![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশের সুদিন দেখার অপেক্ষায়....
ছোট্ট একটা শালিক পাখি। সবে মাত্র উড়তে শিখেছে। বাবাহীন ভুবনে মা-ই তার একমাত্র ভরসা। তার বাবা কীভাবে মারা গেছে সে সম্পর্কে তার মা তাকে কোনদিন কিছু বলে নি। যা হোক, খুব সুখে শান্তিতে যাচ্ছিলো তাদের দিনগুলো। ছোট্ট পাখিটি ধীরে ধীরে পরিণত শালিকে রূপান্তরিত হচ্ছিলো।
একদিন ঘোর বিপত্তি ঘটলো। ছোট্ট পাখিটি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। এমতাবস্থায় তার মা খাবার সংগ্রহ করতে গেল। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যে হলো। কিন্তু তার মায়ের ফিরে আসার কোন নাম নেই। এদিকে সেও দূর্বল থাকার কারনে উড়তে পারছে না।
কিছুক্ষন পর কয়েকটি শালিক এসে জানাল, তার মাকে কিছু লোভী মাংসাসী মানুষ ধরে নিয়ে গেছে। তখন ছোট্ট পাখিটি বলে- এখন কী হবে? ওরা কী আমাকে মাকে খেয়ে ফেলবে?
এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল সে।
প্রতিবেশী শালিকগুলো তাকে শান্তনা দিলো। বললো- কিছু হবে না, আমরা আছি তো। ভোর হোক, কিছু একটা করা যাবে।
এই বলে প্রতিবেশীরা তাকে কিছু পোকামাকড় দিলো। অনিচ্ছা সত্তে¡ও সে খেলো। কারণ, তাকে সবল হতে হবে। তার মাকে খুঁজতে হবে। মা ছাড়া তার কেবা আছে।
রাত গড়িয়ে সকাল হলো। প্রতিবেশী শালিকগুলো যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, ছোট্ট পাখিটি সকল জড়তা, অসুস্থতাকে পেছনে ঠেলে উড়ার চেষ্টায় ব্রতী হলো। অনেক কষ্টে সে পাশের গাছের বুলুদের বাসায় গেল। বুলু বলল :
-আমরা বাপু দেখেছি গ্রামের দিকে নিয়ে গেছে। কিন্তু কোন বাড়িতে নিয়েছে সেতো জানিনে, তবে ওদিকে গ্রামের মাঝে একটা টুনটুনি থাকে, সে হয়তো জানতে পারে।
এতে ছোট্ট পাখিটি উৎসাহী হয়ে বুলুকে বললো- চলো না গো, আমরা এক সাথে যাই।
বুলু- না বাপু, আমি যেতে পারবো না। আমার ডিমে ‘তা’ দিবে কে শুনি ?
অসহায় পাখিটি এদিক ওদিক ছুটে, একে ওকে জিজ্ঞেস করে শেষ পর্যন্ত টুনটুনির বাসায় গেল। কিন্তু টুনটুনি তাকে খুব করে তাড়িয়ে দিল। তথাপি, ছোট্ট পাখিটি হাল ছাড়লো না। বার বার তাড়া খেয়েও সে টুনটুনির বাসার কাছে যেতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত টুনটুনি পাখিটি হাল ছেড়ে দিয়ে তাকে তার বাসায় ডাকল।
কী কারনে তার আসা টুনটুনিটি সেটা জিজ্ঞেস করল। ছোট্ট পাখিটি সব খুলে বললো।
টুনটুনিটির মনে বেশ মায়া হলো। কারণ তারও মা-বাবা নেই।
খুব ছোটোবেলায় বজ্জাত মানুষগুলো তার মা-বাবাকে ধরে নিয়েছে। তারপর তার মা-বাবা আর কোনদিন ফেরেনি।
যা হোক, টুনটুনিটি বললো- চলো দেখি। তোমার মায়ের খোঁজ পাওয়া যায় কিনা।
এই বলে দুজনে ছুটলো গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির দিকে। নাহ, অনেক খোজাখুজির পরও পাওয়া গেল না। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে এল। বাসায় ফেরার সময়। ছোট্ট পাখিটি ফিরতে চাইলো না। তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে লাগলো।
টুনটুনিটি বললো- কালকে আবার খুঁজবো এখন চল। না হলে আবার বাসা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ছোট্ট পাখিটি শেষমেষ টুনটুনির বাসার দিকে রওয়ানা হলো। যেতে যেতে হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনতে পেল ছোট্ট পাখিটি। হ্যাঁ, এ তো তার মায়ের কণ্ঠ।
আওয়াজ শুনে সে দিল ভো দৌড়। সাথে টুনটুনি।
ছালের দিকে এসে দেখলো কতগুলো ছেলে উঠোনে এসে কি যেন কাটাকুটি করছে। পাশে পা এবং ডানা বাধা অবস্থায়, তার মা।
কিছুক্ষন পরে চড়–ইভাতির জন্য মা শালিকটিকে জবাই করা হবে। মাংসাসী মানুষগুলোর কথাবার্তায় এমনটি বুঝতে পারল টুনটুনিটি। সে বললো :
-শোন, আমি ওদের পাশ দিয়ে অসুস্থের অভিনয় করে যাবো। ফলে সবাই আমাকে ধরার জন্য ছুটবে। অন্যদিকে তুমি তোমার মাকে নিয়ে পালাবে।
ছোট্ট পাখি- হ্যাঁ, ঠিক আছে। কিন্তু যদি তোমার কিছু হয়।
টুনটুনি- কিছু হবে না ওরা ধরতে আসলে, আমি উড়াল দিবো। যথা আজ্ঞা, তথা কাজ। টুনটুনিটি অসুখের অভিনয় করে, ডাক দিতে দিতে হেঁটে যেতে লাগলো।
গ্রামের ছেলেমেয়েগুলো আরেকটি পাখি খাওয়ার লোভে টুনটুনির দিকে হামলে পড়লো। কিন্তু টুনটুনিটি এদিক-ওদিক ছুটে অন্য বাড়ির দিকে যেতে লাগলো। ছেলেমেয়েগুলোও তার পিছু পিছু।
ওদিকে ছোট্ট পাখিটি তার মাকে নিয়ে পালালো। কিছুক্ষন পর টুনটুনিটিও তাদের সাথে যোগ দিল। অন্যদিকে ছেলেমেয়েগুলো সব হারাল। তাদের চড়ুভাতি ভেস্তে গেল।
যা হোক, ছোট্ট পাখিটি এবং তার মা উভয়ই টুনটুনিটির বাসায় আশ্রয় নিল। মা শালিকটির পায়ে ব্যথা। দুদিন বেশ সেবা-যতœ হলো। মা শালিকটি সুস্থ হয়ে উঠল। ছোট্ট পাখিটি ও টুনটুনিটি বেশ খুশি হলো। কিন্তু এ সুখও তাদের কপালে বেশিদিন সইলো না।
গ্রামের ছেলেমেয়েগুলো তাদের পিছু নিতে নিতে বাসার খোঁজ পেয়ে গেলো।
সেদিন ছোট্ট পাখিটি খাবার সংগ্রহে জঙ্গলের দিকে গিয়েছিল। বাসায় টুনটুনি ও মা শালিক। ওদিকে গ্রামের ছেলেমেয়েগুলো ক্ষোভে জিদে নির্বিচারে টুনটুনির বাসার দিকে ইট ছুড়তে লাগলো। দুজনের একজনও বাঁচলো না। টুনটুনি ও মা শালিক দুজনের মাথা থেতলে গেল।
গ্রামের ছেলেমেয়েগুলো খুশি হলো, দুটো পাখি পেল চড়ই ভাতির জন্য। এক ডিলে দুই পাখি মারার মতো।
সন্ধ্যায় যখন ছোট্ট পাখিটি বাসায় ফিরল, দেখল সব শেষ। টুনটুনির বাসাটি ছিন্ন ভিন্ন। এদিক-ওদিক রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হতভাগার আর বুঝতে বাকি রইলো না। পাগলের মতো দিক-বিদিক ছুটতে লাগলো। মা-মা করে চিৎকার দিতে দিতে এক জটকায় নিচের দিকে পড়ে গেল। তার মাথা থেকেও রক্ত ঝরছে। একটা ছোট্ট ইট অবশিষ্ট কাজটাও সম্পন্ন করে দিল। গ্রামের ছেলেমেয়েগুলি হাততালি দিতে লাগল।
অন্যদিকে, ছোট্ট পাখিটির চোখের সামনে থেকে সব আলো ধীরে ধীরে নিভে যেতে লাগল। একসময় সব অন্ধকার হয়ে গেল।
(সমাপ্ত)
২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:২৮
অবলা জাতি বলেছেন: হুম
২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আহারে। এমন এখনো করে গ্রামের বাচ্চারা।
আমিও ছোটবেলায় পাখি ধরতাম কিন্তু ছেড়ে দিতাম।
২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৩০
অবলা জাতি বলেছেন: অামিও গ্রামের ছেলেগুলোর মতোই ছিলাম। অনেক পাখি মেরেছি চড়ুইভাতির জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪
মোঃ রবিউল্লাহ বলেছেন: কারও সর্ব নাশ, কারও পৌষ মাস