![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বসন্তে বাংলা একাডেমীতে বসে বইমেলা। এই বইমেলা বিভিন্ন দিক দিয়ে আলোকিত হয়। ১লা ফাল্গুন, ২রা ফাল্গুন (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস), ৮ই ফাল্গুন -এ বছর ৯ই ফাল্গুন (২১শে ফেব্রুয়ারী)। ফাল্গুনের এই ফুল্লোরধারায় আলোকিত হয় বইমেলা। শুধু ঢাকাবাসী নয় সমগ্র বাংলাদেশ থেকে সতস্ফুর্ত ভাবে মানুষ এই বইমেলায় অংশগ্রহণ করে। এই বইমেলায় সাথে যোগ হলো প্রজন্ম স্কয়ার। ভবিষ্যতেও এটার প্রভাব বাড়বে বলে আশা করছি।
বইমেলায় বেশ কিছু বই কিনলাম। এই বইগুলো কেমন লাগলো সেই অনুভূতি জানাতেই পোস্ট দেয়া। গ্রন্থ সমালোচনা বললেও আসলে এটা বই পড়ে প্রতিক্রিয়া বলা যায়। যা হোক প্রথম কিস্তিতে আরমানউজ্জামান (সহকর্মী এবং আত্মার আত্মীয়) এর প্রথম উপন্যাস 'রূপের আঁচলে বসন্ত' সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
‘রূপের আচলে বসন্ত’, লিখেছেন আরমান উজ্জামান। এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস। ‘প্রথম উপন্যাস’ সব সময় ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতায় পরিপুষ্ট হয়। আমার ধারণা লেখকের এই উপন্যাসটি ও এর ব্যতীক্রম নয়। একজন লেখক তার লেখার উপাদান কোথায় থেকে সংগ্রহ করেন- নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। এরপর বন্ধু, প্রতিবেশী, পরিবেশ, ইতিহাস আর চলমান সময় থেকে। প্রথম উপন্যাসে সাধারণত লেখক তার নিজের একটা সময়কে কেন্দ্র করে গল্প সাজিয়ে থাকেন। এই উপন্যাসে আমরা একেবারেই বর্তমান সময়ের প্রতিধ্বনি শুনতে পারছি।
পুরো উপন্যাস জড়ে একজন নীতুর ভাঙা-গড়ার খেলা দেখা যায়। তবে নীতুর জবানীতে নীতুকে তেমন করে পাওয়া যায়নি যতটা পাওয়া গেছে সানি কে। বলতে দ্বিধা নেই, সানির মাঝে লেখককে খুঁজে পাওয়া যায় অনেক বেশি সাবলীল ভাবে, যদিও এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সানি নয়।
যতটা আবেগ যতটা কষ্ট নিয়ে একজন সানি দিন যাপন করে সেই দিকটি যতখানি প্রস্ফুটিত ফুলের মতো প্রকাশিত তার কোনো কিছুই তেমন প্রকাশ পায় না নীতুর দিনলিপিতে। বিশেষ করে নীতু যখন একটা ভুল করে রোহানের বাসা থেকে বের হয়ে আসে এরপর নীতুর মানসিক অবস্থা জানা যায় না বা জানা যায় না ঠিক কী হয়েছিল রোহানের বাসায় যে নীতু সানিকে বলেছিল, ‘I wanna kill myself.’
নীতু কেন হাসানকে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলো? সে গাধা টাইপ একটা ছেলে বলে বলা হলেও, এটাতো ঠিক নীতু কোনদিনও সানিকে ভালোবাসেছে কিনা এটা যেমন পরিস্কার নয় (নীতুর ভাষায় খুব ভালো বন্ধু) তেমনি সানি যেহেতু নীতুর কলংকময় অতীতের সাক্ষী তাই তাকে চাইলেও আর ভালোবাসতে পারতো না বা ভালোবাসার দাবী নিয়ে সানির কাছে যেতে পারতো না। কিন্তু সে ভালোবাসার কাঙাল। তাই বিদেশী হ্যান্ডসাম দিহান তাকে আদৌ ভালোবাসবে কিনা এই দোলাচলে নিয়ে থাকতে চায়নি। হাসান যে তাকে পছন্দ করে এটাকে পুঁজি করেই সে নতুন স্বপ্ন গড়ে তোলে।
চমৎকার শব্দের বুননে গাঁথা জীবনের চলৎছবি ‘রূপের আঁচলে বসন্ত’। রূপবতী নীতু যেন শুধু নীতু নয়, যেন এদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মেয়েদের প্রতীক। তাদের চোখে অনেক অনেক স্বপ্ন। অনেক কিছু ভেঙে অনেক কিছু গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু নিজের জীবন নিয়ে শুধু অসচেতনই নয়, নিজের মূল্যটুকু কী এটাই জানে না ভালো করে তেমনি একটি মেয়ের গল্প বলেছেন লেখক। সাথে অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতীক সানি, লম্পট রোহান, প্রবাসী দিহান, আর প্রযুক্তি নিস্পৃহ হাসান।
হাসান, সানি, রোহান, দিহান আর নীতু। খেয়াল করলাম প্রতিটি নামে ‘ন’ রয়েছে (সানি এবং নীতু এ নাম দুটোতে ‘ন’ এর সাথে ই’কার বা ঈ’কার যুক্ত রয়েছে আর প্রতিটি নামের ‘ন’ মুক্ত)। লেখকের অবচেতন মন কী তবে ‘ন’ বা এর সাথে একটি ‘আ’কার যুক্ত করে ‘না’ কে বড় হিসেবে দেখেছেন? কেন বলছি? নীতুর পরিনতি এই প্রশ্ন তুলতে সহায়তা করেছে। সমস্ত চড়াই-উতরাই (একের পর এক নায়ককে উলটে পালটে, গ্রহণ আবার বর্জ়ণ করে) বাসর ঘরে হাসানের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন ছিনতাই কারীদের হাতে হাসানকেই কেন আহত হতে হবে? এটা কি সানির ভালবাসার অবমাননার প্রাকৃতিক প্রতিশোধ, না গল্পে সাসপেন্স তৈরির মধ্য দিয়ে উপন্যাসের পরিসমান্তির সার্থক প্র্যয়াস (নাকি উপন্যাসের চরিত্রের শ্রষ্টা হিসেবে নায়িকা নীতুর প্রতি কলমী প্রতিশোধ?)।
সানি ও হাসান আর্থ-সামাজিক আর মানসিকতায় অনেক কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, তাদের দু’জনের কিছু মিল তুলে ধরতে চাইলে দেখা যাবে তারা দু’জনেই সংস্কৃতিমনা, দুজনকেই অসম্ভব পছন্দ করে ছোটরা- যেমন সানিকে তার ভাতিজী ‘তিথি’ আর হাসানকে নীতুর ছোট ভাই ‘অপু’। সানির বাবা-মা কেউ নেই আছেন বড় ভাই আর ভাবী। আর হাসানের কেবল মা। এই সব স্নেহ বঞ্চিত মানুষগুলোর কাছে ভালোবাসা বা ভালোলাগার জায়গাগুলো অনেক পবিত্র এবং গোপন। ইচ্ছে করলেই বলে ফেলা যায় না। এমনকি তীব্র কষ্টেও মনের গহীনের ব্যথাটুকু কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না। অপর দিকে রোহান ও দিহান উচ্চবিত্তের বা বিত্ত-বৈভবের প্রতীক রূপেই চিত্রায়িত হয়েছে। ইচ্ছে করলেই নীতু দিহানকে বিয়ে করে সুখী হওয়ার চেষ্টা করতে পারতো, কিন্তু সে কেন হাসানকে বেছে নিলো? তবে কী সানির প্রকৃত ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়ে হাসানের নিস্ক্রীয় প্রেমকে শ্রদ্ধা জানাতেই নিজেকে হাসানের কাছে সঁপে দিতে চেয়েছে না লেখক মধ্যবিত্তের সেন্টিমেন্ট কে কাজে লাগাতে চাইলেন?
এমন তরো অনেক মানব মনের জটিলতর প্রশ্নের যোগান দিয়েই এগিয়ে চলেছে গল্পের চরিত্র এবং সময়। রহস্যময় পৃথিবীর অনেক কিছুই থেকে যায় অজানা। তেমনি মানব মনের বিশেষ করে নারীর মনের রহস্য উদ্ঘাটন আরো দুঃসাধ্য। সেই দুঃসাধ্য কর্ম আর রহস্যময়তার স্রষ্টা আরমান উজ্জামান মনের সমস্ত ভালোবাসা ঢেলে রচনা করেছেন ‘রূপের আচলে বসন্ত’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মহিবুল ইসলাম। প্রকাশ করেছে, ‘কালান্তর প্রকাশনী’। লেখক একজন কবিও বটে। খুব সুন্দর সুন্দর ছড়াও লিখেন। তাই কোথাও কোথায়ও গদ্যের ভাষা কবিতার মতো মনে হয়। বিশেষ করে সানির চিঠিটি, ‘তবে কী ফেরারী স্বপ্নগুলো সব লুট হয়ে যায় দিগন্তের নীলিমায়। নিরবধি জমে থাকা চোখের ক্লান্তি আর মুছতেই চায় না! এসবের কারণেই বোধহয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শহরের অলিগলি থেকে পাড়াগায়ের আঙিণায় গড়ে উঠা সব পার্লারগুলো! তবু চেনা বদনে স্পষ্ট হয়ে উঠে অচেনা বলিরেখা। যেন কোন প্রশাধনীর রঙই বদলে দিতে পারে না। কী অদ্ভুত! তাই না!
সবাই যখন তোমাকে অবাক রূপের মুগ্ধতার গল্প শুনায়, ঠিক তখন তোমার নিজ দর্পণে ভেসে আসে বিষন্নতার মেলা। এসব স্মরণ করে দেবার জন্য নয় প্রিয়! ইট-পাথরের অগণিত দেওয়ালের তো প্রান নেই, তুমি কার সাথে কথা বল রোজ! মেঝের টাইলস, মার্বেল পাথর, শোবার ঘরে টাঙিয়ে রাখা জলরঙের ছবি? এসবের জীবন থাকলে হয়ত বেশ চলে যেত?’
শুধু যদি নামকরণের স্বার্থকতার কথাও চিন্তা করি এই চিঠিটা ছাড়া যেন উপন্যাসটি অসম্পূর্ণ।
বইটি এবারের একুশে বই মেলার (২০১৩) প্রজ্জ্বলন প্রকাশ এর ব্যানারে ৪১২ নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। লেখকের এই পথ চলা সফল হোক, দীর্ঘ হোক। মানব মনের সুন্দরতম দিকটি ফুটিয়ে তুলতে লেখক যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তা এক কথায় অনণ্য। আশা করি বইটি পাঠককে নির্মল আনন্দ দিবে।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১১
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ আমি অনেক সম্মানিতবোধ করছি।
এর পরের রিভিউ বইটার নাম বলবো? না থাক। আসছে সামনে সপ্তাহে।
ধন্যবাদ বন্ধু।
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৫
আরমানউজ্জামান বলেছেন: খুব সম্মানিতবোধ করছি। একজন অতি প্রিয় মানুষ এবং একজন সু-সিহিত্যিকের কাছ থেকে এভাবে বই আলোচনা আসবে। আমি ভাবতেই পারিনি।
ভাললাগা ধরে রাখতে পারছি না।
লেখকের প্রতি রইল আমার সহস্র শ্রদ্ধাবোধ
০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২১
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ধন্যবাদ আরমানউজ্জামান। আরো লিখুন, আমাদের সাহিত্যকে সম্মৃদ্ধ্ করুন। এই প্রত্যাশা রইল।
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩১
আরমানউজ্জামান বলেছেন: অনেক কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।
০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪১
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ছি, ছি, কেন? আরমান এ আপনার প্রাপ্য।
ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫
উৎকৃষ্টতম বন্ধু বলেছেন: বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনার রিভিউ পড়ার পর বইটা পড়তে ইচ্ছা করছে।