি ।
আমি প্রতিদিন এসব শুনতে শুনতে অভস্তহয়েছিলাম । কিন্তু খেয়াল করতাম ওদেরমাঝে একটি মেয়ে সবসময় চুপ থাকতো,অপরুপ মায়ামাখা মুখ দুটো নিষ্প্রাণমনে বসে থাকতো । হরিণী চোখ দুটো কি যেন বলতে চাইতো কিন্তু পারতো না । আমি ও সবাক কথনোই পাত্তা দেই নি ।
এরই মাঝে আমার এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট হয় ।আমি গোল্ডেন জি.পি.এ ৫ পাই ।তখন থেকে adam teasing মাত্রা আরো বেড়ে যায় ।আমি আযিযুল হক কলেজে ভর্তি হই।অনেক নতুন ফ্রেন্ড হয় ।হাসিখুশিতে দিনগুলো কাটঁতে থাকে ।কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে ঐ মেয়েটার সাথে আই কনট্রাক্ট হলেই কি যেন হয়ে যায় ।
বারবার যেন বলতে চায় তুমি আমার সাথে কথা বলো না কেন ?
বারবার আমাকে কাছে টানে কিন্তু আমি গাধা দুনিয়ার সব মেয়েদের সাথে ফ্রী কিন্তু এই মেয়ের সাথে কথা বলারও সাহস হয় না ।
একদিন সুপার মল এ গেছি কিছু কেনাকাটা করতে হঠাত্ পেছন থেকে একজন বলছে "এই শুনছো ?"
আমি অচেনা কন্ঠ শুনে পেছন ফেরে চাইতেই থ হয়ে গেলাম ,এতো দেখি সেই মেয়ে ।কিছুক্ষণ পর একটা ধাক্কায় সম্ভিত ফিরে পেলাম ।
সে বললো ,কি ব্যাপার ! কোথায় হারালে,আমি বলতে চাচ্ছিলাম ,তোমার চোখে,যেখানে যতবার দেখি খালি হারাতেই ইচ্ছে করে ,ডুব দিতে ইচ্ছে করে ঐ নীল দরিয়ায় কিন্তু কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হয় না ।
আমি বললাম "হ্যা "বলো ।
ও বললো ,তুমি আশরাফ স্যারের কাছে পড়োনা ?আমি মাথা নাড়ালাম ।
ও বললো ,আমি শুনেছি স্যারের নোটগুলো নাকি ভাল , আমাকে কিছু দিনের জন্য দিতে পারবে ?
আমি এমনভাবে মাথা নাড়ালাম যেন ঘাড় ভেঙ্গে যায় অবস্হা ?
তাহলে আম্মুকে পাঠাবো নি তোমাদের বাসায় , ও বললো ।
আমি মাথা নাড়ালাম ।সন্ধায় আন্টি এল নোট নিয়ে গেল ।আন্টি যাওয়ার ১৫ মিনিটের মাথায় সে এসে হাজির ।সে বললো ,আমাকে কৌণিক সূত্রের এই প্রশ্নটা বুঝিয়ে দেবে ।আমি বললাম,হোয়াই নোট ,আমি প্রশ্নটা বুঝিয়ে দিতে তার চোখে চোখ পড়তেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম ।কিছুহ্মণ পর যথারিতি তার ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে এলাম ।
কোথায় হারিয়ে যাও মাঝে মাঝে ,সে বললো।
আমি দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে তাকে বাকী পড়াটুকু বুঝিয়ে দিলাম ।রাতে যথারীতি আমার ঘুম আসে না ,বারবার খালি তার কথাই মনে পড়ে ।
ও সরি । এতহ্মণতো তার নামই বলা হয় নি।তার নাম শারমিন ।বগুড়ার শাহ সুলতানকলেজে পড়ে ।এভাবে মাঝে মাঝে নোট আদান প্রদানের মাধ্যমে ইন্টারেকশন বাড়তে থাকে ।একদিন তার কলেজে গিয়েছিলাম আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে ।সেখানে দেখি শারমিন এক ছেলের সাথে দাড়িয়ে গল্প করছে ।খুব খারাপ লাগলো দেখে ।কিন্তু কেন খারাপলাগলো !আমি ও তো অনেক মেয়ের সাথে গল্প করি ।বিকেলে ওর সাথে দেখা হলে ছেলেটা কে ছিল ,জিজ্ঞাস করলাম । ও বললো ক্লাসমেট ।আমার ছোট ভাই তার ছোট ভাই এক ক্লাসের ।নানা কারণে আমার শারমিনের বাসায় এবং শারমিনের আমার বাসায় যাওয়া আসা বাড়তে থাকে ।এলাকার বাকী মেয়েরা ভাবতে থাকে আমরা বুঝি প্রেম করি ।তাই adam teasing এর মাত্রা একে একে কমে যায় ।আমি সুযোগ খুজতে থাকি কবে তাকে মনের কথাগুলো খুলে বলবো ।
এভাবেই এইচ.এস.সি শেষ হয় ।আমি ঢাকা উদ্ভাস কোচিং এ ভর্তি হই ,সে ওমেগা তে ভর্তি হয় ।সেখানে আমাদের আন্তরিকতা আরো বেড়ে যায় ।এইচ.এস.সি রেজাল্ট দেয়,আমি এ+ মিস করি ।সে এ+ পেয়ে যায় ।অনেক সুযোগ আসলে ও কথনো তাকে
মনের কথা বলতে পারি নি ।
ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় ।আমি শাহজালালে চান্স পেয়ে ভর্তি হই ।ও কোথাও চান্স না পেয়ে সেকেন্ড টাইম দেবে ভেবে নেয় ।
আমি ভাবি ২৩শে নভেম্বর তার জন্মদিনের দিন তাকে প্রপোজ করবো । যেই ভাবনা সেই কাজ ।
২৩শে নভেম্বর আমি তাকে লা বাম্বা রেষ্টুরেন্টে ট্রিট করতে নিয়ে যাই ।
বলি ,শারমিন তুই আমার খুব কাছের একজন বন্ধু ।তোকে আমি সব সময় অন্য চোখে দেখেছি ।কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসলে কথাটাই বলা হয় নি ।এভাবে আরেক মাস কেটে যায় ।৩১শে ডিসেম্বর আমি সাষ্টে চলে আসবো ।দুপুরে সে আমাকে এওয়ার্ড পার্কে ডাকে ।আমি যাই ।
সে বলে আজকে তোকে একটা কথা বলবো ।
আমি বলি বল ।জিজ্ঞেস করছিস কেন ?
সে বলে ,যদি কেউ কাউকে ভালোবাসে তাহলে তার কি করা উচিত ?
আমি বলি ,অবশ্যই তাকে সব বলে দেওয়া উচিত ।
তখনতো আমি পুরা খুশিতে আত্নহারা ।আজবোধহয় শারমিন আমাকে প্রপোজ করবে ।
সে বলে ,যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়,আমি বলি ,সেটা পরে দেখা যাবে নে ।
সে ৩-৪ মিনিট চুপ করে থেকে বলে আমি রকিকে ভালোবাসি ।আই এম ইন লাভ উইথ রকি ।আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় ।আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না ।খুব কাদতে ইচ্ছে করছিলো ।কিন্তু অনেক কষ্টে তা আটকিয়ে দিলাম ।রকি ,যেকিনা নেশা করে ,পড়াশোনায় বাজে ,তাকে আমার স্বপ্নের রাজকুমারী মন দিয়ে বসে আছে ।
আমি বললাম ,তো তাকে বলে দে ।কি কষ্টে যে তাকে সেই কথাগুলো বলেছিলাম আজ ও ভাবলে আমায় চোখের কোণে জল এসে যায় ।সে রাতে সিলেট চলে আসি ।
আজ ও তার সাথে কথা হয় । বগুড়ায় গেলে পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে কিন্তু সে তো আজ আমার না ,অন্য কারো ।
ভাল ,তুই সুখে থাক ,ভাল থাক ,এটাই শেষ প্রত্যাশা ।
©somewhere in net ltd.