![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আলোচনায় আবার ড. ইউনূস, বিতর্ক আবার বাংলাদেশ আবার দেশের ভাবমূর্তি। একটা বিষয় খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যখনই এই ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা হয় তখনই বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয়টা আলোচনায় চলে আসে। বাংলাদেশের আর কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম কি না মনে পড়ে না। কিন্তু কেন? একজন নোবেলজয়ী হিসেবেতো তার নামের পাশের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থাকার কথা। উল্টোটা কেন হচ্ছে। গবেষণায় না গিয়েও বলা যায়, দেশের সুখ দুঃখ কোনো সময়েই কী আমরা তাকে পাশে পেয়েছি? বরং যতবার উনার নাম আলোচনায় এসেছে ততবার কোনো না কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের হোতা হিসেবেই এসেছে।
যদি ধরেও নেই তিনি একজন খাঁটি বাংলাদেশি যিনি বাংলাদেশ, দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। তাহলে প্রশ্ন আসে এই ভালোবাসার নিদর্শন কোথায়? মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, পাকিস্তান, যুদ্ধাপরাধী, তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নকে নিশ্চিত করা, বিশ্বের দরবারে দেশের সুনামকে ঊর্ধ্বে রাখার জন্য সরকারের পাশাপাশি কাজ করে যাওয়া ইত্যাদি প্রশ্নে তিনি আজও প্রশ্নবিদ্ধ। উল্টো আমরা দেখেছি পদ্মা সেতু, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ অনেক ইস্যুতে বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের জন্য ভিলেনের চরিত্রে নিজেকে হাজির করেছেন।
উনি এত বড় একজন বৈশ্বিক চরিত্র যিনি সারা বিশ্বে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, দেশে দেশে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কীভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে লেকচার দিচ্ছেন অথচ নিজের দেশে হাওরে লোক মারা যায়, বন্যায় ভেসে যায় দেশ, পাহাড় ধসে শত শত মানুষ মরে সব তলিয়ে যায়, আগুন সন্ত্রাসে সাধারণ নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয় আমরা উনার মুখ থেকে একটি বাক্যও শুনিনি, সাহায্যের হাত বাড়াতে দেখিনি। এসব বিষয় নিয়ে উনার কোনো কষ্টবোধ বা চিন্তা কাজ করে বলেও মনে হয় না।
উনি একজন বাংলাদেশি এই দেশের হাওয়া জলে বড় হয়েছেন, এখনো এই দেশেরই সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন অথচ দেশের কোনো বিষয়ে উনাকে পাওয়া যায় না। দুঃখজনক নয় কী বিষয়টা? হ্যাঁ, একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উনার অবশ্যই দেশের ভেতরে নিজেকে আবদ্ধ রাখলে চলবে না কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের দেশের প্রতি আন্তরিক নন, দেশের সমস্যা সমাধানে যাকে পাওয়া যায় না, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চের মতো আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত দিবসগুলো যিনি স্মরণ করেন না, শহীদের বেদিতে শ্রদ্ধা দেয়ার মতো প্রয়োজন বোধ করেন না তাকে কেমন করে একজন খাঁটি বাংলাদেশি ভাবা যায়?
তিনি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্তৃতিতে অবদান রেখেছেন। ক্ষুদ্রঋণ ধারণার অন্যতম পুরোধা হিসেবে তাকে এবং তার গ্রামীণ ব্যাংককে গণ্য করা হতো। ক্রমান্বয়ে এই গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমকে পুঁজি করে তিনি জয় করে নিলেন নোবেলের মতো বিশাল একটি স্বীকৃতি। উল্লেখ্য যে, হাতেগোনা যে কয়জন বাঙালি এই সম্মান অর্জন করেছেন তিনি তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে ইউনূস সাহেবের এই প্রাপ্তিতে গোটা দেশ যেখানে খুশিতে লাফিয়ে ওঠার কথা উল্টো এ নিয়ে শুরু হয়ে গেল বিতর্ক, বিভক্তি। একে একে আমরা জানতে পারলাম গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে তার নানারকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কথা। এই একটি বিষয় নিয়ে সরকার এবং তিনি সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন অবশ্য শেষ পর্যন্ত সরকার আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়। বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়া এবং এ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পেছনেও নাকি ইউনূস সাহেবের বিশাল অবদান আছে। প্রসঙ্গত: উনি আবার ১/১১ সরকারের সময় রাজনীতিতে আসার উদ্যোগটিও নিয়েছিলেন। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কথা আসে, একজন রাজনীতিবিদ হতে গেলে প্রথমেই আপনাকে দেশ ও দশের বিষয়ে নিজেকে সামনে আনতে হবে, ইউনূস সাহেব কি তা করেছেন বা করছেন?
উনি আমেরিকার ইলেকশন নিয়ে কাজ করেন, সেখানে হাজার মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন হিলারি ক্লিনটনকে জেতানোর জন্য কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে, নির্বাচন নিয়ে উনার কোনো বক্তব্য আসে না। মুক্তিযুদ্ধ, জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে যখন সারাবিশ্ব বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করছে তখন উনার দরজায় তালা ঝুলে। তিনি ব্যস্ত থাকেন বিদেশি কোনো ইস্যুতে। উনার হৃদয়ে আমেরিকা আছে কিন্তু লাল-সবুজের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না।
সম্প্রতি তার সামাজিক ব্যবসার সম্মেলন নিয়ে তৈরি হয়েছে আরেক কাণ্ড। প্রতি বছরের নিয়মিত একটি কর্মসূচি এই সম্মেলন। এবারের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল জুলাই মাসের ২৮ এবং ২৯ এই দুইদিনে। স্থান নির্বাচন করেছিলেন সাভারে। ইউনূস সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, ৪০টি দেশের দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধির এ সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা ছিল। আমন্ত্রিত পাঁচশ বিদেশি অতিথির মধ্যে প্রায় দুইশ’ জন ঢাকায় পৌঁছেও গিয়েছিলেন। সেখানে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) সমন্বয়ক টমাস গাস এবারের অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন।
কথা হচ্ছে, ইউনূস সাহেব একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তি। তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং চৌকসও বটে। উনি কী জানতেন না বা উনার লোকেরা কী জানতেন না যে কতদিন আগে এমন একটি বড় আয়োজনের অনুমতি নিতে হয়? সেখানে কী কী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়? কারণ সম্মেলনটি উনার উদ্যোগে হলেও বিদেশি অতিথিরা আসছেন বাংলাদেশে এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা করার একমাত্র দায়িত্ব সরকারের বিশেষ করে যখন সারাবিশ্বে এমনকি বাংলাদেশেও জঙ্গি ও মৌলবাদী গোষ্ঠী খুব সক্রিয়। এসব প্রশ্ন অবান্তর নয়। এসব প্রশ্ন না করলে অনেক প্রশ্নের সমাধান পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন কিন্তু শেষ হয়নি। আরো আছে। উনি একদিন আগে ঘোষণা দিলেন সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় সম্মেলন বাতিল এবং বিদেশি অতিথিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তাহলে লা মেরিডিয়ান হোটেলে কেমন করে বাতিল হয়ে যাওয়া সম্মেলনের কাজ চলে? আবার ফেইসবুকে লাইভও করা হয়েছে। তার মানে কি উনাদের সব প্রস্তুতি আগে থেকেই সম্পন্ন ছিল? উনারা নিশ্চিত ছিলেন যে সরকার অনুমতি দিবে না এবং এটাকেই উনারা প্রচারণার কাজে লাগাবেন?
প্রতি পদে পদে এমন হাজারো প্রশ্ন করা যায় উনাকে নিয়ে। সন্দেহের অবকাশ উনি নিজেই তৈরি করেন। বাংলাদেশে বসবাস করবেন কিন্তু কাজ করবেন বাংলাদেশ বিরোধী। অন্তত এ ধরনের ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করে উনার কাছে জবাব চাইবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। উনি কেন সরকারের অনুমতির বিষয়টি তোয়াক্কা করলেন না। এমন একটি বড় আয়োজন কী চাইলেই যে কেউ করতে পারে? যথাসময়ে সরকারি বিধিবিধান সম্পন্ন করলেন না। অনুমতির অভাবে সম্মেলন বাতিল বলে সারাবিশ্বকে জানিয়ে দিলেন আবার সম্মেলন বাতিল করেননি। দেশকে একটি অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য যদি উনাকে জবাবদিহির আওয়াতায় আনা হয় তাহলে কী খুব বেশি হবে?
©somewhere in net ltd.