![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তানভীর,পড়াশুনা শেষ করে ভালো একটা জব
করছি।আজকে আপনাদের আমার জীবনের বিয়ের দিনের
কাহিনী শুনাবো।
.
কলেজ জীবনে অনেক মেয়েকেই ভালো লাগত কিন্তু
বাবা-মার কড়া শাসনে তা আর ভালোবাসায় পরিনিত
হয়নি।এর পর যখন ভার্সিটি জীবনে আসি তখন নিজের
জীবন সাজাতে এত ব্যাস্ত হয়ে পরি যে পরে আর কাউকে
ভালো লাগাতে পারি না।
কিন্তু সেই আমার আজকে বিয়ে।
বাবা-মার পছন্দ করা মেয়েই বিয়ে করছি।চারিদিকে খুব
ধুমধাম করেই আয়োজন চলছে।আত্বীয়স্বজন সবাই চলে
আসছে।একটু পর আমরা সবাই যাবো বউ আনতে।কিন্তু একি
ছোট খালা এখনো আসেনি।আসলে খালা হলে কি হবে
সে আমার ২বছরের ছোট।
আমার নানার শেষ বয়সের মেয়ে তাই।
.
অপেক্ষা করার অনেক পরে খালা আসল।সবাই গাড়িতে
বসল কিন্তু খালার এক কথা সে বর যে গাড়িতে থাকবে
সে সেই গাড়িতে বসবে।কিন্তু আমার বন্ধুদের সবার
অনুরোধ ছিল বরের গাড়িতে আমরা সবাই মজা করতে
করতে যাবো,তাই অন্য কোন মেয়ে বা মুরব্বি থাকবে
না।কিন্তু খালার এক প্রকার জেদের কারনে নিতেই হয়।
পরে সবাই রওয়না দিল আল্লাহ্র নামে।
.
আমরা যাচ্ছি বরিশাল থেকে যশোর অনেক দূর।এক
প্রকার লম্বা জার্নি।
বিয়ে বাড়িতে পোঁছাতে আমাদের প্রায় বিকাল ৩টা
বেজে গেল।কিন্তু একি গেট ধরছে এখন কি হবে।টাকা
তো তাদের না দিয়ে যাবার কায়দা নাই।
আমার হবু শালীকা/শালা আরো কত কে নতুন জামাই আর
গেটের কাহিনী দেখতে আসছে।অনেক ঝগড়া হচ্ছে
খালার সাথে তাদের এক কথা ২০০০০/বিশ হাজার
টাকার নিচে গেট ছাড়বে না।
.
কিন্তু আমার এক বন্ধু আমারে আগেই বলছিল দোস্ত তোর
বিয়ের গেটে যে কয় টাকা লাগে আমি দিব।কিন্তু
আমার দোস্ত আমারে জীবনে এক টাকার চকলেট কিনে
বলে নাই নে দোস্ত খা।আর সে দিবে গেটের টাকা।
আমরা অনেক হাসছিলাম তখন আমার ফ্রেন্ড বলে আর
যদি ফ্রিতে তোর বিয়ের গেট দিয়ে তোকে ঢুকাতে
পারি তবে গেটের টাকা আমারে দিবি।এইবার বুঝলাম
যে আসল কাহিনী কি।যাক সেই দিনের দোস্ত তো
টাকার পরিমাণ শুনেই শেষ,তবু ব্যাটার মাথায় অনেক
বুদ্ধি আছে।
.
সে বলল আচ্ছা টাকা দিব একজনের হাতে কিন্তু এত
লোকের মাঝে যাকে আমি ডাকব শুধু তার হাতে দিব
আপনারা ভাগ করে নিবেন।
সবাই আমার দোস্তের কথায় রাজি হল।
একটা পিচ্চি কে ডাকা হল কিন্তু তার সাথে দোস্ত
আগে কথা বলবে একটু পাশে তাকে ডেকে নিয়ে কানে
কানে বলে যে বাবু তোমাদের কত টাকা লাগবে।পিচ্চি
বলে ২০০০০/- আরে ব্যটায় কয় কি।আমার দোস্ত মনে মনে
কয় দাড়া দিচ্ছি টাকা।
.
এর পর বলে বাবু তোমায় টাকা যে দিব কেন দিব আমার
কথা শুনতে হবে যে তোমার।বাবু বলে কি কথা,দোস্ত
বলে তুমি ওই যে দূরে গাছ টা দেখতে পাচ্ছ সেই গাছটা
থেকে একটা পাতা এনে দিতে পারবে কিন্তু সময়
১০মিনিট।ছেলেটা বলে কিন্তু টাকা,আরে টাকা
তোমার পকেটে থাকবে তুমি পাতা না নিয়ে আসা
অব্দি টাকা ছুতে পারবে না।বাবু বলে আচ্ছা ঠিক আছে।
এরপর পকেট থেকে আমার দোস্ত এক বান্ডিল ৫০০ টাকার
নোট বের করে।দেখে তো মনে হচ্ছিল ৫০০০০/-টাকার
বান্ডিল।আমি মনে মনে ভাবি শালা এত টাকা দিচ্ছি
পাইছে কই?
.
কিন্তু বাঁচ্চা কে দেবার আগে সবাইকে দূর থেকে
বান্ডিল দেখায় যে বাঁচ্চা কে দিচ্ছে টাকা।এর পর
বাচ্চা কে বলে এখানে ১০০০০/-আছে বাকিটা পাতা
নিয়ে আসলেই পাবে।কিন্তু তোমায় কেউ পিছন থেকে
ডাকুক তুমি আসবে না।এবার বলে দেও দৌড় ছেলেটা
দৌড় দেয়।দোস্ত তাড়াতাড়ি গেটে এসে বলে বন্ধু
পোলায় আমার ৫০হাজার টাকার বান্ডিল একলা নিয়ে
দৌড় দিছে আর কইছে কাউরে দিবে না।
.
এই কথা শোনার সাথে সাথে সবাই পিচ্চিরে ধরতে দৌড়
আর গেট ফাঁকা একজন শুধু শরবত এর গ্লাস নিয়ে দারিয়ে
আছে।দোস্ত কয় কিরে সরবত তুই খাবি নাকি যাবি।সবাই
তাড়াতাড়ি গেটের ভিতর ঢুকে যায়।বরের আসনে গিয়ে
বসে পড়ে।কিন্তু যখন মেয়ে পক্ষের লোকজন পিচ্চি কে
ধরে বান্ডিল দেখে তখন ২টা ৫০০ টাকার নোট আর
ভিতরে কাগজ।কি আর করা পোলা পক্ষ বলদ বানাইছে
আর মেয়ে পক্ষ বলদ হইছে।পরে আমরা সব শুনি গেটের
কাহিনী।আমরা তো হাসতে হাসতে শেষ।কিন্তু আমি যে
বর মুখে রুমাল দিয়ে হাসতে ছিলাম।
.
এবার খাওয়ার পালা,শালীকারা সবাই শরবত আনছে।
কিন্তু কারটা রেখে কারটা খাই তাই দোস্তরে কইলাম
তোরা শেষ করে দে।কিন্তু দোস্তের কথা একটা খাইতে
পারি তয় শরবত কোন মেয়ে মানুষ যদি একটু না খেয়ে
দেয় আমরা খাইতে পারি না।এখন আর কেউ রাজি না।
শরবত এ যে কিছু সমস্যা আছে তা আগেই বোঝা যাচ্ছিল।
খাওয়ার শেষে ঠিক বিদায় এর বেলায় আমার বউ এর সে
কি কাঁন্না,আচ্ছা এত কাঁদছে কেন?
আমি কি তারে নিয়ে মারব নাকি যে সেই ভয়তে
কাঁদছে?
প্রথম প্রথম কয়টা দিন তো নতুন বউকে সবাই ভালো পায়
তয় এই মাইয়া কান্দে ক্যা?যাক আমার বোঝা লাগবে
না।অনেক কাঁন্না কাটির শেষে আমার বউরে আমার
হাতে তুলে দিল,আরে আরে না হাতে তুলে দেইনি,মানে
হাতে হাত ধরিয়ে দিছে।
.
আমার শ্বশুর এর ডায়লগ......
বাবা তুমি আমার মেয়েটারে দেখে রেখ।ওকে কষ্ট দিও
না,কিছু না বুজলে বুঝিয়ে বলো।
শ্বাশুরীর ডায়লগ.....
বাবা আমার মেয়ে সব কাজ পারে তুমি একটু গুছিয়ে
নিও।
আমি শুধু জি জি করে যাচ্ছিলাম।
বিয়েতে এত জ্বালা জানলে বিয়ে করতে আসতাম না।
আর বিয়ে কি আমার নাকি আমার বন্ধুদের আল্লাহ্
জানে সবাই মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছে।কার কোনটার লগে
লাইন লাগে।
এক বন্ধু তো আমার শ্বাশুরী কে বলেই দিল আরে মাওই
মা আপনি চিন্তা করেন না তানভীর এর বউ আর আমাদের
বউ একি কথা,আমি ওর দিকে গরম চোখে তাকালাম ও
কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল আরে মজা করছি আমাদের তো
ভাবি।
.
সবার বিদায় শেষে আমরা রওয়না দিলাম।রাত্রে আমরা
এসে পৌঁছাইলাম।
কিন্তু এখানে আর এক বিয়ে,মা তার ছেলের বউকে বরণ
করছে,ভাইরে এত জ্বালা জানলে পালিয়ে বিয়ে
কিরতাম পরে এক হালি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এসে বলতাম
এই নাও এবার সবাইকে বরণ করো।যাক ২০মিনিট পর প্রায়
হলো বরণ।
সবাই নতুন বউ দেখতে আসছে আশেপাশে থেকে, কেউ বউ
এর চুল দেখছে,কেউ শাড়ি,কেউ গহনা,আবার কেউ দেখছে
কি কি দিল।আমার কোন ইচ্ছা ছিল না কিছু নেবার তবু
একমাত্র বাপের মেয়ে সব দিছে।
.
আমার জন্য ভালো হইছে কিছু কেনা লাগল না।সব
বাবারা এত ভালো হইলে যৌতুক আর চাইতে হইত না।যাক
বউটারে সবাই এমন করে দেখছিল মনে হচ্ছে এলিয়েন
আনছি আমি,তাই দেখছে যা আগে দেখেনি।আরে
আফা,খালাম্মারা বউ তো আমার আমি আগে দেখি তার
পর আপনারা সারাদিন দেখেন।যাক অনেক সময় পর ভিড়
কমল।আমার রুমে আমার বউকে দিয়ে সবাই যে যার মত
গেল।আমি ভাবলাম এবার বুঝি আমার বাসরঘর এ যেতে
হবে কিন্তু কেমন যেন লাগছে।অনেক লজ্জা লজ্জা
নিয়ে ঢুকলাম রুমে।
.
কিন্তু আমার বউ আমারে দেখে খাট থেকে নেমে এসে
সালাম করল,আমিও তাকে না না সালাম করি নাই হাত
ধরে উঠালাম।যেই না একটু কিছু........অমনি খকখক-
খকখক,কি ব্যাপার কাশে কে?
আমার গলা ঠিক আছে,তবে কি নতুন বউরে ধরে আমার
কাশি হল?
না তা তো নয় এর মধ্যে খাটের নিচ থেকে আওয়াজ বন্ধু
আমার পাওনা শোধ করো।নইলে আমি যাবো না রুম
থেকে।আমি দেখি আমার সেই দোস্ত রুমের খাটের
নিচে।কিরে তুই এখানে?
আমার গেট পাস করে দেওয়ার ফি দেও,পরে তাকে
বুঝিয়ে সুজিয়ে ১০০০০/-টাকা দিয়ে বিদায় করলাম।
.
এর পর রুমের দরজা লক করলাম।
এবার দেখলাম বউ আমার খাটের উপর ঘোমটা দিয়ে বসে
আছে।
এখন বউ এর ঘোমটা খুলে দেখছি বউ তো আমার লাক্স
সাবান দিয়ে গোসল করে আসছে।কারন ঘোমটা খুলতেই
কারেন্ট গেছে আর বউ রাতের অন্ধকারে জ্বলছে এত শুধু
লাক্স সাবান দিয়ে গোসল করলেই হয়।টিভির এডে
দেখছি যে মেয়েরা লাক্স সাবান দিয়ে গোসল ককরলেই
জ্বলে রাত্রে।
কিন্তু না না তা তো নয় আজকে যে পূর্নিমা সেই চাঁদের
আলোতে আমার বউ চক চক করছে।যাক বাবা ভাবছিলাম
আমার শ্বশুর আবার চিটিং করে রেডিয়াম বউ দিছিল
কিনা।
.
এর পর জোসনার আলোতে সারারাত হয়ত জোসনা
বিলাস হয়নি কারন আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম।আমার
মিষ্টি বউ খুব অল্পদিনে সবার মন জয় করে নেয় আর
আজকে আমাদের ৫ম বিবাহবার্ষিকী আর আমাদের ছোট
বাবুর ৩য় জন্ম দিন।আমরা আজকে অনেক খুশি আমাদের
বাবা-মাকে সাথে নিয়ে।সবাই দোয়া করবেন আমাদের
জন্য।
©somewhere in net ltd.