নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তবু আজও স্বপ্ন দেখার নেই মানা ........

শহুরে আগন্তুক

নিজের কাছে নিজেই অচেনা রয়ে গেছি আজো । চেনার চেষ্টা করছি । মানুষ হিসেবে কেমন তা অন্যরাই ভাল বলতে পারবে । আমার কাছে আমি আমার মতোই । আশাবাদী , স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর এবং শুদ্ধ অনুভূতিময় স্বপ্ন ।

শহুরে আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হস্তাক্ষর ও আমার প্রেমিকা

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০১

আতংকের আরেক নাম ডাক্তারের কাছে যাওয়া। খাটের উপর চিৎ হয়ে প্রেসক্রিপশন হাতে শুয়ে ছিলাম। ডাক্তার সাহাবের চার অংকের দর্শনী আর এবিসিডি অদ্যাক্ষরের কয়েকটা টেস্টের খরচ মিটিয়েই পকেট গড়ের মাঠ । ঔষধ কেনার পরিকল্পনা পরের দিনের জন্যে তুলে রেখে বাসায় ফিরে এসেছি এবং প্রেসক্রিপশনের ঔষধ খেয়ে রোগ সারানোর পরিবর্তে আপাতত প্রেসক্রিপশন পড়েই রোগ সারানোর চেষ্টা করছি । কিন্তু দেখা গেলো ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয় ।



বহু ভাষাবিদ ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ না হলেও, আমি মোটামুটিভাবে চারটা ভাষা পড়তে পারি ( অনেকেই পারেন :3 ) : বাংলা, ইংরেজী, আরবি এবং হিন্দী । কিন্তু প্রেসক্রিপশনে ঠিক কোন ভাষার অক্ষরে লেখা হয়েছে বোঝা গেলো না । আমি যেগুলো জানি সেগুলোর কোনটাই বলে মনে হলো না। তবে কি সংস্কৃত, গ্রিক, ল্যাটিন? নাকি গনচীনের ভাষা ম্যান্ডারিন? ফ্রেঞ্চ কিংবা হিব্রু হলেই বা ঠেকায় কে?..... যাই হোক, তিন - চার লাইনের প্রেসক্রিপশন আমার কাছে মোটামুটি গোলক ধাঁধা বলে মনে হলো। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কয়েকবার পড়লাম, কিছুই বুঝলাম না । আরবির মতো ডান থেকে বায়ে বা দ্য ভিঞ্চির মিরর রাইটিংয়ের মতো আয়নার উল্টো প্রতিবিম্ব তে পড়বো কিনা সে চিন্তা মাথায় আসলো। লাভ নেই বোধহয়, এ সাংকেতিক লিপি পেশাদার ক্রিপটোগ্রাফার অর্থ্যাৎ কম্পাউন্ডার ছাড়া অন্য কারও পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব না। অন্য কোন ডাক্তারও পারবেন কিনা সন্দেহ আছে । পাশ করা কোন ডাক্তার বোধহয় কম্পাউন্ডার বা আরেক ডাক্তারনী ছাড়া অন্য কাউকে প্রেমপত্র পাঠাতে পারবে না। পাঠালেও সেটা কাজে আসার কথা না ।



এমন সময় পিতৃদেবের ফোন । কি কি ঔষধ দেয়া হয়েছে জানাতে বললেন! এইটা কিছু হইলো!? >_< ... এ যে ক্যান্সারের উপর এইডস হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা । এমবিএ-তে পড়া ছেলে বাপকে ক্যামনে বলে- " কি লিখছে বুঝি না । লাইনে থাকো । ফার্মেসিতে গিয়ে কম্পাউন্ডাররে দিয়ে পড়ায়ে তোমারে ঔষধের নাম জানাইতেছি "।



............. এবার আমার নিজের কথা বলি । আমার নিজের হাতের লেখার অবস্থাও ভয়াবহ ।



পড়তাম নারায়ণগঞ্জের ছেলেদের সরকারী স্কুলে । বাংলা পড়াতেন জেলার ছাত্র সমাজের আতংক পরেশ চন্দ্র দেবদাস স্যার। স্যার কোন কারনে হাতের লেখার উপর অসম্ভব গুরুত্ব দেনন । তিনি ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত একনিষ্ঠ ভাবে আমার হাতের লেখা সুন্দর করার জন্যে যতভাবে সম্ভব চেষ্টা করে গেছেন; লাভ হয় নি । বাংলা লেখার অক্ষরগুলোর উৎপত্তি ব্রাহ্মী লিপি থেকে হয়েছে । আমিও বাংলাই লিখি, তবে সেই লেখার অক্ষরের উৎপত্তি কোন লিপি থেকে হয়েছে তা বের করতে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সুনীতিকুমার চট্রোপাধায় বা হুমায়ুন আজাদ বেঁচে থাকলে হয়তো আগ্রহ নিয়ে গবেষনা করতেন । পরেশ স্যারের গবেষনা করার আগ্রহ জাগে নি, রাগে - দুঃখে - ক্ষোভে পাঁচ বছরে আমাকে কয়েক হাজারবার কান ধরে ওঠবস করিয়ে গেছেন কেবল ।



হায়রোগ্লিফস লেখার কারণটা পরোক্ষভাবে ধরিয়ে দিয়েছিলো ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া এক জুনিয়র ছেলে । আমি তখন পড়ি টেনে। কিছুদিন পরেই এসএসসি পরীক্ষা। স্কুলে সবাই ডাকতো বংশের পদবী অর্থ্যাৎ গাজী বলে। সেই ছেলে একদিন আমাকে দূর থেকে কিছু একটা লিখতে দেখে চোখ কপালে তুলে বললো, " গাজী ভাই কি কলমরে গলা টিপ্পা মাইরা ফেলতেছেন!! "



অর্থ্যাৎ আমার কলম ধরার ভঙ্গিটা বিধি সম্মত নয়, আঙ্গুলে প্রচন্ড চাপ দিয়ে ধরি । অভ্যাস বদলানো যায় নি । ফলশ্রুতিতে জীবনে বহু মানুষ জিজ্ঞেস করেছে আমি ঠিক কোন ভাষা লিখি? কেউ আরেকটু স্পেসিফিকালি জানতে চেয়েছে - হিন্দি নাকি আরবি??



এই হাতের লেখা নিয়েই কিভাবে কিভাবে যেন হালকা বাদামী বর্ণ চোখের দীর্ঘাঙ্গীনি এক পিঙ্গলকেশীকে দুরুদুরু মনে দুইটা চিঠি লিখে ফেলেছিলাম। আমার ইচ্ছা ছিলো তাকে আমি বছরের পর বছর দু'হাত ভরে চিঠি লিখবো । এক পাতা, দুই পাতা, দশ পাতাতা ..... কখনো বা খামে ভরে পাঠাবো এক বাক্য অথবা শব্দের ছোট্র এক পুঞ্জ শুভ্র মেঘ । চিঠিগুলো সব সে যত্ন করে তুলে রাখবে। তারপর দুজন যখন বুড়ো হয়ে যাবো, হাতে আসবে অফুরন্ত অবসর ; তখন কোন এক বিকেলে চিঠিগুলো ঝাপসা হয়ে আসা চোখের দৃষ্টির সামনে আবার খুলে বসবো দুজন । যৌবনের তীব্র আবেগের সাক্ষী সেই সব মেঘদূতদের পড়ন্ত বার্ধক্যে চোখের সামনে মেলে ধরার পর নিশ্চয়ই আমাদের চোখ ভিজে যেতো, আমরা একজন আরেকজনের শীর্ণ হয়ে আসা, চামড়া কুচকে যাওয়া হাত পরম মমতায় আকড়ে ধরে অতীত হাতড়ে ভাবতাম জীবন আমাদের এতো সুখি করলো কেন?



কিন্তু হায়! বালিকা আমি মাত্র দুটো চিঠি লিখতে, না লিখতেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো । ভবিষ্যৎ এ আরও চিঠি পেতে হবে- এই আতংকেই কিনা কে জানে....... তবে কি সে দুর্বোধ্য হাতের লেখার জন্যে আমার চিঠিগুলো পড়তেই পারে নি বা পড়ে নি? ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো অর্থহীন কোন আকিবুঁকি ভেবে? চিঠিগুলো পড়লে তো তার হারিয়ে যাওয়ার কথা না। আমার মনের আবেগ তাকে স্পর্শ করতোই ।



ইদানীং কেন যেন খুব চিঠি লিখতে ইচ্ছা করে । এমন কাউকে যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ অক্ষরগুলোর দিকে নজর না দিয়ে, অক্ষরগুলো যে বিশুদ্ধ আবেগ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা বুঝতে চাইবে । আমি জানি মনের সমস্ত পরিশুদ্ধ আবেগ দিয়ে চিঠি আমি লিখতে জানি । কিন্তু এ পৃথিবীতে একটু কষ্ট করে, ধৈর্য্য নিয়ে আমার হাতের লেখা বুঝতে চাইবে - এমন কাউকে খুঁজে পাওয়াটাই যায় না কেবল ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৭

নিলু বলেছেন: ভালো লাগ্লো

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৭

বেগুনী ক্রেয়ন বলেছেন: আমার হাতের লেখা ও খুব করুণ| বাংলা, সমাজ এসব বিষয়ে ভালো নাম্বার পেতাম না হাতের লেখার জন্য| হয়ত সেজন্যই এক পর্যায়ে অংকে মনোযোগ দেই|

ইদানিং জানতে পারলাম হাতের লেখা খারাপ একটা কারণ হতে পারে উচ্চ আইকিউ| আমার ব্যাপার তা হয়ত তাই ছিল|

এজন্যই ছোট বেলাতেই খুব আগ্রহ উত্সাহে টাইপিং শিখেছিলাম| এখন নিজের পেশা তে খুব কাজে দিচ্ছে|

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৭

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আইকিউর কথায় ভরসা পেলাম!!!!

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৯

শীলা শিপা বলেছেন: এ যে ক্যান্সারের উপর এইডস হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা । এমবিএ-তে পড়া ছেলে বাপকে ক্যামনে বলে- " কি লিখছে বুঝি না । =p~ =p~

বাকিটা পরে পড়ব। আগে একটু হাসিটা থামাই!!!

কেমন আছেন আপনি??

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৭

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আমি আছে যেমন - তেমন - এক রকম..... আপনি ডুব দিয়েছেন কেন??

৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০

 বলেছেন: ভাল লাগল

৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: প্রথমদিকে বেশ রম্য রম্য ভাব নিয়ে পড়ছিলাম । শেষে এসে স্মৃতিকাতরতা ।

ভালো লাগলো । পোষ্টে ভালোলাগা রইল +

শুভকামনা ।।

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩২

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমার হাতের লেখা আপনার চেয়েও বাজে। বাজী লাগবেন? সারাজীবন সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্ম, বাংলা এসবে কম নাম্বার পাইসি অতি বাজে লেখার কারণে। তবে এখন আমার হাতের লেখা খুব সুন্দর। কি বোর্ডের সর্দারিতে ভীত কলমটা কোথায় যে হারালো!

৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: যার হাতের লেখা যত খারাপ সে তত জ্ঞানী !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.