![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার দাদার দাদারা নাকি জমিদার ছিল, ঘোড়ায় চড়ে ঘুড়ে বেড়াতো এদিক সেদিক। গ্রামের নামটাও সাহেব পাড়া, ব্যাপার সেপারি আলাদা। ঈদে বাড়ি গেলে অনেকেই আমারে ডাকে ছোট মিয়াঁ বলে, ছোট ছেলে বলেই কিনা ছোট মিয়াঁ — কে জানে ? তবে নিজেকে জমিদারের উত্তরাধিকার ভাবতে জোস লাগে। দাদা পরদাদারা নিশ্চয়ই ঘিয়ের মধ্যে ডুবে থাকতো, তাইতো মাঝে মাঝে নিজের শুকনা হাতেও আমি ঘিয়ের ঘ্রাণ খুঁজে বেড়াই!
গতকাল একটা পত্রিকা পড়ছিলাম, শেষাংশ ছিল এমন, “সিমিন হোসেন রিমির উচিত পারিবারিক আদর্শ, ঐতিহ্য ও সুনাম বজায় রাখতে নির্যাতিতা মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে তার ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করা। অন্যথায় শামুকের কামড়ে তার রাজনৈতিক অপমৃত্যুর আশংকা রয়েছে। এতে হুমকিতে পড়বে বঙ্গতাজ পরিবার”। — আহা কি ভয়ঙ্কর বিপদের কথা, এতো তুচ্ছ একটি কাজের মেয়ে, তার জন্য বঙ্গতাজ পরিবারের ঐতিহ্য আজ হুমকির মুখে! কঠোর বিচার করতে হবে, কঠিন অবস্থান নিতে হবে, পড়ন্ত জমিদারের হাত থেকে কোনভাবেই ঐতিহ্যের ঘিয়ের গন্ধ মুছে ফেলা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সিমিনের স্পষ্ট কথা – “আমার কোনো এপিএস নেই”। সংবাদ সম্মেলনে এপিএস কে হাইলাইট করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন, কারো অন্যায়ের জন্য গায়ে কাদা লাগবে, তা কেমনে হয়!
কাপাসিয়া নামের সঙ্গে মিল রেখেই মেয়েটির নাম রাখা হয়েছে ‘কাশফিয়া’। কোন একটি পত্রিকা যেন রেখেছে। এক নামের ঠেলায় পত্রিকার সব কপিতো শেষ হয়েছেই, সাথে ফটোকপি করতে করতে দোকানদার দিশেহারা। এই না হলে রিয়ালটাইম ডিসিসান, গর্বে বুক ভরে উঠেছে নিশ্চয় রিপোর্টারের এবং নাম প্রণেতার। ইন্ডিয়ান আইডলের পরে ক্লোজ-আপ-ওয়ান আর দিল্লির ধর্ষিতার পর কাপাসিয়ার কাশফিয়া। গর্বের সাথে ইন্ডিয়ান দাদাদের বললাম - “দেখো আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি কিন্তু নিঃশ্বাস নিচ্ছি তোমাদের ঘাড়ের ওপর, আন্ডার এসটিমেট করার কোন সুযোগ নেই”।
এতগুলো রিয়ালটাইম সাকসেসফুল ডিসিসানের পরও কেন জানি কাশফিয়ার একটা কথা বুকে ত্রিশূলের মতো গেঁথে আছে, কোনভাবেই ভুলতে পারছি না, “আন্টি আমাকে বটি দিয়ে কোপানোর চেষ্টা করেছে, পিঠা খেতে চেয়েছি বলে গরম তেলে দু’হাত ডুবিয়ে দিয়েছে, বেলন দিয়ে ভেঙে দিয়েছে একটি দাঁতও।” উফফফ — আমি বুঝিনা কেনো তোরা এতো লোভ করিস? না খেয়েতো কেও মরে না, তবুও কেনো তোরা এতো খাওয়ার কাঙ্গাল? আন্টির ক্ষত না হয় শরীরের ওপর গেছে, কিন্তু আঙ্কেলের ক্ষত কেমনে দূর করবিরে কাশফিয়া? কেন এতো লোভ করিস?
তবুও শেষ পর্যন্ত আমরা খুশী, আমরা অন্তত আমাদের পড়ন্ত জমিদারীর ইজ্জত রক্ষা করতে পেরেছি, এখনও শুকনো হাতে ঘিয়ের ঘন্ধ খুঁজে বেড়াতেঁ পারি। নসিমন-করিমনের মতো ব্যাকডেটেড নামের বদলে তোরে একটা স্মার্ট নাম দিতে পেরেছি।
পাঁচশত বছরের পুরনো মহানুভব কাজলরেখা আজ ফিরে এসেছে মূর্তিমান পিশাচ হয়ে, সবকিছুই মনে হয় পরিবর্তিত হয়। যেমন হয়েছে রাজনীতি, রাজনীতির সাথে রাজনীতিবিদের এখন আর কোন বন্ধন নাই। পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের ৩৫-৪০ বছরের শ্রম আর একজন নষ্ট ব্যবসায়ির ৬ মাসের ইনকাম সমমূল্য হয়ে গেছে। তোরা পেটে লাগাম দিয়ে একটু সাবধানে থাকিস, নিজেরে আর পণ্য বানাস না, আমাদের বিজনেস করার সুযোগ দিস না, বুকে ত্রিশূলের যন্ত্রনা আর ভালো লাগে না —-
©somewhere in net ltd.