নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ নগরীতে হয়েছে সময়, এসেছি বাসবদত্তা

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৪

শুরু করার সুযোগটা আমি-ই দিয়েছিলাম । কোন এক অদ্ভুত কারণে আশেপাশের পরিচিতদের সাথে না হয়ে উঠলেও; আমি রিকশাওয়ালাদের সাথে বেশ সুন্দর মন খুলে গল্প করতে পারি, তারাও আমার সাথে । কাউকে ডাকি মামা , কাউকে ভাই বা চাচা । তাকে ডেকেছিলাম মামা । শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস থেকে আজিমপুর অগ্রণী স্কুল , ভাড়া ষাট টাকা । বেশ অনেক লম্বা রাস্তাই বলা যায় । তাই আলাপ জমালাম ।



মাঝ বয়সী লোক, বাড়ি সাতক্ষীরা । সুন্দর করে টেনে টেনে কথা বলেন, শুনতে ভালো লাগে । অভাবী মানুষ ছিলেন না । মোটামুটি ভাবে চলার মতো বিষয় সম্পত্তি বাবার ছিল । কিন্তু বাবা তাকে কিছুই লিখে দেন নি । অভিমান করে চলে এসেছেন ঢাকায় সাত বছর । দুই মেয়ে; বড় জনের বিয়ে দিয়েছেন, ছোট জন স্কুলে পড়ছে । আর সবার মতো তিনি সারাদিন ১২০ টাকা চুক্তিতে রিকশা গ্যারেজ থেকে ভাড়া নিয়ে চালান না, টাকা জমিয়ে নিজেই কিনে নিয়েছেন । কিনতে লেগেছে দশ হাজার আর লাইসেন্স প্লেট জোগাড় করতে ১৫ হাজার । সঞ্চয়ী মানুষ । তার মেয়েও জানে সেটা । সে তাই বাবার কাছে আবদার করেছে তার স্বামীকে একটা মোটর সাইকেল কিনে দিতে হবে । তার সখ সে মোটর সাইকেলে চড়ে জামাইয়ের সাথে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসবে । সব সময় শুনে আসা মেয়ে জামাইদের যৌতুক দাবির সমপর্যায়ের অত্যাচারমূলক বিরক্তিকর আবদার । তবে কে জানে , পেছন থেকে মেয়েকে দিয়ে জামাই-ই হয়তো করাচ্ছে সব । মোটর সাইকেল কিনতে টাকা লাগবে এক লক্ষ আট হাজার , তার কাছে আছে ষাট হাজারের মতো । মেয়েকে বলেছেন তার কাছে থাকা টাকাটা নিয়ে যেতে, মোটর সাইকেল কিনে দিতে পারবেন না । এ কথা শুনে মেয়ের হয়েছে অভিমান , সে কয়েকমাস ধরে বাবার বাড়ি আসে না ।



গভীর রাত গুটিসুটি মেরে এগিয়ে আসছে, এগিয়ে আসছে নিঃসঙ্গতা । এমন সময় প্রেস ক্লাব, হাইকোর্টে, কার্জন হলের আশপাশ বেশ ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায় । রাতের ঠাণ্ডা বাতাস কেটে প্রায় উড়ে চলে যেন রিকশা । সিটি কর্পোরেশন জ্বালিয়ে দিয়েছে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্ট গুলো । চারপাশ ভেবে যাচ্ছে হলুদ আলোয় । হলুদ আলো কেমন যেন বিভ্রম তৈরি করে । বদলে দেয় চারপাশ, হয়তো মানুষকেও । পড়নের ধূসর পোশাকটা মনে হয় নীলচে , ফাঁকা রাস্তাটা যেন কোন খোলা মাঠ যার আদিগন্ত ভেসে যাচ্ছে অপার্থিব কোন আলোয় আর আমি যেন তার নিচে অনন্ত কাল ধরে নিজের হারিয়ে ফেলা গন্তব্য খুঁজে ফিরছি । সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরের ফুটপাথে দেখা যায় সাজগোজ করে জবুথুব হয়ে দাড়িয়ে আছে কিছু মেয়ে । নিশি কন্যা । এদের পার হয়েই চোখে পরে আবছা অন্ধকারে বসে থাকা কোন সাহসী কপোত-কপোতী । পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় স্পষ্ট-ই চোখে পরে প্রেমিকের হাত প্রেমিকার গলার কতটা নিচে কোথায় ঘুরাঘুরি করে, হঠাৎ দ্রুত চুমু খাওয়ার দৃশ্য; যাতে কোন আবেগ নেই , আছে কেবল তাড়না । এরা ইউনিভার্সিটি হলে থাকা আধুনিক ছাত্রী নিশি কন্যা আর চাকুরীজীবী নিশি মানব । তাদের একটু সামনে পাশাপাশি দাড়িয়ে রাস্তার উপর দাড়িয়ে সিগারেট টানছে দুই পুলিশ । সব কিছু দেখেও তারা কিছুই দেখে না ।



এমন সময় দুঃখ, কষ্ট, হতাশার কথা শুনতে ভালো লাগে না । মন চায় কারো মুখ থেকে প্রেমের কিছু শুনতে, হোক মিথ্যা । তার বদলে কানে আসে কারো দুঃখের বর্ণনা । হায় , এই মানুষটা কি জানে না আমরা আরেকজনের কষ্ট অনুভবের ক্ষমতা বহু আগেই হারিয়ে ফেলেছি ?



মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাই । মরা চাঁদ । হঠাৎ মনে হয় চারপাশটা যেন ছোট হয়ে আসছে, সংকুচিত হয়ে আসছে সব স্বপ্ন , হতাশা , স্মৃতি , বিস্মৃতি । সিগারেটের তৃষ্ণা পায় । অপরিচিত অনুভূতি । কোন কিছুকে জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা । ধোঁয়ার সাথে সাথে মাথার ভেতরের দিন রাত তাড়া করে ফেরা দুঃস্বপ্নগুলোর থেকে মুক্তির হয়তো এটাই সম্ভাব্য একটা উপায় । চারপাশে তাকাই । সিগারেটের দোকান চোখে পরে না । পেলে হয়তো প্রথম বারের মতো ধরিয়ে ফেলতাম একটা । অসহ্য লাগে চারপাশটাকে, আরও একটু বেশি ।



গন্তব্যের বহু আগে নেমে গিয়ে খালি পায়ে পথ ধরি । কোন তাড়াহুড়া নেই , চারপাশ দেখতে দেখতে ধীরে সুস্থে । মানুষটা কোথায় লুকিয়ে আছে খুঁজে বের করা দরকার । বহুদিন পর আজ নিঃসঙ্গতাটা যেন আরও বেশি করে গলা চেপে ধরে । মুক্তি দরকার । আমি মুক্তির জন্য তাঁকে খুঁজে বেড়াই চারপাশে ।



কিন্তু সুখী মানুষদের নগরী আজও বিভ্রান্ত কারো জন্য তার রহস্য ফাঁস করে না । আমি চন্দ্রাহতের মতো আঁধার হাতড়ে বেড়াই ।



“ আজ নগরীতে হয়েছে সময়,

এসেছি বাসবদত্তা । “

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১২

আমিনুর রহমান বলেছেন:




চমৎকার লিখেছেন।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । ভালো থাকবেন ।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:২২

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো লেখাটা।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩২

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই । ভালো থাকুন ।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৪

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: ভাল লেগেছে লিখাটা ।
হলুদ আলো আসলেই বিভ্রম তৈরি করে।
ভাল থাকুন খালিদ ভাই । শুভকামনা রইল

++

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন মাহমুদ ভাই । আবার দেখা হওয়ার অপেক্ষায় থাকলাম ।

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: সুখী মানুষদের নগরী আজও বিভ্রান্ত কারো জন্য তার রহস্য ফাঁস করে না । আমি চন্দ্রাহতের মতো আঁধার হাতড়ে বেড়াই ।

সুন্দর। ভাল লাগল লেখাটা।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৫০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু । আশা করি ভালো আছেন । আর নতুন গল্প কই ??

৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২১

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: সুখী মানুষদের নগরী আজও বিভ্রান্ত কারো জন্য তার রহস্য ফাঁস করে না । আমি চন্দ্রাহতের মতো আঁধার হাতড়ে বেড়াই ।

সুন্দর। ভাল লাগল লেখাটা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.