![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম ট্রেনিং এর অর্ডারটা পাবার জন্য। আমাদের প্রশিক্ষন হবে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই এ। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একেবারেই গা ঘেষে আমাদের ট্রেনিং একাডেমী। সেখানে দেড় মাসের লম্বা ট্রেনিং।
আগে থেকেই শুনেছিলাম, ট্রেনিং এ গেলেই টাকা পাওয়া যায়। টাকার অঙ্কটা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছিল না। তবে কোনটাই বিশ হাজারের কম ছিল না। কেউ কেউ কাপ্তাই লেকের অসাধারন সৌন্দর্যের কথাও বলেছিল। কিন্তু সব ছাপিয়ে টাকার সৌন্দর্যেই আমি বেশি মুগ্ধ ছিলাম।
যথাসময়ে একটা খামে নির্দেশ চলে আসলো আমাকে ৪ অক্টোবর থেকে একাডেমীতে অবস্থান করতে হবে। সেখানে ফ্রি থাকতে দিলেও খেতে হবে নিজের পয়সায়। পরিস্কার করে লেখা ছিল কোন ধরনের অতিথি না নিয়ে যেন যাই। কেন অতিথি নিয়ে যেতে মানা ছিল সেটা পরে বুঝেছি।
ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম-সেখান থেকে কাপ্তাই। ফেনী পার হবার একটু পরই পাহাড়ের মত কিছু দেখা গেল। সমতল ভূমির মানুষ আমি। একটু উচু যেকোন জায়গা দেখতেই ভালো লাগে। মনটা রোমান্টিক হয়ে যায়। চট্রগ্রাম পার হয়ে বাস যখন আকাবাকা পথে পাহাড়ের কোল ঘেষে এগিয়ে যাচ্ছিল, আমি কি যে ভালো লাগছিল তা বলে বুঝানো যাবে না। পাহাড়ের গা ঘেষে চলছি। দূরে আরো পাহাড় দেখা যাচ্ছে। নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নাম না জানা একটা নদী( পরে তার নাম জেনেছি)। পাহাড়ের গায়ে ঘন গাছ আর গুল্মের ছড়াছড়ি। পথের একেবারে পাশেই দেখলাম একটি সরু ঝর্না। আমি মুগ্ধ হয়ে বাসে বসে আছি। ৪৫ দিন এখানে থাকার সুযোগ পাব ভাবতেই ভালো লাগছিল। অই বাসে বসেই একটা প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছিলাম নিজের কাছে। যাই ঘটুক না কেন, এই দিনগুলি আমি আনন্দে কাটাব। কোন ধরনের কষ্ট মনে ধরে রাখব না। আমি আমার প্রতিজ্ঞা অনেক দূর পর্যন্ত ধরে রেখেছিলাম। শেষপর্যন্ত মনে হয়েছে, এই যে জোর করে নিজেকে প্রফুল্ল রাখার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম-সেটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল।
একাডেমীতে এসে জানতে পারলাম আমাকে একলা রূম দেয়া হবে না। দুইজনকে একটা রূম শেয়ার করতে হবে। এর আগের একটা ট্রেনিং এ (গাজীপুর ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে) বাফ্রু ভাইয়ের সাথে রূম শেয়ার করে থেকেছিলাম । এবারেও আমি অনুরোধ করে বাফ্রু ভাইয়ের সাথে একত্রে রূম নিলাম। বাফ্রু ভাই পুরা দেড় মাস আমার রূমমেট ছিলেন। ব্লগে বার বার তার নাম আসবে। বাফ্রু ভাই উপজাতি। মারমা সম্প্রদায়ের উজ্জ্বল ফর্সা ছেলে। দৈহিক গড়ন ভালো, ঈর্ষা করার মতই ভালো। চোখ সরু না, চশমা পড়া থাকে বলে চট করে বোঝা যায় না উনি উপজাতি।
একাডেমীর প্রথম সকাল। বারান্দায় বের হয়ে দাত মাজছি। সামনে মেঘে ঢাকা পাহাড়। দাত মাজতে মাজতে মনে হলো এত সুন্দর দৃশ্য আমি জীবনে দেখিনি। মনটা তরল হয়ে যায়। একাডেমীতে যতদিন ছিলাম, প্রতি সকালে আমি দাত মেজেছি পাহাড় দেখতে দেখতে। সকালের এই দৃশ্যের পরে কোনকিছুই আমার মনে কালো দাগ ফেলতে পারত না।
লাল-নীল তরল
ট্রেনিং শিক্ষা সফর হিসাবে আমাদের কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আমাদের কিছু স্ট্রাকচার আছে। কাগজ কলমে লেখা থাকবে আমরা সেগুলো দেখতে যাব। কিন্তু আসলে যাব ঘুরতে। শুক্রবার সকালে ভাড়া করা বাসে সবাই যাব। আমি বাফ্রু ভাই এবং আরো কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম শুক্রবার সবার সাথে না গিয়ে আগের দিন চলে যাব। আশা করা যায় রেস্ট হাউজ অইরাতে খালি থাকবে। যদি খালি থাকে তবে আমরা ছোটখাটো একটা আসর দিব লাল-নীল পানির, এইটাই প্ল্যান।
কোর্স কোর্ডিনেটরকে বললাম, স্যার আমরা আগের দিন দুপুরে যেতে চাই।
ক্লাসে মেয়েরা ছিল। লাফ মেরে তারাও বলল, আমরাও আগে যেতে চাই।
আমাদের মুখ গেছে শুকিয়ে।মেয়েরা গেলে রেস্টহাউজে উঠবে। আমাদের লাল-নীল তরল আর খাওয়া হবে না। আমি দিলাম হাল্কা ধমক, তোমরা আমাদের সাথে গিয়ে কি করবে! পরের দিন আসো।
ধমক দেয়ার চেষ্টাটা ছিল চরম একটা ভুল। গলার স্বরে কোমলভাব না থাকায় মেয়েরা অন্যরকম সন্দেহ করে বসল। রহস্যময় কারনে এরা এটাকে নিল চ্যালেঞ্জ হিসাবে। ওরা একলা যাবে। আমাদের সাথে যাবে না। জোরাজুরি করে আলাদা বাসে করে কিন্তু একই সময়ে আমাদের সাথে কক্সবাজার উপস্থিত হলো। ফলাফল আমি আর বাফ্রু ভাই অইরাতে স্বছ পানি খেলাম। সময়মত ঘুমাতে গেলাম। আর মনে মনে অভিশাপ দিলাম মেয়েদের
©somewhere in net ltd.