নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ দেখতে পছন্দ করি, এবং মানুষের গল্প শুনতে পছন্দ করি...
১
আমার মা মাস শেষে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। ওই কাজটা করতে উনার সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। এবং খুবই সর্তকতার সাথে কাজটা করে থাকেন। ওই কাজে আমি ছাড়া আমার মায়ের আশে-পাশে কেউ থাকতে পারে না। থাকলেও কেউ কথা বলতে পারবে না। আমাকে কেন রাখেন সেটা পরে বলছি...
তো মা হাতের আঙ্গুল দিয়ে তারিখ গুণতে থাকেন। অথচ দেয়ালের ক্যালেন্ডার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু মা ক্যালেন্ডারের চাইতে নিজের হাতের আঙ্গুল এবং নিজের অধ্যায়নকৃত শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই কাজটা সম্পন্ন করতে আগ্রহী। মাঝে ভুল হলে আবার নতুন করে শুরু করেন। ভুল করা যাবে না ভেবে নিজের মনকে শান্ত রেখে পুনরায় সেই কাজটা করার চেষ্টা করেন।
আমি চুপচাপ অন্যমনষ্ক হয়ে দেখে থাকি, মাকে বুঝতে দিইনা যে আমি পুরো বিষয়টা সবসময় লক্ষ্য করি...
মা তাঁর আপন মনে আঙ্গুলের কড়ায় তারিখ গুণায় ব্যস্ত থাকেন...
২
আমার বাসায় মিজান ভাই রোজ পত্রিকা দিয়ে যান। নাম প্রতিদিন বাংলাদেশ। দাম ৫ টাকা। ২ ঘন্টায় পুরো পড়ে শেষ করা যায় এমন পত্রিকা। অন্যান্য পত্রিকাগুলোর বেলায় সেটা সম্ভব হয়ে উঠে না, আবার লোকাল পত্রিকাগুলোও পড়তে মন সাঁই দেই না। তাই বাধ্য হয়ে এই পত্রিকাটা কিনি। তাছাড়া এই পত্রিকায় লিখেন আমার প্রিয় ব্লগার এবং লেখক ভাইয়েরা। উনাদের আর্টিক্যল পড়ার জন্য হলেও আমি এই পত্রিকা কিনি।
মিজান ভাই প্রতিমাসেই একবার নাহয় দুইবার পত্রিকা দিতে পারেন না অসুস্থতার কারণে। বিষয়টা আমি মেনে নিলেও মা মানতে নারাজ। মায়ের দাবী সে একটা ব্যবসা করে, তাঁর অবশ্যই দ্বায়িত্বজ্ঞান থাকা উচিত। সে এক, দুইবার পত্রিকা না দিলে সেই নিউজগুলি পাবি কোথায়? আমি যদি বলি, ফেইসবুকে, তখন মা বলে উঠেন, ফেইসবুকেই সব পেলে পত্রিকা কেনারতো দরকার নাই। প্রতিমাসে ১৭০ টাকা দেওয়ার তো কোনো মানে নাই...
আমি চুপ থাকি। মিহিরেরও পছন্দ না আমার পত্রিকা কেনাটা। তাঁর দাবী, তোমার আইডিতে একবার হোমপেজে টুঁ মারলেই আমি বলতে পারি আজ বাংলাদেশে কোথায় কি কি হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে ঝগড়ামূলক আলোচনা হবে ভেবে প্রসঙ্গটা বাদ দিই। নিজের সাথে কখনও নিজের ঝগড়া হয়? অবশ্যই না...
মা আর মিহির তো আমার রক্তের সাথেই মিশে আছে। ওঁরা কেউইতো আলাদা দুটো মানুষ নয়, এই ভেবেই মূলত চুপ থাকি। বলুক যা খুশি বলার। বলতে বলতে ওঁরাই আবার চুপ হয়ে যাবে...
৩
এই মাসে মিজান ভাই পত্রিকা দেননি ৬ দিন। মা কিছুতেই সেই হিসেব মেলাতে পারছেন না। বারবার হাতের কড়া দিয়ে গুণছেন, আর ভুলে যাচ্ছেন। এক, দুইদিন না দিলে সেই হিসাব সহজে মেলানো যায়, ৬ দিন কীভাবে মেলাবেন, সেটা দেখার আগ্রহ নিয়েই আজ মাকে ফলো করতে লাগলাম...
এভাবেই প্রায় অনেকক্ষণ কাটলো। লাঞ্চ বিরতি নিলেন। একটু ইউটিউবে সিরিয়াল দেখলেন। সিরিয়াল শেষে ঘুমালেন। ঘুম থেকে উঠেই নাকি সেই কাজে হাত দেবেন।
ঘুম থেকে উঠলে নাকি মাথা ফ্রেশ থাকে, এটা মায়ের ধারণা। আমার ছোটবেলায় মা আমাকে ঘুম থেকে তুলেই পড়তে বসাতেন। ঘুম থেকে উঠে যে পড়া পড়ব সে পড়া নাকি মাথায় সারাজীবন গেঁথে থাকবে এটা আমার মায়ের ধারণা। অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, বিকেলে টানা ৩ ঘন্টা শেষে একটু মাথা খাটিয়ে এই মাসের সব পত্রিকা বের করলেন, একে একে ক্রমানুসারে তারিখ সিরিয়াল করে সেই কাঙ্খিত ৬ দিন বের করলেন।
মায়ের মুখে সে কী হাসি। যুদ্ধ জয় করার মত হাসি। মনে হচ্ছে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা যেমন জুতাের চিহ্ন রেখে গিয়ে ধরা পড়েছেন ঠিক তেমনি মিজান ভাই পত্রিকা রেখে...
৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৭
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। ভালো এবং সাবধানে থাকবেন...
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০৪
ইসিয়াক বলেছেন: আপনার মায়ের জন্য শ্রদ্ধা রইলো।